ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

১২ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম

নাগরিক জীবনে যন্ত্রের ন্যায় সারাদিনের কর্মময় ব্যস্ততা নগরবাসীর প্রতিটি দিনকে অনেকখানি বিষিয়ে তোলে। এই ব্যস্ততা থেকে একটু অবসরের জন্য সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোর বিকেলে অন্য সবার মতো আমিও বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করি। এজন্য ছুটির দিনের বিকেল পুরোপুরি পরিবারের সাথে কাটানোর জন্য রেখে দিই। চেষ্টা করি বাসার আশপাশের উদ্যান, লেক, পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রে যাওয়ার। যদিও ঢাকা শহরের ডাইরিতে এমন ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। তারপরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক বাসা থেকে খুব বেশি দূরে অবস্থিত না হওয়ায় ছুটির দিনের বিকেল কাটাতে তেমন একটা বেগ পেতে হয় না। তবে উক্ত স্থানগুলোর মধ্যে ঢাবি সর্বদা অধিকতর পছন্দের। এমনটা হতেই হবে। কেননা ছাত্রজীবনের অনেকখানি সময় কেটেছে এখানে। স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাস সব সময় সবারই মনে টানে। তাই যেখানেই থাকি না কেন, ঢাবিকে খুব বেশি মিস করি। এজন্য ঢাকা শহরে আসা মাত্রই ছুটে যাই প্রাণের ক্যাম্পাসে।

সম্প্রতি এক ছুটির বিকেলে বের হয়েছিলাম ঢাবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে সেবারের বিষয় একটু হলেও ভিন্ন ছিল। দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করায় ঢাবিকে যেন অনেক বেশি মনে পড়ছিল। সেকারণে ঐদিন ঢাবি যাওয়ার আগ্রহটা অন্যবারের চেয়ে ঢের বেশি ছিল। সেবার ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলাম দীর্ঘ ৫ বছর পরে। তাই বরাবরের চেয়ে মনের ভিতর বেশি উৎতফুল্লতা কাজ করছিল। সেই সাথে মনে হচ্ছিল, হয়ত ক্যাম্পাসকে চিনতে পারব না। হয়ত অনেক বদলে গেছে। বিগত ৫ বছরে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশও অনেকখানি এগিয়ে গেছে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে দেশের। এজন্য এত বেশি ভালোলাগা কাজ করছিল। এসব ভাবতে ভাবতে ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারে পৌঁছে গেলাম। শাহবাগ দিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলাম। ক্যাম্পাসে পৌঁছে কেন জানি না হেঁটে চলাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই ক্যাম্পাসে প্রবেশ মুখে পৌঁছানো মাত্রই রিক্সা থেকে নেমে হেঁটে ভিতরের দিকে প্রবেশ করলাম। তবে ক্যাম্পাসে গিয়ে বাহ্যিক অবয়বের তেমন কোন পরিবর্তন নজর কাড়েনি। শুধুমাত্র দেখলাম শাহবাগ থেকে মাথার উপর দিয়ে মেট্রোরেল ঢুকে গেছে ক্যাম্পাসের ভিতর। সেটা দিয়ে ৪-৫ মিনিট পরপর গুড়গুড় করে মেট্রোরেল চলে যাচ্ছে। দেশের জন্য বিষয়টা অনেক আশাব্যঞ্জক হলেও ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে মেট্রোরেল দেখে মনটা তেমন খুশি হতে পারেনি। কেন খুশি হতে পারেনি সেকথা পরে বলছি। তবে তার আগে বেশ কিছু বিষয় যেটা মনকে বেশ শিহরিত করেছিল সেগুলো আলোকপাত করতে চাই। শাহবাগে প্রবেশ করেই জাতীয় জাদুঘরের সামনে ফুচকার দোকানগুলো ঠিক আগের মতই আছে। আগের মতই আছে জাদুঘরের বিপরীত পাশের ফুলের দোকানগুলো। চারুকলার সামনে বসা হস্তশিল্পের কিছু পণ্যের দোকান, বইয়ের দোকান এবং চারুকলার গ্রিলের ধার ঘেঁষে বসা ভাঁজার দোকানেরও তেমন পরিবর্তন লক্ষ করিনি। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, ভাঁজার দোকানের সেই ভাঁজার আইটেমগুলোরও তেমন কোন সংযোজন বা বিয়োজন হয়নি। চারুকলার ভিতরে বকুল তলা ঠিক আগের মতই আছে। চারুকলার বাইরে থেকে ঢাবির কলা ভবনের লাইব্রেরির গেটে প্রবেশের আগ পর্যন্ত ভ্যানে করে বিক্রি করা কিছু পণ্যেরও তেমন হেরফের হয়নি। তবে হ্যাঁ, কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে ফুটপাতের হাঁটার জায়গাগুলো। ফুটপাতের আয়তন না বাড়লেও হাঁটার জায়গা পূর্বের তুলনায় বেশ পরিচ্ছন্ন মনে হলো। মনে হলো খুব বেশি দিন আগে এটি তৈরি না এবং নিয়মিত পরিষ্কার করার জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োজিত আছে। আবার মনে হলো হয়ত মেট্রো লাইন হওয়ার পরে এগুলো বানানো হয়েছে। এজন্য এখনো বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে হচ্ছে।

এরপর টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, কলা ভবনের ভিতর চোখে পড়ার মত তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নজরে আসেনি। মাঝেমধ্যে ভিখারিদের সরব উপস্থিতি ভালোভাবে টের পাইয়ে দিচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখনো ভিখারিমুক্ত হয়নি। মল চত্বরে একটি নতুন ফোয়ারা নির্মাণ করা হলেও আশপাশে সংস্কার কাজ এখনো চলমান। কিছু কিছু স্থানে বেশ কিছু উঁচু ভবন অবশ্য চোখে পড়েছে। বুঝলাম, এগুলো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের জন্য বানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের ভিতরে বিশেষ করে আবাসিক এলাকার আশপাশে মাঝেমধ্যে ভ্যানে বিক্রিরত অবস্থায় কিছু ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকানও চোখে পড়ল। যেগুলোতে ক্রেতাদের যথেষ্ট উপস্থিতিও নজরে আসল। সন্ধ্যার পরে আবার মাইকিং করে বহিরাগতদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা চোখে পড়ল। যেটা ছাত্রাবস্থায়ও বহু দেখেছি। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা নজর কাড়ল সেটি হচ্ছে টিএসসি দিয়ে দোয়েল চত্বরে আসার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামের মেট্রো স্টেশনটি। এবার এই মেট্রো স্টেশন নিয়ে কিছু কথা বলব। আমরা জেনে আসছি, যেকোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় একটু হলেও তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহ্যিক সৌন্দর্য, দর্শনীয় স্থান, হাঁটা চলার পথ হতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। যেখানে ছাত্র শিক্ষকের নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দর্শনার্থী আসবে। হ্যাঁ, এমনটাই লক্ষ করেছি বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে। উদাহরণস্বরূপ চীনাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ক্যাম্পাসগুলোর অবয়ব এখানে সামান্য তুলে ধরতে চাই।

চীনের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস কৃত্রিমভাবে বানানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি বললেও ভুল হবে না। স্বচক্ষে অবলোকন ব্যতীত এটা বোঝানো সম্ভব নয়। ক্যাম্পাসগুলোতে একের অধিক কৃত্রিম লেক, কৃত্রিম ঝর্ণা, বড় বড় পুকুর, খেলার মাঠ, স্টেডিয়ামসহ নজরকাড়া বিভিন্ন রকমের কারুকার্যে তৈরি সুউচ্চ ভবন দেখা যায়। শুধু সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য লেকের উপর দিয়ে বানানো আছে অনেক উঁচু উঁচু কিছু ব্রিজ। পাথরে খোদাইকৃত বিভিন্ন ভাস্কর্যের কারুকার্য দেখেও অনেকের নজর কাড়ে। তাইতো ছুটির দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিবার পরিজন নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রের মতো দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। কৃত্রিম লেকে বিভিন্ন প্রজাতির রঙ বেরঙের মাছও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। এছাড়া লেকের উপর দিয়ে চলে গেছে কাঠের সুন্দর নকশা দিয়ে বানানো অনেক লম্বা লম্বা হাঁটার রাস্তা। যেগুলো দর্শনার্থীরা হেঁটে চলাসহ ছাত্রছাত্রীরা সকাল বা বিকালের হাঁটার কাজে ব্যবহার করে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো বেশ বড় হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হলগুলো থেকে ক্লাস রুম বা ডাইনিং রুম কিংবা ল্যাবে যেতে বেশ সময় লাগে। সেকথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসগুলোতে যাতায়াতের সুবিধার্থে সাইকেল, ই-বাইক, স্টুডেন্ট কোচসহ বিভিন্ন বাহনের ব্যবস্থা করে রেখেছে। সবাই বিনা পয়সায় সাইকেল ব্যবহার করতে পারলেও ই-বাইক এবং স্টুডেন্ট কোচের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে ব্যবহারের সুযোগ পায়। কোনরকম পাবলিক বাস, মেট্রোরেল ক্যাম্পাসের ভিতরে প্রবেশ করে না। তবে প্রতিটি ক্যাম্পাসের একের অধিক প্রবেশ কিংবা বাইরে বের হওয়ার রাস্তায় পৃথক পৃথক মেট্রো স্টেশন এবং পাবলিক পরিবহনের কাউন্টার আছে। চীনাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো সবসময় নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা। প্রতিটি গেটে সার্বক্ষণিক কর্তব্যরত সিকিউরিটি বাহিনী আছে। অনেক ক্যাম্পাসে আমাদের দেশের আনসার বাহিনীর মতো সশস্ত্র বাহিনীও খেয়াল করেছি। ক্যাম্পাসের প্রতিটা অলিগলি, ল্যাব, ক্লাস রুম, ডাইনিং রুম, আবাসিক হলগুলোর প্রতিটা ফ্লোর সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার আওতাধীন। সবার চলাচল সবসময় ক্যামেরায় রেকর্ড হতে থাকে, যাতে করে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতর চুরি, ছিনতাই কখনো দেখা যায় না। কোনদিন ভিখারির আনাগোনা চোখে পড়েনি।

কিন্তু আমাদের দেশের দেশের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবিতে উপরিউক্ত বিষয়গুলোর প্রায় সবকয়টির বিপরীত। নিরাপত্তার বালাই ক্যাম্পাসে আছে বলে আমার মনে হয়নি। ক্যাম্পাসকে বাইপাস সড়ক হিসেবে অধিকাংশ ঢাকাবাসী প্রাইভেটকার, রিক্সা, ভ্যান চালানোর কাজে ব্যবহার করেন। ক্যাম্পাসের ভিতর ভিখারির সাথে চোর, ছিনতাইকারীর এতটাই আধিক্য যেখানে মোবাইল, মানিব্যাগ, মহিলাদের গহনা ছিনতাই একটা নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার। পূর্ব থেকেই ঢাবির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ক্যাম্পাসের ভিতর নতুন করে মেট্রোস্টেশন নির্মাণ আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে হয়। এই মেট্রো দিয়ে যেকোন ধরনের বহিরাগত ক্যাম্পাসে নির্দ্বিধায় প্রবেশ করতে পারে। যদিও ঢাবির প্রবেশ মুখগুলোর কোথাও বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে তেমন কোনো সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হিসেবে এই নিরাপত্তাটুকু থাকা উচিত বলে আমার মনে হয়। ক্যাম্পাসের ভিতরে অবাধে বহিরাগতদের ব্যক্তিগত পরিবহন প্রবেশ কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। নীতি নির্ধারকদের বিষয়গুলো নিয়ে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

অন্য একদিনের একটি ছোট্ট ঘটনা উল্লেখ করছি। বখশীবাজার মোড় থেকে ঢাবির দিকে রওনা হয়েছি। বলে রাখা ভালো, বখশীবাজার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে আসতে রাস্তার ডানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বাদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সামনে ঢাবি ক্যাম্পাস। দেশের সর্ববৃহৎ শীর্ষ তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগসূত্র এই রাস্তাটি। তাই এই রাস্তাটি আমার কাছে বরাবরই বেশ গৌরবের এবং ঐতিহাসিক বলে মনে হয়। ঢাবিতে পড়ার সুবাদে ছাত্রাবস্থায় বহু যাতায়াত করা হয়েছে এই রাস্তা দিয়ে। তখনই মনে হতো দেশ সেরা তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্তকারী এমন রাস্তা বিশ্বে খুব কমই আছে। অর্থাৎ একথা অনস্বীকার্য যে, এই রাস্তা দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং দেশের কর্ণধাররা যাতায়াত করে। এসব কথা মাথায় রেখে সেদিন দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের হাত ধরে ঐ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাব বলেই ঠিক করলাম। উদ্দেশ্য বাচ্চাকে দেশসেরা তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সামান্য ধারণা দেওয়া। কিন্তু পায়ে হেঁটে যেতে সম্মুখীন হলাম এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার। রাস্তার উভয় পাশে ফুটপাত দখল করে ভাতের হোটেল এবং চায়ের স্টল দেওয়া হয়েছে। তবে মেডিকেল কলেজের পাশে অপেক্ষাকৃত বেশি দোকান। যেখানে রিক্সাওয়ালারা সবাই খাওয়ার জন্য ভিড় করেছে। ফুটপাতের উপচে পড়া এই ভিড় বিস্তৃত হয়েছে রাস্তার মাঝামাঝি পর্যন্ত। অর্থাৎ কোন পথচারী যদি পায়ে হেঁটে যেতে চায় তাহলে তাকে রাস্তার মাঝ বরাবর হেঁটে যেতে হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। ফুটপাত দখল করা এসব ভাসমান খাবারের হোটেল দেখে বিস্মিত হলাম। নিজের কাছে কোনভাবে মনে হল না এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। মনে বিস্ময় জাগল, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারক তথা নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে। এগুলো তাদের নজরে আসে কিনা সেটা ভাববার বিষয়। ভাবাবার বিষয় একজন বিদেশি যদি ক্যাম্পাস পরিভ্রমণে আসে তাহলে এই দৃশ্য দেখে তার মনে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে! এই দৃশ্য দেখে বাচ্চা মেয়েটা এখানে এত মানুষের ভিড় কেন? রিক্সাওয়ালারা সবাই এখানে খাচ্ছে কেন? এসব নানান বিষয় নিয়ে বার বার প্রশ্ন করলেও আমি তেমন কোনো উত্তর দিতে পারিনি।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্ত চিন্তার অবাধ স্থান। যেখানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা অবাধে মুক্ত চিন্তা করার ক্ষেত্র পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবশ্যই জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বহিরাগতরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার যুক্ত পরিবহন ব্যতীত অন্যান্য পরিবহনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত বাহনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাহন থাকা বাঞ্ছনীয়। যেখানে ছাত্রছাত্রীরা অল্প কিছু মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে সমস্ত ক্যাম্পাসে তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারবে। ছাত্রছাত্রীদের হলগুলো হতে হবে যথেষ্ট নিরাপত্তার বেষ্টনী সম্বলিত। হলগুলোতে মানসম্মত খাবার পরিবেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ছাত্রছাত্রীদের মঝেমধ্যে রুচির পরিবর্তনের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা থাকবে। এমনটাই বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখেছি। নীতিনির্ধারকদের মাথায় রাখতে হবে, শুধুমাত্র উঁচু উঁচু বিল্ডিং নির্মাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সুপার শপ টাইপের ছোট খাট বিপনি বিতান থাকতে পারে। তবে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি কোনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সাথে যায় না। সার্বিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধনে বাস্তবসম্মত প্রকল্প নিতে হবে। নীতি নির্ধারকদের যৌক্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নের দিক বিবেচনা করতে হবে। সর্বোপরি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা যাতে বিঘিœত না হয় সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?

গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?

হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০

হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩

কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা

দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত