ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে মেয়রদের বাগাড়ম্বর নয়, কাজ দেখতে চায় মানুষ

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৩ মে ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৪, ১২:০৫ এএম

 

ঢাকার পানি নিকাশ ব্যবস্থা কতটা নাজুক, তার প্রমাণ মিলেছে শনিবার সকালে। ওইদিনের এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক, অলিগলি ও ফুটপাত ডুবে যায়। ফলে নগরবাসীকে হাঁটুসমান দুর্গন্ধময় কালো পানি ভেঙ্গে গন্তব্যে যেতে হয়। বিশেষ করে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের দুর্দশার শেষ থাকে না। মিরপুর এলাকায় বৃষ্টির প্রকোপ বেশি থাকায় ওই এলাকার মানুষজনকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। গত ১৭ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছিলেন, এবার বর্ষায় নগরে কোনো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রও বিভিন্ন সময় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তাদের এসব কথা যে বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছু নয়, বর্ষা মওসুম শুরুর আগেই ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট পানিতে সয়লার হয়ে যাওয়া থেকেই তার সাক্ষ্য মেলে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেশির ভাগ অকার্যকর। ড্রেনগুলো প্রায় সারা বছর ময়লা-আবর্জনায় ভরাট থাকে। সিটি করপোরেশনের সেদিকে খেয়াল থাকে না। বর্ষা এলেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস দেশে বৃষ্টি-বাদল ছিল না। এই সময়টাতে যদি ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হতো তবে মাত্র ৮৭ মি.লি. মিটার বৃষ্টিতে নগরজীবন এভাবে অচল হয়ে পড়তো না। ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করার অনেক গালগল্প আমরা অতীতে শুনেছি। চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। অতীতের মেয়রদের মতো বর্তমানের মেয়রদ্বয়ও কথায় কম যান না। তাদেরও অনেক কথা, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার আমরা শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে সেসবের প্রতিফলন কমই দেখা গেছে। ঢাকার সার্বিক পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক বললেও কম বলা যায়। গোটা নগর দূষণের অবাধ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শব্দদূষণ, বায়দূষণ ও ময়লা-আবর্জনা দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা বিশ্বসেরার অখ্যাতি লাভ করেছে অনেক আগেই। মানব বসবাসের জন্য এ নগর সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের আশঙ্কা, পরিবেশ দূষণ ও নানাবিধ অনাচার যেভাবে চলছে তা অব্যাহত থাকলে এমন সময় আসতে পারে, যখন স্বেচ্ছায় মানুষকে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। ঢাকার বায়ু জনস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য ইত্যাদির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে অতিমাত্রায় ক্যানসারের উপাদান আছে বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে।

যানজটকে ঢাকার প্রধান সমস্যা বললে ভুল হবে না। যানজট নিরসনে বহু মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাতে যানজটের এতটুকু উপশম হয়নি। বরং দিনকে দিন যানজট বাড়ছে। জনমনে প্রশ্ন, তাহলে এত হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে হলো কী? জলাবদ্ধতা নিয়েও একই প্রশ্ন মানুষের। যানজটকে যদি ঢাকার এক নম্বর সমস্যা বলা হয়, তাহলে দুই নম্বর সমস্যা অবশ্যই জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে, বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে জলাবদ্ধতার এতটুকু নিরসন হয়নি। উল্টো এ সমস্যা আরো প্রকট আকার নিয়েছে। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা কোনো বিবেচনাতেই বড় বা রাজধানী নগরীর উপযোগী নয়। নগরের অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ ঘটেছে। সম্প্রসারিত এলাকায় পরিকল্পনা মাফিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে যথেচ্ছাচার হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ড্রেনেজ সিস্টেমের সংস্কার, প্রসারণ ও উন্নয়নে যেসব প্রকল্প নিয়েছে বা বাস্তবায়ন করেছে তাতে প্রচুর ব্যয় হয়েছে। তবে সেই ব্যয় পুরোপুরি কাজে আসেনি। উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, তা প্রায় অনুপস্থিত। ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সচল ও গতিশীল রাখতে হয়। এই কাজটিই হয় না। ময়লা-আবর্জনায় আবদ্ধ ড্রেনে বর্ষা বা বন্যার পানি প্রবেশ করলে সেই পানি উপচে আশপাশে সড়কে, গলিতে, ফুটপাতে স্থান নেয়। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতার অবসান ঘটাতে চাইলে ড্রেনগুলোকে ময়লা-আবর্জনামুক্ত ও সচল রাখা অপরিহার্য।

এক সময় ঢাকায় অনেক খাল ছিল, জলাশয় ছিল, পুকুর ছিল। এসবের মাধ্যমে পানি নিকাশ হয়ে যেতো সহজেই। প্রাকৃতিকভাবে পানি নিকাশের এ ব্যবস্থা এখন নেই বললেই চলে। অধিকাংশ খাল দখল হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। জলাশয়গুলোর বেশির ভাগের অস্তিত্ব নেই। এগুলো দখল-ভরাট ও এর ওপর বাড়ি-ঘর-স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। পুকুরের প্রায় সবই হারিয়ে গেছে। এক খবরে জানা গেছে, ঢাকার সবুজ ও জলাশয়ের ৩১ শতাংশ দখলের শিকার হয়েছে, উদ্ধারের উদ্যোগ নেই। ঢাকা জেলা প্রশাসন ঢাকার ৬২টি পুকুরের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৬২টি পুকুরের মধ্যে ৫০টির এখন আর অস্তিত্ব নেই। পানি নিকাশ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হলে খাল, জলাশায় ও পুকুর পুনরুদ্ধার অত্যাবশ্যক। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে তাকিদ উচ্চারিত হলেও তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ২৬টি খাল আছে, যার কয়েকটিতে সংস্কার শুরু হয়েছে মাত্র। শ্যামপুর, জিরানী, মান্ডা ও কালুনগর খাল উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ সবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় আছে ২৯টি খাল, যার কিছু উদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। খাল উদ্ধার ও সংস্কারের কাজটি আরো অনেক আগে জোরে সোরে করা উচিত ছিল। কিন্তু হয়নি। এনিয়ে কাজের চেয়ে কথা হয়েছে অনেক বেশি। জলাশয় ও পুকুর উদ্ধারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রয়োজ্য। ঢাকাবাসী ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয়, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কর্তা ব্যক্তিদের কথা শুনতে চায় না, কাজ দেখতে চায়। আমরা আশা করবো, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল, জলাশয় ও পুকুর পুনরুদ্ধার এবং ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়ন, বিকাশ ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে যথোচিত উদ্যোগ- পদক্ষেপ অবিলম্বে নেয়া হবে।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?

গর্ভে থাকা সন্তান মারা গেলে মা-বাবা প্রতিদান প্রসঙ্গে?

হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০

হাজীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে কিশোরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুত্বর : আহত ৫০

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩

উত্তরপ্রদেশে নেকড়ের পর এবার রাজস্থানে চিতাবাঘের হামলা, দুদিনে নিহত ৩

কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

কলকাতায় ৪১ দিনের মাথায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা

দুই রাজ্যে সংঘাত, ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ডায়নার সঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল দেহ, এবার ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই ডোডির বাবা

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত