মোদি সরকারের পতন কি অনিবার্য?

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২৮ জুন ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ১২:১১ এএম

বিগত এক দশকে ভারতকে দোর্দ- প্রতাপে শাসন করেছেন নরেন্দ্র মোদী। এতটাই প্রতাপের সাথে শাসন করেছেন যে, তার সামনে বিরোধীদল থেকে শুরু করে যেকোনো শক্তির টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছিল। কংগ্রেসের মতো ঐতিহ্যবাহী এবং দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা প্রাচীন দলকেও কোনো রকমে নাক ভাসিয়ে টিকে থাকতে হয়েছিল। হামলা, মামলা, গ্রেফতার থেকে শুরু করে নানা অপবাদে দলটিকে পর্যুদস্ত করে তুলেছিল মোদী সরকার। অন্যান্য বিরোধীদলকেও একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। মোদী নিজেকে এমন এক উচ্চতায় ভাবতে শুরু করেন যে, তার কথাই শেষ এবং সবার জন্য তা শিরোধার্য। ভারত যে বিশ্বের একটি বহৎ গণতান্ত্রিক দেশ, তা মোদীর কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে অনেকেই ভুলতে বসেছিল। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়ায়, তার ক্ষমতাকে খর্ব করার মতো কোনো শক্তি যেন অবশিষ্ট নেই। এ জন্য মোদী নিজেকে ‘দেবদূত’ বলতেও দ্বিধা করেননি। তার আচার-আচরণ ‘অহংকারি’, ‘ক্ষমতাধর্পী’ এক রাজার মতো হয়ে পড়ে। তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন যে, দশকের পর দশক তিনিই ভারত শাসন করবেন। তবে তার এই খায়েশ পূরণ হয়নি। একদশক প্রতাপের সাথে শাসন করলেও এবারের নির্বাচনে এসে তার সেই প্রতাপ অনেকটাই কমে গেছে। তার দল আগের মতো সরকার গঠনের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জোটের শরিকদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়েছে। ফলে এখন তার সরকারকে বিরোধীদল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘দুর্বল’ সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করছে। কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তো বলেই ফেলেছেন, বিজেপির জোট এনডিএ কোনোরকমে সরকার গড়েছে। সরকার গড়ার জন-আদেশ নরেন্দ্র মোদী পাননি। তার সরকার সংখ্যালঘু। যেকোনো সময়ে ওই সরকারের পতন ঘটতে পারে। শুধু খাড়গেই নন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও একই কথা বলেছেন। তারা কেন এ কথা বলছেন? এর কারণ হচ্ছে, বিগত দুই টার্মে মোদীকে তার জোটের শরিকদের কথা গুরুত্ব দিতে হয়নি। বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েই তিনি ইচ্ছা মতো সরকার পরিচালনা করেছেন। এবার তা হবে না। তার সেই একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব হয়েছে। তার জোটের প্রভাবশালী দুই শরিক দল তেলেগু দেশম পার্টি ও বিহারের জনতা দল ইতোমধ্যে সে ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছে। জোটের অন্যান্য শরিকও নড়েচড়ে বসছে। অর্থাৎ মোদীকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে জোটের শরিক দলগুলোর কথা শুনতে হবে। দলগুলোকে উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে না। বলা যায়, মোদীর ক্ষমতায় টিকে থাকার সুতা এখন জোটের দলগুলোর হাতে। যেকোনো সময় টান দিলে মোদীর চেয়ার উল্টে পড়ে যাবে। তাছাড়া সংসদে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী বিরোধীদল রয়েছে। মোদী যদি আগের মতো নিজের একক ইচ্ছায় ভারতকে পরিচালনা করতে যান, তাহলে তার তখতেতাউস যেকোনো সময় উল্টে যেতে পারে। অতীতে ভারতে এ ধরনের অনেক নজির রয়েছে।

দুই.
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তখন একটা শঙ্কা ছিল, তিনি যে ধরনের মুসলমানবিদ্বেষী লোক, তাতে ভারতের মুসলমানদের দুর্দশা আরও বাড়বে। তবে সেসময় নির্বাচনী জনসভাগুলোতে তিনি মুসলমানদের আশ্বস্ত করেছিলেন এবং তাদের ভোট টানতে অনেক মিষ্টি কথা বলেছিলেন। এতে মুসলমানরাও আশ্বস্ত হয়ে তাকে বিপুল সমর্থন দেয়। শুধু তাই নয়, সে সময় মোদীর নির্বাচনী খরচ জোগাতে ভারতের বড় বড় ব্যবসায়ীরা উঠেপড়ে লাগে। তারা প্রচুর অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে। সব দিক থেকেই মোদী সমর্থন পান। এতে তার দল বিজেপি ভূমিধ্বস বিজয় লাভ করে। তবে ক্ষমতায় এসেই তিনি ধীরে ধীরে তার পুরণো চরিত্রে ফিরতে শুরু করেন। হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা এবং ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে উঠেপড়ে লাগেন। এজন্য প্রথমেই ভারতকে মুসলমানমুক্ত করার উদ্যোগ নেন। সিএএ, এনপিআর, এনআরসির মতো নাগরিকত্ব আইন করেন। এসব আইনের রেশ ধরে মুসলমানদের ভারতছাড়া করার জন্য নানা ছুতোয় নিপীড়ন-নির্যাতন শুরু হয়। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসকে লেলিয়ে দেয়া হয়। মুসলমানদের উপর নেমে আসে এক কালো সময়। আজান দেয়া, ঈদ ও জুমআর নামাজসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে বাধা দেয়া হয়। এমনকি মসজিদে ঢুকতেও মুসলমানরা বাধার মুখে পড়ে। ফ্রিজে গরুর গোশত রাখা নিয়ে মুসলমানদের পিটিয়ে মারা হয়। ফ্রিজে গরুর গোশত রাখার অভিযোগে মুসলমানদের ১১টি বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। বছর কয়েক আগে আসামে এক মুসলমানকে পুলিশ গুলি করে হত্যার পর তার লাশের উপর উগ্র এক হিন্দু ফটোগ্রাফারের লাথি মারার দৃশ্য তো বিশ্বব্যাপী ঘৃণার প্রতীক হয়ে রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, আরএসএস ও গেরুয়াপরা উগ্র হিন্দুরা মুসলমানদের হত্যা-নির্যাতন করার পেছনে মোদী সরকারের প্রচ্ছন্ন ইন্ধন রয়েছে। তাদের প্রতিরোধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কংগ্রেসসহ বিরোধীদলগুলো এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা দুরুহ হয়ে পড়ে। অবশ্য তাদেরও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে মোদীর হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশন নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি। ভারতের সুশীল ও বুদ্ধিজীবী মহল এ নিয়ে কলম ধরেনি। তাদের কণ্ঠস্বরও নিচু ছিল। সংখ্যালগু মুসলমানদের পক্ষে কেউই জোরালো অবস্থান নেয়নি। প্রায় সকলেই মোদীবন্দনায় মেতে উঠে। মোদী নিজেকে দেবতা মনে করতে থাকেন। এই দেবতাই কিনা এবারের নির্বাচনে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। নির্বাচনের আগে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থানে জাকজমকপূর্ণভাবে মন্দির উদ্বোধন করে তিনি ভারতবাসীকে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা ছাড়া বিকল্প নেই। ভারতকে মুসলমানমুক্ত করতে হবে। মোদী মনে করেছিলেন, এতে ভারতবাসী তাকে তার কাক্সিক্ষত চারশ’র বেশি আসনে জিতিয়ে দেবে। দেখা গেছে, ভারতবাসী তার এই খায়েশের সাথে একমত হতে পারেনি। তারা সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতাই তাকে দেয়নি। এটি ভারতকে মোদীর হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা কিংবা তার স্বপ্ন ধুলিস্যাত হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা এবং তাকে দুর্বল করে দিয়েছে। তার হিন্দুত্ববাদ নীতি ভারতের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে তার ভিত্তি অনেকটাই নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া, লোকসভায় তাকে বিরোধী দলের কঠোর বাধার মুখে পড়তে হবে। গত ১০ বছর লোকসভায় কোনো বিরোধীদলের নেতা ছিলেন না। কারণ, বিরোধীদলের নেতা হতে গেলে লোকসভার মোট আসনসংখ্যার দশ শতাংশ বা ৫৪টি আসন প্রয়োজন। এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি। গত ১০ বছরে কোনো বিরোধী দলই এতগুলো আসন পায়নি। ফলে মোদী তার ইচ্ছামতো লোকসভা পরিচালনা করতে পারতেন। এবার তা সহজ হবে না। বিরোধীদলের নেতা হয়েছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী। মোদীকে বিরোধীদল তথা বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীকে মোকাবেলা করেই সরকার পরিচালনা করতে হবে।

তিন.
মোধী ক্ষমতায় আসার পর তার শাসনের ধরন দেখে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছিল। প্রথমত, নিজেকে একনায়কে পরিণত করা। দ্বিতীয়ত একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার প্রধানদের ব্যক্তিগত ধর্মাচার যাই হোক না কেন, তাকে রাষ্ট্রের মূল নীতি অনুযায়ী পরিচালনা করতে হয়। গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রের ধারা বজায় রাখতে হয়। মোদী ক্ষমতায় এসে ভারতের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ধারাকে পাশ কাটিয়ে নিজের ব্যক্তিগত ধর্মাচার দিয়ে দেশ পরিচালনা শুরু করেন। এক্ষেত্রে যাতে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে, তার জন্য কঠোরতা অবলম্বন করেন। গণতন্ত্রে যে ব্যক্তির ইচ্ছায় দেশ পরিচালিত হয় না, জনগণের ইচ্ছায় পরিচালিত হয়, তা মোদী অস্বীকার করতে চেয়েছেন। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তার আচরণে কর্তৃত্ববাদ ফুটে উঠে, যা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পছন্দ করেনি। বহু বছর ধরে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি খর্ব করা তারা মেনে নিতে পারেনি। তারা ধর্মীয় মোড়কে নয়, মুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশে স্ব স্ব ধর্ম পালনের প্রতি বেশি আগ্রহী। ফলে এবারের নির্বাচনে মোদীর উগ্র ধর্মীয় নীতির মাধ্যমে দেশ পরিচালনার নীতি ভোটাররা বয়কট করেছে। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে বিগত এক দশকে মোদীর শাসনামল তারা মেনে নিয়েছিল কেন? এর জবাবে বলা যায়, তারা মেনে নেয়নি। উপমহাদেশের জনগণ বৈশিষ্ট্যগতভাবে আবেগপ্রবণ। শাসক শ্রেণী তাদের এই আবেগকে পুঁজি করে নির্বাচনের সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মন গলায়। এতে তারা খুশি হয়ে এবং এক ধরনের ঘোরের মধ্যে থেকে শাসক শ্রেণী নির্বাচিত করে। মোদী বিগত একদশকে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের হিন্দুত্ববাদ দিয়ে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন। তার প্রথম মেয়াদের নির্বাচনে মুসলমানদেরও নানা ইতিবাচক কথা বলে আস্থায় নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মুসলমানদের প্রতি তার বিরূপ নীতি কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠে, তা তারা হাড়েহাড়ে টের পায় এবং এখনও পাচ্ছে। অন্যদিকে, হিন্দু ভোটাররাও মোদীর শাসনের কুফল বুঝতে পারে। বুঝতে পারে, মোদী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট এবং ভারতকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ফলে এবারের নির্বাচনী জনসভাগুলোতে মোদী প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথা বলে হিন্দুদের মন জয় করার কৌশল অবলম্বন করলেও তাকে সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় আসনও দেয়নি। বরং কোনঠাসা হয়ে থাকা কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলকে ভোট দিয়ে শক্তিশালী করে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মধ্যে নিয়ে এসেছে। এমনকি তার জোটের শরিক দলগুলোর কাছেও কর্তৃত্ববাদ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ফলে মোদীর পক্ষে আগের মতো ওয়ান ওয়ে বা একমুখী নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি যেভাবে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আদালতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এখন তা অনেকটাই খর্ব হয়ে যাবে। তার আঙ্গুলের হেলনিতে প্রতিষ্ঠানগুলো নড়বে চড়বে না। ভারত তার গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে ফিরে পাবে বলে আশা করা যায়।

চার.
মোদীর কর্তৃত্ববাদ শুধু তার দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, তার প্রতিবেশীদের ওপরও গিয়ে পড়ে। তার শাসনামলেই প্রতিবেশী দেশগুলো ভারত থেকে দূরে সরে যায়। নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এখন আর ভারতের আধিপত্যকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা প্রতিবেশী দেশ তো বটেই, ভারতের জনগণের কাছেও কমেছে। তার শপথ অনুষ্ঠানে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর পাশাপাশি উপহমাদেশের দেশগুলোর সরকার প্রধানদের খুব একটা উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ থেকেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিশ্বে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমেছে। এর অন্যতম কারণ, তার উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি, গণতন্ত্রকে সংকুচিত করা ও একনায়কতান্ত্রিক আচরণ। তার এক দশকের শাসনামলে ভারতের গণতন্ত্রের ব্যাপক অবনমন ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের কমবেশি হেরফের হলেও বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ভারতের গণতন্ত্রের অবনমন অনেকেই ভাল চোখে দেখেনি। এর জন্য মোদীর শাসনামলকেই দায়ী করা হয়। তৃতীয়বারের মতো মোদী ভারতে সরকার গঠন করলেও তাকে এখন অনেক জবাবদিহির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আগের মতো কাউকে তোয়াক্কা না করে একক সিদ্ধান্ত নেয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এর কারণ হচ্ছে, এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো তার দল বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাই। কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে স্পষ্ট করেই বলেছেন, আমরা তো চাইব সরকারটা চলুক। দেশের জন্য সেটা ভালো। আমরাও চাই, একসঙ্গে দেশের জন্য কাজ করতে। দেশকে মজবুত করতে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অভ্যাসটাই এমন যে, যা ঠিকঠাক চলে, তাকে চলতে দেন না। তার এ কথা মোদীর জন্য অশনি সংকেত। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, যতই দিন যাবে, মোদী সরকার তত দুর্বল হতে থাকবে এবং মোদীর ক্ষমতা হারানোর শঙ্কাও প্রবল হয়ে উঠবে। এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেসের এক বৈঠকে। তিনি বিজেপিকে সরকার গঠন করতে দেয়া ঠিক হবে না বলে কংগ্রেসকে সরকার গঠনের উদ্যোগী হতে বলেছিলেন। তবে, সে সময় সরকার গড়তে বাড়তি যে সমর্থন দরকার, তা ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে জোগানো সম্ভব ছিল না। কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে তখন উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলেছিলেন। সেই বৈঠকের পর তৃণমূল নেত্রী মমতা দলীয় সাংসদদের এক সভায় বলেছিলেন, আগামী দিনে ইন্ডিয়া জোটই সরকার গঠন করবে। সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। এ থেকে বোঝা যায়, মোদী সরকারের ভিত্তি কতটা দুর্বল। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। মোদীর জোটের প্রভাবশালী দলগুলো যদি ইউটার্ন নেয়, তাহলে মোদীর গদী যে তৎক্ষণাৎ উল্টে যাবে, সেই শঙ্কাই মমতা ব্যানার্জি ও কংগ্রেস সভাপতির খাড়গের কথায় ফুটে উঠেছে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দৌলতপুর গার্লস কলেজ কেন্দ্রে ৪ শিক্ষককে বহিস্কার

দৌলতপুর গার্লস কলেজ কেন্দ্রে ৪ শিক্ষককে বহিস্কার

ভাঙা দাঁতই চেনাল হারানো ভাইকে! ১৮ বছর পর দেখা বোনের সঙ্গে

ভাঙা দাঁতই চেনাল হারানো ভাইকে! ১৮ বছর পর দেখা বোনের সঙ্গে

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিতে ঢাবি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, ক্লাস বন্ধ ঘোষণা

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিতে ঢাবি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, ক্লাস বন্ধ ঘোষণা

এইচএসসি : নকলে সহযোগিতায় শিক্ষকসহ ১১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

এইচএসসি : নকলে সহযোগিতায় শিক্ষকসহ ১১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

বিপর্যস্ত দিল্লিতে ফের ভারী বর্ষণের সতর্কতা, মৃত ১১ জনের

বিপর্যস্ত দিল্লিতে ফের ভারী বর্ষণের সতর্কতা, মৃত ১১ জনের

ইসরাইলের আগ্রাসনে গাজায় নিহত ৪০

ইসরাইলের আগ্রাসনে গাজায় নিহত ৪০

দুমকীতে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ৩১৮ বস্তা সরকারি চাল জব্দ,

দুমকীতে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ৩১৮ বস্তা সরকারি চাল জব্দ,

কেয়ামত নামিয়ে আনার অস্ত্র আছে ইসরায়েলের : ইয়ের কাটজ

কেয়ামত নামিয়ে আনার অস্ত্র আছে ইসরায়েলের : ইয়ের কাটজ

হিমালয়ে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করছেন লাদাখের আইসম্যান

হিমালয়ে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করছেন লাদাখের আইসম্যান

বড় বড় সাংবাদিকদের কিনে এসেছি, সব থেমে যাবে, যা বলছেন নেটিজেনরা

বড় বড় সাংবাদিকদের কিনে এসেছি, সব থেমে যাবে, যা বলছেন নেটিজেনরা

এবার আত্মঘাতী রোবট, দানা বাঁধছে রহস্য

এবার আত্মঘাতী রোবট, দানা বাঁধছে রহস্য

৩০ অক্টোবরের মধ্যে ফাইভ-জি সেবা চালুর নির্দেশ!

৩০ অক্টোবরের মধ্যে ফাইভ-জি সেবা চালুর নির্দেশ!

বন্যায় ভেসে গেলো আট হাজার পুকরের ৭২ কোটি টাকার মাছ

বন্যায় ভেসে গেলো আট হাজার পুকরের ৭২ কোটি টাকার মাছ

সাগরে বোতল দেখে মদ ভেবে পান, ৪ জেলের মৃত্যু

সাগরে বোতল দেখে মদ ভেবে পান, ৪ জেলের মৃত্যু

চীনের ১৪ সাংস্কৃতিক নিদর্শন ফিরিয়ে দিলো আর্জেন্টিনা

চীনের ১৪ সাংস্কৃতিক নিদর্শন ফিরিয়ে দিলো আর্জেন্টিনা

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস আজ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস আজ

গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে তেল আবিবে বিক্ষোভ ইসরায়েলিদের

গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে তেল আবিবে বিক্ষোভ ইসরায়েলিদের

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু

হারিয়ে গেল বিশ্বখ্যাত গানের পাণ্ডুলিপি! আদালতের দ্বারস্থ শিল্পী

হারিয়ে গেল বিশ্বখ্যাত গানের পাণ্ডুলিপি! আদালতের দ্বারস্থ শিল্পী

আমেরিকার গুরুত্বে মধ্যপ্রাচ্য, কারণ...

আমেরিকার গুরুত্বে মধ্যপ্রাচ্য, কারণ...