ঢাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ দখলমুক্ত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম

১৯৮৮ সালে দেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। ১৯৮৬ ও ১৯৮৭ সালেও বন্যা হয়। ওইসব বন্যায় রাজধানী ঢাকাও প্লাবিত হয়। বিশেষ করে ১৯৮৮ সালের বন্যায় রাজধানীর অন্তত ৯৫ শতাংশ এলাকা ডুবে যায় এবং বেশ কিছুদিন ওই অবস্থায় থাকে। গণদুর্ভোগ ভয়াবহ রূপ নেয়। তখন বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানী রক্ষায় আশু পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়। উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে পুরানো ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ইনকিলাবের খবরে প্রকাশ, ওই ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৩২ কিলোমিটারের দু’পাশ দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। প্রভাবশালীদের মধ্যে রাজনীতিকও আছে। প্রায় ১৫ শ’ দলখদার তাদের দখলিকৃত জমিতে আবাসন প্রকল্প, দোকানপাট, বিপণীবিতান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। বাঁধের মালিকানা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হলেও দখলদারদের উচ্ছেদ করে বেড়িবাঁধ পুনরুদ্ধারে কোনো জোরালো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের অনীহাও লক্ষ করা গেছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুর-গাবতলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধে দখলদারদের দখল বহাল রাখার বিনিময়ে মাসিক মোটা অংকের অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই অবৈধ ইনকামকে বেড়িবাঁধ পুনরুদ্ধারে অনীহার অন্যতম কারণ মনে করা হয়। খবরে এও জানানো হয়েছে, বেড়িবাঁধ উদ্ধারে কয়েক দফা চেষ্টা করেও সুফল পাওয়া যায়নি। যেমন, ২০১৯ সালে পাউবোর পক্ষ থেকে বাঁধের জমিউদ্ধারে ঢাকা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু পাউবো জেলা প্রশাসন থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি। ২০১৯ থেকে ২০২৪ এর মাঝখানে কয়েক বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পাউবো কী উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। দখলদাররা স্থানীয় ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাদের অনেকে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বাঁধের জমির মালিক সেজে বসেছে। কেউ কেউ জমি বিক্রীও করে দিয়েছে। এনিয়ে মামলা-মোকদ্দমা করেছে অনেকে। এতে জমি উদ্ধার ব্যহত হচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে, দখলদাররা স্থানীয় ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। দ্বিতীয়ত, পাউবোর জমি উদ্ধারে তেমন গরজ নেই। তৃতীয়ত, জেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা মিলছে না। চতুর্থত, মামলা-মোকদ্দমার কারণে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সম্ভবপর হচ্ছে না। তাহলে প্রশ্ন, বেড়িবাঁধের জমির অবৈধ দখল কী অব্যাহতই থাকবে? অবৈধ দখল উচ্ছেদে যত বাধা ও প্রতিবন্ধকতাই থাক, তা যে অসম্ভব নয়, সেটা অনেক ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। ডিএনসিসি সম্প্রতি তিন দিন অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় প্রায় ৭০টি স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে ২০ বিঘা জমি উদ্ধার করেছে। খালের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর জায়গাও উদ্ধার করে খালের পুন খননও শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হলো, ডিএনসিসি পারলে পাউবো পারবে না কেন? পাউবো জমি অধিগ্রহণ করে সমন্বিত বুড়িগঙ্গা-তুরাগ নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। এসব অধিগ্রহণকৃত জমির কাগজপত্র, জমির পরিমাণ, মালিকানা, মানচিত্র ইত্যাদি পাউবোর কাছে থাকার কথা। সেই কাগজপত্র ও নথিতথ্য মোতাবেক অভিযান পরিচালনা করলেই বাঁধের অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধার হতে পারে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। একথা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, রাজধানীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ এখন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বন্যার কবল থেকে রাজধানীর সুরক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। বাইরের পানি রোধই এই বেড়িবাঁধের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না, ভেতরের পানি বের করে দেয়ারও লক্ষ্য ছিল। এজন্য নিকাশী যন্ত্রপাতি বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছিল। সেই পানিনিকাশ ব্যবস্থাও এখন অচল। সামান্য বৃষ্টি হলেই গোটা শহর জলাভূমিতে পরিণত হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন বা আবদ্ধ পানি বের করে দেয়ার কোনো উপায় নেই। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পানিনিকাশ ব্যবস্থা বহাল থাকলে জলাবদ্ধতার অবর্ণনীয় দুর্ভোগ থেকে নগরবাসী রেহাই পেতে পারতো। বেড়িবাঁধ ও বাঁধের জায়গায় কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে বস্তি, কারখানা প্লাস্টিক বা গো-খামার ইত্যাদি। এসবের কারণে বেড়িবাঁধ এলাকার পরিবেশ অত্যন্ত দুঃসহ হয়ে পড়েছে। বাঁধ এলাকা অপরাধের অভয় ক্ষেত্রেও পরিণত হয়েছে। খুন, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি প্রায়ই সেখানে সংগঠিত হতে দেখা যায়।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ দখলমুক্ত করাসহ তার পরিবেশ ও নিরপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পাউবো কেন বেড়িবাঁধ দখলমুক্ত করতে পারছে না, সেটা দেখার দায়িত্ব মন্ত্রণালয় এড়িয়ে যেতে পারে না। মন্ত্রণালয়কে এব্যাপার পাউবোর জবাবদিহি নেয়াসহ দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পেতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নির্দেশনা আবশ্যক হলে, নিতে হবে। এছাড়া বাঁধ এলাকার আইন-শৃখলা ও পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকা দরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে দক্ষ, অভিজ্ঞ মন্ত্রীরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের আন্তরিকতা উদ্যামে ও দায়িত্বশীলতার ওপর জনগণের আস্থা রয়েছে। তারা এদিকে দৃষ্টি দেবেন, সেটাই প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনেরও সক্রিয় ভূমিকা থাকতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, পানি সম্পদ, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং দুই সিটি কর্পোরেশন এ ব্যাপারে একটি সমন্বিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে, যাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবঁাঁধ দ্রুত দখলমুক্ত করাসহ তার পরিবেশ-পরিস্থিতি নিরাপদ ও উন্নত করা সম্ভব হয়।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রুমানিয়াকে অনায়াসে হারিয়ে ১৬ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনাল

রুমানিয়াকে অনায়াসে হারিয়ে ১৬ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনাল

আবারও সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা

আবারও সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা

প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নিহত।

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নিহত।

ঝিনাইদহে সাংবাদিক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ঝিনাইদহে সাংবাদিক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ফেনীতে বন্যায় ৮ গ্রাম প্লাবিত : দু’জনের মৃত্যু

ফেনীতে বন্যায় ৮ গ্রাম প্লাবিত : দু’জনের মৃত্যু

টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বেড়েছে উৎপাদন

টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বেড়েছে উৎপাদন

ঝালকাঠিতে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ থেকে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ঝালকাঠিতে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ থেকে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

দাউদকান্দিতে বৃদ্ধাকে হত্যার ৩ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার : মালামাল উদ্ধার

দাউদকান্দিতে বৃদ্ধাকে হত্যার ৩ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেফতার : মালামাল উদ্ধার

পঞ্চগড়ে পানিবন্দি অর্ধশত পরিবার

পঞ্চগড়ে পানিবন্দি অর্ধশত পরিবার

মাগুরায় গলাকাটা অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

মাগুরায় গলাকাটা অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

রূপায়ণের উপহারে হাসি ফুটল সিলেটে বন্যার্ত কয়েক হাজার পরিবারে

রূপায়ণের উপহারে হাসি ফুটল সিলেটে বন্যার্ত কয়েক হাজার পরিবারে

ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার দাবিতে দুমকীতে বিক্ষোভ

ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার দাবিতে দুমকীতে বিক্ষোভ

বিজিএমইএ দফতরে চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল

বিজিএমইএ দফতরে চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল

লোকালয়ে বুনো হাতির পাল

লোকালয়ে বুনো হাতির পাল

আশাশুনিতে কারিগরি প্রশিক্ষণের ওয়ার্কশপ মেশিন ১০ বছর পড়ে আছে

আশাশুনিতে কারিগরি প্রশিক্ষণের ওয়ার্কশপ মেশিন ১০ বছর পড়ে আছে

যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন

যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন

গরমে পানি পানের বিকল্প নেই

গরমে পানি পানের বিকল্প নেই

সাপের কামড় : চিকিৎসা ও সচেতনতা জরুরি

সাপের কামড় : চিকিৎসা ও সচেতনতা জরুরি

দুর্নীতির শাস্তি নিয়ে সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ভাইরাল

দুর্নীতির শাস্তি নিয়ে সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ভাইরাল