কোটা বাতিলে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই কাম্য
০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:১৫ এএম

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির কারণে গত রোববার রাজধানী ঢাকা স্থবির হয়ে পড়ে। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং সড়ক-মহাসড়কে অবরোধ আরোপ ও বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায়। সোমবারের জন্যও একই কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা। কোটা বিরোধী আন্দোলন দ্রুত দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে, তেমন আলামত স্পষ্ট। ওদিকে সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। এই দুই আন্দোলন গোটা শিক্ষাঙ্গনকে নৈরাজ্য ও বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থার নিরসনে সরকারের তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন কিংবা শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রত্যয় বাতিলের আন্দোলন কোনোটাকেই পাত্তা দিচ্ছে না সরকার। বিরোধীদলের উসকানি ও সমর্থন আছে আন্দোলনে, কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বক্তব্যে এমন কথা উঠে এসেছে। কেউ কেউ এর পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ আছে বলে দাবি করেছেন। যে কোনো দাবিতে যে কোনো মহলের আন্দোলন হতেই পারে। তা নিয়ে বেখাপ বক্তব্য দেয়া কারোই উচিত নয়। সরকারের বরং উচিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমঝোতায় এসে আন্দোলনের পাঠ চুকিয়ে দেয়া। সরকারের তেমন কোনো মনোভাব বা সদিচ্ছার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। বলে রাখা দরকার, স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি ছিল। বিভিন্ন সময়ে তা কমে বা বেড়ে ২০১৮ সাল নাগাদ দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী সাকুল্য কোটা যে কোনো বিবেচনায় অত্যন্ত বেশি। শতকরা ৫০ ভাগের বেশি চাকরি কোটাওয়ালারা নিয়ে যাবে আর অবশিষ্ট চাকরি মেধার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে, এটা ন্যায়োচিত হতে পারে না। সরকারের কর্ম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এটা নেতিবাচক ফল দিতে বাধ্য। এ কারণেই সে আন্দোলনে বিপুল জনসমর্থন সংযুক্ত। যা হোক, আন্দোলনের চাপে-চাপে সরকার নবম থেকে ১৩তম গ্রেড প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোটা সম্পূর্ণ তুলে দেয়। আন্দোলনকারীরা কোটা ব্যবস্থার ‘সংস্কার’ চেয়েছিল আর সরকার কোটা ব্যবস্থাটাই ‘বাতিল’ করে দেয়। সরকারের জারিকৃত পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয় ২০২১ সালে। রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ সাত জন। যার রায় হয়েছে গত ৫ জুন। এ রিটের ব্যাপারে আদালত ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর যে রুল দেন, তা চূড়ান্ত শুনানি শেষে অ্যাবসলিউট বা যথাযথ বলে ঘোষণা করেন। রিট আবেদনকারীদের আইনজীবীর মতে, অতঃপর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগ দেয়ার আর কোনো বাধা নেই। হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতেই নতুন করে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে এ আন্দোলন চলছে।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কোটা বিরোধী আন্দোলনের কোনো যুক্তি নেই। তার ভাষায়, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা তো সাবজুডিস’। ‘সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা উচিত’ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, কোটার বিষয়টি সরকার আদালতের ওপরই ছেড়ে দিতে চাইছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এটি যতটা না আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই হওয়া উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। সিদ্ধান্তটা তাঁর। সেটা তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরও অংশ ছিল। ১৯৭২ সালের একটি অস্থায়ী আইনের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা প্রদান করেন। সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিতে কোনো কোটার সংস্থান নেই। চাকরি সংক্রান্ত সুস্পষ্ট বিধান বর্ণিত হয়েছে আর্টিকেল ২৯-এ। সেখানে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার রয়েছে। শুধুমাত্র নারী ও শিশু ও সমাজে যারা অনগ্রসর শ্রেণী, তাদের জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারবে। বলা বাহুল্য, মুক্তিযোদ্ধারা সংবিধান বর্ণিত অনগ্রসর শ্রেণীর পর্যায়ে পড়ে না। সরকারি চাকরি যেখানে আক্রা, সেখানে সেই চাকরির ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, তার সন্তান ও নাতি-নাতনীদের দেয়ার কোনো যুক্তি ও ন্যায্যতা থাকতে পারে না। আদালতের বিষয়ে সরকারের কিছু করণীয় নেইÑ এমন কথাও ঠিক নয়। আদালতের সিদ্ধান্তও সরকার আনতে পারে যদি বিষয়টি যুক্তিযুক্তভাবে আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন সরকারি আইন কর্মকর্তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, যা নির্বাহী বিভাগের অংশ, যদি রিসার্চ করে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে দাঁড়ায়, তাহলে তার বিশ্বাস, ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপিল বিভাগ তার কথা শুনবেন এবং হাইকোর্টের আদেশটি বাতিল করবেন। আসলে এ ক্ষেত্রে সরকার কী চায়, সেটাই প্রশ্ন। সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে পারে। আইন-আদালতের মাধ্যমেও পারে। আমরা আশা করবো, সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে অবস্থান নেবে এবং যা করণীয় তা করবে। শিক্ষাঙ্গনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের অবসানেও সরকারের ইতিবাচক অবস্থান ও ভূমিকা কাম্য।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মিনহাজ এক ভয়ঙ্কর বহুরূপী, হাসিনা যার কাছে ফোন করে ৩০ মিনিট কেঁদেছিলেন!

সৈয়দপুরে রেললাইনের দুই ধারে ঈদের বাজার, ঝুঁকিতে ক্রেতা-বিক্রেতারা

ইরানের গ্রেকো-রোমান দল এশিয়া চ্যাম্পিয়ন

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা আদালতের

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের তিনগুণ বেশি প্রাইজমানি পাবে ক্লাব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা

ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সারকন্যা কুয়াকাটা

মোরেলগঞ্জের সেই ২৮ ইঞ্চির মিলির বাড়িতে ঈদ উপহার নিয়ে হাজির উপজেলা প্রশাসন

নিরাপদ ঈদ উদযাপনে কঠোর নিরাপত্তা

ঈদ ঘিরে ওটিটিতে জমজমাট আয়োজন

মাগুরায় দেশী পণ্য ভারতীয় বলে বিক্রি ভোক্তা অধিকারের অভিযানে জরিমানা

আরিচায় যমুনার তীরে বারুনীর স্নানে মানুষের ঢল

পিরোজপুরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ৮০ জন পেলেন হেলথ কার্ড

কটিয়াদীতে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, যুবক নিহত

লক্ষ্মীপুরে অবৈধভাবে ভবনসহ ৪ কোটি টাকা সম্পত্তি দখল, গ্রেপ্তার ৪১

কুমিল্লার সর্ববৃহৎ ঈদগাঁ ঐতিহাসিক দড়িয়ারপাড়ে প্রতিবছরে মুসল্লির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে

রাজবাড়ীতে এক মাস পর অপহৃত নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী উদ্ধার , একজন গ্রেপ্তার

সিগন্যাল চ্যাট ফাঁস হওয়ায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ট্রাম্প প্রশাসনের

ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রীর চাপ নেই

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লালমোহন পৌরসভায় ভিজিএফ’র চাল বিতরণ করেন ইউএনও শাহ আজিজ

শতাধিক পরিবারের মাঝে হিতকরী'র গরুর গোশত বিতরণ