ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ এএম

অনেক দিন ধরে নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তারা আয়ের সাথে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। খরচ কমিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। যা আয় করে, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অত্যন্ত কষ্টে তারা জীবনযাপন করছে। নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সময় থেকেই শুরু হয়েছে। সে সময় ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্ববাজারে দামবৃদ্ধির অজুহাত দেয়া হয়েছিল। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। মানুষের কষ্টেরও লাঘব হয়নি। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী একশ্রেণির বাবসায়ী সিন্ডিকেটের জড়িত থাকার বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। পতিত স্বৈরাচারী সরকার তা জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, সিন্ডিকেটের কাছে সরকার অসহায়। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও তাদের দুর্দশা অব্যাহত থাকে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হওয়ার পর মানুষ আশা করেছিল, নিত্যপণ্যের মূল্য তাদের নাগালের মধ্যে আসবে। তা আসেনি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ধ্বংস করে যাওয়া অর্থনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যাংক ও আর্থিক খাতসমূহে সুশাসন ফিরিয়ে আনার সংস্কারের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভাল। তবে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেখানে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস চলছে, সেখানে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ প্রশ্ন জেগেছে, সবকিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও দ্রব্যমূল্য কেন কমছে না? সমস্যা কোথায়? স্বৈরাচারী সরকারের সময় চাল, ডাল, শাক-সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, গোশত, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে স্বৈরাচারের নেতাকর্মী ও পুলিশ ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি করত। এখন তা থেকে মুক্ত। তাহলে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে কেন? অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে কিছু কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। ডিজেল, পেট্রলসহ জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে। অথচ এর প্রভাব বাজারে পড়ছে না। নিত্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখীই রয়ে গেছে। আজ এক দামে কিনলে পরদিন গিয়ে দেখা যায় দাম আরও বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত হতাশার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত চাল রয়েছে। তারপরও চালের দামবৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক। এখানে মিলারদের কারসাজি রয়েছে কিনা, তা সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ‘জীবন দিয়ে রক্ষা করা’র ঘোষণা দেয়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে। তারা যে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলবে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। ইতোমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ী ও তাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছেন। অর্থনীতিকে গতিশীল এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি ‘গুড ম্যাসেজ’। এখন ব্যবসায়ীদের উচিৎ, দ্রব্যমূল্য কমাতে তাদের উদ্যোগী হওয়া। দেশ ও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা। তাদের মধ্যে কারা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত, তা তারা ভালো করেই জানেন। এদের নিবৃত্ত করাও তাদের দায়িত্ব। তাদের মনে রাখতে হবে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে তাদের পুরনো মানসিকতা বদলাতে হবে। মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসা নয়, বরং সৎ, মানবিকতা ও দেশের সেবার মানসিকতা নিয়ে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে তাদের ভূমিকা পালন করতে হবে।

আমরা বরাবরই বলে আসছি, ছাত্র-জনতার সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ, সাধারণ মানুষের নিত্যকার যেসব সমস্যা, তা নিরসনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুটে-মুজুরসহ সবশ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ ও জীবন দেয়ার অন্যতম কারণ ছিল, স্বৈরাচারী সরকারের কাছে তাদের জীবনজীবিকা উপেক্ষিত থাকা। কোনো দিক দিয়েই তাদেরকে স্বস্তিতে রাখেনি। সাধারণ মানুষের চাওয়া, তারা যাতে উপার্জিত আয়ের মধ্যে থেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। সে সুবিধা স্বৈরাচারী সরকার তাদের দেয়নি। ফলে তারা স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ সাধারণ মানুষের কথা উপলব্ধি করে দৈনন্দিন জীবনে ও তারা যে নিদারুণ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা সমাধানে উদ্যোগী হওয়া। নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে তাদের স্বস্তি দেয়ার জন্য যা করণীয়, তা করা। দেখা যাচ্ছে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করছে সরকার। সরকার কেন তা করবে? এর কারণ ব্যাখ্যা করবে, চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মরিচ, শাক-সবজি, মাছ, গোশতসহ নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা। তাদেরকেই এর জবাব দিতে হবে এবং তা আমলে নিয়ে সারকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার আইনের শাসন, সুশাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি নিশ্চিতে প্রশাসন ও রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রের সংস্কার করবে ঠিকই, তবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন সহজ ও স্বস্তিদায়ক যাতে হয়, সবার আগে সে উদ্যোগ নিতে হবে। বলা বাহুল্য, সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকলে সরকারের প্রতি তাদের সন্তোষ ও সমর্থন দুটোই থাকবে। এতে সরকারের কাজ করা সহজ হবে। সরকারকে এ বিষয়টি উপলব্ধি করে নিত্যপণ্যের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান