ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

নবীজির (সা.) প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যে জেগে উঠুক উম্মাহ

Daily Inqilab ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

বায়তুশ শরফ ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র ঢাকার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পয়লা রবিউল আউয়ালের সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ভালোবাসা ও সুন্নাতের অনুসরণে জীবন গঠন।’ বাক্যটির মধ্যে দু’টি বিষয় আছে। একটি ভালোবাসা, আরেকটি সুন্নাতের অনুসরণ। কুরআন মজীদের ভাষায় রাসূলের আনুগত্য। অনেকের মনে একটি প্রশ্ন হলো, রাসূল (সা.) এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী ভালোবাসার ভিত্তিতে হবে, নাকি তার আদর্শ অনুসরণের নিরিখে হবে? এ কথার সহজ উত্তর, নবী করিম (সা.) এর সঙ্গে মুমিনের সম্পর্ক হবে নবীজির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও তার সুন্নাতের অনুসরণের ভিত্তিতে। দু’টিই আবশ্যক এবং উভয়ের সম্পর্ক লাযেম মালযুমের মতো। অর্থাৎ পরস্পর-অপরিহার্য। ভালোবাসার দাবিদার হলে অবশ্যই তার সুন্নাতের অনুসরণ থাকতে হবে। আর সুন্নাতের অনুসরণ শুদ্ধ হওয়ার জন্য রাসূল (সা.) এর প্রতি ঈমান ও গভীর ভালোবাসা অনিবার্য শর্ত। এই বক্তব্যের ব্যাপারে কারো দ্বিমত বা আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন, যখন রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা ও তার সুন্নাতের অনুসরণের বিষয়ে একটিকে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে আরেকটিকে ছোট, গুরুত্বহীন কিংবা অবহেলা করা হয়।
সমাজে এমন কিছু লোকের জোরদার তৎপরতা আছে, যারা মুখে মুখে আল্লাহর রাসূলের ভালোবাসার দাবিদার। অথচ, তাদের চেহারা সুরত বা আচরণের দিকে তাকালে আল্লাহর রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না। নামায নাই, যাকাত নাই। তারপরও তিনি কিনা আশেকে রাসূল।
ভণ্ড আশেকদের কাণ্ড দেখিয়ে আরেকটি শ্রেণি প্রচার করে বেড়ায় রাসূলের (সা.) প্রেম-ভালোবাসা বলতে আলাদা কিছুর অস্তিত্ব নাই। আসল কথা, সুন্নাতের অনুসরণ। যে ব্যক্তি রাসূলের সুন্নাত মেনে চলে সে-ই রাসূলকে (সা.) ভালোবাসে। এই অনুসরণের মাত্রা যত বেশি বা শক্ত হয়, রাসূলকে (সা.) সে ততখানি বেশি বা শক্তভাবে ভালোবাসে। মুখে মুখে ভালোবাসার বুলি আওড়ানো আর সুন্নাতের প্রতি অবহেলা নিজেকে ও সমাজকে প্রতারিত করার শামিল, পরিষ্কার ভণ্ডামি। কাজেই রাসূলের (সা.) আনুগত্য করলেই হবে, আলাদাভাবে ভালোবাসার দরকার নেই। এমনিতে প্রেম-ভালোবাসা অমূর্ত জিনিস। চোখে দেখা যায় না, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা যায় না।
আসল কথা হলো, যে কোনো বাড়াবাড়িতে ভ্রান্তি আছে। রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা বা আনুগত্যের দাবি নিয়েও বাড়াবাড়ি করা হলে তা হবে প্রান্তিকতা, যা শেষ পর্যন্ত উগ্রতা ও ভ্রান্তির দিকে নিয়ে যায়। একটি শ্রেণি নবীজির (সা.) ভালোবাসা অস্বীকার করতে গিয়ে রাসূলের (সা.) শান-মানকে অস্বীকার করে বসে। এমনকি কথায় কথায় বলে, রাসূলও (সা.) আমাদের মতো মানুষ। এ নিয়ে এক বড় ইসলামী নেতার সঙ্গে আমার তর্কের মতো হয়েছিল। মরহুম এই নেতা বলেছিলেন, কুরআন মজীদে বলা হয়েছে ‘নিশ্চয়ই আমি (রাসূল) তোমাদের মতো মানুষ। আমার প্রতি ওহী নাযিল হয়। এটুকুই পার্থক্য।’ তাকে বলেছিলাম, এই আয়াতের তাৎপর্য ব্যাখ্যায় বিদগ্ধ আলেমগণ বলেছেন, মুহম্মদ (সা.) মানুষ, তবে মানুষের মতো মানুষ নন। বরং তিনি ইয়াকুত পাথর, আর মানুষের উপমা সাধারণ পাথর। সাধারণ পাথরের সাথে ইয়াকুত পাথরের যে তফাৎ নবীজির (সা.) সাথেও সাধারণ মানুষের সেরূপ তফাৎ। আমাকে তিনি বলেছিলেন, এ তো কবির কবিত্ব। সেদিন তার সাথে তর্ক করা সমীচীন মনে করিনি। এখন দেখছি, তার সেই ধারণা বা বিশ্বাস পোষণ করা মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তারা কুরআনের একটি আয়াতই দেখে। নবী-রাসূলদের (সা.) যারা নিজেদের মতো মানুষ মনে করে কুরআন মজীদে যে তাদের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে তা তারা দেখে না। বেশ কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে, কাফেররা নবী-রাসূলদের (সা.) সম্পর্কে বলে, তোমরা তো আমাদের মতো মানুষ। খাও, পর, বিয়ে-শাদী কর, হাঁটে বাজারে যাও। রাসূল বানানোর জন্য আল্লাহ বুঝি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে পাননি। সূরা ইয়াসীনের একটি আয়াতের ভাষ্য এরূপ: ‘তারা বলল, তোমরা আমাদের মতো মানুষ ছাড়া অন্যকিছু নও। দয়াবান আল্লাহ তোমাদের প্রতি কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তোমরা কেবলই মিথ্যাচার করছ।’ (সূরা ইয়াসীন, আয়াত-১৫)।
কুরআন মজীদে নিজের মনমত কোনো আয়াত পেয়ে তার মনগড়া অনুবাদ ও ব্যাখ্যা এবং একই বিষয়ে অন্যান্য আয়াতের বাণী বিবেচনায় না রাখার দুঃখজনক ফল দাঁড়িয়েছে নানা উগ্র দলের উদ্ভব। এসব দল একমাত্র নিজেদের মতবাদপন্থী ছাড়া অন্যদের দেখে না। অন্যদেরকে মুসলমান হিসেবেও স্বীকার করে না। মুখে হাদীসের দোহাই দেয়; অথচ, বাস্তবে সুন্নাত তথা ইসলামী শরীয়া আইন, ফিকাহশাস্ত্রকে অস্বীকার করে। মাযহাব মানে না। ইমামগণের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে।
অন্যদিকে আরেকটি শ্রেণি মুখে মুখে আল্লাহর রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসার বুলি আওড়ায় অথচ, সুন্নাত অনুসরণের ধার ধারে না। তাদের মারাত্মক ভ্রান্তি হলো, তারা প্রকারান্তরে ইসলামী শরীয়াকে অস্বীকার করে। এমনকি নামাজ-যাকাতের মতো ফরজ ইবাদতের প্রতি চরমভাবে অবহেলা দেখায়। পীরের প্রতি ভক্তি বিশ্বাসে সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তাসাউফ বা সুফিবাদ ইসলামের বাইরে ভিন্ন একটি মতবাদ। মাজার-দরগাহ ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে এমন সব কর্মকাণ্ড করে যা ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত নয়। এ শ্রেণিটি গোমরাহীতে নিমজ্জিত। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হলো, তাদের কর্মকাণ্ড ইসলামের আধ্যাত্মিক শিক্ষাকে অস্বীকার করতে মানুুষকে প্ররোচিত করে। আমাদের পরিষ্কার কথা, সত্যিকার মুমিন হতে হলে আধ্যাত্মিকতার সাথে শরীয়া পরিপালন করতে হবে। রাসূল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা ও সুন্নাতের অনুসরণকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো একটিকে অস্বীকার বা খাটো করা হলে বিভ্রান্তি পেয়ে বসবে।
মওলানা রূমী ইসলামী জাহানে বিরাজিত এ জাতীয় বিতর্কের ফায়সালা দিয়েছেন অত্যন্ত মনোজ্ঞ ও যুক্তিপূর্ণভাবে। বিতর্কটি হলো ঈমান তো মনের ব্যাপার। এর জন্য আনুষ্ঠানিক ইবাদতের দরকার আছে কিনা। ঈমানই তো আসল। ইসলাম থাকতে হবে কিনা। মওলানা বলেন:
গার বয়া’নে মা‘নাবী কা’ফী শুদী
খালকে আলম আ’তেলো বা’তেল বুদী
যদি আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যাই যথেষ্ট মনে করা হয়
সমাজ-সংসার অচল হবে বাতিল সব বিষয়-আশয়।
যদি কেবল ঈমান, আধ্যাত্মিকতা ও বিশ^াসই একজন মুমিনের জন্য যথেষ্ট মনে করা হয়, তাহলে গোটা বিশে^র মানব সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে। কেউ ইবাদত বন্দেগী, আল্লাহ-রাসূলের আনুগত্য ও সৎকর্ম সম্পাদনের জন্য উদ্যোগী হবে না। কাজেই ইবাদত বন্দেগীর আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কেবল মনে মনে ঈমান, আল্লাহ রাসূলের মহব্বত পোষণ বা দাবি করলে হবে না।
গর মাহাব্বত ফিকরাত ও মা‘নিস্তী
সুরাতে রূযে ও নামা’যাত নীস্তী
মহব্বত বলতে যদি কেবল চিন্তা, মর্ম ও ভাবের বিষয় বুঝায়
তাহলে নামাজ ও রোজার বাহ্যিক আকৃতি নাই হয়ে যায়।
মওলানা আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে মনের স্বচ্ছতা ও শুদ্ধতাকে অধিক গুরুত্ব দেন সত্য; কিন্তু আনুষ্ঠানিক ইবাদত বন্দেগী তার কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যারা আধ্যাত্মিক সাধনা, আল্লাহর ভালোবাসায় ডুবে গিয়ে শরীয়ত লাগবে না বলে আত্ম-প্রতারণায় ভোগে, তাদের চোখ খুলে দিয়ে মওলানা বুঝাতে চান, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের কোনো কোনো পথ এমন আছে, যা আনুষ্ঠানিক বা দৈহিক ইবাদতের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। মওলানা রূমী তার গদ্যে লেখা কিতাব ফীহে মা ফীহে (রহস্যের ভেতর রহস্য) কিতাবে লিখেছেন:
‘আখরোটের দানার শাস যদি আলাদা মাটিতে পুঁতে দাও, কিছুই জন্মাবে না। যদি খোসাসহ রোপণ কর তবে জন্মাবে। কাজেই জানতে পারলাম যে, বাহ্যিক আকৃতিরও কার্যকারিতা আছে। আর নামাজও বাতেনীতে হয়: (হাদীস শরীফে বর্ণিত) হুযুরে ক্বলব বা জাগ্রত চেতনা ব্যতিরেকে নামাজ হয় না। তবে অবশ্যই কর্তব্য হলো, বাহ্যিক অবয়বে তা পালন করতে হবে। রুকু-সিজদা করতে হবে দৃশ্যমানভাবে। তখনই তুমি লাভবান হবে ও অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।’
আমাদের পারস্পরিক আচরণ ও রেওয়াজ থেকে আরেকটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন:
হাদিয়েহা’য়ে দোস্তা’ন বা’ হামদিগার
নীস্ত আন্দার দূস্তী ইল্লা সুয়ার
বন্ধুদের হাদিয়া উপঢৌকন পরস্পরের জন্য
বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে তা বস্তুগত বিষয়, নয় কিছু অন্য।
অর্থাৎ পারস্পরিক বন্ধুত্ব ভালোবাসা হচ্ছে একটি মনোগত বিষয়। কিন্তু এক বন্ধু অপর বন্ধুর জন্য যে উপহার-উপঢৌকন নিয়ে যায় তা তো বস্তুগত জিনিস। তাতে তো আত্মিক ও মনোগত কোনো বিষয় দৃশ্যমান নয়। এর পেছনে উদ্দেশ্য থাকে।
তা’ গাওয়া’হী দা’দে বা’শাদ হাদয়েহা’
বার মহাব্বতহা’য়ে মুযমার দার খেফা’
উপহার-উপঢৌকন যেন এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে,
গোপনে অনেক ভালোবাসা লুকিয়ে আছে বন্ধুর মনে।
আল্লাহর প্রতি যদি কারো মনে ভালোবাসা বদ্ধমূল হয় তা হলে তা বাহ্যিক ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে অবশ্যই প্রকাশ পাবে। কাজেই নামাজ ও ইবাদত বাদ দিয়ে খোদা প্রেমের দাবি ভিত্তিহীন।
মওলানা রূমী (রহ.) বুঝাতে চান, বাইরের আমল-ইবাদত বিধিবদ্ধ করা হয়েছে, যাতে তা ভেতরের প্রকৃত অবস্থা ও আল্লাহর মহব্বতের পক্ষে সাক্ষী হয়; কিন্তু অনেক সময় বাহ্যিক অবস্থা দেখে ব্যক্তির প্রকৃত অবস্থা বুঝা যায় না। সে কি মোনাফিক, প্রতারক, নাকি খাঁটি মুমিন, আল্লাহর মহব্বতের সত্যিকার দাবিদার তা বুঝা বড় কঠিন। কারণ অনেক ভণ্ড প্রতারকও বাহ্যিক ইবাদত বন্দেগীতে, সাজানো মোনাজাতে পাক্কা ঈমানদারের মতো দেখায়। অথচ, ভেতরে সে আস্ত অন্ধ। এ জন্যে মওলানা মহান আল্লাহর দরবারে সাহায্য চাইছেন। তিনি বলছেন:
হিচ রা’ তাময়ীয দা’নী চোন শাওয়াদ
আঙ্কে হিচ ইয়ানযুর বেনূরিল্লাহ বুয়াদ
জানো, ইন্দ্রিয়কে কীভাবে ভালোমন্দ বিচারক করা যাবে
ইন্দ্রিয় আল্লাহর নূরে আলোকিত হলেই সম্ভব তবে।
সাহাবায়ে কেরাম কথায় কথায় বলতেন, ফেদাকা আবি ও উম্মী। ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) আপনার জন্য ‘আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক’। নবীজি (সা.) কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলে আদবের খাতিরে সাহাবায়ে কেরাম বলতেন, ‘আল্লাহু ওয়া রাসূলুহু আলামু।’ আল্লাহ ও তার রাসূলই (সা.) (জিজ্ঞাসিত বিষয়ের হাকিকত সম্বন্ধে) অধিক ভালো জানেন। একমাত্র আল্লাহই তো অধিক ভালো জানেন। এখানে আল্লাহর সাথে রাসূলের (সা.) নাম যুক্ত করাতে সাহাবায়ে কেরামের ঈমানে কোনো সমস্যা হয়নি, শিরক হয়নি। আল্লাহর রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসার অভিব্যক্তি ছিল এই উচ্চারণ। এমন ভক্তি ভালোবাসার নামই রাসূলের (সা.) প্রতি ঈমান। হযরত যায়েদ ইবনে দাসানা (রা.) কাফেরদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন। ফাঁসি দেয়ার জন্য শূলের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান তাকে জিজ্ঞেস করল, এখন তো তোমাকে ফাঁসিকাষ্টে ঝুলানো হবে। বল তো, যদি তোমার পরিবর্তে মুহম্মদকে ঝুলানো হয় তাতে কি তুমি খুশি হবে? তাহলে তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে।
হযরত জায়েদ (রা.) দৃঢ়কণ্ঠে জবাব দিলেন, আল্লাহর শপথ! নবীজীর (সা.) যাত্রাপথে একটি কাঁটা লুকিয়ে রাখা হবে আর আমি ঘরে বসে আরাম করব, এতটুকুও আমার সহ্য হবে না। হযরত জায়েদের (রা.) জবাব শুনে আবু সুফিয়ান মন্তব্য করেছিল, সত্যিই মুহম্মদের সাথীরা মুহম্মদকে যেভাবে ভালোবাসে মানুষ অন্য কাউকে সেরূপ ভালোবাসে না। সাহাবীর এই ঘোষণাকে সুন্নাতের অনুসরণ বা নিছক ঈমানের পাল্লায় মাপলে সঠিক ওজন বের করা যাবে না। বরং মাপতে হবে মহব্বতের পাল্লায়। এই মহব্বতের পরীক্ষা ও অনুশীলন সাহাবায়ে কেরামের জীবনের প্রতিটি পরতে বিরাজিত ছিল।
আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন: আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার (রাসূলের) আনুগত্য কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। আর তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৩১)। কাজেই জীবনকে শুদ্ধ ও সুন্দর করার জন্য, সত্যিকার আল্লাহপ্রেমিক, রাসূলের অনুসারী হওয়ার জন্য রাসূলের সুন্নাতের অনুসরণের বিকল্প নেই। আর সেই অনুসরণ হতে হবে নবীজির (সা.) প্রতি গভীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে।
হযরত আনাস (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব।’ (সহীহ বুখারী)।
লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান