বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশনায়ক তারেক রহমান
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে নিষ্ঠাবান, দূরদর্শী, ত্যাগী ও দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, সরকারের পতন আন্দোলনের মূল কারিগর ছিলেন তারেক রহমান। তিনি যথার্থতভাবেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে রাজপথে সোচ্চার ছিল বিএনপি। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। আন্দোলন-সংগ্রামের নানা ধাপ পেরিয়ে গত জুলাই-আগস্টে (২০২৪) ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট জুড়ে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে ছিলেন দেশনায়ক তারেক রহমান। তিনি ছাত্র-জনতাকে অধিকার আদায়ের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন। আওয়ামী সরকারের দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়ানো যুবসমাজকে ভিডিও মেসেজ দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। তাঁর প্রত্যয়দীপ্ত বক্তব্য প্রচারিত হওয়ায় স্বৈরাচারের স্বরূপ উদঘাটনের ইতিহাস বুনন মুগ্ধ করেছে ছাত্র-জনতাকে। ফলে অতিদ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দেশের সমগ্র মানুষ। কেবল দেশ নয়, বিদেশের মাটিতে গণ-অভ্যুত্থানের বীর সেনানিদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দূরকে নিকট করেছে, অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো পৃথিবীকে নাড়িয়ে বিজয় এনে দিয়েছে বিপ্লবের স্বপ্নসারথিদের। দেশনায়কের সেই অবদানকে স্মরণ করেই দলের সাহসী নেতা রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান সফল করার ক্ষেত্রে দেশনায়ক তারেক রহমানের ভূমিকা ছিল অনন্য এবং বিপ্লব বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁর সমস্ত বক্তব্য ও মেসেজগুলো একজায়গায় করলে তা একটি বৃহৎ গ্রন্থে রূপ লাভ করবে। অবশ্য বিএনপি প্রথম থেকেই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজের ভূমিকাকে সমর্থন করেছে। কারণ, তাদের গৌরবময় আত্মত্যাগ অতীতের অনেক ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসকে ¤¬ান করে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এদেশের সাধারণ ছাত্রদের দ্বারা গঠিত একটি প্ল্যাটফরম। জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা কোটা ও বৈষম্যরোধে এই সংগঠনটি গঠন করে। পরবর্তীতে এই আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয় এবং পরাজয় ঘটে ক্ষমতাসীন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের। এভাবেই একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।
কমপ্লিট শাটডাউনের কথা নিশ্চয় সকলের মনে আছে। গত ১৮ জুলাই কোটার যৌক্তিক সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা। সেই আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে দেশনায়ক তাদেরকে পরামর্শ, দিক-নির্দেশনা ও একটি পর একটি বার্তা দিয়ে সংঘবদ্ধ করেছেন। ফলে তাঁর নেতৃত্বে জুলুম-অবিচারের মাঝেও বিএনপির নেতাকর্মীরা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তার নির্বাসিত জীবনে বাকস্বাধীনতা হরণের পাশাপাশি অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় তার চিকিৎসক স্ত্রী ড. জুবাইদা রহমানকেও। একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ার পরও ড. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় পাতানো সাজা ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক জীবন যে চ্যালেঞ্জের হয়, তারেক রহমান তা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। এজন্য কখনো নিজে হতাশ হননি। বরং দুঃসময়ে প্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠেছেন দলের জন্য।
২.
ছাত্ররা একটি নতুন বাংলাদেশ, একটি সুশাসিত, গণতান্ত্রিক জাতিকে জবরদস্তি ও সব ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে মুক্ত করার আন্দোলন করেছিল। প্রথমে এই আন্দোলন শুধু বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে সব প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। গত ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাইদকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ফলে বাংলাদেশের সকল স্তরের ছাত্ররা আন্দোলনে যোগ দেয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন পায় নতুন মাত্রা। আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। বলা বাহুল্য, জুলাই মাস জুড়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হত্যা ও হামলা আন্দোলনকে দমাতে পারেনি। বরং আন্দোলন তীব্র হওয়ায় ৩ আগস্ট সাধারণ ছাত্রদের সংগঠনটি ৪৯ জন সমন্বয়কারী ও ১০৫ জন সহ-সমন্বয়কারীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৫৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠনের নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন সমন্বয়কারীর তরফ থেকে বিভিন্ন দাবি ও কর্মসূচি ঘোষিত হয়। সাধারণ ছাত্ররা যখন রাজপথে নিজেদের দাবির পক্ষে সরব, তখন দেশনায়কের কণ্ঠে গ্রিক পুরাণের ডেলফির মতো বাণী শ্রুত হয়েছে। লন্ডন ও বাংলাদেশের দিন-রাতের তফাৎ ঘুচিয়ে তারেক রহমান ন্যায়বিচারের নিক্তি নিয়ে থেমিসের মতো দাঁড়িয়েছেন জনতার পাশে। তাঁর বিবৃতি-বক্তব্য আন্দোলনরতদের মধ্যে উদ্দীপক হয়ে উঠে। ‘বাংলা ব্লকেড’ শুরু হয় তাঁর বিবৃতি ও আহ্বানের মধ্যে দিয়ে। ২ থেকে ৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা ঢাকার গণপরিবহন বন্ধ করে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে, পরে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয় যা ‘বাংলা অবরোধ’ নামে পরিচিত। এসব কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রলীগ ও পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ১৪ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রেসিডেন্ট মো. শাহাবুদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে। এদিন শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতি বলে অভিহিত করেন। ওই ভাষণের পর আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে ওঠে এবং তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি প্রত্যাহার না করায় ১৭ জুলাই রাতে ছাত্র জনতা ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। এই কর্মসূচি চলে ১৯ জুলাই পর্যন্ত। ঐ রাতেই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামকে গ্রেফতার করা হয় (যিনি এখন সরকারের উপদেষ্টা)। ২০ জুলাই সরকারের তিনজন প্রতিনিধি এবং ছাত্র আন্দোলনের তিনজন সমন্বয়কের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে তারা সরকারের কাছে আটটি দাবি জানায়। পরবর্তীতে সেই দাবি নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। ২১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দল ৯ দফা দাবিতে সারাদেশে হরতাল চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ২২ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম ছাত্র সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলাম ৪ দফা দাবি নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন এবং কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তারেক রহমান ছাত্র সমন্বয়কারীদের অভয় বাণী শুনিয়েছেন। নেতাকর্মীরা তাঁর কথা শুনে গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ ছিল ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের। ৩১ জুলাই বুধবার সারাদেশে গণগ্রেফতার ও হয়রানিমূলক মামলা এবং গুম হত্যার প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ডিবি অফিস থেকে মুক্তি পাওয়া ছাত্র সমন্বয়কারীরা ২ আগস্ট একটি অনলাইন গণমাধ্যমে ঘোষণা করেন, তারা ডিবি অফিসে থাকাকালীন স্বেচ্ছায় ভিডিও বিবৃতি দেননি। শুরু হয় ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি। ৩ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে অসহযোগ আন্দোলনের মহাসমুদ্রে পরিণত করা হয়। মূলত এই অসহযোগ আন্দোলন ব্যাপক সাড়া ফেলে। আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য সরকারের পোষাবাহিনীর দ্বারা হত্যা, মামলা-হামলা ও গুম চলতে থাকে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ ব্যাপকভাবে অ্যাকশন শুরু করে। ৩ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে অন্যান্য সমন্বয়কদের সঙ্গে নিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। ৬ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একদিন আগে ৫ আগস্ট এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ আন্দোলনকে ঘিরে ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন জেলায় নানা নৈরাজ্যকর ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এভাবে ছাত্রদের এক দফা দাবির জবাবে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়। বাংলাদেশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেবল ছাত্রদের বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। বরং বারবারই বলা হয়েছে, এই বিজয় ছিল ছাত্র-জনতার বিজয়। যেকোনো স্বাধীন দেশের প্রধান স্তম্ভ হল শিক্ষিত ছাত্র সমাজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ছাত্র আন্দোলন-বিক্ষোভ নতুন নয়, এদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায় করতে জানে। তবে রাজনৈতিক দল বিশেষত বিএনপি মাঠে সক্রিয় ছিল বলেই ছাত্রদের পক্ষে দ্রুত বিজয়ের পতাকা উড্ডীন হয়েছে।
৩.
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে বিজয় অর্জন করে। জন্ম নেয় নতুন বাংলাদেশ। সরকারের পতনের পর দেশকে পুরোপুরি সংস্কারের জন্য একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। বিজয়ীদের নিয়ে সরকার গঠনের পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জুলাই বিপ্লবের মধ্যেই তারেক রহমান শহীদ জিয়ার মতো ভিশনারি ও গতিশীল নেতৃত্ব দিয়ে নতুন এক আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের অভিযাত্রায় দিশারি হয়েছেন। আশা করছি, মহাকালের ইতিহাসই তাঁর নির্ভুল পথ বাতলে দেওয়ার গতিবেগকে স্মরণ করবে। দেশনায়ক তারেক রহমানের আহ্বানে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনগুলো জুলাই বিপ্লবে যে অবদান রেখেছে, সে বিষয়ে এখানে আলোকপাত করা যেতে পারে। ক). জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে শহীদ হয়েছেন ৮৭৫ জন। যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ সব শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এ বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতা-কর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং বিএনপির সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল। গণআন্দোলন ছিল অবৈধ সরকারের অত্যাচার-অবিচার, দুর্নীতি-দুঃশাসন, বঞ্চনা-অবজ্ঞা এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅভ্যুত্থানে সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নেমে আসে বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। যাতে গণআকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নয়, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল, সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে গণঅভ্যুত্থানে সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তাই বিএনপির যে ৬০ লাখ সদস্যের নামে ফ্যাসিবাদের সময় মিথ্যা মামলা হয়েছে, তার সুবিশাল অংশ সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, রাষ্ট্রযন্ত্রের যড়যন্ত্র ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে রুখে দাঁড়ায়। ফলে যারযার অবস্থান থেকে জনগণের কাতারে নেমে আসে বিএনপি ও সমমনা সব রাজনৈতিক দল, তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহ। ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে নির্মমভাবে হত্যা করে পুলিশ। একই দিন চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরামকেও হত্যা করা হয়। এ হত্যাকা-গুলোতে সমগ্র বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, বেগবান হয় আন্দোলন। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে ১৬ বছর ধরে আওযামী লীগের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গায়েবি মামলা ও নৃশংস নিপীড়ন দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর ফলস্বরূপ, জাতিসংঘসহ স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ায়। উল্লেখ্য, বিগত ১৭ বছরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অসংখ্য নেতাকর্মী বিভিন্ন মেয়াদে কারাবরণ করেন। এমনকি, হাবিব-উন-নবী সোহেলের মতো নেতার বিরুদ্ধে ৪৫১টি মামলা হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে এমন অবিচার-অত্যাচার করেছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার। তাঁর আমলে বিএনপির নেতাকর্মীরা সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবস বিভিন্ন আদালতে হাজিরা দিয়ে এক অস্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছে। খ). বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিল ছাত্রদল। গত ১৬ জুলাই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে নিজেদের সমর্থনের কথা জানিয়েছিল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা। কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গ). আন্দোলনে বিএনপির মিডিয়া সেল সবসময় সক্রিয় ছিল। যেমন, ২ আগস্ট ঘোষণা করা হয়, শনিবার বিক্ষোভ, রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ। সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে হত্যার প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। ২ আগস্ট রাত ৮টায় ফেসবুক পোস্ট ও ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ও সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশিদ। সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে সারাদেশের মানুষকে অলিগলি ও পাড়ায় পাড়ায় সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। প্রকৃতপক্ষে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে বিএনপি এবং বিএনপির মিডিয়া সেলে প্রচার চলতে থাকে। ২৯ জুলাই প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের খোঁজ নেওয়া অব্যাহত রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ১৫ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের নির্দেশনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দেখতে রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে যান বিএনপির নেতৃবৃন্দ। ঘ). ১৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের অন্যতম সেল আমরা বিএনপি পরিবার-এর সংগঠনের ব্যানারে এ সহায়তা প্রদান করা হয়। ঙ). ৫ আগস্টের পর থেকে দলে বিশৃঙ্খলা রোধে স্মার্ট অ্যাকশনে আছেন তারেক রহমান। হাইকমান্ডের কঠোর অবস্থানের কারণে দলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক মাত্রায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে যার বা যাদের বিরুদ্ধেই বিশৃঙ্খলা বা দখলদারিত্বে জড়িত থাকার ন্যূনতম স¤পৃক্ততা পেয়েছেন, তাদের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন তারেক রহমান। এরই মধ্যে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের আইনের হাতে সোপর্দ করার আহ্বান জানিয়ে অঘোষিতভাবে সারা দেশে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তারেক রহমান। প্রতিদিনই বক্তব্যে নতুনত্ব ও একের পর এক বাস্তবমুখী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি। জেলায় জেলায় সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁর এসব পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সহায়ক বলে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন। বলা বাহুল্য, ১৭ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর তাদের সেই ক্ষোভের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারত। কিন্তু তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং প্রতিহিংসার পরিবর্তে সহনশীল রাজনীতির কারণে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ধৈর্য ধারণ করেন। একই সঙ্গে দেশজুড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা করেন। বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীশূন্য দেশে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানের সেই ভূমিকা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। (চলবে)
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম
সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে
সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ
ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০
গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ
আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন
শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া