বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশনায়ক তারেক রহমান
০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
দেশনায়ক তারেক রহমান ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাণ্ডারিতে পরিণত হয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক নির্দেশনাগুলোও অনন্য। যেমন, ১). গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই তাৎক্ষণিক বিজয় বার্তায় তারেক রহমান দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি বলেছেন, বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে হাজারো মানুষকে গুম, খুন ও অপহরণ করেছেন। হামলা চালিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছেন। শেখ হাসিনার অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ। এ কারণেই গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালানোর পর নির্যাতিত-নিপীড়িতদের কারও কারও আচরণে হয়তো ক্ষোভের মারাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আমি খবর পেয়েছি, দেশের কোথাও কোথাও কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। আমার বক্তব্য ¯পষ্ট, কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, বিশ্বাসী কিংবা অবিশ্বাসী, কেউ সংখ্যালঘু নয়। আমাদের সবার একটাই পরিচয়, আমরা বাংলাদেশী। সুতরাং ব্যক্তি হিসেবে কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ থাকলে প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নিন। কেউ নিজ হাতে আইন তুলে নেবেন না। কেউ প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। ২). গত ৭ আগস্ট ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের স¤পদ ও সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষার জন্য নেতাকর্মীসহ সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি। ৩). উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। গত ২৯ আগস্ট রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়। সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আবারও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পরিকল্পনার কথা পুনরায় জানান। ৪). গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি বাতিল করে বিএনপি। দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জন্য যেসব টাকা খরচ হতো, সেই টাকা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার বন্যাদুর্গতদের জন্য বরাদ্দ দেয় দলটি। এরপরই কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ত্রাণ কমিটি গঠন ও ত্রাণ সংগ্রহ কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় কয়েক কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছেন। ৫). গত ৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়া, ১১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির সমাবেশ এরপর ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। তিনি সেদিন জোর দিয়ে বলেছেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে, লাখো-কোটি জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল এই অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সবার কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে। কিন্তু এই সরকারের ব্যর্থতা হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এছাড়া এই সময়ে তারেক রহমানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করা, সমাবেশে বক্তব্য দেয়া, চাঁদাবাজি ও অপকর্মে জড়িত থাকা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে শোকজ-বহিষ্কার ও মামলা দায়ের এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং অসংখ্য আহতকে চিকিৎসাসেবা প্রদান। বিপ্লবকালীন এবং বিপ্লবোত্তর তারেক রহমানের প্রতিটি অ্যাকশন স্মার্ট ও সময়োপযোগী। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর ও গতিশীল করতে এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে তাঁর নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন।
৫.
রুশ বিপ্লবের মহানায়ক ভ¬াদিমির ইলিচ লেনিন বলেছিলেন, ‘দেয়ার আর ডিকেডস হোয়ার নার্থি হ্যাপেন্স, অ্যান্ড দেয়ার আর উইকস হোয়ার ডিকেডস হ্যাপেন।’ গত ১৬ বছর এদেশ নিষ্ফলা দশকই পেরিয়েছে। অথচ সামনের দশক পরিবর্তনের মহানায়ক তারেক রহমান। তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক শতাব্দীর মণীষীর কাজ করবেন বলে আমরা মনে করি। তাঁর নেতৃত্বের অনির্বচনীয় বৈশিষ্ট্য অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছুতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ আজ আর কোনো রাষ্ট্র নয়। হাসিনার পরিত্যক্ত বিশৃঙ্খল জমিদারি বাংলাদেশকে আবার আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেড় দশকব্যাপী অন্যায়, অনাচার, হত্যাযজ্ঞ, জুলুম, তাণ্ডব, লুন্ঠনের বিচারের মাধ্যমে একটা ইনসাফ ও সমতার পরিবেশ স্থাপন করতে হবে। বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলই পারবে এই দেশকে পরিচালনার যোগ্য অবস্থায় নিয়ে যেতে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল বর্তমান সরকার জনসমর্থিত হলেও নির্বাচিত নয়। জনগণও তাদের ভোটাধিকার থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। কাজেই, নির্বাচন খুব বেশি বিলম্বিত করাও ঠিক হবেনা। এতে অ্যাসপির্যান্ট রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও ধৈর্যহারা হয়ে পড়তে পারে। স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ-অবিশ্বাস সৃষ্টির অপচেষ্টাও চলবে। গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন হওয়ায় পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা প্রত্যাশিত হয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো স¤পন্ন করে নির্বাচনের আয়োজন করতে দুই-আড়াই মাস সময় অনায়াসেই দেয়া যায়। এ নিয়ে যাতে কোনো দ্বন্দ্ব দেখা না দেয়, তার জন্য নির্বাচনের স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সরকার একটি সু¯পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারে। এ ব্যাপারে একটা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারলেই সবদিক থেকে উত্তম। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র চালাবে রাজনৈতিক দল। কাজেই, রাজনীতি ও দলের সংস্কার নির্বাচিত সরকারই করতে পারবে। অন্যদিকে, ছাত্রদের নিজেদের কাজে ফিরে যেতে হবে। আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের প্রতিনিধিরা সরকারে আছে। কিন্তু রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনের কাজে দ্বৈত কর্তৃত্ব ও খবরদারির দ্রুত অবসান ঘটাতে হবে। ছাত্রদেরকে শিক্ষাঙ্গনে ফেরত পাঠাতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে তাদের উচ্চাভিলাসী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, জুলাই বিপ্লব কেবল তাদের অবদান নয় বরং রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ব্যাপক অংশগ্রহণ ও তারেক রহমানের রাতের পর রাত জেগে আন্দোলন পরিচালনার ফল। এমনকি, প্রাক্তন সৈনিক ও সেনাকর্মকর্তারাও আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের বিজয় সব মিলিয়ে ত্বরান্বিত হয়েছে। এখন জাতীয় ঐক্য গঠন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সমাজশক্তিকে স¤পৃক্ত ও সক্রিয় করেই উদ্ভূত নিরাপত্তা সংকটের নিরসন করতে হবে। পতিত ফ্যাসিবাদ ও ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে পাশ কাটিয়ে বিএনপিই হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গন্তব্য। বর্তমান অন্তর্বর্তীকাল অবসানে বাংলাদেশকে তাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। নিতে হবে দেশ চালনার দায়িত্বভার। উদার, আধুনিক, গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী শক্তি ছাড়া বাংলাদেশকে আর কারো পক্ষে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কায়েমি ও গতানুগতিক রাজনীতির অর্গল ভেঙে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রমত্ত যৌবন, উদ্দাম প্রাণশক্তি, গতিশীলতা ও আধুনিকতার জোয়ার এনে সব প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। আধুনিকতা ও আপসহীন ভূমিকার সমন্বয়ে ‘চয়েস অফ নিউ জেনারেশন’ হয়ে নব্বইয়ে খালেদা জিয়ার উত্থান ঘটেছিল।
৬.
দেশনায়ক তারেক রহমান উদারতা, গণস¤পৃক্ততা, আধুনিকতা ও কোয়ালিটি দিয়েই তাঁর নেতৃত্বকে সর্বোচ্চ শিখরে স্থাপন করেছেন। তিনি দেশে ফিরে যদি জিয়াউর রহমানের দেখানো পথে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বাছাই করা তারকা এবং সৎ, নির্লোভ, চরিত্রবান, ত্যাগী, দেশপ্রেমিক, দরদী ও জনঘনিষ্ঠ মানুষদের নিয়ে তাঁর দল সুসজ্জিত করেন আর দক্ষতা ও যোগ্যতাকে সবক্ষেত্রে মূল্যায়নের মাপকাঠি করেন, তাহলে রাজনীতির অঙ্গনে তিনিই হয়ে উঠবেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা। অনিবার্য কারণে তারেক রহমানকে এখনো প্রবাসে থাকতে হচ্ছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে সকলে একবাক্যে বলছেন, দেশনায়ক তারেক রহমান একুশ শতকের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল্যবোধের লালনকারী হিসেবে তিনি বিশ্ববাসীকেও মুগ্ধ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি একটি বৈষম্যহীন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং সুশাসিত রাষ্ট্র গঠনের জন্য পদক্ষেপ নেবে, এটা নিশ্চিত। (সমাপ্ত)
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম
সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে
সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ
ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০
গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ
আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন
শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া