ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন
০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড জে ট্রাম্প। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে পরাজিত হওয়ার পর আরেকবার নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে নির্বাচিত হওয়ার রের্কড শত বছরে আর নেই। ইতিপূর্বে শুধু একবার ১৮৯২ সালে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড দ্বিতীয় মেয়াদে হেরে গিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওভাল অফিসে যাওয়ার এই বাস্তবতাকে অনেকে ফিনিক্স পাখির মত পুনরুত্থান হিসেবে অভিহিত করেছেন। এতসব অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, দুর্নীতির অভিযোগ, যৌন হয়রানির অভিযোগ, আইনগত প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে নির্বাচনের মনোনয়ন নিশ্চিত করা এবং নানা জরিপে পিছিয়ে থাকার পরও চুড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভ’মিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে অবিশ্বাস্য ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিনত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক অশান্ত, যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও মহাযুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক-অর্থনৈতিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল নতুন প্রত্যাশার প্রতিফলন। বিশেষত ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংকট উত্তরণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরোধী নীতির প্রতি সাধারণ মার্কিনী এবং আরব-আমেরিকানদের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা সংঘটিত হওয়া এবং তা প্রলম্বিত হওয়ার পেছনে বাইডেনের দুর্বল নেতৃত্বের দায় রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইলেক্টোরাল ভোটে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি মুসলমান ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে যুদ্ধ থামানোর বার্তা দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে কেউ কেউ কিছু আশঙ্কার কথা বলছেন। বিশেষত অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগের মত মার্কিন সমর্থন পাবেন কিনা তা নিয়েই জল্পনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিক্রিয়ায় পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ এই যে, ড.মহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনেক রিপাবলিকান সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানের চমৎকার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সহকারী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতিমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। সে বার্তায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের দীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়াকে তাঁর নেতৃত্বের প্রতি মার্কিন জনগণের আস্থার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছেন ড. ইউনূস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত মনোভাব, ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান প্রার্থীদের আভ্যন্তরীণ ও বিদেশ নীতিকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক রাজনীতি-অর্থনীতির সম্ভাব্য পরির্বতনকে ঘিরে নতুন হিসাব নিকাশ শুরু হতে দেখা যায়। যদিও সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির তেমন হেরফের ঘটতে দেখা যায়না। ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম অবশ্যই দেখা গেছে। মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন শ্লোগান সামনে রেখে তার বর্ণবাদি অভিবাসন নীতি, বিদেশ ও মধ্যপ্রাচ্য নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বসম্প্রদায় থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে তুলেছিল। ইরানের সাথে ৬ জাতির পারমানবিক সমঝোতা চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইসরাইলের কারণে ইউনেস্কো থেকে বেরিয়ে যাওয়া, জলবায়ু ইনিশিয়েটিভ নিয়ে অনাস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো ২০২০ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে তার নির্বাচিত হওয়াকে অসম্ভব করে তুলেছিল। অন্যদিকে ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ ও গণহত্যা বন্ধে বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং প্রতিশ্রুকি না থাকা ডেমোক্রেট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের পরাজয়ের কারণ হতে পারে। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অতীতের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রত্যাশিত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শান্তি ও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের জয়ে বাংলাদেশে বিদ্যমান বিদেশনীতির বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। বরং দুই দেশের পরিবর্তিত বাস্তবতায় পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কন্নোয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মত প্রখ্যাত নোবেল বিজয়ীর নেতৃত্বে বাণিজ্যে জিএসপি সুবিধাসহ দুই দেশের মধ্যকার অমিমাংসিত ইস্যুগুলোর ইতিবাচক সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মার্কিনীদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে ইউনূস সরকারের কাজের ধারাবাহিকতার অগ্রগতি আরো গতিশীল হবে বলে আশা করা যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, যোগাযোগ ও হোমওয়ার্ক থাকতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট এবং বিদেশে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের দোসর ও সুবিধাভোগিরা অর্ন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে প্রতিয়মান হয় কিছু মিডিয়া ও লবির উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচারের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে পাশ কাটিয়ে যারা এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশকে নস্যাৎ করতে চায় তাদের অপপ্রচারের লক্ষ্য ও বিষয়গুলো সরকারকে ফোকাস করতে হবে। বাংলাদেশ বিরোধী চক্রের অপপ্রচারে মার্কিন প্রশাসনকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপতৎপরতা বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশি ডায়াসপোরার সমন্বিত প্রচেষ্টায় ব্যর্থ করে দিতে হবে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবানাকে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের জন্য যে বার্তা রয়েছে, তা হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরোধী ভ’মিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি মার্কিন জনগণ সমর্থন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয়, গণতন্ত্রকামী জনগণ মার্কিন জনগণের সেই প্রত্যাশা ও আকাঙ্খার সাথে একাত্মতা পোষণ করে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফুলেল অভিনন্দন জানায়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেরিটাইম সেক্টরে বিদেশীদের বিনিয়োগের আহবান উপদেষ্টার
সাঁতারে আক্ষেপের নাম ‘ইলেক্ট্রোনিক্স স্কোরবোর্ড’!
সাবিনাদের জন্য শনিবার পুরস্কার ঘোষণা করবে বাফুফে
ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২ আহত-৩
সর্বনি¤œ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা ঘোষণা
যশোরে মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
৭ নভেম্বরের চেতনাকে যারা ধারণ করে না, তারা গণতন্ত্রের শত্রু - ডা.মাজহার
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার ২ সেকেন্ডের মধ্যেই কার চাকরি খাবেন ট্রাম্প?
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস; চব্বিশের প্রেরণা
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাগপার আলোচনা সভা
মানুষের মতোই কথা বলবে, আচরণ করবে এআই!
আখাউড়া প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন
পরিবহনব্যবস্থা
রমজানের নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংকে লাগবে না নগদ অর্থ: গভর্নর
ময়নামতি ও বসুরহাটে ইউসিবির দুই নতুন শাখা উদ্বোধন
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস : সাফল্য ও ব্যর্থতা
৫ আগস্টের আয়নায় দেখা ৭ নভেম্বর
জাইকার সহযোগিতায় রাজউকের তৃতীয় ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট সেমিনার অনুষ্ঠিত
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তৈলতত্ত্ব ও আমাদের সাহিত্য সমাজ
সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ