নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ
১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
প্রয়াত ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহকুমার মোহনগঞ্জে তার মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ী নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মাতা আয়েশা ফয়েজ। তার পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার উপ-বিভাগীয় পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন। হুমায়ুন আহমেদ কথাসাহিত্যের ভুবনে এক প্রবাদ পুরুষ হলেও নাট্যকার হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হলেও সাহিত্য -চর্চার জন্য অধ্যাপনা থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করেন।তিনি কথা-সাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।তিনি প্রায় তিন শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন।তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: নন্দিত নরকে,নীল অপরাজিতা, প্রিয়তমেষু, জয়জয়ন্তী, অয়োময়,এলেবেলে ইত্যাদি।তাঁর নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচিত্র: শঙখনীল কারাগার, আগুনের পরশমণি,শ্যামল ছায়া,শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা,
১৯৮৩ সালে তার প্রথম টেলিভিশন কাহিনীচিত্র ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এটি তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। পরবর্তী সময়ে তিনি বহু এক পর্বের নাটক নির্মাণ করেছেন। যার মধ্যে খেলা, অচিন বৃক্ষ, খাদক, একি কা-, একদিন হঠাৎ, অন্যভুবন উল্লেখযোগ্য।
বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকের পাশাপাশি নাট্যকার হিসেবে ও হুমায়ুন আহমেদকে অন্যতম মনে করা হয়।তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী একজন শ্রেষ্ঠ লেখক এবং বাংলাসাহিত্যে তাঁকে সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক হিসেবেও ধরা হয়।তাঁর রচনার বৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক হলো গল্প-সমৃদ্ধি। অনায়াসে তিনি বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যা একপ্রকার যাদু বাস্তবতা মনে হয়।শব্দ প্রয়োগে তাঁর ছিল অগাধ সচেতনতা। লোকজ শব্দ এমনকি সংস্কৃত শব্দ চলতি ভাষার ভিতর সহজভাবে গেঁথে দিতেন,পাঠকের পড়তে বা বুঝতে কোনো অসুবিধা হতো না।ছোট ছোট বাক্যে চরিত্রের মুল বক্তব্য তুলে ধরার দক্ষতা তাঁর অসাধারণ।কথাসাহিত্যে জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি নাটক নির্মাণের মধ্যও পেয়েছিলেন অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। দর্শককে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা তাঁকে অনন্য সাফল্য এনে দিয়েছিল।হুমায়ুন আহমেদের রচনায় শুধু মধ্যবিত্ত সমাজের কথা, কাহিনির সীমানা ছিল তা নয় উচ্চবিত্ত ও নি¤œবিত্তের দর্শক তাঁকে হৃদয়ের গভীরে ঠাই দিয়েছিল। আর এই জনপ্রিয়তার কারণ ছিল নাটকের কাহিনি, চরিত্রায়ণ ও নাটকীয় ঘটনার সমাবেশ; যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবতাকে স্পর্শ করে এবং একটি সার্থক নাটকের সব রকম গুণ রম্যরস তাঁর রচনায় পরিলক্ষিত হয়।
হুমায়ুন আহমেদ যে সময় টেলিভিশন নাটক লিখা শুরু করেন তখন এদেশে বিটিভি ছাড়া কোনো স্যাটেলাইট, ইউটিউব, ফেইসবুক কিছুই ছিল না,তারপরও দর্শক হৃদয়ে বিশাল স্থান দখল করে নিয়েছিলেন।তাঁর ‘এইসব দিনরাত্রি ‘(১৯৮৫) নাটকের চরিত্রগুলো যেন দর্শকদের একান্তজন হয়ে উঠে। টুনির কথাই বলা যাক, টুনি চরিত্রটি মানুষের মনে দাগ কাটে।নাট্যঘটনার ধারাবাহিকতায় টুনি যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয় দর্শক তখন প্রতিবাদ করেন, নাট্যকারকে নানাভাবে অনুরোধ করেন যাতে তিনি যেন টুনির মৃত্যু রচনা না করেন।কিন্তু নাট্যকার তাঁর কাহিনিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে টুনির মৃত্যু হয়।নাটক শেষ হলে প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদী ব্যানার সাঁটানো হয়, ‘টুনির কেন মৃত্যু হলো, হুমায়ুন আহমেদ জবাব চাই’ এবং ময়মনসিংহ শহরে তাঁর কুশপুত্তলিকা পুরানো হয়েছিল।
‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকও এভাবে দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ধারাবাহিক নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’(১৯৯২-১৯৯৩) হুমায়ুন আহমেদকে নাট্যকার হিসেবে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
কোথাও কেউ নেই নাটকটি দর্শক হৃদয়ে যে আবেগ, উৎকন্ঠা, ক্ষুভ সৃষ্টি করেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
উক্ত নাটকে গল্পের ধারাবাহিকতায় অন্যতম প্রধান চরিত্র বাকের ভাইর যখন ফাঁসি হয়ে যাবার উপক্রম হয় তখন দেশব্যাপী দর্শকদের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রধান চরিত্র বাকের ভাই মহল্লার একজন ট্রিপিক্যাল মাস্তান। লোকে তাকে ভয় পায়। অথচ এই মাস্তান লোকটি দর্শকদের প্রিয় হয়ে উঠে। তার বিরুদ্ধে যে অবিচার হয় এর জন্য মানুষ প্রতিবাদী হয়।আসলে বাকের ভাই চরিত্রের পোশাক,গান, আচার আচরণ, মানবতাবোধ, মুনার প্রতি প্রেমের স্নিগ্ধতা দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাই তো স্লোগান উঠে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি দেওয়া চলবে না, বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। ‘কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন গল্পের প্রতি দায়বদ্ধ, তাই তিনি ফাঁসির পরিবর্তন করেন নি।এসব বিষয় অনুধাবন করলে বুঝা যায় উপন্যাসের পাশাপাশি নাট্যকার হিসেবে তিনি কতটা দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি,১৯৯৪ সালে মহান ২১শে পদক, ছাড়াও তাঁর নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি লাভ করে দর্শক হৃদয়ে ব্যাপক। সাড়া জাগায়। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার সহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
হুমায়ুন আহমেদের বেশ কটি গ্রন্থ ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।একটি উপন্যাস গৌরীপুর জংশন› সাতটি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ুন রচনাবলি এক বিরাট সংযোজন।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম