বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভারতের এত মাথাব্যথা কেন?

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ এএম

গল্পের এক কৃষক যেমন তার একমাত্র গরু হারিয়ে দিশাহারা হয়ে আবোল-তাবোল বকা শুরু করে, তেমনি ভারতও তার দাসী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ক্ষমতা থেকে হারিয়ে দিশাহারা ও আবোল-তাবোল বকা শুরু করেছে। বাংলাদেশকে করদরাজ্যে পরিণত করার তার খায়েশ মুহূর্তে উবে যাওয়ায় এখন মোদি ও হাসিনা মিলে বাংলাদেশকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করার নিরন্তর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। আমরা দেখেছি, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে কীভাবে হাসিনা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে তার প্রভু মোদির কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। এই পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য শুধু হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যই নয়, ছাত্র-জনতার ভয়ে ভারতেরও পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। যুগে যুগে পরাজিতের আস্ফালন এবং পালিয়ে দূর থেকে লম্ফঝম্ফ করার দৃশ্য একটি সাধারণ ঘটনা। হাসিনা ও মোদির আস্ফালনও তেমনই। পালিয়ে যাওয়া পরাজিতদের ক্রোধ ও ঈর্ষা প্রবল হয়ে থাকে। যার কাছে পরাজিত হয়, তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। হাসিনা ও মোদি বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে এই ল্যাং মারার কাজটি অনবরত করে যাচ্ছেন। এখন ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে কথিত হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন এবং আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনের সামনে উগ্র হিন্দুরা বিক্ষোভ এবং আক্রমণ চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে। এ আক্রমণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের উপর হামলার শামিল। হাসিনাকে নিয়ে পুরো ভারত যেন বাংলাদেশের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। হাসিনা দেশ শাসন করলেও তিনি যে দেশপ্রেমিক ছিলেন না, খুনি চরিত্রের ছিলেন, তা আজ প্রমাণিত। অন্যদিকে, মোদি সবসময়ই বাংলাদেশকে গ্রাস করার জন্য ওঁত পেতে রয়েছেন। এজন্য তার এজেন্ট হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছিলেন। হাসিনাও অনুগত ভৃত্যের মতো মোদির হুকুম ও নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন। তবে তারা ইতিহাসের দিকে তাকাতে ভুলে গিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ যে, দেশের জন্য জীবন তুচ্ছ করে দিতে পারে, তা বহুবার প্রমাণ করেছে। তাদের যত গুলি করা হয়, ততই তারা বুক পেতে দেয়। একজন মারলে দশজন বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়। গুলি করতে করতে গুলি শেষ হয়ে যায়, মানুষের শহীদ হওয়ার লাইন শেষ হয় না। জুলাই বিপ্লবের সময় পুলিশের কাছ থেকে এমন কথা শোনা গেছে, গুলির ভান্ডার শেষ, একটা মারলে আরেকটা দাঁড়িয়ে যায়। মোদির পাঠানো লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরে ছদ্মবেশে গুলি করেও ছাত্র-জনতার বিপ্লব ঠেকাতে পারেনি। ছাত্র-জনতার রক্তের বন্যায় গণহত্যাকারী হাসিনা ও মোদি বাংলাদেশ থেকে ঠিকই ভেসে গেছেন।

দুই.
বাংলাদেশ নিয়ে হাসিনা ও মোদির ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। তাদের দোসররা নানা শ্রেণী-পেশার ছদ্মাবরণে কিংবা সরাসরি আন্দোলনের নামে অন্তর্বর্তী সরকারকে ফেলে দেয়ার চক্রান্ত করেছে এবং করছে। একেক সময় একেক ষড়যন্ত্রের ঘুটি চালা হচ্ছে। চলছে সংখ্যালঘু কার্ড খেলা । ইসকনের মুখপাত্র উগ্রবাদী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর অপচেষ্টা এখন জোরদার। অন্তর্বর্তী সরকার তা বুঝতে পেরে তাকে গ্রেফতার করেছে। তার গ্রেফতার নিয়ে ইসকনের সদস্যরা কীভাবে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলীফকে হত্যা করেছে, তা সকলেই দেখেছেন। চিন্ময়কে গ্রেফতারের সাথে সাথে মোদি ও হাসিনা তেলেবেগুণে জ্বলে উঠেছেন। যেন তাদের সর্বশেষ খেলাটি প- হয়ে গেছে। তারা বিবৃতি দিয়ে চিন্ময়কে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলের নেতা ও বিজেপির মুখপাত্র শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দিয়ে বলেছেন, চিন্ময়কে মুক্তি না দিলে বাংলাদেশ সীমান্তে সনাতনীরা অবরোধ করবে। একইসাথে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভেরও হুমকি দেন এবং হাইকমিশনের সামনে তা-ব চালানো হয়। শুভেন্দুর অভিযোগ, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করছে। তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে কোনো পরিষেবা বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। মোদি ও তার চেলাচামুন্ডাদের এ ধরনের হুমকি-ধমকি এবং বক্তব্য-বিবৃতি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। ভারত যদি মনে করে থাকে, বাংলাদেশ এখনও তার কথা মতো চলবে, তাহলে সে দিবাস্বপ্ন দেখছে। তার এই মনোবাঞ্ছা হাসিনার বিদায়ের সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেছে এবং কোনো দিনই পূরণ হবে না। বাংলাদেশের মানুষ এখন বুঝে গেছে, ভারত তাদের ‘হোস্টাইল এনিমি’। তাকে কীভাবে প্রতিরোধ করতে হবে, তা তারা জানে। তারা এখন ভারতের যেকোনো হামলা ও আক্রমণ রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ। ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানরা কীভাবে অত্যাচার-নির্যাতন ও খুনের শিকার হচ্ছে, সে খবরও তারা রাখে। ফলে বাংলাদেশের জনগণ মোদিকে আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলিয়ে নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থার দিকে তাকাতে বলেছে। তারা ভয়েস অব আমেরিকার গত অক্টোবরে করা এক জরিপের দিকেও তাকাতে বলেছে। জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করছে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে। জরিপে ৬৪.১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিল, তাদের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় লোকজন হিন্দুদের জমি অল্প দামে কিনেছে বা তাদের বিক্রি করতে বাধ্য করেছে। এরা এখন আর নাই। এ জরিপ থেকে ভারতের বোঝা উচিৎ, তার সেবাদাসী হাসিনা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। বরং তার সমেয় সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতন, জমি ও ব্যবসাপাতি হারানোর শিকার হয়েছে। এ খবর ভারত নিশ্চয়ই জানে। তখন জেনেও সে এ সময়ের মতো তেলেবেগুণে জ্বলে উঠেনি। একের পর এক বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি। এখন ভারত রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলে হুমকি দিচ্ছে। কেন, তা বুঝতে বাকি থাকে না। কারণ, যে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বসিয়ে নিজের কব্জায় রেখেছিল, তাকে ছাত্র-জনতা উৎখাত করে বিতাড়িত করায় তার হাতের মুঠো থেকে বাংলাদেশ ছুটে গেছে। এখন তার চারপাশে দাদাগিরি ফলানোর মতো কোনো প্রতিবেশী নেই। প্রত্যেকেই ভারতের চোখে চোখ রেখে এখন কথা বলে। এটা তার অন্তর্জ্বালায় পরিনত হয়েছে। বেশি অন্তর্জ্বালায় ভুগছে বাংলাদেশকে হারিয়ে। ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মোড়কে সে শুধু হিন্দুদের নির্যাতনের কথা বলে নানা নেতিবাচক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। তার আচরণ এমন, হিন্দু নির্যাতনের উছিলায় পারলে এখনই বাংলাদেশ দখল করে নেয়। অথচ বাংলাদেশে শুধু হিন্দুরা সংখ্যালঘু নয়। এখানে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তারা সকলেই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। ভারত যে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলছে, তা অসম্পূর্ণ। এমনকি, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সময় যে, হাজার হাজার মুসলমান হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তা নিয়ে সে কোনো কথা বলেনি। অন্যদিকে, আমাদের দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের নিয়ে যে ঐক্য পরিষদ রয়েছে, এর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিষদ কি মনে করে, বাংলাদেশের মুসলমানরা আলাদা? তারা কি মুসলমানদের বাদ দিয়ে ঐক্য করতে চাচ্ছে? এটা কি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা নয়? এটা তো রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত, বাংলাদেশের মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সকলেই মিলে বাংলাদেশী, বাংলাদেশের নাগরিক।

তিন.
বিশ্বের খুব কম দেশই রয়েছে, যেখানে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ বর্ণবিদ্বেষ নেই। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, সেখানেও সাদা-কালোর দ্বান্দ্বিকতা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কমবেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা শ্বেত সুপ্রিমেসি ও ক্রিস্টানিটির ভিত্তিতেই অন্যান্যদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে। এর অন্যতম টার্গেট মুসলমান। ফিলিস্তিন ও লেবাননে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল যে প্রতি মুহূর্তে মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে, তার মূলে রয়েছে জায়ানিজম বা ইহুদিবাদ প্রতিষ্ঠা করা। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো সরাসরি সহযোগিতা করছে। এর আগে ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তানে সরাসরি হামলা চালিয়ে লাখ লাখ মুসলমান হত্যা করেছে। এসবই করা হয়েছে, বিশ্ব থেকে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় মোদি সরকারও একইভাবে ভারত থেকে মুসলমান উচ্ছেদে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নসহ নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যা করে যাচ্ছে, ভারতের মাটি থেকে মুসলমান শাসনামলের সকল চিহ্ন মুছে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ কাজটি সে করছে, ধর্মের ভিত্তিতে পুরোপুরি একটি হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর জন্য। তার এই অভিসন্ধি থাকাও অমূলক নয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি করদ রাজ্যে পরিণত করে হিন্দু প্রভাবিত করা, যেখানে তার অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে মুসলমানরা যে পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে, সে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। এজন্য, ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের যে মিথ্যা অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে ভারত, হায় হায় রব তুলেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ তার আধিপত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া। তা নাহলে, সে কেন বাংলাদেশের নাগরিক শুধু হিন্দুদের নির্যাতনের কথা বলে বক্তব্য-বিবৃতি দেবে? কেন সে মনে করতে পারে না, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান সবাই বাংলাদেশের নাগরিক? এসব নাগরিকের মধ্যে যাই ঘটুক, তা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়? এখানে সবাই একসাথে যেমন মিলেমিশে থাকছে, তেমনি ঝগড়াঝাটিও করে। ভারতে হিন্দুদের মধ্যে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটে না? সেখানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানদের উপর যে নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যা হচ্ছে, তা নিয়ে কি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয় বলে মন্তব্য করেনি? আমাদের দেশে কি এভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দুদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়? এমন একটি ঘটনা কি ভারত দেখাতে পারবে? পারবে না। এখানে ধর্মের ভিত্তিতে বা সংখ্যালঘু বিবেচনা করে কোনো ঘটনা ঘটে না। এ নিয়ে ভারতের কথা বলার কোনো অধিকার নেই। আমাদের নাগরিকদের মধ্যে যা কিছু অপরাধ, অন্যায় ও নিপীড়নমূলক ঘটনা ঘটে, তার বিচারের জন্য আইন-আদালত রয়েছে। যেকোনো ভিক্টিম আইনের আশ্রয় নিতে পারে। ধর্মের ভিত্তিতে এখানে কোনো বৈষম্য করা হয় না। যে অপরাধ করে, তাকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে, ভারতে রাষ্ট্রীয়ভাবেই মুসলমানদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। সেখানে একের পর এক মসজিদ গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশের শাহী জামে মসজিদে চারজন মুসলমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে ভারতের কোনো মুসলমান কিংবা সংগঠন কি বাংলাদেশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে? বাংলাদেশ সরকার বা কোনো ইসলামী সংগঠন কি বিবৃতি দিয়ে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে? করেনি। কারণ, সভ্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার এটাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তার দেশের নাগরিকদের মধ্যকার ঘটনা বলে মনে করেছে। অথচ ইসকনের মুখপাত্র চিন্ময় দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার করা নিয়ে ভারত যে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছে, তা আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অবমাননাকর। অথচ তার সেবাদাসী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় শাপলা চত্ত্বরে রাতের আঁধারে যেভাবে গুলি করে শত শত আলেমদের হত্যা করা হয়েছে এবং বিশিষ্ট আলেম-ওলামাকে গ্রেফতার করে মাসের পর মাস কারাগারে রেখেছে, তা নিয়ে তো ভারত কোনো বক্তব্য-বিবৃতি দেয়নি। চিন্ময় দাস তো এ দেশেরই নাগরিক এবং একটি ধর্মীয় সংগঠনের নেতা, তিনি আইনের ঊর্ধ্বে নন, অপরাধ করলে কি তাকে গ্রেফতার করা যাবে না? এজন্য, তাকে মুক্তি দেয়া নিয়ে ভারত সরকারকে বিবৃতি দিতে হবে?

চার.
পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশের একশ্রেণীর হিন্দু, যারা ভারতের ইন্ধন ও উসকানিতে পা দিয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানায়। তারা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বাধীন দেশে ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করে। এর অর্থ হচ্ছে, তারা নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক মনে করে না। তা নাহলে, নিজ সরকারের সহযোগিতা না চেয়ে ভারতের সহযোগিতা চাইবে কেন? কোনো স্বাধীন দেশের নাগরিক কি, তা চাইতে পারে? এই যে ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তারা কি কোনো দেশের হস্তক্ষেপ চেয়েছে? তারা জীবন দিচ্ছে, নিজ দেশে উদ্বাস্তু হচ্ছে, তবুও তারা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে না। আমাদের দেশের একশ্রেণীর হিন্দুর মধ্যে এমন প্রবণতা রয়েছে, তারা স্বেচ্ছায় নিজ দেশ ছেড়ে ভারত চলে যায়। নিজ দেশকে দেশ মনে করে না। দেশ ছাড়ার প্রবণতা কি কোনো দেশপ্রেমিকের কাজ হতে পারে? আমরা তো বরাবরই দেখে আসছি, হিন্দুরা কখনো সামাজিক আক্রমণের শিকার হয় না, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং পারস্পরিক স্বার্থের কারণে হয়। এই যে, চিন্ময়কে গ্রেফতার করা নিয়ে ইসকনের সদস্যরা প্রকাশ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করল, ভারতে যদি এমন ঘটনা ঘটত, তাহলে পরিস্থিতি কী হতো? আমরা তো দেখেছি, মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন গুজব রটিয়ে কী নৃশংসভাবে আড়াই হাজার মুসলমানকে হত্যা, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়েছে। সাইফুল হত্যাকা-ের ঘটনা নিয়ে কি আমাদের দেশের মুসলমানরা হিন্দুদের উপর কি কোনো আক্রমণ করেছে? করেনি। বরং আমরা দেখেছি, হেফাজত ইসলামের নেতৃবৃন্দসহ আলেম-ওলামারা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে। এটাই মোদির ভারতের সভ্যতার সাথে বাংলাদেশের মানুষের সভ্যতার পার্থক্য।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ হোক
জিয়া : স্বাধীনতার ঘোষক
আমাদের পথ
পাহাড়িদের নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
স্মার্টফোনের দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায়
আরও

আরও পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

কী আছে তৌফিকার লকারে?

কী আছে তৌফিকার লকারে?

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ