ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা রুখে দিতে হবে
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ এএম
গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে যখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল, তখন জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত সরকার ও ভারতীয় মিডিয়া মুখে কুলুপ এঁটেছিল। তারা শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের মিথ্যা ন্যারেটিভ হাজির করে দেশের আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, জঙ্গি নাটকের মহড়া দিয়ে একটি ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেছিল। জাতিকে বিভক্ত করে রাজনৈতিক একাধিপত্য টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় মিডিয়ার সাথে সুর মিলিয়ে দেশের সব গণমাধ্যমকেও ফ্যাসিবাদী বয়ান প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনার পতন ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কার্যত দেশে রাজনৈতিক বিভাজনের অবসান ঘটলেও শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে কথিত নিপীড়ন-নির্যাতনের ভুয়া তথ্য প্রচার করে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করার মধ্য দিয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং দাঙ্গা বাঁধিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। হিন্দুত্ববাদী ভারতীয়রা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার ও ডিজইনফর্মেশন বা প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রচারণায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়েছে। তারা রীতিমত বাংলাদেশে একটি রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়া এবং সরকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিপক্ষে প্রতিবিপ্লবের অপচেষ্টায় উস্কানি দিতে দেখা গেছে। গত চার মাসে ধারাবাহিকভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার একেকটি অপপ্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে, স্বৈরাচারের দোসররা ভিন্ন ভিন্ন নামে নতুন দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমে অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার কূটকৌশল গ্রহণ করেছে। তবে শুরু থেকেই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটা গ্রুপকে মাঠে নামিয়ে রাজপথ দখলের চেষ্টা করে আসছে। তবে সংখ্যালঘুর ব্যানারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই একেকটি বড় জমায়েতের নেপথ্য ভূমিকা পালন করেছে। ইসকন ও সনাতনী জাগরণ জোটের সমাবেশ ও দাবিদাওয়াকে ঘিরে নানা উস্কানি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার ঘটনাগুলোকে মিথ্যা ও ভুল তথ্যসহযোগে ভারতীয় মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে উস্কানিমূলকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে একটি অনাকাক্সিক্ষত উত্তপ্ত ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের আদালতপাড়ায় দিনেদুপুরে ইসকন সমর্থকদের হাতে মুসলমান আইনজীবী হত্যা সেসব বিদ্বেষমূলক মিডিয়া ক্যাম্পেইনেরই ফল। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশের নাগরিক। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়ায় তার শাস্তি অথবা মুক্তি নিশ্চিত হবে। গুরুতর চারিত্রিক স্খলনের অভিযোগে ইতোমধ্যে তাকে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে মর্মে ইসকন তার অপকর্মের দায় নেবে না বলে জানিয়েছে। সেখানে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে ভারত সরকার বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন গ্রুপের উস্কানিমূলক কর্মকা-েও হাওয়া দিয়েছে। কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন এবং ত্রিপুরায় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে উচ্ছৃঙ্খল জনতার ধ্বংসযজ্ঞ, বাংলাদেশের পতাকা অবমাননা, সীমান্তে লংমার্চ আয়োজন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্ন হুমকিকে শুধুমাত্র উগ্রবাদীদের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। বিজেপি সরকারসহ ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ও উস্কানি ছাড়া এসব কর্মকা- সংঘটিত করা অসম্ভব ছিল।
বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষের সমর্থনপুষ্ট গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন থাকলেও শুধুমাত্র ভারতের সমর্থনের কারণে দেড়যুগেও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় হাসিনার স্বৈরশাসন হটানো সম্ভব হয়নি। তাদের কারণে বাংলাদেশের মানুষ গুম-খুন, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো বলছে, গত ১৬ বছরে বল্গাহীন অর্থ পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ভারতীয় শাসকদের প্রত্যক্ষ প্রতিষ্ঠিত চোরতন্ত্র উৎখাত করে বাংলাদেশে যখন সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতির পথ চিরতরে বন্ধ হতে চলেছে; গণতন্ত্র, সামাজিক মর্যাদা ও আইনের শাসনের পথ প্রশস্ত করতে একটি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন ভারত সরকার এবং ভারতীয় মিডিয়া পতিত স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারকে একটি সিস্টেমেটিক মিডিয়া ক্যাম্পেইনে পরিণত করেছে। এসব মিথ্যা প্রচারণা বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনমতকে বিভ্রান্ত করতে না পারলেও সাময়িকভাবে হলেও পশ্চিমা সমাজে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুল বার্তা দিচ্ছে। ভারতীয় একটি টুইটার একাউন্ট থেকে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে ৫০ হিন্দু হতাহত হয়েছে এবং ৬ হিন্দু নারীকে অপহরণ করা হয়েছে। অথচ, ইসকন সমর্থকদের হামলায় একজন মুসলমান আইনজীবী নিহত হওয়া ছাড়া সেখানে হিন্দুদের হতাহত হওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। হাজারি গলিতে ইসকন সদস্যদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপে অন্তত যৌথ বাহিনীর প্রায় ২০ সদস্য আহত হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করলেও বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম যেন বিগত স্বৈরাচারের সময়ের আনুগত্যের রেশ কাটাতে পারছে না। প্রকাশ্য দিবালোকে ইসকন সমর্থকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকা-ের ঘটনার সংবাদ শিরোনাম দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ভারতীয়দের হাজার হাজার ফেইসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম আইডি থেকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মিশন ইতোমধ্যে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। দেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কারণেই ভারতীয় অপপ্রচার হালে পানি পাচ্ছে না। তবে তাদের পরিকল্পিত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নীরবতার কোনো সুযোগ নেই। অমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত ঘন ঘন প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ভারতীয় অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নতুন বাংলাদেশের বয়ান এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশের মাধ্যমেই বিদ্বেষমূলক, বানোয়াট অপতথ্যের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম