সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব কি গণতান্ত্রিক দেশের সনদ?
২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি অন্যতম দাবিতে পরিণত হয়। কেউ যাতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে, এজন্য এ সংস্কারের দাবি তোলা হয়। দায়িত্ব নেয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এসব কমিশন গঠন করার কথা বলেন। কমিশনগুলোকে ৯০ দিনের মধ্যে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত ১৫ জানুয়ারি অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিটি তার সুপারিশসংবলিত প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছেন। সুপারিশের সারসংক্ষেপ কমিশনের ওয়েবসাইটের প্রকাশ করা হয়েছে। সারসংক্ষেপে সংবিধান সংস্কারে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রাখা, পাঁচ মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, দুই কক্ষের সংসদে মোট আসন ৫০৫টি, সংসদের মেয়াদ ৪ বছর, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, নিম্নকক্ষে ১০ শতাংশ আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী করা, ২১ বছর হলে প্রার্থী হওয়া যাবে, অর্থবিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যদের দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার পূর্ণ ক্ষমতা রাখা এবং নারী আসনে সরাসরি ভোট। সব মিলিয়ে ১৬টি ক্ষেত্রে ১৫০টির মতো সুপারিশ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, সংস্কার কমিটির সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এ নিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু হবে।
দুই.
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ থেকে যে মৌলিক বিষয়গুলো জানা গেল, তাতে একটি পূর্ণ গণতান্ত্রিক আধুনিক বাংলাদেশের রূপকল্প তুলে ধরা হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। তাদের বিশ্বাস সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে। এই পরিবর্তন হওয়াই উচিৎ। সময়ের প্রয়োজনে এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যেখানে বিশ্ব পরিবর্তন হচ্ছে, সেখানে আমাদের পিছিয়ে থাকার কারণ নেই। স্বাধীনতার পর যে সংবিধান রচিত হয়েছে, সেটিকে এখন অনেকে স্বৈরতন্ত্র জন্ম দেয়ার সংবিধান বলছে। এর মাধ্যমে শেখ মুজিবকে একচ্ছত্র ক্ষমতা এবং স্বাধীনতাকে দলীয় মালিকানাধীনে পরিণত করার দলিলে পরিণত করা হয়েছিল বলে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, ৭২-এর সংবিধানকে সার্বজনীন হয়ে উঠতে দেয়া হয়নি। চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে শেখ মুজিবকে আজীবন ক্ষমতায় রাখা এবং স্বৈরাচারে পরিণত করার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর সেই সংবিধানের কাঠামো ঠিক রেখে ১৬ বার সংশোধন করা হলেও তাতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা ঠেকানো যায়নি। এর অন্যতম উদাহরণ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তো সংবিধানকে নিজের মতো করে সংশোধন করে নিজেকে তার বাবার চেয়েও বড় ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলেন। আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য প্রায় সাড়ে ১৫ বছরে বিরোধীদল, বিশেষ করে বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেয়ার হেন কোনো নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেই, যা অবলম্বন করেননি শেখ হাসিনা। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়েছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও জেল-জুলুম করেছেন। অসংখ্য নেতাকর্মীকে খুন, গুম, অপহরণ করিয়েছেন। বাদ যায়নি, সচেতন ও সুশীল নাগরিকরাও। যারাই হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদের জীবন বিপন্ন করা হয়েছে। এমন ‘জালিম’ শাসক দেশের ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি। হাসিনা তার ফেরাউনীয় শাসন ব্যবস্থা দিয়ে রাষ্ট্রের সকল কাঠামো ভেঙে দিয়েছেন। তার কথাই ছিল শেষ কথা। আইন-আদালত, পুলিশ, প্রশাসনÑ সবকিছুই ছিল তার আজ্ঞাবহ। দেশকে মগের মুল্লুকের চেয়েও ভয়ংকর বানিয়ে ফেলেছিলেন। মানুষকে ভয়ের মধ্যে রেখে শাসন করেছিলেন। এরকম চরম প্রতিকূল ও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও বিএনপির নেতাকর্মীরা টিকে ছিল। শেখ হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে প্রথম আখ্যায়িত করেছিলেন বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। যেখানে টুঁ শব্দ করা যেত না, সে সময় হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করা ছিল এক দুঃসাহসী বিষয়। জনগণও শেখ হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করা শুরু করে এবং ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার পতন ঘটায়। তিনি পালিয়ে তার প্রভু মোদির কাছে আশ্রয় নেন। তার পতনের পর থেকেই ভঙুর রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার এবং সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সংবিধান সংস্কার কমিটি সেই সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছে। এতে বাংলাদেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে’র পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ প্রস্তাব করেছে। এই নাম পরিবর্তন যথার্থ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কারণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ‘প্রজা’ শব্দটি মানানসই নয়। এটা রাজপ্রথা, যেখানে রাজার সিদ্ধান্তই সব, প্রজার মতামতের কোনো মূল্য নেই। অন্যদিকে, গণতন্ত্রে জনগণের মতামত এবং সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালক নির্বাচিত হয়। এখানে রাজা-প্রজা বলে কিছু নেই। ফলে সংবিধান সংস্কার কমিটি ‘প্রজা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘জনগণ’ শব্দ যুক্ত করে যে নাম প্রস্তাব করেছে, তা যুক্তিযুক্ত। এর মাধ্যমে সাংবিধানিক বা আইনগতভাবে জনগণকে প্রজা ভাবার অবসান ঘটবে। জনগণ প্রজা হয়ে থাকা থেকে মুক্ত হবে। সংসদকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট করার বিষয়টিও অনেকের সময়োপযোগী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইটালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্সসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো বহু আগেই এ পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। তবে উন্নত বিশ্বে এখন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে শাসন পরিচালনায় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ব্রিটেনে একদশক ধরে দ্বিকক্ষ সংসদের বিরোধী মতামত প্রবল হয়ে উঠেছে। ইটালির দ্বিকক্ষ সংসদ বিলোপের দাবি উঠেছে। এর কারণ, দেশগুলোর সুবিশাল আয়তন ও মানুষের জীবনযাপন এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র। আমাদের দেশের মতো ছোট দেশ যেখানে একে অপরের সাথে একই ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করে এবং প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের পরিচয় রয়েছে। ফলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হলে সদস্যরা জোট বেঁধে সরকারকে বিপাকে ফেলতে পারে। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির কারণে তারা কেনাবেচার মধ্যে চলে যেতে পারে। একটি দোদুল্যমান সংসদ হবে। পরপর কিংবা অন্যকোনোভাবে হোক, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার বিষয়টিও গণতান্ত্রিক। যে দলের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন নাÑএটিও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। দলগুলোতে এক ব্যক্তির আমৃত্যু প্রধান হয়ে থাকার অবসান হয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হবে। আমাদের দেশে পরপর বা অন্যকোনো উপায়ে দুইবার প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট থাকার বিধান না থাকায়, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল একাকার হয়ে যায়। কখনো কখনো দলের শাসনকে সরকারের শাসনকে অতিক্রম করে যায়। আমরা শেখ হাসিনার সময় তা দেখেছি। সরকার বলতে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ বলতে সরকার হয়ে গিয়েছিল। কাজেই, ক্ষমতাসীন দলকে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকার পরিচালনার উপর প্রভাব খাটানোর বাইরে রাখার জন্য দলীয় প্রধানকে দলের প্রধান থাকতে পারবেন না, এমন বিধান যুক্তিযুক্ত। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এ ধারা দেখতে পাই। দল প্রধান বা দল থেকে যাকে প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়া হয়, তিনিই তা হন এবং দেশ পরিচালনা শেষে সাধারণ মানুষের কাতারে চলে যান। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই।
তিন.
যেকোনো নতুন কিছু মানুষের সামনে এলে বা উপস্থাপন করলে, তা সহজে গ্রহণ করতে চায় না। কারণ, তারা সুদীর্ঘকাল ধরে যে পরিবেশ, পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বসবাস করে, অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, হঠাৎ নতুন মতবাদ দিয়ে পরিবর্তন করতে চাইলে ধাক্কা খায়, সহজে গ্রহণ করতে চায় না। বাপ-দাদা বা পূর্ব পুরুষরা যে ধারায় জীবন কাটিয়েছে, সে ধারায় চলতে চায়। অভ্যস্থতার চিন্তা বা প্রচলিত ধারার বাইরে যেতে চায় না। যেমন, একসময় ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি যখন আসে, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, এগুলো আমাদের সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির আমদানিকারক হয়ে উঠবে। আগামী প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। সময় অতিক্রমের সাথে যখন মানুষ এগুলোর উপকারিতা বুঝতে পারে, তখন তা জীবনের অনুষঙ্গ করে নেয়। এখন মোবাইল দেহের একটি অঙ্গের মতো হয়ে উঠেছে। এমনকি, মায়েরা শিশুর কান্না থামাতে মোবাইলে গেমস চালু করে দিয়ে বসিয়ে ঘরের কাজ সামলাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম-অনলাইন তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের জানা-বোঝা, জ্ঞান আহরণ, অন্যায় ও অন্যায্যতার প্রতিবাদ এবং জনমত তৈরির অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এগুলোর কিছু কুফল থাকলেও মানুষের সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তদ্রুপ, শাসন ব্যবস্থার নতুন ধরন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন হলে ধাক্কা খাওয়া স্বাভাবিক। কারণ, তারা একটা নির্দিষ্ট ছকে ও পরিবেশের মধ্য দিয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। চিরায়ত অভ্যস্থতাকে যখন পরিবর্তন করা হয়, তখন তা সহজে গ্রহণ করতে চায় না। নানাজনে নানাভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। তবে নতুন চিন্তা ও পদ্ধতি প্রণয়নের পর তার উপকারিতা মানুষের সামনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরে বোঝানোর ব্যবস্থা করলে তা সহজে প্রয়োগ করা যায়। সংবিধান সংস্কার কমিটি যেসব বিষয় প্রস্তাব করেছে, তার সিংহভাগই ২০১৬ সালে বিএনপির উপস্থাপিত ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ ও ভারসাম্য বজায় রাখা, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’Ñএই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করা, দলমত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতি-গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও স¤পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান ইত্যাদি মৌলিক বিষয় রয়েছে। বিএনপি বেশ কয়েক বছর ধরেই তার এই ৩১ দফা জনগণের সামনে তুলে ধরছে। সভা-সেমিনার, লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে গণসংযোগের মাধ্যমে কাজটি করছে। অর্থাৎ মানুষকে তার নতুন শাসন ব্যবস্থার প্রস্তাবগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে তাদের ধাতস্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মানুষ এগুলো জানছে। ফলে বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যায়, তাহলে তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন করলে জনগণের কাছে তা সহজে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য হবে।
চার.
সংবিধান সংস্কার কমিটি যে সব প্রস্তাব পেশ করেছে, সেগুলো নিয়ে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা হবে, তখন যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সবার সম্মতিতে সংযোজন-বিয়োজন হয়ে যে কাঠামো তৈরি হবে, আশা করা যায়, তা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং যারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যাবে, তারা তা বাস্তবায়ন করবে। এর মাধ্যমে দেশ সামন্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে বৈষম্যহীন এক নতুন গণতান্ত্রিক যুগে প্রবেশ করবে। দেশের মানুষ আর নিজেকে ‘প্রজা’ ভাববে না। প্রজা থেকে নাগরিক হবে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার নির্বাচিত ও পরিচালিত হবে। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এসব সংশোধন শুধু সংবিধান নামক পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে বুকসেল্ফে রেখে দিলে হবে না। বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। তবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুরনো চার বিভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাকে প্রদেশে পরিণত করার যে সুপারিশের কথা ভাবছে, তা করা ঠিক হবে না। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদে’র সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের প্রাদেশিক সরকারের প্রস্তাব এর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দিয়েছিলেন। তখন তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ, আমাদের মতো ছোট আয়তনের দেশে এ ধারণা বাস্তবায়ন করলে প্রতিবেশী দেশ এর সুযোগ নিতে পারে। এমনিতেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করা নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্রের কথা বহুবছর ধরে প্রচলিত রয়েছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে ভারতের কেউ কেউ কথাও বলেছেন। ফলে অখ- বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকার হলে, ভারত দেশকে বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ নিতে পারে। ফলে প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাব জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
darpan.journalist@gmail,com
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডেনমার্ক সরকারের আইএফইউ কর্তৃক একেএস খান ফার্মাসিউটিক্যালসে ১২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ
রাশিয়ার জনগণকে ভালোবাসেন ট্রাম্প!
বিমানবন্দরে রাতভর তল্লাশিতে মেলেনি কিছুই : শাহজালালে ফের বোমা হামলার হুমকি বার্তা
বিপুল কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো
ইএফডি মেশিনের আগে সব ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতায় আনুন
বিএনপিতে চাঁদাবাজ অত্যাচারী ও দখলবাজের কোনো জায়গা নেই : আমান উল্লাহ আমান
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলাম-ই কার্যকর পন্থা শীর্ষক জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বিশ্বনাথে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুইট গ্রেফতার
সোনারগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন
রূপগঞ্জে শীতার্তদের ঘরে ঘরে কম্বল পৌঁছে দিলেন এসিল্যান্ড
চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ধামরাইয়ে ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঝুলছে তালা
মাদক চাঁই রুবেল দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার
দুর্নীতির মামলায় খুলনার সাবেক এমপি মিজানুর রহমান কারাগারে
সাধন চন্দ্র মজুমদারের আয়কর নথি জব্দ
জুলাই বিপ্লবে প্রত্যেকটি খুনের বিচার হতে হবে
এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম ওয়ার্ল্ড ফেয়ার অ্যান্ড ফেস্ট ট্যাম্পা বে-২০২৫
নারায়ণগঞ্জে কিউলেক্স মশার উপদ্রবে নাজেহাল নগরবাসী
স্বতন্ত্র বিধিমালা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান
নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন : নবীন পুলিশদের আইজিপি