স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে
২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম

ভারতীয় স্বার্থে, সমর্থনে ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে জেঁকে বসা চরম স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশিদের উপর ভিসা সংকোচন নীতি গ্রহণ করে দিল্লির সরকার। এর ফলে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়লেও বেশিরভাগ মানুষই দেশেÑবিদেশে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে নিচ্ছে। যেখানে সংকট, সেখানেই খুলে যায় আরেক সম্ভাবনার দুয়ার। ভারতে বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ও মেডিকেল ভিসা সঙ্কুচিত হওয়ার সুযোগে পাকিস্তান, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসানীতি শিথিল করে নিজেদের পর্যটন ব্যবসাকে চাঙ্গা করার সুযোগ নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে ভারতের কিছু কিছু স্থানে পর্যটন খাতে ধস এবং বিকল্প দেশগুলোতে পর্যটনে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হতে দেখা যাচ্ছে। সেই সাথে দেশের স্বাস্থ্য সেবাখাতেও এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক মানুষ, যারা সাধারণ অসুখ-বিসুখেও বোম্বে-বেঙ্গালোরে দৌড় দিত, তাদের অনেকে এখন দেশেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনাও তৈরী হয়েছে। সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন।
ভারতের নিষেধাজ্ঞা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হয়েছে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে ভারতের গরু রফতানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশের খামারিরা গো সম্পদে দেশকে স্বয়ংসম্পুর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে। পেঁয়াজ ও আলু রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভারতীয় কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলেও বাংলাদেশে কোনো সংকট সৃষ্টি হয়নি। ভারতের সরবরাহ ছাড়াই এসব পণ্যের মূল্য কমে দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে এসেছে। বাংলাদেশে পণ্যমূল্যের উপর সিন্ডিকেটেড নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফাবাজির পেছনে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের প্রভাব কমার কারণে বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উৎপাদন চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য থাকলেও শুধুমাত্র সিন্ডিকেটের কৃত্রিম সংকটের কারণে চাল, পেঁয়াজ ও আলুর মত নিত্যপণ্যের উল্লম্ফন দেখা দেয়। তবে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে সাধারণ মানুষের মনস্তত্ত্ব, চিকিৎসকদের আচরণ এবং অবকাঠামো ও ডায়াগনোসিসের মান নিয়ে যে সব প্রশ্ন রয়েছে, সেদিকে মনোযোগ দিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে কার্যকর উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। সামগ্রিক বিবেচনায় ভারতের স্বাস্থ্যসেবা খাত বাংলাদেশের চেয়ে খুব বেশি উন্নত নয়। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রথিতযশা ডাক্তারদের অনেকে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের কঠোর ভিসানীতি ও কূটনৈতিক বৈরীতাকে দেশের স্বাস্থ্যখাতে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের সুযোগ হিসেবে দেখছেন। দেশে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও রোগীদের বিদেশনির্ভরতার পেছনে যে সব বিষয় জড়িত, তা নিরসনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রার অপচয় রোধ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের মাধ্যমে রোগীদের বিদেশ গমনের ধকল কমিয়ে আনা, হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় রোধের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি মেডিকেল ট্যুরিজম হাবে পরিনত করাও অসম্ভব নয়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা প্রথমেই স্বাস্যসেবা শিক্ষার মানোন্নয়ন, ডাক্তারদের আচরণের পরিবর্তন, নির্ভূল রোগ নির্নয় ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেয়ার কথা বলেছেন। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সচিব ও এমপি-মন্ত্রীরা চিকিৎসার জন্য যত্রতত্র বিদেশ গমনের প্রবণতা কমিয়ে দেশেই চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ খাতে তার ইতিবাচক পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। উপযুক্ত পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পারলে, ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে এবং নেপাল-ভূটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও হাজার হাজার মানুষ মেডিকেল ভিসায় বাংলাদেশে আসার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছর ৪-৫ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ খাতের উন্নয়নে প্রথমেই মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ-সুবিধা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সেই সাথে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট খাতে উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন খাতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। চিকিৎসকদের আচরণ, হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা রোধ, ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মুনাফাবাজি ও রোগ নির্নয়ে ভুল-ভ্রান্তি কমিয়ে আনতে এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ব্যয়বাহুল্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। ওষুধের কাঁচামাল, চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে চিকিৎসা খাতে ব্যয়বাহুল্য কমিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশি ডাক্তাররা ইউরোপ-আমেরিকাসহ অনেক উন্নত রাষ্ট্রে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। উপযুক্ত নীতি সহায়তা পেলে বিদেশিরাও বাংলাদেশ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণসহ স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে পারেন। দেশীয় স্বাস্থ্য খাতের উপর আত্মনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে নাগরিকদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষত, ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের নিজ দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থাশীল হতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উন্নয়নের সাথে সাথে জনসচেতনার উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায়, অতীতের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ষড়যন্ত্রের গ্যাড়াকল থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত এবং মেডিকেল ট্যুরিজমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চায় দেশের সাধারণ মানুষ।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ডিসি সম্মেলন শুরু আজ : উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

কুম্ভমেলায় পুণ্যার্থীদের ভিড়, নয়াদিল্লি স্টেশনে ধাক্কাধাক্কিতে নিহত ১৫

ছন্দ খুঁজে ফেরা বাবরকে যে পরমার্শ দিলেন ডিভিলিয়ার্স

বেলিংহ্যামের লাল কার্ড,ফের রিয়ালের হোঁচট

হাইভোল্টেজ লড়াইয়ের আগে মারমুশের হ্যাটট্রিকে সিটির বড় জয়

একুশে টিভির জাহাঙ্গীর টাওয়ারে আগুন

পবিত্র শবে বরাত পালিত

৮ দিনে গ্রেফতার ৪৪০১

আশুলিয়ায় ঘরে জমাকৃত গ্যাসের আগুনে নারী ও শিশুসহ দগ্ধ ১১

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই না : বিজেপি চেয়ারম্যান

সউদীর বাজারই একমাত্র ভরসা

৩৭৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

ক্ষমতার চেয়ারে যারা বসে, তারা সহজে এটা ছাড়তে চায় না : দুদু

অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু

কাল থেকে শুরু হচ্ছে বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন

ব্যর্থ হলে জাতি ক্ষমা করবে না :আলী রীয়াজ

ছাত্র-তরুণরা ধ্বংসের মুখে থাকা দেশকে নতুনভাবে গড়ার সুযোগ দিয়েছে -ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জোনায়েদ সাকি

আগে জাতীয় নির্বাচন পরে স্থানীয় সরকার :মির্জা ফখরুল

হাসিনার রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিলো জাতিসংঘ

নতুন দেশ মানে নতুন নির্বাচন