খাদ্যপণ্যে ভ্যাট নয়
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, মাছ এবং গোশতের মতো খাদ্যপণ্যগুলোর দাম এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সাধারণ মানুষ এই পণ্যগুলো কেনার সামর্থ্য হারাতে বসেছে। এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ, যার অন্যতম সিন্ডিকেটবাজি আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যপণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার বা কমানোর দাবি ওঠা একেবারে যৌক্তিক। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, খাদ্যপণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার না করা হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বেড়ে যাবে, যা ইতোমধ্যেই কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
আজকাল যেকোনো পণ্য কেনার সময় সাধারণ মানুষের মনে থাকে একটি প্রশ্ন ‘আমার পক্ষে এত দামে কেনা কি সম্ভব?’ দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং খাদ্যপণ্যে অতিরিক্ত কর চাপানোর কারণে এই প্রশ্নটি আরও জটিল হয়ে উঠছে। শ্রমজীবী মানুষ, দিনমজুর, সাধারণ কর্মচারী কিংবা নি¤œআয়ের মানুষরা পণ্য কিনতে গিয়ে অক্ষম হয়ে পড়ছে। তারা যখন কোনো কিছু কেনে ঘরে ফেরে, তখন এর মূল্য চিন্তা করে তাদের মন বিষণœ হয়ে ওঠে। দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশে এখনো প্রায় ২৫% মানুষ গরিবের তালিকায় পড়ে, যারা দারিদ্র্যের কারণে জীবন ধারণ করতে সমস্যার সম্মুখীন। কেবলমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে ব্যবসায়ীদের উচিত দেশের দরিদ্র জনগণের কথা সহানুভূতির সাথে ভাবা। ভ্যাট প্রত্যাহারের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে যদি ব্যবসায়ীদের মুনাফা সামান্য কমে যায়, তবে এই পরিমাণ ক্ষতির বিনিময়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হতে পারে।
সিন্ডিকেট ভাঙা ও সঠিক সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি হউক : সরকারের উচিত সিন্ডিকেট ভাঙার মাধ্যমে খাদ্যপণ্যের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে সহায়তা করা। দেশের বাজারে বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেট মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো ভাঙতে হলে সরকারের তৎপরতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ এবং ব্যবসায়ীদের সহায়তায় প্রকৃত বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। এর মাধ্যমে খাদ্যপণ্যের দাম কমানো সম্ভব, যা সরাসরি জনগণের কল্যাণে আসবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বাজারে অবাধ প্রতিযোগিতা চালু থাকলে দাম কমে যাবে এবং এক্ষেত্রে মুনাফার হার কিছুটা কমলেও সরবরাহে কোনো অভাব হবে না। এই অবস্থায় সরকার যদি খাদ্যপণ্যের উপর ভ্যাট প্রত্যাহার করে, তাহলে বাজারে মূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সাধারণ মানুষ সুবিধা পাবেন।’
পবিত্র রমজান মাস সামনে আসছে। এই সময়ে, সাধারণ মানুষ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আর সহ্য করতে পারবে না। দেশে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায়, রোজার মাসে সবার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বেশি হয়ে থাকে। এমন সময় যদি খাদ্যপণ্যের দাম না কমানো হয় এবং ভ্যাট প্রত্যাহার না করা হয়, তবে জনগণের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে উঠবে। এতে শুধু হতাশা বাড়বে না, বরং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। দ্রব্যমূল্য সঙ্কট যত বাড়বে, ততই কষ্টে পড়বে দরিদ্র মানুষ, যারা ইতিমধ্যেই পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। এ কারণে সরকারকে রোজা মাসের আগে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যপণ্যের উপর ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে, ব্যবসায়ীদের একজোট হয়ে এই সিদ্ধান্তে সাহায্য করা উচিত, যাতে সরকারকে সহায়তা করা যায় এবং জনগণের কষ্ট কমানো সম্ভব হয়।
খাদ্যপণ্যে ভ্যাট আরোপ করলে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য। এতে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে আয়ের পার্থক্য আরও বেড়ে যেতে পারে। দরিদ্র জনগণের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পাবে। সাধারণ জনগণ খাদ্যপণ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে দেখে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপকে অমানবিক ও জনবিরোধী নীতি হিসেবে গণ্য করা হতে পারে। তাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। মূল্যবৃদ্ধি জনবিক্ষোভ বা সামাজিক আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে, যা সরকারের স্থিতিশীলতা বিঘিœত করবে।
খাদ্যপণ্যে ভ্যাট আরোপ সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। তবে এটি এমনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে আর্থিক লাভের পাশাপাশি জনআস্থা অটুট থাকে। সরকারকে জনগণের অনুভূতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে নীতি প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায় সাময়িক আর্থিক লাভের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে, যা জাতির সামগ্রিক অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
গণমানুষের কষ্ট ও অসুবিধার কথা মাথায় রেখে একযোগে কাজ করা ব্যবসায়ী সরকারের দায়িত্ব। তবে এটাও লক্ষণীয়, সরকারের একক পদক্ষেপে কোনোভাবেই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং যৌথ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
খাদ্যপণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দাবি, যা সাধারণ জনগণের জন্য দারুণ সহায়ক হতে পারে।
লেখক সাংবাদিক, সমাজ গবেষক,
ইমেইল : www.mirabdulalim.com
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?
রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান
প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত
মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার
যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি
মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?
খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক
জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি
৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী
মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা
রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর
মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন
এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ
‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি
বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন
বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম