রাজধানীর জনদুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

অসভ্য ও অবাসযোগ্য নগরী হিসেবে অনেক আগে থেকেই ঢাকার পরিচিতি রয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় প্রায় নিয়মিতই বিশ্ব পরিবেশ সংস্থাগুলো পরিসংখ্যান প্রকাশ করে এ তথ্য দিত। যুক্তরাজ্যের ইকোনিমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) পরিসংখ্যান প্রকাশ করে এ চিত্র তুলে ধরত। হাসিনা উন্নয়নের ফানুস উড়ালেও ঢাকাকে ন্যূনতম বসবাসযোগ্য করে তুলতে পারেননি। দুই সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র ও ওয়ার্ড কমিশনাররা থাকলেও বড় বড় কথা বলা ছাড়া কিছুই করতে পারেননি। রাজধানীর উন্নয়নের নামে বহু অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত প্রকল্প নিয়েছে, যার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসবের কথা এখন প্রকাশিত হচ্ছে। নগরবাসী নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করলেও ন্যূনতম সেবা পায়নি। উল্টো নগরকে অবাসযোগ্য রাখার যত প্রক্রিয়া আছে অবৈধ কর্মকা-ের মাধ্যমে করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর যে এ চিত্র বদলেছে, তা বলা যায় না। বরং সমস্যা নিরসন ও উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে।

রাজধানীর বায়ুদূষণ, পরিবেশ দূষণ, পানিবদ্ধতা, যানজট, মশার উৎপাত নিত্যকার বিষয়। এসব সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি দূরে থাক, সহনীয় পর্যায়েও আনার কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ শুধু রাজধানীর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ৭ মন্ত্রণালয় ও ৫৪টি সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতো সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান থাকার পরও কেন রাজধানীর উন্নয়ন ও নাগরিকসেবা তলানিতে পড়ে রয়েছে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। যুগের পর যুগ চলে গেলেও প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। এতদিন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলের কথা বলা হয়েছে। তার পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এসেছে। তারপরও রাজধানীর নগরিকসেবার ন্যূনতম দৃশ্যমান উন্নতি কেন পরিলক্ষিত হচ্ছে না? উল্টো যানজট, সড়কের বেহালদশা, মশার উৎপাত, বায়ুদূষণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাগরিক ভোগান্তি চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। চলতে-ফিরতে কোথাও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সবকিছুই যেন স্থবির হয়ে রয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা, হাসিনা যেটা করেননি, অন্তর্বর্তী সরকার তা করবে। তাদের এ আশা পূরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নাগরিকদের আগের মতোই দুর্ভোগের মধ্যে চলতে হচ্ছে। দুই সিটি করপোরেশন ও এলাকাভিত্তিক জনপ্রতিনিধি না থাকা কিংবা গ্রেফতার ও পলায়ন করলেও আমলা ও কর্মকর্তারা ঠিকই রয়ে গেছেন। তারা কী দায়িত্ব পালন করছে? কেউ না থাকলে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়বে বা নাগরিকসেবা বন্ধ হয়ে যাবে, এটা কোনো কথা হতে পারে না। অন্তর্বর্তী সরকারের তো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তা রয়েছেন। নাগরিকসেবা উন্নয়নে তারা কেন তৎপর হচ্ছে না? নাগরিকদের স্বস্তি বলে কিছু নেই। দিনে যানজটে আটকে লাখ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে, যানবাহনের জ্বালানির অপচয় ও মানুষের স্বাস্থ্যহানির মাধ্যমে বিপুল অর্থের ক্ষতি হচ্ছে। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ছে, যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে, বিকেল হলেই মশার উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। এসব সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ কোনো সমস্যারই সমাধান হচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই এসব কর্তৃপক্ষের কাজ কি? জনগণের অর্থে পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা সেবা না দিয়েই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। কোনো জবাবদিহিতা নেই। হাসিনার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। পুলিশ এখনো পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠেনি। কোথায় অপরাধ সংঘটিত হলে সেখানে দ্রুত পৌঁছা প্রয়োজন। এমনিতেই পুলিশের মধ্যে শৈথিল্য রয়েছে, তার উপর সড়কের বেহালদশা ও যানজটের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে কিংবা অপরাধীকে গ্রেফতার করতে অনেক সময় অপচয় হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতি হলে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হবে?

রাজধানীতে বর্ষা মৌসুমে সড়ক খোঁড়াখুঁড়িসহ উন্নয়ন কাজে হাত দিয়ে পানিবদ্ধতা, যানজটসহ জনভোগান্তি সৃষ্টির অপসংস্কৃতি যুগের পর যুগ ধরে চলছে। নগরবিদরা শুষ্ক মৌসুমে এসব উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজ করার বহু তাকিদ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এখন শুষ্ক মৌসুম চলছে, এ সময়ে নগরির উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজ করা জরুরি, যাতে বর্ষা মৌসুমে জনভোগান্তি সৃষ্টি না হয়। দেখা যাচ্ছে, সরকার কোনো কাজই করতে পারছে না। রাস্তাঘাট সংস্কারসহ যানজট নিরসনে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। সবকিছুই যেন স্থবির হয়ে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের শুধু রাষ্ট্র সংস্কারই কাজ নয়, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতি সামাল দেয়া, জনভোগান্তি কমানোসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার দায়িত্বও রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য বলতে কিছু নেই। জনঅসন্তুষ্টি যে চরমে পৌঁছেছে, সেদিকে তার খেয়াল আছে বলে মনে হচ্ছে না। সরকারের উচিৎ নাগরিকসেবা ও নিত্যকার জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। রাজধানীর সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় ও কার্যকর করে জনসেবায় নিয়োজিত করা। নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা ও রাজধানীকে গতিশীল রাখার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, নাগরিক স্বস্তি ও গতিশীলতা অর্থনৈতিক গতিশীলতায় অপরিহার্য।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সমুদ্রদূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগই একমাত্র পথ
ডিসেম্বরেই নির্বাচন
খোশ আমদেদ মাহে রমজান
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম আম গাছ
জলবায়ু পরিবর্তনের নানামাত্রিক প্রভাব
আরও
X

আরও পড়ুন

মাগুরায় বৈষম্য বিরোধী  গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মাঝে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ

মাগুরায় বৈষম্য বিরোধী  গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মাঝে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ

সাভারে বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে  মহাসড়ক অবরোধ করল পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

সাভারে বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে  মহাসড়ক অবরোধ করল পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অনুমোদন

ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অনুমোদন

রাউজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট ৫ব্যবসায়ীকে জরিমানা

রাউজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট ৫ব্যবসায়ীকে জরিমানা

রমজান উপলক্ষ্যে আমিরাতে ১০ হাজার পণ্যে ৫০ শতাংশের বেশি ছাড়

রমজান উপলক্ষ্যে আমিরাতে ১০ হাজার পণ্যে ৫০ শতাংশের বেশি ছাড়

সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান

সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান

কর্ণফুলী নদীতে মৎস্যজীবী সমিতির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোন বাধা নেই

কর্ণফুলী নদীতে মৎস্যজীবী সমিতির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোন বাধা নেই

মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

ঘাটাইলে ৪টি ইট ভাটায় ২৬ লাখ টাকা জরিমানা

ঘাটাইলে ৪টি ইট ভাটায় ২৬ লাখ টাকা জরিমানা

কুষ্টিয়ায় কাঠ পোড়ানোর অপরাধে ভাটা মালিকের লাখ টাকা জরিমানা

কুষ্টিয়ায় কাঠ পোড়ানোর অপরাধে ভাটা মালিকের লাখ টাকা জরিমানা

বাজার অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাজার অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মহাসড়কে সেনাবাহিনী-হাইওয়ে পুলিশের যৌথ অভিযান

মহাসড়কে সেনাবাহিনী-হাইওয়ে পুলিশের যৌথ অভিযান

বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তি রোজা না রাখতে পারলে কাফফারাহ দেওয়া প্রসঙ্গে?

বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তি রোজা না রাখতে পারলে কাফফারাহ দেওয়া প্রসঙ্গে?

নন-এমপিও শিক্ষকদের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান

নন-এমপিও শিক্ষকদের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান

ইসরাইলের জন্য ৪শ’ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা অনুমোদন

ইসরাইলের জন্য ৪শ’ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা অনুমোদন

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচন দিন: আমিনুল হক

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচন দিন: আমিনুল হক

মাহে রমজান মুসলিম উম্মাকে ঐক্যর শিক্ষা দেয় : রাউজানে বক্তারা

মাহে রমজান মুসলিম উম্মাকে ঐক্যর শিক্ষা দেয় : রাউজানে বক্তারা

ওয়াহিদা বেগম রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক  (রাকাব)-এর  নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক

ওয়াহিদা বেগম রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)-এর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক

কলাপাড়ায় পবিত্র রমজানে নিম্ন আয়ের রোজাদারদের জন্য ১ টাকায় ইফতার বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

কলাপাড়ায় পবিত্র রমজানে নিম্ন আয়ের রোজাদারদের জন্য ১ টাকায় ইফতার বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।