সেকুলারিজম নৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্তরায়

Daily Inqilab ইলিয়াজ হোসেন রানা

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের সূচনা ঘটেছিলো ধর্মীয় সংস্কারের বার্তা দিয়ে। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, ধর্মীয় উত্তরাধিকার এবং এককেন্দ্র্রিক ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে প্রোটেস্ট্যান্টরা যে বিদ্রোহ করেছিলো, সেখান থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতার জন্ম। ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্দেশ্য ছিলো, রাষ্ট্র ও চার্চের মধ্যে দূরত্ব তৈরি। ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার মাধ্যমে ইতোমধ্যে সেই দূরত্ব তৈরি করাও সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে অস্বীকার করা হয়েছে স্বয়ং স্রষ্টাকেই, নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে নীতি ও নৈতিকতাকে। বিশ শতকের পশ্চিমা সমাজ সেই বাস্তবতা তুলে ধরেছে। আর একবিংশ শতকের পশ্চিমা সমাজের অবস্থা আরো ভয়াবহ। এখানে মানুষের মনুষ্যত্বকেই বিসর্জন দেয়া হয়েছে। উত্তর আধুনিক সময়ে এসে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার যে চেহারা দেখছি, তার ভিত্তি ব্যক্তিস্বার্থ, ব্যক্তি প্রণোদনা আর সীমার মাত্রাতিরিক্ত লঙ্ঘন।

ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্ভবের সময় সমাজ থেকে ধর্মকে উচ্ছেদ কিংবা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করার কোনো ইচ্ছা ছিল না; বরং ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের মূল প্রস্তাবনা ছিলো, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমকে চার্চের প্রভাব থেকে মুক্ত করা এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে আলাদা রাখা। প্রথমদিকে যারা রাষ্ট্রকে চার্চের প্রভাব মুক্ত করতে চেয়েছিলেন; বিশেষ করে ডেকার্তে, হোবস, জন লক এবং রুশোÑ তাদের কারো মধ্যে ধর্মকে বা ঐশ্বরিক চেতনাকে অবনমিত করার কোনো খায়েশ ছিলো না; বরং ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তার অবস্থানকে সমুন্নত রেখেই তারা সংস্কারমূলক চিন্তাভাবনা প্রচার করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের চিন্তাধারা এমনটা হলেও শতাব্দিকাল পরই ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবীদের সুর পাল্টাতে থাকে। তারা ধর্মকে একটি নেতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। তারা দাবি করেন, প্রগতি ও উন্নতির জন্য ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো বিকল্প নেই। এই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কার্লমার্কস ছিলেন অন্যতম। তিনি দাবি করেন, একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ধর্মকে সব সময়ই নিরপেক্ষ অবস্থায় রাখতে হবে এবং লোকালয় থেকে ধর্মকে নির্বাসনে পাঠাতে হবে। কিন্তু নির্বাসনে পাঠানো হলেও তিনি ধর্মীয় জীবন থেকে বরাবরই বিপদের আশঙ্কা করতেন। কেননা তিনি মনে করতেন, ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ধর্মকে মানুষের ব্যক্তিগত পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে আসে। আর ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের অনুশীলন থাকলে সেখান থেকেও সুশীল সমাজের কাঠামোগুলো কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে প্রভাবিত হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দেয়া যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মকে একেবারেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক করার পরেও এখনো ধর্মের কারণে সেখানকার সমাজগুলো নানা সম্প্রদায়ে বিভক্ত। ফলে সেখানে অভ্যন্তরীণ সংহতি হয়ে পড়েছে প্রশ্নবিদ্ধ এবং আর্থিক খাতও নানা ধরনের সংকটে পতিত হচ্ছে। মার্কসের মতে, ধর্মকে সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি নিজেদের মতো করে ব্যবহার করে। ফলে সামাজিক বৈষম্য ও দুরবস্থা আরো ঘনীভূত হয়।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের সংস্কারমূলক বিলের পূর্ব ও পরবর্তীকালীন অস্থিরতা, বিপর্যয় ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার ফলে এই মতবাদটির উৎপত্তি ঘটে। তার অন্তঃস্থিত বস্তু অনেকটা রবার্ট উন এবং তার অনুসারীদের অবিন্যস্ত ও সম্পর্কহীন সমাজতন্ত্র এবং ভাগ্যাহত চার্চিস্ট আন্দোলনের ফসল। তা চরমপন্থী চার্চিস্ট ও ইউরোপীয় মহাদেশে সৃষ্ট বিভিন্ন বিপ্লবের দরুন জনমনে জেগে ওঠা বিপ্লবাত্মক আশা-আকাক্সক্ষার চরম ব্যর্থতার পর ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে উদ্ভুত হয়েছিলো। সেকুলারিজম সামাজিক ও রাজনৈতিক বিকাশকে সংগঠন ও প্রশিক্ষণ প্রভৃতি শান্তিপূর্ণ উপায়ের সাহায্যে অগ্রসর করে নেয়ার একটা কার্যক্রম ছিলো। অস্বীকার করার উপায় নেই, অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও তীব্র ধরনের সামাজিক বিপর্যয়ের পরিণতি স্বরূপ সেকুলারিজমের উদ্ভব হয়েছিলো। ধনশালী ও প্রভাব প্রতিপত্তিসম্পন্ন লোকদের লালসা, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পথে অযৌক্তিক ও অসঙ্গত প্রতিবন্ধকতা এবং গীর্জীয় ধর্মতত্ত্বের বন্ধ্যা, অহমিকতা প্রভৃতি উপাদান সেকুলারিজম সৃষ্টির নিমিত্ত হয়েছিলো। এর ফলে শ্রমজীবী শ্রেণি যখন অবস্থার চরম অবনতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে, তখন তাদের মধ্যে শুধু যে চরমবাদী রাজনৈতিক মতবাদই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তাই নয়, ধর্মবিদ্বেষ, ধর্মের প্রতি মারাত্মক প্রতিহিংসামূলক প্রবণতাও জন্ম লাভ করে। মূলত এটি একটি প্রতিবাদ-বিক্ষোভমূলক আন্দোলন ছিলো। আর সমস্ত বিক্ষোভমূলক আন্দোলনই ভাবাবেগ সৃষ্টিকারী শক্তির সাহায্যে নিয়ে বিশেষ ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করে থাকে।

সেকুলারিজমের মৌলনীতি হচ্ছে, মানুষের বৈষয়িক উন্নতির জন্য শুধুমাত্র বৈষয়িক বা পার্থিব উপকরণের উপর একান্তভাবে নির্ভর করতে হবে। কেননা বৈষয়িক উপায়- উপকরণ মানুষের করায়ত্ত হওয়ার কারণে অন্যান্য সবকিছুর তুলনায় অধিক গুরুত্ব পাওয়ার অধিকারী। তাছাড়া এই উপায় উপকরণসমূহ মানুষের কাঙ্খিত ও প্রয়োজনীয় সবকিছু অর্জনে অধিক উন্মুক্ততা সহকারে ব্যবহৃত হতে পারে। সেকুলারিজম একটা প্রবল মতাদর্শ হিসেবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিলো সেই সময়ে, যখন বিজ্ঞান ও ধর্মের বিচ্ছিন্নতা ও সম্পর্কহীনতার দাবি অত্যন্ত প্রবল আকার ধারণ করেছিলো। যেসব লোক বিভিন্ন কারণে ধর্মতত্ত্বের প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস স্থাপনের সক্ষম হচ্ছে না, সেকুলারিজম কেবল তাদেরই মহা আকর্ষণের জিনিস। সেকুলারিজমের দাবি হচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ নৈতিকতা কেবলমাত্র সেকুলার চিন্তাভাবনার মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে। যেমন রাজমিস্ত্রি যে সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ করে, নির্মাণ কাজের সামগ্রী সেই মিস্ত্রি ছাড়াও অর্জন করা সম্ভব।

সেকুলারিজমের ঘোষণা হচ্ছে, এই দুনিয়া ছাড়া আলো আর কোথাও নাই। আর যদি থেকেও থাকে, তবুও তা মানবীয় লক্ষ্য অর্জনে সহকারী প্রমাণিত হতে পারে না। ধর্মীয় বিশ্বাস যতক্ষণ পর্যন্ত মানবীয় আনন্দ-ফুর্তির সম্মুখে বাস্তব প্রতিবন্ধকতা দাঁড় না করাচ্ছে, সেকুলারিজম ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে সে অবস্থায় থাকতে দেয়; মরে কিংবা বাঁচে তা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। ধর্মনিরপেক্ষতার দুটো দিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হচ্ছে, তা জনগণের বৈষয়িক জীবনকে উন্নত বানাতে আগ্রহী। আর এটাই তার নৈতিক দিক। কেননা নৈতিকতার সম্পর্ক থাকে সমাজের মধ্যকার এমন সব কাজের সাথে, যে সবের সাথে লাভ ও লোকসানের কোনো সম্পর্ক থাকে না। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা এই পর্যায়ের কার্যাবলির ভিত্তি কোনো ধর্ম বা পরকাল বিশ্বাসের উপর স্থাপিত নয়। ফলে তা ধর্মকে অস্বীকার করেও ধর্মের লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট। সেকুলারিজমের জনক হলিউক নাস্তিকতাকে অন্তর্ভুক্ত করাকে কখনোই জরুরি মনে করেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেকুলারিজমে নাস্তিকতা ক্রমশ সামিল হয়ে গেলে তখন প্রাচীন দ্বন্দ্ব নিঃশেষ হয়ে গেল। বিজ্ঞান ও ধর্মের বিচ্ছিন্নতার একটা ভারসাম্যপূর্ণ মতাদর্শ বিজয়ী হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু এসব জিনিসের সাহায্যে সেকুলারিজমের আসল বিশেষত্ব নিঃশেষ হয়ে গেল। ফলে তাকে একটি সুসংগঠিত আন্দোলনরূপে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দেখা দিল। তাই বলতে হয়, অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে তারও অনিবার্য অবসান সংঘটিত হয়। তার নৈতিক লক্ষ্য প্রশংসাযোগ্য হলেও তা কোনো উপযুক্ত ভিত্তি থেকে বঞ্চিত। ফলে মানবীয় চিন্তার কোন শাশ্বত প্রকল্প দাঁড় করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ঠিক এই কারণেই দর্শনের কোনো গ্রন্থেই সেকুলারিজমের উল্লেখ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। একটি সুস্পষ্ট শিরোনাম দিয়ে এই বিষয়ে কোন গ্রন্থেই আলোচনা করা হয়নি। কেননা তা মানব জীবনের জন্য কখনোই কোন আদর্শ বা আইডোলজি হতে পারে ন। সম্প্রতি ফেডারিক প্লেস্টোন দর্শনের ইতিহাস পর্যায়ে একটি বিরাট গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তাতে সকল প্রকারের দার্শনিক মতাদর্শের উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু সেকুলারিজমের কোনো উল্লেখ নেই। বাট্রান্ড রাসেল রচিত ‘পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস’ গ্রন্থেও এই বিষয়টি অনুল্লেক্ষিত রয়ে গেছে। দর্শনের বিশ্বকোষে এই বিষয়ের নাম চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। আরো মজার কথা এই যে, বস্তুবাদের লীলাকেন্দ্র মস্কো ‘দর্শনের অভিধান’ প্রকাশ করেছে, কিন্তু তাতেও এই বিষয়টি খুঁজে পাওয়া যায় না।

আধ্যাত্মিক জীবন মানুষের এক অপরিহার্য বিষয়। একে অস্বীকার করে বা সংকুচিত করে জীবনের সার্বিক ও ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। কেননা বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক এই দুইয়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে মানুষের জীবন। কোন একটাকে বাদ দিয়ে জীবন কোনক্রমেই পূর্ণাঙ্গ নয় বা একটি থেকে অপরটি পৃথক করাও অবাস্তব এবং একপেশে চিন্তামাত্র। এরূপ প্রয়াস জীবনে উচ্ছৃঙ্খলতা, নৈরাজ্য, গোজামিল অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত আসতে বাধ্য। অথচ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কোথাও হয় আধ্যাত্মিকতাকে অস্বীকার করেছে বা অপ্রয়োজনীয় মনে করেছে আবার কোথাও তাকে সীমিতভাবে স্বীকার করলেও তাকে বৈষয়িকতার অধীনেই বিবেচনা করেছে। ফলে আজকের প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে আধ্যাতিকতার অপমৃত্যু ঘটেছে, সংকুচিত হয়েছে মানুষের ধর্মীয় জীবন ও আধ্যাত্মিক জীবন, রুদ্ধ হয়েছে ধর্মের সঠিক চর্চা, স্তব্ধ হয়েছে জীবনবোধের বিকাশ, নেমে এসেছে মানুষের সমাজ ও মনোজগতে জাহিলিয়াতের কালো ছায়া; দূর হয়েছে মানুষের মন থেকে স্রষ্টার চিন্তা, আধ্যাত্মিক চিন্তা, নৈতিক অনুভূতি ও ধর্মচিন্তা, অবক্ষয় ঘটছে মানুষের মূল্যবোধের। আর তার স্থান দখল করেছে প্রবৃত্তির দাসত্ব, স্বার্থবাদীতা, সুবিধাবাদ, বৈষয়িকতা ও বস্তুবাদ। তাই আজ মানুষ হতাশাগ্রস্থ, ক্লান্ত, শ্রান্ত গোটা মানবতা। মুক্তির সোনালী সূর্যের আকুতি আজ প্রতিটি মানুষের মনে; এইতো ধারণ ধর্মনিরপেক্ষতার ফলাফল! আর তাই যখনই ধর্মনিরপেক্ষতা স্বীকৃত হলো ও প্রসার লাভ করলো তখনই সব বাধা-বন্ধন মুক্ত হলো। উগ্র জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী মতবাদগুলো বাস্তব সমাজে প্রয়োগ সহজসাধ্য হয়ে গেলো। ধর্মপরিচায় বা আদর্শিক পরিচয় বাদ দিলে ভাষা, অঞ্চল, বর্ণ, গোত্রই মানুষের পরিচয় ও মিলনের সূত্র হয়ে দাঁড়ায়। আর এসবের একটির মাধ্যমেও যে গোটা মানবতা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনা তা তো সুস্পষ্ট। বর্তমান বিশ্বের অবস্থা বিচার করলেই ব্যাপারগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এমনিভাবে আজকের ধর্মহীনতা তথা ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক কলহ, বর্ণ কলহ, গোত্র কলহ ইতিহাসকে করে রেখেছে মসিলিপ্ত। জাতিসংঘ গঠিত হয়েছিলো বিশ্ব মানবতার ঐক্যের জন্য। হয়েছে কি ঐক্য ? ঐতিহাসিক আর্নল্ড টয়েনবি তাই বিশ্ব রাষ্ট্র পরিকল্পনায় ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্যের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। কাজেই, মানবতার মিলনের জন্য যুদ্ধকে সীমিত করতে চাইলে প্রকৃত ধর্মের ভিত্তিতেই সমাজ ও রাষ্ট্রকে আবার পূর্নগঠিত করতে হবে। সেকুলারিজম একটি বিশেষ ইউরোপীয় পরিস্থিতির উপাদান। খ্রীস্ট রাষ্ট্র যেমন সেকুলার, খ্রিস্ট ধর্ম অনুরূপভাবে সেকুলার। সেকুলারিজমের সঙ্গে মুসলিম সমাজ তথা দ্বীন ইসলামের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। তার সঙ্গে সামান্য মাত্র সামঞ্জস্যও নেই। কোন মুসলমানের পক্ষেই সেকুলারিজমের প্রতি বিশ্বাসী হওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়। সম্ভব নয় সেকুলারিজমের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে দ্বীন ইসলামের প্রতি একবিন্দু ঈমানদার হওয়া বা থাকা। দুঃখজনক হলেও সেকুলারিজমই আমাদের দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত ও কলুষিত করে ফেলেছে। সেকুলার রাজনীতি মুসলমানদের সার্বিকভাবে দ্বীন ইসলামের বাইরে নিয়ে গেছে এবং দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে তা-ই হয়ে দাঁড়িয়েছে সর্বাপেক্ষা বড় বাধা। আর অর্থনীতির ক্ষেত্রে মুসলমানদের বাধ্য করেছে সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি-শোষণ প্রভৃতি সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী কার্যক্রমের ধারক ও বাহক হতে। মুসলিম জীবনকে সার্বিকভাবে বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত করে দেয়ার প্রধান হাতিয়ারই হচ্ছে এই সেকুলারিজম। সেকুলারিজম ইসলামী জীবনধারার প্রধান প্রতিবন্ধক। যেকোনো দিক দিয়ে সেকুলারিজমকে গ্রহণ করা হলে ইসলামী জীবন সম্ভব নয়। তাই ইসলামিক জীবনাদর্শ গ্রহণ ও পূর্ণমাত্রায় প্রতিষ্ঠার জন্য সেকুলারিজমকে জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে উৎখাত করা একান্তই অপরিহার্য।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মিয়ানমারে ভূমিকম্প এবং আমাদের ভয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিৎ কথা
আইএমএফ’র ঋণের প্রশ্নে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুদয়
শিক্ষাব্যবস্থার ব্ল্যাকবক্স খোলার এখনই সময়
আরও
X

আরও পড়ুন

পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

ঝড়ো বাতাসে যমুনা নদীতে আটকে ছিল ফেরি

ঝড়ো বাতাসে যমুনা নদীতে আটকে ছিল ফেরি

হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে লেবাননের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মার্কিন দূতের বৈঠক

হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে লেবাননের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মার্কিন দূতের বৈঠক

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বৈশ্বিক কর্মসূচিতে সংহতি, দেশব্যাপী ধর্মঘট আজ

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বৈশ্বিক কর্মসূচিতে সংহতি, দেশব্যাপী ধর্মঘট আজ