প্রেস সচিবের বক্তব্য যথার্থ
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশে মাফিয়াতান্ত্রিক দু:শাসন কায়েম করেছিলেন। তার ফ্যাসিবাদী দু:শাসনের প্রধান সহযোগী ছিল ভারতীয় ও দেশীয় গণমাধ্যম ও তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও একশ্রেণীর সাংবাদিক। এরা সকলে ভারতীয় আধিপত্যবাদের সহায়ক শক্তি। গত ১৬ বছরে তাঁর নির্দেশে হাজার হাজার মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে কুক্ষিগত রাখতে লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানির শিকারে পরিনত করেছিলেন। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন, শিশু-কিশোরদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের মত অরাজনৈতিক অধিকার আদায়ের প্রতিটা ন্যায্য আন্দোলন দমন করতে সশস্ত্র দলীয় ক্যাডার লেলিয়ে দেয়াসহ চরম পুলিশি নিষ্ঠুরতা-নির্মমতার আশ্রয় নিয়েছিলেন। দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশে একটি নৈরাজ্যকর বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন। দেশে দুর্নীতি, বৈষম্য, লুটপাট, অর্থপাচার এবং গুম-খুনের মাত্রা বেড়েই চলেছিল। এহেন বাস্তবতায় চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে রূপ নেয়। সেই আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার উপর গুলির নির্দেশ দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহে দুই হাজারের বেশি মানুষকে রাজপথে হত্যা করা হয়। তিরিশ হাজারের বেশি মানুষকে লাইভ বুলেটে অন্ধ, পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ করেও গদি রক্ষা করতে না পেরে যখন শেখ হাসিনার দলবাজ পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, তখন শেখ হাসিনাও ভারতে পালিয়ে যান। সারাবিশ্ব এই দৃশ্য অবলোকন করেছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে গুম-খুন, হত্যা ও গণহত্যার বিচারের দাবি এখন সার্বজনীন দাবিতে পরিনত হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া শুরু থেকেই শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের উস্কানি দিচ্ছে। শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার এবং তার নানা অপকর্মের কথা চেপে গিয়ে যে সব ভারতীয় মিডিয়া প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাদের মতলববাজি বুঝা যায়। কিন্তু এ দেশের মানুষের কাছে আস্থার জায়গায় স্থান পাওয়া বিবিসি বাংলার সাম্প্রতিক ভ’মিকা বিষ্ময়কর ও দু:খজনক।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা শেখ হাসিনার ভক্ত’। গতকাল বুধবার সকালে তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেইসবুক পোষ্টে লিখেন, সংবাদমাধ্যমটি যখন শেখ হাসিনার বিষয়ে লেখে, তখন তার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পটভ’মি বাদ দেয়।বাস্তবতা হচ্ছে, শেখ হাসিনা অসংখ্য শিশু হত্যা, নজিরবিহিন সহিংসতা, লুন্ঠন, দুর্নীতি, বিচারবর্হিভুত হত্যা ও তিনহাজারের বেশি মানুষকে গুম করে ভারতে পালিয়ে গেছেন। এসব বিষয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে উল্লেখ না থাকা, এমনকি সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুম-খুনের তথ্য পাশ কাটিয়ে বিবিসি বাংলা তার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে প্রেস সচিব তার পোষ্টে উল্লেখ করেছেন। তারা বরং বিপ্লবের পর কথিত গণগ্রেফতার নিয়ে কথা বলতেই বেশি আগ্রহী। অথচ ১৬ বছর ধরে গুম-খুন, দুর্নীতি-লুটপাট ও গণহত্যাকারীর পালিয়ে যাওয়া এবং তার দোসরদের বেশিরভাগ এখনো অধরা। দেশে গণতন্ত্র পুণ:প্রতিষ্ঠা এবং বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি ঘুচিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে গুম-খুনের বিচার নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের কিছু গণমাধ্যমের নির্জলা মিথ্যাচার ও উস্কানিমূলক তৎপরতা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। বিবিসি বাংলার হাসিনা ভক্তি এদেশের মানুষের কাছে ধরা পড়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বক্তব্যে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চিহ্নিত ভারতীয় মিডিয়াগুলোর পাশাপাশি বিবিসি বাংলাও হাসিনার রাজনৈতিক পুর্নবাসনের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। আমরা আশা করি, বিবিসি বাংলা প্রকৃত অবস্থার প্রেক্ষাপটে সঠিক ভ’মিকায় ফিরে আসবে।
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অর্ন্তবর্তী সরকার ও ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচারের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক অপপ্রচার করা। মূলত ১৬ বছর ধরেই দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় ইতিহাস নিয়ে ভুল ন্যারেটিভের মাধ্যমে জাতিকে বিভক্ত করে একটি বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েম করা হয়েছিল। খুনি-গণহত্যাকারী হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে এবং সেখানে বসে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেয়ার দিল্লির ধারাবাহিক তৎপরতা দিল্লির কাছে ড. ইউনূসের আহ্বান ও প্রত্যাশার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শত শত কোটি ডলারের বাণিজ্য ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষতির বিষয়গুলো অগ্রাহ্য করেই ভারত সরকার পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সেখানে রেখে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখার সুযোগ দিচ্ছে। গত কয়েক মাসে এ নিয়ে অনেক টানপোড়েন-রশিটানাটানি সীমান্ত ও উত্তেজনা পর্যন্ত গড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা এবং ইংরেজী বছরের ২৭ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর ড.ইউনূসকে নরেন্দ্র মোদির নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা থেকে ধারণা করা হচ্ছিল, দিল্লী বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরতে চাইছে। কিন্তু দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনার আবারো বক্তব্য প্রচারের বার্তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, দিল্লি এখনো শেখ হাসিনাতেই মত্ত। তবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা শেখ হাসিনার দেয়া যে কোনো কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ড. ইউনূসের পক্ষ থেকেও কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘোষিত ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে আওয়ামী লীগের গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি প্রতিহত করতে তারা মাঠে রয়েছে। লিফলেট বিলি করার সময় কয়েকজন আওয়ামীলীগ কর্মী জনতার হাতে ধরা পড়ে গণধোলাই ও পুলিশে সোর্পদ হয়েছে। ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি সমন্বয়করা রাজপথে প্রতিরোধে প্রস্তুত ও সদা জাগ্রত রয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার ঘোষিত বক্তব্য প্রচারের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই সময়ে দেশের গণমাধ্যমে এবং শহরের মোড়ে মোড়ে মনিটরে জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার উপর নারকীয় তান্ডবের ডক্যুমেন্টারি ও বিশেষ বুলেটিন প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারের ভুক্তভোগী রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে নিরব-নিষ্ক্রিয় কেন? কোনো জনবান্ধব রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো নিরপেক্ষ গণমাধ্যম এমন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচারের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে না, তার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করতে পারে না। দেশি-বিদেশি যে সব গণমাধ্যম কিংবা ব্যক্তি শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করবে তারা নতুন বাংলাদেশের বৈরী প্রতিপক্ষ হিসেবে গণ্য হবে। পতিত স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরাচারের পুনরুত্থানের পথ চিরতরে রুদ্ধ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

ঝড়ো বাতাসে যমুনা নদীতে আটকে ছিল ফেরি

হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে লেবাননের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মার্কিন দূতের বৈঠক

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বৈশ্বিক কর্মসূচিতে সংহতি, দেশব্যাপী ধর্মঘট আজ