সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে বাধা কাম্য নয়

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী-এমপিরা কথায় কথায় বলতেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে দেশ জঙ্গী কিংবা তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এ থকে মুক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। তাদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর পরিকল্পনা ও মদদে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি হলি আর্টিজানে হামলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক ‘জঙ্গীনাটক’ সাজাতো। এর মাধ্যমে বহু মানুষকে হত্যা করে জঙ্গীদমন করা হচ্ছে বলে প্রচার করত। এছাড়া, অনেক সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জঙ্গী অপবাদ দিয়ে গ্রেফতার ও সাজা হতো। এর মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিশ্বকে দেখাতে চাইতেন, বাংলাদেশে জঙ্গী উত্থান ঘটছে, আর তিনি তা নির্মূল করছেন। হাসিনা তার দেড় দশকের শাসনামলে প্রতিবছর এ ধরনের ‘জঙ্গীনাটক’ সাজিয়ে এবং তা দমনের নামে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেন। সাধারণ মুসলমানদের স্বাভাবিক ধর্মপালনের পরিবেশকে ভীতিকর করে তুলেছিলেন। তখন এমন একটি আবহ সৃষ্টি করা হয়েছিল, অনেক মুসলমান দাঁড়ি রাখতেও ভয় পেত। জঙ্গী তকমা লাগার ভয়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দাঁড়ি রাখা বা ইসলামী পোশাক পরা বন্ধ করে দিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসররা দাঁড়িওয়ালা মুসলমানদের দেখলে এমনভাবে তাকাত বা কথা বলত, যেন তারা জঙ্গী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও গোয়েন্দা সংস্থায় তার দোসররা একের পর এক ‘জঙ্গীনাটক’ মঞ্চায়ন ও তা দমনের চিত্র আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে দিত। টেলিভিশন টক শোগুলোতে নাস্তিক ও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সুশীলদের দিয়ে জঙ্গী উত্থান ও দমনের কথা বলাত। শাহরিয়ার কবির, মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ তথাকথিত সুশীলরা প্রায় নিয়মিতই বলতেন, দেশের মাদরাসাগুলো জঙ্গী তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। তারা মাদরাসা শিক্ষা বন্ধ করে দেয়ার জন্য বারবার বলেছেন। এসবই করা হতো, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর পরিকল্পানায়। ক্ষমতায় থাকার জন্য এতোকিছু করার পরও হাসিনা টিকতে পারেননি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তাকে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। জঙ্গীনাটকের মদদদাতা তার প্রভু মোদির কাছে আশ্রয় নিয়েছেন।

দুই.
হাসিনার পতনের পর তথাকথিত ‘জঙ্গীনাটকের’ অবসান হয়েছে। কয়েকদিন পরপর হাসিনার পুলিশ ও র‌্যাব রুটিন ওয়ার্কের মতো বাড়িঘর ঘেরাও করে যে জঙ্গী ধরার অভিযান চালাতো, তা গত ছয় মাসে দেখা যায়নি। এ থেকে প্রমাণিত হয়, হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ‘জঙ্গীনাটক’ চালিয়ে গেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, মহান আল্লাহ মুসলমানদের যে ‘মধ্যপন্থা’ অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের দেশের মানুষ চিরকাল সেই পন্থাই অবলম্বন করে চলছে। ফলে বাংলাদেশে কখনো উগ্র ইসলামপন্থার উদ্ভব ঘটেনি। যে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, তা দেশের মানুষ প্রতিহত করেছে। অন্যদিকে, স্বাধীনতার পর কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনাও ঘটেনি। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটি ‘মডারেট মুসলিম কান্ট্রি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের জনগণ কখনোই উগ্রপন্থাকে প্রশ্রয় দেয়নি, তারা তা পছন্দও করে না। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে একসঙ্গে বসবাস করতে পছন্দ করে। একে অপরের সুখ-দুঃখে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়েছে এবং দাঁড়াচ্ছে। সংখ্যালঘু বলে কিছু আছে, তা তারা মনে করে না। কখনো কখনো দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হিন্দুরা আক্রামণের শিকার হলে মুসলমানরা তা প্রতিহত করেছে। তার সাম্প্রতিক নজির হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ভারত ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা হিন্দুদের মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে যে হামলা চালিয়েছে, সাধারণ মানুষ, মসজিদের ইমাম, আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, ফ্যাসিস্টবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তা দিনরাত পাহারা দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিয়েছে। এটাই বাংলাদেশের মুসলমানদের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। এখানে সব ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে, একসঙ্গে চলাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্য করে। কোনো বৈষম্য নেই। অথচ ভারতে সংখ্যালগিষ্ঠ মুসলমানরা কীভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র হিন্দুদের দ্বারা অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন, খুন ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। রাষ্ট্রীয় আইন করে মুসলমানদের বিতাড়নের ব্যবস্থা এবং অধিকার হরণ ও বঞ্চিত করেছে। আমাদের ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে এর কোনো কিছুই নেই। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা দায়িত্ব পালনকালে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখে মুগ্ধ হয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা সারাদেশ ঘুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের সেরা মুসলিম কান্ট্রি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো যখন ইসলাম ও মুসলমানদের বদনাম করার জন্য ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টি করে অনন্ত যুদ্ধের সূচনা করেছিল, তখনও বাংলাদেশের মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তার প্রতিবাদ তারা করেছে। সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যেভাবে নির্বিচারে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যা করেছে, তার প্রতিবাদ করেছে। অথচ ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ‘জঙ্গিনাটক’ সাজিয়ে আমাদের সাধারণ মুসলমানদের বদনাম করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মুসলমানদের হেয় ও কোনঠাসা করে নাস্তিক্যবাদকে উসকে দিয়েছে। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ নামক বিতর্কিত শ্লোগান দিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। ধর্ম যার যার হতে পারে, যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে, তবে ধর্মীয় উৎসব যে সবার হতে পারে না, এ কথাটিকে চতুরতার সাথে এড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ যে ধর্মহীনতা তথা নাস্তিকতার নামান্তর, সেটাও কৌশলে ঢেকে রেখেছে। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কথাটি যে, কোনো ধর্মের পক্ষে না, যা নাস্তিক্যবাদ, তা প্রতিষ্ঠার নিরন্তর চেষ্টা চালানো হয়েছে। হাসিনা রাত জেগে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়েন, এমন কথা তার দলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে নেতাকর্মীরা একদিকে প্রচার করত, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে নাস্তিক্যবাদের প্রচার এবং জঙ্গীদমনের নামে মুসলমানদের হত্যা করত। এসব পরস্পরবিরোধী কাজ ছিল, ভারতকে খুশি করে হাসিনার ক্ষমতায় থাকার কৌশল। এমনকি, আমরা দেখেছি, জুমআর নামাজের চিরাচরিত খুতবাও হাসিনা পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। সরকারের তরফ থেকে লিখিত খুতবা ইমামদের পাঠ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। হাসিনার এসব অপকর্মই ছিল ৯২ ভাগ মুসলমানের ধর্মপালনের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করে ইসলামের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে মাদরাসা শিক্ষার্থী, মাদরাসা শিক্ষক, আলেম-ওলামা অংশগ্রহণ করেছেন, তার অন্যতম কারণও ছিল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের স্বাভাবিক ধর্মকর্ম পালনে হাসিনা ও ভারতের বাধা হয়ে উঠা।

তিন.
হাসিনার পতন হয়েছে। দেশের মানুষ শুকরিয়া আদায় করেছে। তবে হাসিনা ও মোদির নানামুখী ষড়যন্ত্র থেমে নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই তারা হিন্দুকার্ড খেলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলে দেশে দাঙ্গা লাগাতে চেয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল, হাসিনার বিদায়ের পর দেশে উগ্র ইসলামপন্থীদের আবির্ভাব ঘটেছে। এ নিয়ে ভারতের গোদি মিডিয়াগুলোও এন্তার অপপ্রচার চালিয়েছে, এখনও চালাচ্ছে। তারা পুরনো কিংবা অন্যদেশের স্থির ও ভিডিওচিত্র প্রচার করে দেখাতে চেয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দুদের অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের এসব ছবি ও ভিডিওচিত্র ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ভুয়া বলে প্রমাণ করে দিয়েছে। হ্যাঁ, বরাবরের মতোই হাসিনা ও মোদির পুরনো কার্ড খেলা হয়েছিল। তাদের দোসরদের দিয়ে হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছিলেন। হিন্দুদের নিরাপত্তা দিয়ে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের সেই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রুখে দিয়েছে। দেশে এখন আর সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে কিছু নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে ইসলামের কথা বলে দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্থ করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাসে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। দেশের বেশ কয়েকজন তারকা শিল্পী তাদের কর্মকা-ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিভিন্ন শো রুম উদ্বোধন করতে গেলে একশ্রেণীর মানুষ তাদের বাধা দিয়েছে। এ কাজটি করা মোটেও উচিৎ হয়নি। কারণ, আমাদের দেশ অনাদিকাল থেকে শিল্প-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। এ দেশের মানুষ যুগের পর যুগ ধরে বাউল, মোর্শেদী, পল্লীগীতি, লোকগীতি, যাত্রাপালা, নাটক, সিনেমা, খেলাধুলাসহ সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা করে আসছে। এগুলো কখনো ধর্মপালনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। একসময় আমাদের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে দেড় হাজারের বেশি সিনেমা হল ছিল। পারিবারিক ও সামাজিক গল্প নির্ভর সিনেমা দিয়ে সিনেমা হলগুলো চলত। সেসব সিনেমা দেখার জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ সিনেমা হলে যেত। এমনকি রিকশায় উঠে কাপড় দিয়ে ঢেকে মহিলারা সিনেমা হলে যেত। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির উৎকর্ষে অভিযোজিত হয়ে মানুষ এখন এগিয়ে চলছে। একটা সময় মনে করা হতো, মোবাইল-ইন্টারনেট তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করে তুলবে। এখন মোবাইল ও ইন্টারনেট ছাড়া কেউ চলতে পারে না। এর মাধ্যমে সহজে ধর্মকর্ম যেমন পালন করা যায়, তেমনি ধর্মীয় তথ্যও জানা যায়। প্রযুক্তি ধর্মপালন সহজ করে দিয়েছে। অজানাকে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রত্যেক আবিষ্কারেরই কিছু কুফল থাকে, এটা সবসময়ই হয়ে আসছে। তার অর্থ এই নয়, আবিষ্কারটি ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। এটি ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। আগুন দিয়ে যেমন রান্নাবান্নার কাজ চলে, তেমনি তা দিয়ে সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া যায়। তার মানে, আগুন কি নিষিদ্ধ করা উচিৎ? সবকিছুই সতর্ক ব্যবহার এবং উপকারিতার উপর নির্ভর করে। শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কোনো তারকা যদি অপরাধমূলক বা আইনভঙ্গ করার মতো কিছু করে, অবশ্যই তা আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে। তা নাহলে, তার কাজে বাধা দেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সারাবিশ্বেই তারকাদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে চর্চা হয়। তাদের বিতর্কিত কর্মকা- সমালোচিত হয়। বলা হয়ে থাকে, তাদের জীবনধারা সাধারণ মানুষের মতো নয়। তাদের জীবনযাপন নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ এবং আলোচনা-সমালোচনা বেশি হয়। অথচ আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও তাদের মতো সমালোচনামূলক বা বিতর্কিত ঘটনা অহরহ ঘটে, এমনকি তাদের জীবনের চেয়েও বেশি ঘটে। তারকারা পাবলিক ফিগার হওয়ায় তাদের জীবনের ঘটনা বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়। তাদের কর্ম কারো পছন্দ হয়, কারো হয় না। পছন্দ যদি না হয়, তাদের কাজ না দেখা বা না দেখতে আহ্বান কেউ জানাতেই পারে। তারা মানে এই নয়, তাদের কাজে বাধা দিতে হবে। এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এবং আমাদের মতো মডারেট মুসলমানের দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ রাসুলের (স.) উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনার কাজ আহ্বান করা, কুরআনের বাণী পৌঁছে দেয়া, হেদায়াতের মালিক আমি। রাসূল (স.) যখন তাঁর আহ্বানের সাড়া না পেয়ে অস্থির হয়ে যেতেন, তখন মহান আল্লাহ অনেকটা ধমক দিয়ে বলেছেন, ‘পারলে আপনি আকাশে দড়ি টানিয়ে উঠে যান।’ যেখানে মহান আল্লাহ স্বয়ং ইসলামের পথে আনার জন্য মানুষকে কোনো ধরনের জোরজবরদস্তির কথা বলেননি, সেখানে কি কাউকে জোর করে ইসলাম মানানো উচিৎ? মহান আল্লাহ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে এ কথাও বলেছেন, ‘তোমরা ওদের (মূর্তি পূজক) মূর্তিকে গালি দিও না। তাহলে ওরাও তোমাদের সৃষ্টিকর্তাকে গালি দেবে।’ তাহলে, ইসলামের মতো এমন সহনশীল ধর্ম কি আর আছে? কাজেই, আমরা কেন অন্যের কাজে বাধা দেব? জোরজবরদস্তি করব, যদি না তা অপরাধমূলক বা আইনের পরিপন্থী হয়। একসময় যে সউদী আরবে সিনেমা নিষিদ্ধ ছিল, সেই সউদী আরবে এখন সিনেমা হলের স্ক্রিণ প্রায় পাঁচশ’। সেখানে নাটক-সিনেমা নির্মিত ও প্রচার হচ্ছে। ইরানের সিনেমা তো বিশ্বখ্যাত। ইসলামি রাষ্ট্র হয়েও দেশটিতে নিয়মিত সিনেমা নির্মিত হচ্ছে এবং সেসব সিনেমা অস্কার পুরস্কার পর্যন্ত লাভ করছে। আমাদের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ সৃষ্টিকারি মুসলমানের দেশে তা কেন হবে? ইরান ও সউদী আরবের নারী ফুটবল দল আন্তর্জাতিক অঙ্গণে খেলছে। দেশগুলোতে নিয়মিত নারী ফুটবল লীগ হচ্ছে। আমাদের দেশের নারীরাও খেলছে এবং তারা সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। তাহলে, হঠাৎ করে কেন নারী ফুটবল খেলায় বাধা দেয়া হবে?

চার.
আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার ক্ষেত্রে বাধাদান কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে উগ্রপন্থী মুসলমানদের উত্থান কিংবা জঙ্গী উত্থানের যে ন্যারেটিভ বা বয়ান হাসিনা ও ভারত সবসময় চালিয়ে আসছে এবং পুনরায় এ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, একশ্রেণীর লোক তাদের বয়ানকেই সমর্থন যোগাচ্ছে। হাসিনা যে কথায় কথায় বলতেন, তিনি ক্ষমতা থেকে চলে গেলে দেশ জঙ্গীবাদীদের হাতে চলে যাবে, এখন কিছু লোক যেন সেই কথার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না, এতে শুধু ভারত ও হাসিনারই লাভ হচ্ছে। এসব ঘটনা বিশ্বে তুলে ধরে নিশ্চিতভাবেই হাসিনা ও তার দোসররা বলবে, আমরা আগেই বলেছি, আমরা ক্ষমতা থেকে চলে গেলে দেশ জঙ্গীবাদীদের হাতে চলে যাবে। এ সুযোগ কি তাদের দেয়া উচিৎ? নাকি আমাদের দেশের মানুষ যে সহনশীল এবং ধর্মপালন ও সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার হাজার বছরের ঐতিহ্য সমান্তরালে চলতে দেয়, তা প্রমাণ করা উচিৎ?

darpan.journalist@gmail.com


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মিয়ানমারে ভূমিকম্প এবং আমাদের ভয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিৎ কথা
আইএমএফ’র ঋণের প্রশ্নে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুদয়
শিক্ষাব্যবস্থার ব্ল্যাকবক্স খোলার এখনই সময়
আরও
X

আরও পড়ুন

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার