এসবের জন্য শেখ হাসিনাই দায়ী
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

দেড় দশক ধরে দুঃশাসন-দুর্বৃত্তায়ন, গুম-খুন, গণহত্যা ও অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশের মানুষের মধ্যে যে সংক্ষোভের জন্ম দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানে তার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ফ্যাসিবাদের আইকন হিসেবে পরিচিত শেখ মুজিবের বিশালাকৃতির মূর্তি ও ম্যুরালগুলো ২৪-এর ৫ আগস্ট তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র-জনতার টার্গেটে পরিণত হয়। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে নিপীড়ক স্বৈরশাসকের পতনের পর বিশ্বের দেশে দেশে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বিরোধী দলন-দমনে শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতা তাকে ইতিহাসের অন্যতম নির্দয়Ñনির্মম স্বৈরশাসকে পরিণত করেছে। প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্রে তিনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে চরম আঘাত করে রাষ্ট্রের প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে শুধুমাত্র অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক অপতৎপরতা চালিয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কোনো বার্তা দেননি। দিশাহারা নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার কথা না ভেবেই তিনি দিল্লীতে বসে দেশবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন। অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আন্দোলন দমনের নামে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার পর তার মধ্যে বা তার দোসরদের মধ্যে ন্যূনতম আত্মসমালোচনা বা অনুশোচনা দেখা যায়নি। গত কয়েকমাসে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে, ছাত্র সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকিসহ নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তার এসব কর্মকা- ছাত্র-জনতাসহ পুরো জাতির মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলেছে।
পালিয়ে যাওয়ার ৬ মাসের মাথায় ৫ ফেব্রুয়ারি লাখো ছাত্র-জনতা বুলডোজার মার্চ করে শেখ পরিবারের স্বৈরতন্ত্রের আইকনিক সিম্বল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ ও এক্সকেভেটার দিয়ে ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েেেছ। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাথে শেখ হাসিনার ভিডিও ভাষণে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কর্মসূচির জবাবে ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পরও বাড়িটি অক্ষত ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার রাজনীতিতে ফিরতে ২১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অতীত ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সহায়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়েছিল। তবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আত্মসমালোচনার বদলে প্রতিশোধই তাদের রাজনীতির মূল এজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গত ১৬ বছর জাতি তাদের সেই প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ দেখেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস, টার্গেট কিলিং, গণহত্যা, প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনার জন্মদাত্রী শেখ হাসিনা। জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের চক্রান্তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে নানামুখী চক্রান্তের প্রত্যক্ষ অংশীদার শেখ হাসিনা। আন্দোলনে ছাত্র হত্যা, গুম-খুন, নারী ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নির্দেশদাতা এবং ঘোষণা দিয়ে তাদের সাথে অডিও ভাষণে উস্কানিমূলক নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ক্ষোভকে চরমে নিয়ে গেছে। ৫ ফেব্রুয়ারি হাসিনার টেলিভাষণের প্রতিবাদে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ছাত্র-জনতা জুলাই অভ্যুত্থানে হাসিনার নির্দেশে গণহত্যার তথ্যচিত্র, গণমাধ্যমে বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ এবং বুলডোজার দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, অভ্যুত্থানের ৬ মাস পর কেন ছাত্র-জনতাকে আবারো সিদ্ধান্ত নিয়ে বুলডোজার কর্মসূচি নিতে হচ্ছে? এর প্রধান কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সর্বত্র এখনো পতিত স্বৈরাচারের দোসররা বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা এখনো ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এখনো ধরা হয়নি। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিও পূরণ করতে পারছে না। মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে সারাদেশে দুর্বৃত্তায়নের সাথে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একাংশকেও এখনো গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নামে রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। গুম-খুন, অর্থ পাচার ও দুঃশাসনের সাথে জড়িত স্বৈরাচারের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করার পাশাপাশি স্বৈরাচারের আইকন শেখ মুজিবের মূর্তি, ভাস্কর্য, ম্যুরালগুলো উচ্ছেদ করার দায়িত্ব ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের। আসল কাজে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও ধীরগতির কারণে বার বার ছাত্র-জনতাকেই রাস্তায় নামতে হচ্ছে। এটা কোনো সুখকর বিষয় নয়। এ ধরনের বাস্তবতা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং সরকারের সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সংগতকারণেই ছাত্র-জনতার ক্ষোভ শুধুমাত্র ধানমন্ডির ৩২ নম্বরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। জুলাই বিপ্লবের ৬ মাস পর আবারো খুলনা, বরিশাল, ভোলা ও কুষ্টিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হাসিনার আত্মীয়-স্বজন ও দোসরদের বাড়িঘর ছাত্র-জনতার আক্রমণের শিকার হয়েছে। জনগণের অর্থসম্পদ লুণ্ঠন করে গড়ে তোলা একেকটি অট্টালিকা ফেলে তারা পালিয়ে গেলেও তাদের গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে না পারায় ব্যর্থতার ক্ষোভ ছাত্র-জনতাকে আবারো আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য করেছে। গণহত্যা, দখলবাজি, ভুয়া নির্বাচন, রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি ও পাচারের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে গড়িমসি বা সময় ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার দেশবিরোধী তৎপরতার কারণেই সারাদেশে শেখ মুজিব ও শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের নাম, ভাস্কর্য, ম্যুরালগুলো বহাল থাকলে তা ছাত্র-জনতার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতেই পারে। শেখ হাসিনাসহ পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমেই কেবল জনগণের ক্ষোভ কমিয়ে আনা সম্ভব। বার বার জাতির সাথে প্রতারণা, দুঃশাসন, গণহত্যা, গণতন্ত্র ও বিদেশি চক্রান্তে রাষ্ট্রকাঠামো ধ্বংসের সাথে জড়িত হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের নামে আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নিজের অবস্থান জাতির সামনে পরিষ্কার করার সাথে সাথে সংস্কারের লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

ঝড়ো বাতাসে যমুনা নদীতে আটকে ছিল ফেরি

হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে লেবাননের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মার্কিন দূতের বৈঠক

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বৈশ্বিক কর্মসূচিতে সংহতি, দেশব্যাপী ধর্মঘট আজ