ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার চাপ ক্রমেই বাড়ছে। সচেতন মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের তাকিদ দিচ্ছে। বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি বরাবরই দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে আসছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরপরই দলটি নয়াপল্টনে বিশাল জনসভা করে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিল। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবন করে দলটি হাসিনার ভেঙ্গে দেয়া রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া উদ্যোগকে সমর্থন ও যৌক্তিক সময় দেয়ার কথা বলে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণ ও দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে সংস্কার শেষে এ বছরের ডিসেম্বর ও ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন। বিএনপি ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি জানিয়েছে। সরকার অবস্থান অনুযায়ী, সংস্কার শেষে ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে। দেশের সার্বিক অবনতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপি গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলে এসেছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য তাঁরা কাজ করছেন। জনগণের প্রত্যাশা, অতি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, যার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে।

‘সংস্কার আগে না, নির্বাচন আগে’ গত কয়েক মাস ধরে এমন আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও মহল বলছেন, সংস্কার শেষে নির্বাচন করতে হবে। তবে একক বৃহৎ দল বিএনপি বলেছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার এসে করবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, আদালত, জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশসহ যেসব সংস্কার কমিটি গঠন করেছে, তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সুপারিশকৃত প্রতিবেদন পেশ করেছেন। সরকার ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের মাধ্যমে সংস্কারের বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করবে। এসব বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের পথরেখা উঠে আসবে বলে আশা করা যায়। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটা উদ্যোগ। তবে পর্যবেক্ষরা মনে করছেন, সরকার এ কাজে মনোযোগ দিতে গিয়ে দেশের অর্থনীতি, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, এক শ্রেণীর অতি উৎসাহী মানুষের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ইত্যাদি সামাল দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে দেশের অর্থনীতির চরম মন্দাবস্থার চিত্র উঠে এসেছে। জিডিপি ও মাথাপিছু আয় কমাসহ অর্থনীতির সার্বিক নেতিবাচক চিত্র ফুটে উঠেছে। স্বংক্রিয়ভাবে চলা রেমিট্যান্স ও রফতানি খাত ছাড়া অন্য খাতে কোনো সুখবর নেই। সবকিছুই নি¤œগামী। বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতা বাড়ছে হু হু করে। শিল্পোৎপাদন কমেছে। টাকার অভাবে প্রায় সব প্রকল্পে অর্থ বন্ধ ও কাটছাঁট করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস অব্যাহত রয়েছে। মানুষের কষ্টের সীমা নেই। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে মানুষের নিরাপত্তা নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার প্রভু মোদির দোসররা সক্রিয় হয়ে উঠছে। হাসিনা অনুসারি দোসর আমলারা প্রশাসনে বহাল থেকে যাওয়ায় সরকারের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে হাসিনা ও মোদির যৌথ প্রযোজনায় সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে যেসব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রমূলক আন্দোলন হয়েছে, সেগুলো মোকাবেলায় সরকারের চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপিসহ ফ্যাসিবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তারা দেয়াল হয়ে না দাঁড়ালে সরকারের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ত। এখনো তারা সরকারকে ব্যর্থ হতে না দিতে বদ্ধপরিকর। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, প্রধান উদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া অধিকাংশ উপদেষ্টা অকার্যকর ও অথর্বতার পরিচয় দিচ্ছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের টিম ভালো হয়নি। এতে সরকারের দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে। সচেতন মহলের অনেকে মনে করছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের চেয়ে উপদেষ্টাদের অনেকে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার নানা বাহানা তৈরি করছেন। একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলও তার আখের গোছানোর জন্য নির্বাচনে আগ্রহী না হয়ে সরকারের মেয়াদ বাড়াতে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকার সংস্কার, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও ভারতকেন্দ্রিক ইস্যু নিয়ে বেশি তৎপর। জনদৃষ্টি ঘুরিয়ে অজ্ঞাত উদ্দেশ্য হাসিলে বেশি মনোযোগী। তারা এটাও আশঙ্কা করছেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার নামে তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে কালক্ষেপণ করা হতে পারে। এ সুযোগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগ এবং ভারতের নানা ষড়যন্ত্রের পথকে প্রশস্ত করে তুলবে।

দেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক গতি ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য খুব একটা নেই। সরকারের শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অঘটন ও ইস্যু সরকারকে ব্যতিব্যস্ত ও সংকটের মুখোমুখি করছে। দেশে একটি শক্তিশালী সরকার রয়েছে, তা প্রতীয়মান হচ্ছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক ধারার দেশে নির্বাচিত ও গণসম্পৃক্ত সরকারের বিকল্প নেই। ঠেক দিয়ে চলা দুর্বল সরকারের পক্ষে দেশকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। দেশে প্রতিনিয়ত যে সমস্যা ও সংকটের উদ্ভব হচ্ছে, তা এ কারণেই হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণে যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ, নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। যত বিলম্ব হবে, তত সংকট বাড়বে। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক নয় এবং তার মেয়াদও নির্দিষ্ট নয়, তাই তাকে দ্রুত নির্বাচনের পথে হাঁটতে হবে। রোডম্যাপ তৈরি করে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। দেশের মানুষও তাঁর এ প্রত্যাশা পূরণে অধীর অপেক্ষায় রয়েছে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মিয়ানমারে ভূমিকম্প এবং আমাদের ভয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিৎ কথা
আইএমএফ’র ঋণের প্রশ্নে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুদয়
শিক্ষাব্যবস্থার ব্ল্যাকবক্স খোলার এখনই সময়
আরও
X

আরও পড়ুন

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার