বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা ধরে রাখতে হবে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

গণঅভ্যুত্থানে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন হবে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন। আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় নাই। তাৎক্ষণিকভাবে তারেক রহমানের এ বক্তব্য বিএনপির নেতাকর্মী এমনকি সমর্থকরা কিছুটা হলেও বিস্মিত হয়েছিলেন। তাদের চোখে-মুখে প্রশ্ন ছিল, নির্বাচন কেন কঠিন হবে? বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে যতই সময় গড়িয়েছে, তারা বুঝতে পারছেন, বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারিরা নানা ধরনের কাঁটা বিছিয়ে দিচ্ছে। বাধা সৃষ্টি করছে। বিএনপির বিজয়পথ কঠিন করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। হাসিনার পতনের পরপরই তারেক রহমান বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে দুর্গম করে তোলার এসব আলামত দেখতে পেয়েছিলেন। সেসব আলামতই এখন ধীরে ধীরে পরিদৃষ্ট হয়ে উঠছে। এটা নিশ্চিতভাবেই তার দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। হাসিনার পতনের পর ইতোমধ্যে নানা ধরনের শঙ্কামূলক ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তবে হাসিনার পতনের পর একটি রাজনৈতিক ইসলামি দল ধরেই নিয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন তার নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির এক সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ এক সমন্বয়কও সরাসরি এ কথা বলেছেন। দলটি মনে করে, অন্তর্বর্তী যে সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে তার বিপুল প্রভাব রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেয়ার পর তার সাথে বৈঠক শেষে দলটির প্রধান সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেছিলেন। পরবর্তীতে দেখা গেছে, জনপ্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মিডিয়ায় দলটির অনুসারী আমলা ও লোকজনদের নীতিনির্ধারণী এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও এ অভিযোগ তোলা হয়েছে। দলটির এসব কর্মকা-ে মনে হওয়া স্বাভাবিক, আগামী নির্বাচন প্রশাসনিক আনুকূল্য কাজে লাগিয়ে সে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত করছে। দলটির নেতাকর্মীদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ ও কথাবর্তার ধরনেও তা প্রকাশিত হচ্ছে। যেন এখন তারা ক্ষমতায় এবং আগামী নির্বাচনে পুনরায় তারা ক্ষমতায় আসবে। যখন প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাই, তখন দলটির ভাবধারার সাংবাদিকদের আচরণেও তেমনটি পরিলক্ষিত হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন কর্মকা-ে তাদের হস্তক্ষেপ নিয়েও অনেকে কানাঘুষা করেন। হাসিনার আমলে তারা চুপসে থাকতেন। টুঁ শব্দ করতেন না। অথচ দলটির নিবন্ধন না থাকায় ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে। এখন দলটি বিএনপিকে বড় প্রতিপক্ষ ভাবছে। বিএনপির জন্য এ দলটি এখন কিছুটা চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরেক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেপথ্যে এবং প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দেয়া সমন্বয়কদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ। এ মাসেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে। ইতোমধ্যে তারা জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন করেছে। এখন মানুষের কাছে মতামত চেয়ে জরিপ চালাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ দল গঠিত হচ্ছে বলে বিএনপি অভিযোগ করলেও দলটি যে গঠিত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। বিএনপির জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে, ‘সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে’ প্রসঙ্গ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলের ‘গণতন্ত্র আগে না উন্নয়ন আগে’ প্রসঙ্গের মতো। অন্তর্বর্তী সরকার বারবারই বলছে, আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন। বিএনপি বলছে, প্রয়োজনীয় যেটুকু সংস্কার দরকার তা করে, দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার এসে করবে। তবে এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে মাঝে মাঝে দোটানায় পড়তে দেখা যায়। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়েও দুই ধরনের বক্তব্য দিতে দেখা গিয়েছে। কখনো এ বছরের শেষের দিকে, কখনো আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে। এসব নানা বিষয় এখন বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
দুই.
তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্যে দুটো দিক রয়েছে। প্রথমত, তিনি ভালো করেই জানতেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তার দলের গুন্ডা বাহিনী বিএনপির যে বিপুল নেতাকর্মীর উপর সীমাহীন নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের কেউ কেউ প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠতে পারে। তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াবে। আবার কেউ কেউ দখল ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে। তার এ আশঙ্কা অমূলক ছিল না। বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে যারা এসবে জড়িয়েছে, দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও অনেক জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটছে। এগুলোকে ইসলামি রাজনৈতিক দল ও আওয়ামী সমর্থকরা ম্যাগনিফাই বা বড় করে তুলছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এমন কথাও ছড়াচ্ছে যে, আগেই তো ভালো ছিল। তারা এ কথা বলে তাদের সময়কার বিভীষিকাময় পরিস্থিতি মানুষকে ভুলিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ভাবধারার গণমাধ্যম, যেগুলোতে এখনও তার দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে, সেগুলোও এসব সংবাদ ফলাও করে প্রচার করছে। যদিও বিএনপির কিছু নেতাকর্মীদের এসব অপকর্মে জড়ানো উচিৎ নয়, তারপরও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, হাসিনার পতনের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের যে ধরনের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠার কথা, তেমন কিছু হয়নি। আওয়ামী নেতাকর্মী তাদের হাতে মার খেয়েছে কিংবা খুন হয়েছে, এমন নজির দেখা যায়নি। দ্বিতীয়ত, তারেক রহমানের বক্তব্যে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে এবং সংগ্রাম এখনো শেষ হয়ে যায়নি বলে যে কথা বলা হয়েছে, তার অর্থ হচ্ছে, হাসিনার পতনের পর যে ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তা বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোদির ষড়যন্ত্রে অন্তর্বর্তী সরকাকে ব্যর্থ করে দেয়া, আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা, দেশে জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরোধিতার নামে গোষ্ঠী বিশেষের নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্টিসহ প্রশাসনে থেকে যাওয়া তার আমলাদের সফট বিরোধিতা ইত্যাদি ঘটনা যে ঘটতে পারে, তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্যে তার ইঙ্গিত রয়েছে। এখন এসব ইঙ্গিতের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। একটি গোষ্ঠী আমাদের চিরকালের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে ক্রীড়া থেকে শুরু করে শিল্প-সংস্কৃতিতে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়াসহ দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড়িঘরে আগুন ও ভেঙে দেয়া হয়েছে। ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া পর্যন্ত ঠিক ছিল। পরবর্তী ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কাম্য ছিল না। কারণ, পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এটাই চেয়েছেন, যাতে সে বিশ্বকে দেখাতে পারেন কীভাবে তার দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে অন্তর্বর্তী সরকারের বদনাম করার ইস্যু তৈরি হয়ে গেছে। এ ইস্যুর মধ্যে যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঢুকে পানি ঘোলা করেছে, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এসব অগ্নিসংযোগের কোথাও কোথাও দলটির নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের নাক কেটে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা ভঙ্গ এবং দেশে জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি বা সামরিক শাসন এলে হাসিনারই লাভ। তার দলের ফেরার পথ প্রশস্ত হবে। অন্যদিকে, বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথ দীর্ঘ হয়ে যাবে। হাসিনার পতনের পর বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথ রুদ্ধ করতে যে নানামুখী চক্রান্ত হবে এবং ঘটনা ঘটবে, তা তারেক রহমান বুঝতে পেরেই বলেছিলেন, তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি।
তিন.
প্রশ্ন হচ্ছে, তারেক রহমান বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আগামী নির্বাচন কঠিনতম হবে বললেও তা সহজ করার কি পদক্ষেপ নিয়েছেন বা নিচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, তিনি বিচক্ষণতার সাথে দলের নেতাকর্মীদের সচেতন করছেন এবং অপকর্মে যারা জড়াবে, তাদের দায়ভার তিনি নেবেন না বলে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। পাশাপাশি জনগণের সন্তুষ্টি অর্জনে নিজ নিজ এলাকায় দলের পক্ষ থেকে নানা সামাজিক কর্মকা- চালাতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কাজ এখন চলছে। তার আগে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। কারণ, এ সরকার ব্যর্থ হওয়া মানে তৃতীয় শক্তি বা সামরিক শাসন অনিবার্য করে তোলা। এখনও বিএনপি এ অবস্থানে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের ইনএফিসিয়েন্সি বা কর্ম সক্ষমতার অভাবের সমালোচনা করলেও পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। দলটি সহনশীলতা ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। ভালোয় ভালোয় নির্বাচন পর্যন্ত যেতে চাচ্ছে এবং সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের তাকিদ দিচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার স্বাভাবিক সম্ভাবনা থাকা একটি দলের পক্ষে তা করা স্বাভাবিক। কারণ, যত দেরি হবে, বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে না দেয়ার ষড়যন্ত্র বিস্তৃত হবে। বিএনপিবিরোধী সে ষড়যন্ত্র চলমান। অন্যদিকে, তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনের ক্ষেত্রে সরকারের যে সফট কর্ণার রয়েছে এবং নির্বাচন বিলম্ব করে তাদের দল গোছাতে সরকার দিতে চায়, এটা স্পষ্ট। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন দল গঠন নিয়ে বিএনপি আপত্তি জানালেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া নতুন দল গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে। তরুণদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠিত হোক, তা চাচ্ছে। বিএনপিও এখন তরুণ, মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাকর্মীদের দিয়ে দল গোচাচ্ছে। জেলা-উপজেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ থেকে দলের নেতাকর্মীদের এ বার্তা দেয়া হয়েছে. অপকর্মের সাথে জড়িত ও ইমেজ সংকটে থাকাদের বিএনপিতে ঠাঁই হবে না। এর মাধ্যমে বিএনপির মধ্যে রিফর্ম বা সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক। বিএনপি যে আগামীর রাজনীতি পরিচ্ছন্ন, সুস্থ, সুশাসনমূলক এবং আধুনিক করতে চায়, তার এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। এটা করা ছাড়া বিকল্প নেই। দেশে যে সুদীর্ঘকালের অপরাজনীতির সংস্কৃতি চলে আসছে, তা আর চলতে দেয়া যায় না। রাজনীতির এ অপসংস্কৃতি দূর করার দায়িত্ব এখন বিএনপির। পুরনো ধ্যানধারণাকে আঁকড়ে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি থেকে দলটি যে বের হয়ে আসছে, তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যদি আগামী নির্বাচনে প্রথাগত রাজনীতির ধারাবাহিকতায় প্রার্থী দেয়া হয়, তাহলে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ধুলিস্যাত হয়ে যেতে পারে। ছাত্ররা যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছে, তারা যখন প্রার্থী দেবে, তখন তাদের প্রার্থীর গায়ে কোনো কালিমা থাকবে না। ফ্রেশ ও অনভিজ্ঞ হলেও বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িত না থাকায় ভোটাররাও আকৃষ্ট হবে। তারা চিন্তা করবে, নতুনদের একবার ভোট দিয়ে দেখি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তো ভোট দিয়েছি, এবার নতুনদের দেই, ভোটারদের এই মাইন্ডসেট বিএনপির জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে, যদি না সে অনুরূপ অবিতর্কিত প্রার্থী দিতে পারে। আমরা দেখেছি, নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনের পর সবাই ধরে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ নিশ্চিতভাবে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসছে। আওয়ামী লীগ এতটাই নিশ্চিত ছিল যে, দলটির প্রথম সারির অনেক নেতা, যাদের মন্ত্রী হবেন, তারা স্যুট-কোট বানিয়ে ফেলেছিলেন। বিএনপি এবং তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও ধরে নিয়েছিল, তারা বিরোধীদলের আসনে বসছেন। সে সময় তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেয়ার মতো অভিজ্ঞ কোনো নেতা দলটির ছিল না। ফলে তাকে অপরিচিত ও অনভিজ্ঞ প্রার্থী দিতে হয়েছিল। দেখা গেল, বিএনপির সেসব প্রার্থী আওয়ামী লীগের হোমরাচোমরা ও প্রতিষ্ঠিত প্রার্থীদের পরাজিত করে। সে সময় বিএনপির প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকার কাছে শেখ হাসিনা পরাজিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এটা হয়েছিল, বিএনপির প্রার্থীদের ক্লিন ইমেজের কারণে। কাজেই, বিএনপি যদি এখন অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র চিন্তা করে ইমেজ না থাকা প্রার্থী দেয়, তাহলে তারা ছাত্রদের ফ্রেশ ও অনভিজ্ঞ প্রার্থীর কাছে হেরে যেতে পারে।
চার.
বিএনপির নেতাকর্মীদের তারেক রহমানের বিচক্ষণতা ও বার্তা বুঝতে হবে। তিনি যে, বিতর্কিত ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িতদের প্রশ্রয় দেবেন না, তা ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিএনপির নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দেড় দশকে যে খুন-গুম, নিপীড়ন-নির্যাতন, জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, সহায়সম্পদ হারানো, বছরের পর বছর ধরে বাড়িঘর ছাড়া হয়েছিল, দেশের আর কোনো রাজনৈতিক দলকে এতটা নির্মমতার শিকার হতে হয়নি। হাসিনাবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের ত্যাগ অপরিসীম। এ ত্যাগের বিনিময়ে দলের ক্ষমতায় যাওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা যাতে নষ্ট না হয়, এ ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ সম্ভাবনা ধরে রাখতে হবে। তাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিন্তা ও পরিকল্পনাকে ধারন করে চলতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, বিএনপি যাতে ক্ষমতায় যেতে না পারে, এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলমান।
darpan.journalist@gmail.com
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার