গুম-খুনের নির্দেশদাতা হাসিনা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ৬ মাস পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা হাসিনার বাহিনীর গুমকক্ষ আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন। হাসিনার স্বৈরাচারি শাসনের পুরো সময় দেশে গুম-খুন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-সহ বিরোধী রাজনৈতিক মতাবলম্বী ও ইসলামপন্থীদের জন্য এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ছিল। অবশেষে প্রধান উপদেষ্টার আয়নাঘর পরিদর্শন, এর আকৃতি-প্রকৃতি এবং নির্যাতনের নানাবিধ সরঞ্জাম, পদ্ধতি ও ভিকটিমদের বিবরণ শুনে পুরো জাতি স্তম্ভিত ও ভারাক্রান্ত। এরপরও একশ্রেণীর মানুষ আয়নাঘর নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, অস্বীকার করতে চাইছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আয়নাঘরের কুশীলবদের সবাই পালিয়ে গেছে, এমনটা বলা যাবে না। প্রধান উপদেষ্টার আয়নাঘর পরিদর্শন দলের সাথে গুমের শিকার হওয়া কয়েকজন ব্যক্তি, ভুক্তভোগী ছাত্র প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা ঢাকার ৩টি স্পট পরিদর্শন করলেও ঢাকাসহ সারাদেশে এমন ৭-৮ শতাধিক আয়নাঘর ও টর্চার সেলের কথা জানা যায়। বাংলাদেশি ভিকটিমদের জন্য ভারতেও অনুরূপ আয়নাঘর ও টর্চার সেল থাকতে পারে বলে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার আয়নাঘর পরিদর্শন ও গুম-খুন, আয়নাঘর নিয়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যখন অবিশ্বাস ও ধোঁয়াশা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত, তখনই বাংলাদেশে জুলাই গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন সামনে এলো। এটি নির্ভরযোগ্য একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দলিল। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমনে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ ভাগ শিশু-কিশোর। এই হত্যাকা-কে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে জাতিসংঘ তদন্তদল। এসব গণহত্যা ও নির্যাতনের নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রমাণিত। ছাত্রদের খুন করে লাশ গুম করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ, হত্যাকা- ও নৃশংসতার জন্য আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করেছে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন। অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে জনগণের উপর নৃশংস নির্যাতন ও গণহত্যার পথ বেছে নেয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক বিশ্বের ইতিহাসে নজির বিহীন। একের পর এক ভুয়া নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন, বিরোধী মত দমন এবং জঙ্গিবাদী তকমা দিয়ে দেশের আলেম-উলামাদের জেল-জুলুম, নির্যাতন ও গুম করার মতো ঘটনা জনমনে যে সংক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল, তাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তথা জুলাই বিপ্লবে পরিণত হয়েছিল। জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ও তার দোসররা দেশবিরোধী, মানবতাবিরোধী ষড়যন্ত্র ও হুমকি অব্যাহত রেখেছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল নিরস্ত্র, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক। সরকারের দমননীতিকে ছাত্র-জনতা নিজেদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে মোকাবেলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ছাত্রদের গুম করে, খুন করে এবং রাজপথের হাজার হাজার মানুষের জমায়েতের উপর গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যার জাতিসংঘ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক গত বুধবার জেনেভায় অবস্থিত মানবাধিকার কার্যালয়ে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জুলাই হত্যাকা-ের অভিযুক্তরা যেন দায়মুক্তি না পায়, তাদেরকে যথাযথ বিচারের সম্মুখীন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর স্বচ্ছ বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে এর পুনরাবৃত্তি চিরতরে বন্ধের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্ট অনুসারে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের তরফ থেকে কিছু সুপারিশ করা করা হয়েছে; তার মধ্যে বিচার প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করা, র্যাব ও এনটিএমসি বিলুপ্ত করা, বিজিবি ও ডিজিএফআই’র কার্যক্রম সীমিত করতে বলা হয়েছে এবং শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে এনে বিচার নিশ্চিত করতে আইসিসিকে অনুরোধ করারও পরামর্শ দিয়েছেন ভলকার তুর্ক। অন্তর্বর্তী সরকারকে গণহত্যা ও নৃসংশতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে অভিন্ন সিদ্ধান্ত ও জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নৃশংসতা চিরতরে বন্ধ করার উদ্যোগ এখনই নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

ঝড়ো বাতাসে যমুনা নদীতে আটকে ছিল ফেরি

হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে লেবাননের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মার্কিন দূতের বৈঠক

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বৈশ্বিক কর্মসূচিতে সংহতি, দেশব্যাপী ধর্মঘট আজ