জাতীয় ঐক্যের প্রতীক : আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া

Daily Inqilab প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

(প্রথম পর্বের পর)


খালেদা জিয়া এখন বিএনপির ঐক্যের প্রতীক থেকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীকে রূপান্তরিত হয়েছেন। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করলেও নিঃসন্দেহে সুস্থ হয়ে তিনি দেশে ফিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হবেন এই প্রত্যাশা সকলের। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডন গমন বিএনপির ভেতরে স্বস্তি এবং উদ্বেগ উভয়ই এনে দিয়েছে, তবে দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতি পরিস্থিতি দেশ ও দলের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা চলেছে। এর থেকে বোঝা যায় যে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি তার দল এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২১ নভেম্বর(২০২৪) সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি স্বতঃস্ফূর্ত ও সজীব ছিল। বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা প্রত্যাশা করতেই পারেন যে, তিনি চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে দলের হাল ধরবেন। লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে বলেছেন, ‘তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হোক। দেশে থাকতেই তার ভালো লাগে।’ তার ব্যক্ত এ অনুভূতি দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার চরম বহিঃপ্রকাশ।
বলাবাহুল্য, লন্ডনে উপস্থিত হওয়ার পর পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ সত্যিই মা-সন্তানের পুনর্মিলনের এক অনন্য দৃশ্য। পুরো জাতিকে তা স্পর্শ করেছে; অপূর্ব মায়াময় সে দৃশ্য দেখে দেশ-বিদেশের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছে। মমতাময়ী মায়ের জন্য তারেক রহমান দায়িত্ব পালন করে অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যদওি প্রকৃতরি নয়িমে এটা খুবই স্বাভাবকি; একসঙ্গে আছেন, হয়তো উভয়ে ফিরবেন শীঘ্রই।
২.
১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত, আত্মনির্ভরশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। বিগত কিছুকাল যাবৎ আমি বিএনপির কার্যক্রম গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। দলের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতে পারে, এমন মনে করে আমাকে দলের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তাই দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি ও দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং শহীদ জিয়ার গড়া দলে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া আমার লক্ষ্য।’ ‘শহীদ জিয়ার গড়া দলে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে’ যে দায়িত্ব তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তা চার দশক পরে এসে ২০২৫ সালেও সত্য বলে সকলের কাছে প্রতিভাত হচ্ছে। বিএনপি’র ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৮২ সালের ১৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়া আত্মপ্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য রাখেন। ‘বিএনপি: সময়-অসময়’ গ্রন্থে লেখক মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন বিএনপিতে যোগ দেবার পর থেকে খালেদা জিয়া বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে হাজির হওয়া শুরু করেন। তিনি আরো লিখেছেন, ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সংসদের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার এবং প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়াও উপস্থিত ছিলেন। দলের তরুণ অংশ চেয়েছিল খালেদা জিয়া দলীয় প্রধান হোক। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে বিএনপি’র প্রধান হিসেবে দেখেতে আগ্রহী ছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ। বিএনপির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য একইসঙ্গে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার। বিএনপির ওয়েবসাইটে তখনকার ঘটনা বর্ণনা তুলে ধরে বলা হয়, এর ফলে এক বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিচারপতি সাত্তার দুবার বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় যান। বেগম খালেদা জিয়া তাকে তরুণ নেতৃত্বের মনোভাবের কথা জানান। এসময় বিচারপতি সাত্তার বেগম খালেদা জিয়াকে দলের সহ-সভাপতির পদ এবং দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। কিন্তু বেগম জিয়া ব্যক্তিগত কারণে তা গ্রহণ করেননি। অবশেষে বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর বেগম খালেদা জিয়া চেয়ারম্যান পদ থেকে তার প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচএম এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। তখন রাজনীতিতে সাত্তারের আর কোনো মূল্য থাকেনি। সাত্তার আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির চেয়ারম্যান থাকলেও দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে।
১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন এবং এপ্রিল মাসের প্রথমে বিএনপির এক বর্ধিত সভায় তিনি ভাষণ দেন। সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কয়েকমাস পরেই খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এ সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলন যখন ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছিল তখন বিএনপির বাইরে অন্য রাজনৈতিক দল থেকে খালেদা জিয়াকে দলের নেতৃত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ১৯৮০র দশকে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার ব্যাপক পরিচিত গড়ে উঠে।
এ কথা সত্য য,ে বিএনপি নেতাদের রাজনীতিতে স্মরণীয় সাফল্য অর্জন করা অসম্ভব হত, যদি বেগম খালেদা জিয়া দলের সঙ্গে না থাকতেন। এরশাদ ও হাসনিা সরকারের অত্যাচার ও দমন-পীড়নের মধ্যে গণতন্ত্ররে জন্য আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে দলরে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে। স্পষ্টবাদী খালদো জয়িা কঠোর পরিশ্রম করে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন। দুর্দশায় পড়তে হয়েছে সত্যবাদী খালেদা জিয়াকে। একদিকে শহীদ স্বামী জিয়ার বিএনপি’কে পরিচালনা অন্যদিকে দু’ই সন্তানকে দেখভাল করাÑএই উভয় কাজে তাকে নিরন্তর নিয়মিত সময় দিতে হয়েছে। দেশের ভাবনার কাছে একসময় পরিবারের ভাবনা ফিকে হয়ে এসেছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে বেড়ে যায় ব্যস্ততা। স্বৈরশাসকের জেল-জুলুম নির্যাতন ও গ্রেপ্তার ভয়কে উপেক্ষা করে তিনি আমাদের আন্দোলনের এক অসাধারণ সাহস এবং অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে প্রতীক হয়ে উঠেন। দলের দায়িত্ব নিয়ে তিনি জনগণের দাবিকে নিজের করে নিয়েছিলেন ভালোবেসে। সরল-সাধারণ জীবনযাপন, ধৈর্য, রাজনীতির প্রতি একনিষ্ঠতা আর সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি একজন গৃহিণী থেকে প্রধানমন্ত্রীত্বে উন্নীত করেছে জাতির জন্য তার ত্যাগের মহিমায়। তিনি আদর্শ মাতা এবং একজন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সব সংকট মোকাবেলার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেত্রী।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক কর্মধারা পরিচালনার দায়িত্ব তার কাঁধে পড়েছিল এবং তিনি একজন যোগ্য দলীয় প্রধান হিসেবে সবচেয়ে সফলতার সঙ্গে সেই কাজটি করেছিলেন। তিনি মিছিল করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন, নিজেকে জনতার সামনে তুলে ধরেছেন ভাষণের পর ভাষণ দিয়ে। দেশের নিপীড়িত জনতার পাশে থাকা ও আপসহীন হয়ে ওঠা তাকে অনন্য করেছে। দলীয় রাজনীতির দায়িত্বে থাকায় তিনি কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পরিবারকে দেখাশোনা করেছেন। দুঃসময়ে কর্মীদের নিজের বুদ্ধি থেকে পরামর্শ দিয়েছেন। কর্মীদের সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করেছেন এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ করে পরিচালনা করেছেন। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সংকটের সময়ে তিনি জনতা ও নেতাদের নির্দেশনা দিতে সক্ষম হন। তিনি কখনো ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তাকাননি। দল পরিচালনায় তার দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয়ে আমরা হতবাক হয়েছি।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলন কিংবা ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে তিনি রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং প্রতিটি স্তরের আন্দোলনের সময় তাদের কার্য-কলাপ অনুসন্ধান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। তার পরামর্শে ছাত্র আন্দোলনের অনেক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এমনকি তিনি কীভাবে আন্দোলন পরিচালনা করবেন তা তাদের পরামর্শ দিতেন। প্রায় সব ছাত্রনেতার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। নব্বই দশকে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলকে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি তার উদ্বেগ বা হতাশা প্রকাশ না করে বরং নেতাকর্মীদের দলীয় সমস্যার সময়ে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিতেন। অন্যদিকে গত ১৬ বছরে তিনি শেখ হাসিনার নির্যাতন সত্ত্বেও চক্ষুর আড়ালে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। সংগঠনের অবস্থা অবহিত করা এবং নির্দেশনা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের চাঙা করেছেন। নিপীড়িত জনসাধারণকে মুক্তির চেতনায় জাগিয়ে তোলার সংগ্রামে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তার বুদ্ধি, দূরদর্শিতা এবং রাজনীতি সম্পর্কে বাস্তবোচিত মূল্যায়ন এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের কারণে তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
৩.
মামলা-হামলা দমাতে পারেনি খালেদা জিয়াকে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং সেনা-সমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৪ সালে তিনি এবং অন্যরা একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে শুরু করেন, যার ফলে তিনি বছরের শেষের দিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন নি। অথচ এ রায় ছিল রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অক্টোবরে তাকে দুর্নীতির অতিরিক্ত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং সাজা ১০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। একই মাসে তার ছেলে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি শুরু হয় এবং ২০২০ সালের মার্চ মাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে অস্থায়ীভাবে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২৩ জানুয়ারি(২০২৫) আদালত ১০ বছরের পুরনো নাশকতার মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছে। মিথ্যা ও সাজানো মামলা কোনোটিই শেষ পর্যন্ত টেকেনি।
২০২৫ সালের মামলা প্রত্যাহারের অনেক আগেই বেগম জিয়ার একক এবং অনন্য নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেনÑ‘এক ক্রান্তিকালে শুরু হয়েছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। সেই আন্দোলনে বেগম জিয়ার অবদান বীরত্বগাঁথা। সেই সময়ে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামে তিনি জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে একক ও অনন্য নেতৃত্বে সুপ্রতিষ্ঠিত হন।’ ‘দীর্ঘ ৯ বছরের সংগ্রামে, সংকটে আপসহীন ধারায় জনগণের সঙ্গে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। শুরু হয় গণতন্ত্রের পথ চলা।’ রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘দেশি-বিদেশি চক্র এই মহান জাতীয়তাবাদী নেত্রীর উত্থান সহ্য করতে পারেনি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে যিনি আগলে রেখেছিলেন অতন্ত্র প্রহরীর মতো, তাকে পর্যুদস্ত করার জন্য চক্রান্তকারীরা চক্রান্তের জাল বুনতে থাকে। ভোটার শূন্য নির্বাচনে বিদেশি মদদপুষ্ট ফ্যাসিবাদী শক্তি গণতন্ত্রকে দাফন করতে; খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রেখে জুলুমের পর জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে।’(বাংলা ট্রিবিউন, ০৪/০১/২০১৯)
খালেদা জিয়া সবসময় স্বচ্ছ ও সৎ জীবন-যাপন করেছেন। ফলে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন খুব দ্রুত। তিনি নিজেকে বাঁচিয়ে জনগণকে বিপদে ফেলেননি। দুর্যোগে-আন্দোলনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিপদ মোকাবেলা করেছেন। এরশাদের আমলেই তিনি চাইলে সরকার গঠন করতে পারতেন। কিন্তু আপস করেননি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তার লড়াই ছিল অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। একই সময় শেখ হাসিনা আপস করে এরশাদের সংসদে অংশগ্রহণ করেন। অথচ খালেদা বর্জন করে গণতন্ত্রের জন্য বেছে নিলেন রাজপথের মিছিলকে।
প্রকৃতপক্ষে রাজনীতির প্রতি খালেদা জিয়ার তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে এর কয়েকটি কারণ ছিল। প্রথমত : জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড তার মনে গভীর দাগ কেটেছিল এবং তিনি মানসিকভাবে সে ধকল কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। দ্বিতীয়ত : খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে পরিবারের দিক থেকে তেমন কোনো উৎসাহ ছিল না। পূর্বেই বলা হয়েছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়া দলের ভাইস চেয়ারপারসন হন। এর পরের বছর ১০ মে তিনি চেয়ারপারসন হন। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হলে তিনি ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে ১ সেপ্টেম্বর দলের চতুর্থ কাউন্সিলে দ্বিতীয়বার, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার এবং ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের দশম কাউন্সিলে চতুর্থবারের মতো বিএনপির চেয়ারপারসন হন।
খালেদা জিয়া আপসহীন ও জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে সর্ব-সাধারণের কাছে আস্থা অর্জন করেছেন। বিশেষ করে দলের ভেতর ঐক্য বজায় রাখার জন্য তার আপসহীন হওয়াটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দল ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে কোনো রকম সমঝোতা না করেই আপসহীন আন্দোলন করে গেছেন। ফলে এরশাদের পতন ত্বরান্বিত হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি।
খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার ও ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। খালেদা জিয়া দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থায় (সার্ক) দুবার চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার একটি অনন্য রেকর্ড হচ্ছে- পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই তিনিই জয়ী হয়েছেন। সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর তিনি আইনি লড়াই করে সব কটি মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালে তাকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন।
অর্থাৎ রাজনীতিতে যোগ দিয়েই স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আপসহীন নেত্রীতে পরিণত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুইবারের বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া দেশ ছাড়ার জন্য চাপ থাকলেও দেশ ছাড়েননি। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। জেলও খাটতে হয়েছে তাকে। কিন্তু আপস করেননি।
কারাগারে থাকাবস্থায় খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। আওয়ামী লীগ আমলে তাকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য বিএনপি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন জানানো হলেও তাতে ফ্যাসিস্ট সরকার সাড়া দেয়নি। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৬ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর পরিবার ও তার দল বিএনপি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ‘আপসহীন’ নেতৃত্বের নাম। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত তিনি কোন আপস করেন নি।

৪.
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কারণ খালেদা জিয়ার জীবন ও সংগ্রাম পর্যালোচনা করলে দেশের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল দেখা এবং বোঝা যায়। শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন থেকে অনুগত গণমাধ্যম এবং নিজস্ব নেতা-কর্মীদের দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিল। দলের সদস্য এবং সমর্থকদের দিয়ে বাধ্যতামূলক শ্রদ্ধা জাগানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাদের পদ ধরে রাখার জন্য নেতার প্রশংসা করা একটি অপরিহার্য কাজ বলে মনে করত। কিন্তু ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পলায়ন তার সকল কর্তৃত্বকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে। পক্ষান্তরে ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা সত্ত্বেও জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বা এর আদর্শের সাথে জোটবদ্ধ নয় এমন অনেকেই এখনও খালেদা জিয়াকে রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রশংসা করেন।
রাজনীতিবিদদের আচরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা যেমন তাদের একটি কাজ তেমনি দেশের সামগ্রিক বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষাও অন্যতম কর্তব্য। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শিষ্টাচার এবং সৌজন্যেও দরকার হয় রাজনীতিবিদদের জীবনে। খালেদা জিয়া সেই গুণে জনগণের কাছে আসতে এবং সম্মান অর্জন করতে পেরেছেন। তিনি কম কথা বলেন এবং মিথ্যা কথা বলেন না। এই গুণটি শেখ হাসিনার মধ্যে একেবারে অনুপস্থিত।
রাজনীতি করতে এসে খালেদা জিয়াকে বারবার কারাগারের যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে। চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া বেশ কয়েকবার কারাগারে গিয়েছেন। তবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময় তিনি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন। ৮০’র দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি বেশ কয়েকবার আটক হয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হন। সেসময় তাকে সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগারে ৩৭২ দিন বন্দি রাখা হয়েছিল।
মূলত ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় কারাবাস হাসিনা আমলে। এর আগে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে তিনি মুক্তি পান। এর আগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন তিনি। এর মধ্যে প্রথম দুবার ঘটনাস্থল থেকে আটক করে তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেয় পুলিশ। ১৯৮৭ সালে হোটেল পূর্বাণীতে এক অনুষ্ঠান থেকে আটক করে আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে তাঁকে কিছু সময়ের জন্য মতিঝিল থানায় নেওয়া হয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ‘অঘোষিত’ভাবে তাঁকে গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে। তবে এটা আইনানুগ ছিল না। বিগত আওয়ামী লীগের সময় ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর গুলশানের বাসায় অবরুদ্ধ করা হয় তাঁকে। আর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি তাঁর গুলশানের কার্যালয়ের দুই পাশে বালুর ট্রাক রেখে অবরুদ্ধ করা হয়। ৯৩ দিন সেখানে অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার সাজা হয়েছিল। গত ৬ আগস্ট সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা মওকুফ করা হয়। একই সঙ্গে গত ২৭ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তিনি খালাস পান। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি এসব মামলা আইনিভাবে মোকাবিলা করে খালাস পেতে চান। লক্ষণীয়, ফ্যাসিস্ট সরকার কারাগারের নিক্ষেপ করে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়। ২৫ মাস কারাভোগের পর, বিগত হাসিনা সরকার একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তার সাজা স্থগিত করে কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। মামলা ও খালাসের বিষয়ে বৈষম্য লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। যেমন, দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রাক্তন মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সহ আরও অনেকেই জামিনে মুক্তি পান। আদালতকে নিয়ন্ত্রণের নগ্ন দৃশ্যপট আরো বেশি উন্মোচিত হয় বিচারপতি নিয়োগ ও বদলির নানা তথ্যে।
৫.
এরশাদ পর্বে ইতিহাসে খালেদা জিয়া ও হাসিনার তুলনা করলে দেখা যায় হাসিনা সেখানে সুবিধাবাদী রাজনীতিতে তৎপর ছিলেন। সামরিক শাসক হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ কে তাঁর ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তাই ১৯৮৬ সালের ১৯ মার্চ বুধবার বিএনপি, আওয়ামী লীগ সহ সকল দল ঘোষণা দেন যে, তারা এরশাদের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না। সেদিন শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে ঘোষণা দেন যে, এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে, তারা হবে জাতীয় বেইমান। এরশাদের ফাঁদে পা দিয়ে শেখ হাসিনা পরদিন ঢাকায় এসে চট্টগ্রামে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে সরে আসেন। ২১ মার্চ শুক্রবার হঠাৎ তিনি ঘোষণা দিলেন যে, আওয়ামী লীগ এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে।
আওয়ামী লীগ মনে করেছিল বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলে নির্বাচনের বাইরে রাখতে পারলে বিএনপি একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগ জোট গঠন করে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। বিজয়ী হতে না পারলে এরশাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করবে। তাও না পারলে বিরোধীদলের ‘নেত্রী’ হিসেবে জাতীয় সংসদে ভূমিকা পালন করবে। (বিস্তারিত বিবিসির সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের লেখা বই : ‘এক জীবন, এক ইতিহাস’ পৃষ্ঠা ২৩২)। পরদিন ২২ মার্চ শনিবার বিএনপি, বিএনপি’র অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলো এরশাদের অধীনে শেখ হাসিনার নির্বাচনে যাওয়া কে ‘পাতানো খেলা’ অবহিত করে দেশের মানুষের মতামত নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি নিয়ে আপস করেনি।
নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগ তাদের প্রত্যাশিত আসন পায়নি। দলের নেতারা এই নির্বাচনকে ‘পুকুর চুরি’, ‘দীঘি চুরি’ বলে সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগ একই সঙ্গে ‘ঐক্যমত’ ভঙ্গ করে নির্বাচনের অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে জনগণের কাছে ‘জাতীয় মুনাফেক পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পায়। নির্বাচনে পরে শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, তিনি সংসদের বৈঠকে যোগ দেবেন না। কিন্তু পরে আবারো হঠাৎ তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সংসদে যোগদান করেন। এ সময় গুজব রটেছিল যে, শেখ হাসিনাকে এরশাদ ‘লং ড্রাইভ’ এ নিয়ে যান। তারপর সেখানে রাজনৈতিক মতৈক্যে পৌঁছান।(বিস্তারিত বিবিসির সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের লেখা বই : ‘এক জীবন, এক ইতিহাস’ পৃষ্ঠা ২৩২)। নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করায় বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায়। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া “এরশাদ হটাও” শীর্ষক এক দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। তারপর পুনরায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপক্রম হয়।
শেখ হাসিনা তখনও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মাঠে না এসে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। যেমন-১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘির মাঠে শেখ হাসিনার উপর হামলার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। প্রতিবাদ সমাবেশে কথা দিয়েও শেখ হাসিনা যাননি। সমাবেশ শেষে ৪০ হাজার লোকের একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। (বিস্তারিত সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের লেখা বই : এক জীবন, এক ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২৩৮)। তখন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রদল জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ছাত্রদল এককভাবে ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হলে ‘ছাত্র আন্দোলন’ ছাত্রদলের হাতে চলে যায়। ছাত্রসমাজের দাবির মুখে বিএনপি, আওয়ামী লীগ সহ ‘রাজনৈতিক ঐক্য’ তৈরি হলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হয়।
অবশেষে দীর্ঘ ৯ বছর অবিরাম, নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসন, ১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসন, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে বিজয় লাভ করেন। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংসদ নির্বাচনের নতুন আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি ৩টির বেশি আসনে নির্বাচন করতে পারে নি। ফলে বেগম খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ তিনটি আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়াÑ থেকে শুরু করে তিনি জীবনে যেখানে নির্বাচন করেছেন, সেখানেই মানুষের ভালোবাসায় ব্যালট বিপ্লবে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
তিনি ভোটের নির্বাচনে সকলকে পেছনে ফেলে সবসময়ই এগিয়ে গেছেন। তার সঙ্গে কিংবা অন্য দলে যারা আছেন সেসব রাজনীতিবিদদের থেকে তিনি আলাদা। তার সমকালে কোনও রাজনীতিবিদই তার মতো জনপ্রিয় নন। ১৯৯১ সাল থেকে খালেদা জিয়া সকল নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। এমনকি যেসব নির্বাচনে বিএনপি হেরেছে, সেসব নির্বাচনেও তিনি প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়েছেন।
গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগ, বিপর্যয় মোকাবেলা করে ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ অভিহিত হওয়া সত্যিই খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার একটি অনন্য নিদর্শন। এজন্য ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সকল দলের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি; অসুস্থ ছিলেন কিন্তু অদৃশ্য সুতোর বন্ধনে ছিলেন বর্তমান। আপসহীন বলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন। বেগম জিয়ার প্রচ্ছন্ন প্রভাব এবং তারেক রহমানের নেতৃত্ব সেসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
খালেদার উন্নয়নমুখী রাজনীতি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি মানবদরদী। অন্যদিকে হাসিনা রক্তপিপাসু। রক্তের হোলিখেলায় মেতে ছিলেন গত ১৬ বছর। তার আত্মীয়-স্বজন নিরাপদ। আর জনগণ সাধারণ সমর্থক নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। আসলে শেখ হাসিনা স্যোশাল হারমনি নষ্ট করে গেছেন। শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জনগণকে ফেলে রেখে পলায়ন করেন। তেমনি শেখ হাসিনা পালিয়েছেন ১/১১-এর সময় এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। পক্ষান্তরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনে ভয়াবহ সংকট কালেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার নজির নেই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন একাত্তরে যুদ্ধের মাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে জাতিকে পাকিস্তানি অন্যায় অবিচার ও হত্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন, নিজের চাকরি ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করেছিলেন, তেমনি খালেদা ১/১১ এর সময় এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কাছে মাথা নত করেননি। পালিয়ে বিদেশে অবস্থানও করেননি। ফলে সময়ের প্রয়োজনে যিনি দেশনেত্রী হলেন তিনি সত্যময়ী সাহসী নেতায় পরিণত এখনো। তিনি ভুল করলে স্বীকার করেন, মিথ্যা বলেন না। হাসিনা অনবরত মিথ্যা কথা বলেন। ভারতে পালিয়েও মিথ্যা তথ্য দিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। আসলে সার্বিক বিবেচনায় খালেদা জিয়া বিশ্বনারী নেত্রীর মডেল। তিনি বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক। দেশের সমস্যা সমাধানে তিনি অনন্য।
খালেদা জিয়ার একটি রাজনৈতিক ‘রুচি’ আছে। আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার বক্তব্যের জবাব তিনি দিতেন না। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাব তিনি দিতেন। অতীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা অভিযোগ করলেও তিনি কোন জবাব দেননি। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি নানাবিধ উপায়ে কত অন্যায়-অবিচার করেছেন। বহু স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সীমাহীন কষ্ট দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন। বলপ্রয়োগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি ওই বাড়িটিতে ২৮ বছর ছিলেন।

শেখ হাসিনার মতো ক্ষমতালোভী নন বেগম খালেদা জিয়া। বিশ্বে নারী নেত্রীদের মধ্যে সততা, সৌজন্য ও সত্যকথনে অনন্য হলেন খালেদা জিয়া। তিনি ছিলেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং নাগরিক অস্থিরতার সময়কালে তিনি শাসন করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক ও মুক্তি সংগ্রামের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বামী হওয়া সত্ত্বেও তিনি জনসম্মুখে কদাচিৎ এসেছেন, নিভৃতে থাকতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছিল এবং বিরোধী দল বিএনপিসহ ভিন্নমত পোষণকারীদের ধ্বংস করার জন্য নানা অপচেষ্টা করেছিল। যখন অন্তরীণ ছিলেন খালেদা জিয়া তখন জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে নি। বরং দলের নেতা কর্মীরা লন্ডনে বসবাসরত খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে পেয়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতায় মনোযোগী হয়। ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে নেতা-কর্মীরা আত্মনিয়োগ করেন।
গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের ছাত্র-জনতার প্রধান দাবি ছিল খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। বিএনপি’র প্রধান আইকন দেশনেত্রী মুক্ত হন। তার উপর থেকে বিদেশ যাত্রা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কয়েক মাসের প্রস্তুতির পর, তিনি ৭ জানুয়ারি (২০২৫) কাতারের আমিরের দেওয়া একটি বিমান অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে যান। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনা করেন কাতারের রয়্যাল মেডিক্যাল ইউনিটের একটি চিকিৎসক দল, যেখানে চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তারা যাত্রার সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে শুরু করে ট্রমা পর্যন্ত জরুরি অবস্থাগুলি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিতে সক্ষম। ফলে খালেদা জিয়াকে বহন করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি যেমন গৌরবান্বিত হয়েছে তেমনি বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার চেয়ে পৃথিবীতে খালেদা জিয়ার গুরুত্ব ও মহিমা অনেক উঁচুতে। শেখ হাসিনাকে পালাতে হয়েছে হেলিকপ্টার যোগে, ভারতের আশ্রয়প্রার্থী হয়ে। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়াকে লক্ষাধিক মানুষ বিমানবন্দরে গিয়ে অশ্রুসজল নেত্রে বিদায় জানিয়েছে। তিনি বর্তমানে লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ২০০৭ সালে বিএনপি খালেদা জিয়ার জন্য যেমন নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল ঠিক তেমনি ২০২৫ সালে তারা নেত্রীকে বিদেশে যেতে দিলেও সর্বদা তার ছায়ায় রাজনীতি করতে আগ্রহী। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে চেয়েছে। পক্ষান্তরে ২০২৪ সালে ক্ষমতার পরিবর্তন ছাত্র এবং জনগণের বিদ্রোহের মাধ্যমে ঘটেছে যেখানে সেনাবাহিনী জনগণের বিরোধিতা করেনি। বরং, তারা পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করেছে। সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আমরা শুনেছি, সেনাবাহিনী রাজনীতিতে প্রবেশে করবে না বরং তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করে।
৬.
বাকশালের ব্যর্থতা ও দুঃশাসনের পটভূমিতে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপি’র জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে একাধিকবার হত্যা করেছেনÑ প্রথমে ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে এবং তারপরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে, জোর করে ক্ষমতা দখলের জন্য ব্যালট ভর্তি করে। এরপর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামি প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে পুরোপুরিই ধ্বংস করেন ফ্যাসিস্ট সরকার। অন্যদিকে বিএনপি দুবার গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেÑপ্রথমত জিয়া কর্তৃক বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়বার ১৯৯১ সালে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাতের পর সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে। একারণেই খালেদা জিয়া আজো জনপ্রিয় ও ঐক্যের প্রতীক।
বস্তুত বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আদায়ে আপসহীন, প্রয়োজনে মমতাময়ী আবার দৃঢ় চিত্ততায় ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্টে নির্বিকার। দুঃসময়ে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়া, মিথ্যা না বলা ব্যক্তিত্ব, নীতির প্রশ্নে স্বচ্ছ থাকা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের মাটি-মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসে দেশপ্রেমের পরাকাষ্ঠায় ক্রমশ সকল রাজনৈতিক দলের কাছে আস্থাভাজন। সকল শ্রেণি পেশা তথা সর্বসাধারণের কাছে কিংবদন্তিতুল্য অনন্য উচ্চতায় জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের মানুষ প্রাণভরে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তার শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছে। মঙ্গল কামনা করছে তার পরিবারের সকল সদস্যের জন্য। খুব শীঘ্রই বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে বাংলাদেশের হাল ধরবেন।
(লখেক : সাবকে চয়োরম্যান এবং অধ্যাপক, থয়িটোর এন্ড পারফরমন্সে স্টাডজি বভিাগ, ঢাকা বশ্বিবদ্যিালয়)

 

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মিয়ানমারে ভূমিকম্প এবং আমাদের ভয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিৎ কথা
আইএমএফ’র ঋণের প্রশ্নে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুদয়
শিক্ষাব্যবস্থার ব্ল্যাকবক্স খোলার এখনই সময়
আরও
X

আরও পড়ুন

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

রাজধানীর বংশালে আগুন, নিহত ১, আহত ৭

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আজ ধর্মঘট

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

দুর্ঘটনার কবলে জামায়াত নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, নিহত ৩

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার

ঈদকে কেন্দ্র করে কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার