ভোজ্য তেলের দাম কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে তেলেসমাতি অব্যাহত রয়েছে। এই ভোজ্য তেলের দাম কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না। ছয়-সাতটি কোম্পানির সিন্ডিকেট এবং পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পণ্যটির দাম ক্রমেই বাড়ছে। সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের জিম্মি করে হাজার হাজার কোটি টাকা পকেট থেকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম নি¤œমুখী। বাংলাদেশে ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ িেবশি। তাহলে সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে কেন? এর পেছনে যে, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কাজ করছে, তাতে সন্দেহ নেই। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময়েও এই সিন্ডিকেট কাজ করেছে। তার পতনের পরও তা অক্ষত ও অটুট রয়েছে। তাদের টিকিটি ধরা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ আশা করেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সবধরনের পণ্যের বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হবে এবং পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে। তাদের সে আশায় গুঁড়ে বালি। সরকার তা ভাঙতে পারেনি। পণ্যমূল্য মানুষের নাগালের মধ্যে আসা দূরে থাক, উল্টো তা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে স্বস্তি দিতে না পারা এখন সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এতে সরকারের প্রতি তাদের আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
রমজান সামনে রেখে দেশে জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির অপসংস্কৃতি বহুকাল ধরেই চলছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ সময়কে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির মওকা হিসেবে নিয়ে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে বহু লেখালেখিও হয়। তাতে কোনো কাজ হয় না। এক্ষেত্রে সরকারও যেন হাতগুটিয়ে বসে থাকে। ধর্মপ্রাণ মানুষের হাহাকার শুনতে পায় না। বাজার সিন্ডিকেট যেন সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। সরকারের এ ব্যর্থতায় মানুষ হতাশ হলেও কিছু করার থাকে না। ইতোমধ্যে রমজানে চাহিদার শীর্ষে থাকা চিনি, ছোলা, খেজুরসহ ৯টি পণ্যের আমদানি বাড়লেও তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে চাল, ডাল, ছোলা, চিনি, খেজুর, তেলসহ বিভিন্ন ধরনের ১৪ লাখ টন পণ্য নিয়ে ৫৩টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। ফেব্রুয়ারির ২০ দিনে এসেছে ২২টি জাহাজ। রমজানের আগে আরও ১০টি জাহাজ ভিড়বে। এসব জাহাজে করে লাখ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যপণ্য দেশে এসেছে। তারপরও পণ্যমূল্য কমছে না। এর মূলে যে সিন্ডিকেট কাজ করছে, তা বলাই বাহুল্য। এসব পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্থিতিশীল হয়ে রয়েছে সয়াবিন তেল। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য ছিল লিটার প্রতি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫ টাকা বেশি। অথচ সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্য ১৭৫ টাকা। বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে লিটারে যদি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি বিক্রি হয়, তাহলে দৈনিক শত শত কোটি লিটার চাহিদার ভোজ্য তেল কত টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। সাধারণ মানুষের এই অর্থ অসাধু ব্যবসায়ীরা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে মানুষ এখন সাশ্রয়ী মূল্যে শাক-সবজি কিনতে পারছে। এক্ষেত্রে তাদের স্বস্তি রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, এবার শাক-সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। আলু, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধা কপি গড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কৃষকরা উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম কমে যাওয়ায় হতাশ হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম না পেয়ে সড়কে ফেলে প্রতিবাদ করছে। এক্ষেত্রে সরকারের তেমন কোনো কৃতিত্ব নেই। কৃষকরা স্বউদ্যোগে ফসল ফলায়। দেখা যাচ্ছে, বাজারে একদিকে একধরনের পণ্যমূল্য আকাশ ছোঁয়া আরেক দিকে নি¤œগামী। কোনো ভারসাম্য নেই। বলা বাহুল্য, ইফতারের বিভিন্ন আইটেম তৈরির জন্য রমজানে সয়াবিন তেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। মানুষের এই চাহিদাকে জিম্মি করেই বাজার সিন্ডিকেট তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু সয়াবিন তেল নয়, ছোলা, চিনি, খেজুর ইত্যাদি পণ্যের দামও বাড়তির দিকে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পরপর বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। কোনো কোনো উপদেষ্টা বাজারে গিয়েও হাজির হয়েছিলেন। বাস্তবে এসব হুঁশিয়ারি ‘আষাঢ়ে তর্জন-গর্জন সারে’ পরিণত হয়েছে। পণ্যমূল্য আরও বেড়েছে। সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। তারা সরকারের হুঁশিয়ারিকে তোয়াক্কা করেনি। এমনকি, ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেও কোনো সুফল আসেনি। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষের স্বস্তি ফিরেনি। যেকোনো সরকারের সাফল্যের অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে, পণ্যমূল্য মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে রাখা। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা অকাশচুম্বী। তারা আশা করেছিল, অন্তত জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে সরকার তাদের স্বস্তি দেবে। এ কাজ সরকার করতে পারেনি। জিনিসপত্রের দাম কমানো নিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই অন্তর্বর্তী সরকার লিপ সার্ভিস দিয়ে বসে আছে। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান করে তুলতে পারেনি। গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রি করে যেন দায় সারছে। ট্রাকের এই পণ্য পেতে সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হচ্ছে। অনেক ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারপরও পণ্য পাচ্ছে না। সরকার ট্রাকে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ক্রেতাদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় অনেকেই হেরে যাচ্ছে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের এটা মূল কাজ নয়। তাকে পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। বড় বড় কথা বা লিপ সার্ভিস দিয়ে পণ্যমূল্য যে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সাবেক এমপি আফজাল ৭ দিনের রিমান্ডে

ক্ষমা চাইলেন ড্যাফোডিলের সেই শিক্ষিকা

সারাদেশে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় ২০ দিনে ৪৯০ শিশু নিহত

চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনে ৪০ দেশের প্রতিনিধি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪