বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী নির্দেশনা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ বিমানের টিকেট নিয়ে সংস্থাটির একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্টস অফ বাংলাদেশ (আটাব)-এর সিন্ডিকেট বছরের পর বছর কারসাজি করে আসছে। তাদের কারসাজিতে বিমানের টিকেট এক প্রকার সোনার হরিনে পরিণত হয়েছে। বিমানের সিট খালি থাকলেও বলা হয় টিকেট নেই। ফলে সিন্ডিকেটের কাছে অবৈধ মজুতকৃত টিকেট যাত্রীদের দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে কিনতে হয়। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। বিমানের টিকেট সিন্ডিকট ভাঙ্গার উদ্যোগ নিয়েছে। এখন থেকে কোনো বিমান সংস্থা তিন দিন বা ৭২ ঘন্টার বেশি বিমান টিকেটের বুকিং রাখতে পারবে না বলে নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বুকিং দেয়া টিকেটে তিন দিনের মধ্যে ইস্যু করা না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করতে হবে। এতদিন ৩ মাস আগে থেকে টিকেট সোল্ড আউট বা সিট খালি নেই দেখানো হতো। অনেক ক্ষেত্রে ১০০ ডলারের টিকেট ৩০০ ডলারে বুকিং দিতে হতো। উল্লেখিত সিন্ডিকেট টিকেট মুজুত করে দাম বাড়াতে এ কাজ করত। গ্রুপ করে কৌশলে টিকেট ব্লক করে দিত এবং নিবন্ধনহীন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী টিকেট দেয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে যেত। এছাড়া, অগ্রিম টিকেটের নামে শত শত কোটি টাকা সংগ্রহ হতো। টিকেটের দাম বাড়াতে অবৈধভাবে গ্রুপ করা হতো। দেশে টিকেটের অতিরিক্ত দামের কারণে অনেক যাত্রী ভারত বা অন্যান্য দেশ থেকে অর্ধেক দামে কিনত। এতে দেশের টাকা বাইরে চলে যেত। এই অনিয়ম ও দুর্নীতি ঠেকাতে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় নতুন নির্দেশনা জারি করেছে, যা টিকেটের কালোবাজারি ও সিন্ডিকেট ভাঙতে সহায়তা করবে। যাত্রীরাও সহজে সঠিক দামে টিকেট কিনতে পারবেন। মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং সাধুবাদযোগ্য।
বহু বছর ধরে বাংলাদেশ বিমান নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। বিমানের সেবা ও মান প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক যাত্রী দেশের বিমানে বিদেশ যাওয়া-আসা করতে চাইলেও টিকেট পাওয়ার ভোগান্তি, অতিরিক্ত দাম এবং যথাযথ সেবা না পাওয়ার কারণে নিরুৎসাহী থাকত। অন্যদিকে, এন্তার দুর্নীতির কারণে সংস্থাটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য বিমান সংস্থা যাত্রীদের আকর্ষণে সেবার মান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে, সেখানে বিমানের সেবা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। ফলে বাধ্য হয়ে তারা অন্য বিমানে চলাচল করেন। তবে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বিমানে আসা-যাওয়া করাকেই অগ্রাধিকার দেয়। তাদের এই অগ্রাধিকারকে পুঁজি করেই টিকেট সিন্ডিকেট মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং অনলাইনে টিকেট নেই দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি করে। কিছুদিন আগেও যে টিকেটের দাম ৪০ হাজার টাকা ছিল, এখন তা ৮০ হাজার টাকার বেশি। ট্রাভেল এজেন্টরা বলেছেন, টিকেটের দাম ৫ থেকে ৭ শতাংশ বাড়লে স্বাভাবিক ধরে নেয়া যায়। তবে একবারে ৪০-৫০ শতাংশ বা তার বেশি বাড়া অস্বাভাবিক। আবার অনেক সময় বেশি দাম দিয়েও টিকেট পাওয়া যায় না। সিন্ডিকেট টিকেটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এ কাজ করে যাচ্ছে। সিন্ডিকেটের কাছে রীতিমতো অসহায় পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিক ও প্রবাসীরা। তাদেরকে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে যাওয়া-আসার বাধ্যবাধকতা থাকায় সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বেশি দামে টিকেট কিনতে হচ্ছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রুটের টিকেটের ক্ষেত্রেও সিন্ডিকেট কাজ করছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সুবাতাস বইছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সরকারি নিয়মের কারণে নানা প্রতিকূলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই তারা কাজ করছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারণে দেশে আসা-যাওয়ার টিকেট সংকট এবং বেশি দামে কেনা, তাদের জন্য অত্যন্ত হতাশার কারণ হয়ে রয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা জারি করেছে, তা কার্যকর হলে আশা করা যায় সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। যাত্রীরা নির্ধারিত মূল্যে টিকেট পাবে। বিমান ভ্রমণেও তারা আগ্রহী হয়ে উঠবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা জারি করেছে, তা যথাযথভাবে কার্যকর ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ নির্দেশনা নিশ্চিতভাবেই সিন্ডিকেটের স্বার্থে আঘাত হেনেছে। তারা চাইবে, এ নির্দেশনা যাতে কার্যকর না হয়। ফলে নির্দেশনা দিয়েই দায় সারা যাবে না, এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অনেক ভালো আইন রয়েছে, তবে তার যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এখনই সময় অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনের কার্যকর প্রয়োগ। বিমান নিয়ে বছরের পর বছর যে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে, তা সমূলে উৎপাটন করতে হবে। কোনো সভ্য দেশে বিমানের যাত্রীদেরকে টিকেট নিয়ে এমন হয়রানির শিকার হতে হয় না। এর সাথে দেশের ভাবমর্যাদা জড়িয়ে আছে। টিকেট কারসাজি করে সিন্ডিকেট দেশের বদনাম করছে। এটা আর চলতে দেয়া যায় না। মন্ত্রণালয় টিকেট কালোবাজারি ও কারসাজি বন্ধে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা যেমন অভিনন্দনযোগ্য, তেমনি তার যথাযথ বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সাবেক এমপি আফজাল ৭ দিনের রিমান্ডে

ক্ষমা চাইলেন ড্যাফোডিলের সেই শিক্ষিকা

সারাদেশে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় ২০ দিনে ৪৯০ শিশু নিহত

চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনে ৪০ দেশের প্রতিনিধি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪