রাজধানীর চলাচল মসৃণ করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০৫ এএম

ঢাকার ফুটপাত অবৈধ দখলে থাকার কারণে জনদুর্ভোগের ঘটনা অনেক পুরনো বাস্তবতা। বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাসের লাইন, সুয়্যারেজ লাইন, টিএন্ডটি লাইনের নতুন সংযোগ ও মেরামতের কাজে সমন্বয়হীনতার কারণে যখন তখন যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুড়ির কারণে নগরবাসির দুর্ভোগের অভিজ্ঞতাও অনেক পুরনো। এসব নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও কোনো কাজ হয়নি। পুরনো এই অন্তহীন সমস্যা ও অপসংস্কৃতি অর্ন্তবর্তী সরকারের সময়ে কিছুটা হলেও কমবে, নগরবাসীর এমন প্রত্যাশা স্বাভাবিক। দুঃখের বিষয়, সরকারের সাত মাস হয়ে গেলেও পুরনো সেই সমস্যা কমেনি। বরং বেড়েছে। অসহনীয় যানজট, অপরিকল্পিত সড়ক খোঁড়াখুড়ি চলছে। এ সময়ে ঢাকার গুরুত্বপূণ এলাকাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সড়ক খোঁড়াখুড়ি ও ফুটপাতে উলট-পালট হয়ে রয়েছে। রাস্তা ও ড্রেনেজ সিস্টেম সংস্কারের নামে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে শহরের ফুটপাতগুলোর উপর থেকে স্লাব সরিয়ে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এসব ফুটপাত দিয়ে চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই মাঝ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে পথচারিরা। এতে পথচারিদের জীবনের ঝুঁকি এবং রাস্তার যানজট বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ স্থানে উন্মুক্ত ড্রেনের নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। নগরবাসীর সহজে ও স্বস্তিতে চলাচলের আর কোনো উপায় যেন বাকি নেই।

রাজধানীর যানজট নিত্যকার বিষয়। এর কুফল ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বহু হিসাব-নিকাষ করা হয়েছে। তাতে কিছুই হয়নি। যেমন আছে তেমনই রয়ে গেছে। দিন দিন বাড়ছে। ঈদ সামনে রেখে মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পাওয়া এবং যানজট তীব্র আকার ধারন করা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এবারও রমজান শুরু হতে না হতে সেই আলামত দেখা যাচ্ছে। যানজটে নাকাল হয়ে পড়ছে নগরবাসী। তার উপর সমন্বয়হীন ও সময়সীমাবিহীন ড্রেনেজ ও ইউটিলিটি সার্ভিসের সংস্কার যানজটসহ জনদুর্ভোগ তীব্র করে তুলেছে। পথচারিদের হাঁটারও কোনো জায়গা নেই। যানজট কমাতে পুলিশের পক্ষ থেকে সাত দিনে এসব কাজ শেষ করার অনুরোধ করা হলেও বাস্তবতার আলোকে যে তা সম্ভব নয়, বলা বাহুল্য। কারণ, এসব কাজে কোনো কালেই সমন্বয় ছিল না। আশা করা হয়েছিল, এ সরকারের সময় অন্তত তা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হবে। তা হয়নি। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অবস্থার আরো অবনতি ঘটেছে। ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশের ফুটপাতের উপর থেকে স্লাব সরিয়ে ড্রেনের আর্বজনা রাস্তায় তুলে রাখা হয়েছে। অন্যত্র সরিয়ে না নেয়ায় তা পুনরায় ড্রেনে পড়ছে। ফুটপাত ওলট-পালট করে রাখায় পথচারিদের চালাচলের কোনো পথ থাকছে না ।

রাজধানীর রাস্তার সংস্কার, ওয়াসা, ডিপিডিসি, ডেসকো, তিতাস গ্যাসসহ ও ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজে সমন্বয়হীনতা ও জনদুর্ভোগ কমিয়ে আনতে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ কার্যকর রয়েছে। নীতিমালা অনুসারে, দিনের বেলা খনন কাজ না করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই সাথে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে জরিমানার বিধান রয়েছে। এমনকি বর্ষাকালে তথা মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ মাস রাস্তা খোঁড়াখুড়িতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এসব নীতিমালা ও নিষেধাজ্ঞা অনুসারে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত না থাকায় তা কেউ মান্য করে না। বর্ষা মৌসুমে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মূল ক্ষতিপুরণসহ অতিরিক্ত ৫০শতাংশ ফি জমা দেয়া এবং রাবিশ ও মাটি/আবর্জনা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ না করা হলে জামানতের ফি দ্বিগুণ করার বাধ্যবাধকতা ঠিকমত বাস্তবায়িত হলে খোঁড়াখুঁড়ির বেপরোয়া চর্চা ও জনদুর্ভোগ এতটা প্রকট আকার ধারণ করতো না। এখন বর্ষাকাল না হলেও যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখার কারণে শহরের লাখ লাখ মানুষকে অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনেকটা কমে আসার কথা থাকলেও জনদুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ধীরগতি ও শৈথিল্য প্রদর্শন পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজধানীর চলাচল গতিশীল ও সহজ করার উদ্যোগ নিতে হবে। পুরনো সেই অপসংস্কৃতি ও অচলায়তন যদি অন্তর্বর্তী সরকার ভাঙতে না পারে, তাহলে তা ব্যর্থতা হিসেবেই গণ্য হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মিয়ানমারে ভূমিকম্প এবং আমাদের ভয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিৎ কথা
আইএমএফ’র ঋণের প্রশ্নে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুদয়
শিক্ষাব্যবস্থার ব্ল্যাকবক্স খোলার এখনই সময়
আরও
X

আরও পড়ুন

সাবেক এমপি আফজাল ৭ দিনের রিমান্ডে

সাবেক এমপি আফজাল ৭ দিনের রিমান্ডে

ক্ষমা চাইলেন ড্যাফোডিলের সেই শিক্ষিকা

ক্ষমা চাইলেন ড্যাফোডিলের সেই শিক্ষিকা

সারাদেশে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি

সারাদেশে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় ২০ দিনে ৪৯০ শিশু নিহত

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় ২০ দিনে ৪৯০ শিশু নিহত

চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনে ৪০ দেশের প্রতিনিধি

চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনে ৪০ দেশের প্রতিনিধি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪