ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অসাধারণ কূটনীতি

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫০ এএম | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫০ এএম

এ কথা স্বীকার করতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা যাই থাকুক, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশের স্বার্থে যার সাথে যেমন আচরণ করা দরকার তার সাথে তেমন আচরণ করছে। এ নীতি অত্যন্ত কার্যকর এবং ফলপ্রসূ হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের দাদাগিরির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়, পরিস্কার ও প্রতিবাদমুখর। ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে। আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তার যেকোনো মন্তব্য ও বক্তব্য-বিবৃতি দৃঢ়ভাবে ডিনাউন্স করছে। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসই মূল ভূমিকা পালন করছেন। ভারতের দাদাগিরি ও বাংলাদেশ নিয়ে চক্রান্তের বিরুদ্ধে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার আগেই প্যারিস থেকে হুমকি দিয়ে দেশে ফিরে দায়িত্ব নেন। একে ‘বাসর রাতে বেড়াল মারা’ বলা যেতে পারে। শুরুতেই বুঝিয়ে দেয়া আমি কে এবং কি। তিনি স্পষ্ট করেই ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছেন, ভারত যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়, তাহলে তার সেভেন সিস্টার্সও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথার মধ্য দিয়ে যেন ভারতের কলিজার মধ্যে হাত দিয়ে দেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারত যদি তার সেভেন সিস্টার্স ধরে রাখতে চায়, তাহলে তাকে বাংলাদেশের সাথে কোনো ধরনের ধানাইপানাই করা চলবে না। সম্পর্ক হবে সমতা ও পারস্পরিক ন্যায্যতার ভিত্তিতে। একেবারে সমানে সমান। ভারতের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি একেবারে শুরু থেকেই এভাবে চলছে। সীমান্তে ভারত একটা গুতা দিলে বাংলাদেশও পাল্টা গুতা দিচ্ছে। সীমান্তের মানুষও বিএসএফের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। সীমান্তের মানুষও বুঝে গেছে, এখন ভারতের প্রতি আমাদের নীতি কি এবং তার অন্যায় আচরণের পাল্টা জবাব দিতে হবে। সীমান্তে ভারতের গুতাগুতির জবাব দেয়া হাসিনার আমলে কল্পনাই করা যেত না। বরং একটা গুতা দিলে আগ বাড়িয়ে বলত, আরেকটা দেন। এখন আর সেই দিন নেই। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার এখন ভারতের চক্ষুশূল। তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী প্রধান পর্যন্ত অহরহ বলছে, এ সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে না। নির্বাচিত সরকারের সাথে পুরোদমে কাজ করবে। তার এখন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরা। পুরনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথাসহ নির্বাচন ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মতো আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা। অবশ্য এসবের কোনো কিছুই বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিচ্ছে না আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের কথার জবাব পাই পাই করে দিয়ে দিচ্ছে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারত সহ্য করতে পারছে না। শত্রু মনে করছে। এতে বোঝা যায়, ভারতের ক্ষেত্রে আমাদের চরমান যে পররাষ্ট্র নীতি, তা পুরোপুরি সঠিক পথে রয়েছে।

দুই.
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে দেশের পররাষ্ট্রনীতি অনন্য উচ্চতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী তাঁর অসামন্য গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশের জন্য কাজটি সহজ করে দিয়েছে। একজন ব্যক্তি যে অনেক ব্যবধান করে দিতে পারেন, তা তিনি বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছেন। অন্তত তাঁর দিকে তাকিয়ে বিশ্বের পরাশক্তি ও ধনী দেশগুলো বাংলাদেশের সাথে আরও দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। তারা তাঁকে আস্থায় নিচ্ছে এবং সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। যে কাজটি ফ্যাসিস্ট হাসিনা করতে পারেননি। তিনি শুধু ভারতেরই ছিলেন। তার পৃথিবী ছিল ভারত। এর বাইরে তিনি যেতে পারেননি। ফলে ভারতের কাছে তিনি সোনার ডিম দেয়া হাঁস হয়ে ছিলেন। সেই হাঁস এখন নেই, ডিমও দিচ্ছে না। এতে ভারতের নাখোশ হওয়ারই কথা। তার আবদার পূরণ করার কেউ নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস না হলে বাংলাদেশে ভারতের এ করুণ দশা হতো কিনা কিংবা তাকে থ্রেট দিয়ে কথা বলত কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা যেতেই পারে। ভারত, হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের পছন্দ-অপছন্দের মধ্যে অমিল বলতে কিছু নেই। হাসিনা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পছন্দ করো না, ভারতও করে না। কী অদ্ভুত ভারতের নীতি! তারা দেশের সাথে সম্পর্ক নয়, ব্যক্তির সাথে সম্পর্কে বিশ্বাসী। এটা যে বিকলাঙ্গ পররাষ্ট্র নীতি ছাড়া কিছু নয়, তা একজন সাধারণ কা-জ্ঞান সম্পন্ন মানুষও বুঝতে পারে। ভারত এ নীতি নিয়ে এখন আশায় আছে, হাসিনাকে আবার বাংলাদেশে ক্ষমতায় বসাবে। এজন্য তাকে পরম মমতায় আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। শুধু তাকে নয়, হাসিনার মন্ত্রী-এমপিসহ দাগী আসামী ও অপরাধীদেরও আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ ভারত ব্যক্তি নীতির বাইরে রাষ্ট্রনীতি বা বিশ্বনীতিতে যেতে পারছে না। এখানেই দেশটির ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের মানসিক সীমাবদ্ধতার বিষয়টি বোঝা যায়। এতে অবশ্য আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। হাসিনার সময় চিকিৎসা, বাজার-সদাই, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, ভ্রমণ ইত্যাদি ভারত ছাড়া চলবে না বলে যে জুজুর ভয় দেখানো হয়েছিল, এখন আর তা নেই। ভারতের এসব ছাড়াই আমাদের ভাল চলছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম কম এবং বাংলাদেশের কৃষকরা উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের কোনো পণ্যের অভাব বাজারে প্রভাব ফেলেনি। এখন উল্টো ভারতেরই মাথায় হাত। তার পোশাক ব্যবসায়ী, হাসপাতাল ব্যবসায়ীরা হায়হায় করছে। ঈদ মৌসুম হচ্ছে কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য শহরের ব্যবসায়ীদের জন্য রমরমা সময়। কলকাতার ব্যবসায়ীদের জন্য সারা বছরের ব্যবসা। এ সময়টার জন্য তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। এটা এখন বন্ধ। তারা হাহাকার করছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসা, ভ্রমণ, শপিংয়ের জন্য বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে। চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য চমৎকার কূটনৈতিক চাল দিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো সম্প্রতি ১৪ জন রোগীকে চীনে পাঠিয়েছে। সেখানে তাদের উন্নত চিকিৎসা এবং চীনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে বলে চীনের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন। চীনে রোগী পাঠিয়ে ড. ইউনূস প্রকারন্তরে ভারতকে এই বার্তাই দিয়েছেন, তুমি না হলেও আমাদের চলে। আমাদের অনেক পথ খোলা আছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কেউ কারো জন্য অপরিহার্য নয়। যে যেমন আচরণ করবে, তার সাথে তেমন করতে হবে। সম্পর্ক একতরফা নয়, সমতা ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে হবে। ড. ইউনূস ভারতকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তোমার চিকিৎসা ছাড়াও সাশ্রয়ে আরও উন্নত চিকিৎসা চীন বা অন্য দেশে পাওয়া যায়। এটা ভারতের গালে বাংলাদেশের একধরনের চপেটাঘাত। ভারতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হাত এখন আর তুলতুলে নেই, শক্ত হয়ে উঠেছে। যার সাথে যেমন। এ কৃতিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তিনি বাংলাদেশকে হাসিনার ভারতের তাঁবেদারি ও গোলামির হাত থেকে বের করে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন, আমরা কারো করদরাজ্য নই। আমাদের শক্তি ও সাহস অটুট রয়েছে। তিনি হাসিনার বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ভারতের কাছে মানুষের হারিয়ে যাওয়া শক্তি ও মনোবলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ভারত ছাড়া আমাদের চলে, এ বিশ্বাস তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি এ কথাও বলেছেন, ভারতের সাথে পারস্পরিক স্বার্থে সবকিছু চলবে। পুরোটাই বাণিজ্যিক ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। দেশের মানুষ তাই চায়। পরস্পরের স্বার্থে যা প্রয়োজন, তা সমতাভিত্তিক হলে কারোই আপত্তি নেই। তবে ভারত যদি মনে করে থাকে, আগের মতোই ধমক ও ঠমক দেখিয়ে বাংলাদেশকে করতলে রাখবে, সেই দিন গেছে। আর ফিরে আসবে না। অন্তত ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের মানুষের মধ্যে এ বিশ্বাস জন্মে দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করলেও তেমন কিছু যায় আসে না। কারণ, তাদের চোখ খুলে গেছে। তাদের সামনে এখন বিস্তৃত বহুমুখী পথ।

তিন.
সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরাস চারদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। জাতিসংঘের কোনো মহাসচিবের এত দীর্ঘ সফর বাংলাদেশে প্রথম। এই সফর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্যারিশমায় হয়েছে। তিনি গুতেরাসকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের অনুকূলে একটা খেলা খেলে দিয়েছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেমন চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তেমনি ভারতের কিছু সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই দেশের প্রতি তো বটেই মিয়ানমারের দিকেও ড. ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অত্যন্ত কৌশলী চাল চেলেছেন। এর প্রভাব অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে উপমহাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে এতদঞ্চলে দারুণ কূটনীতি অবলম্বন করেছেন। এর মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের অসাধারণ সমন্বয় রয়েছে। তিনি বেশ কয়েকবার একটি কথা বলেছেন। এ কথার মধ্যেই উপমহাদেশে বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর কৌশলগত ও প্রভাবগত কূটনীতি জড়িয়ে আছে। তিনি বলেছেন, নেপাল, ভুটান ল্যান্ডলকড কান্ট্রি, তাদের সমুদ্র বন্দর নেই। ভারতের সেভেন সিস্টার্সও ল্যান্ডলকড, তাদের সমুদ্র বন্দর নেই। কাজেই, এসব দেশ ও অঞ্চল বাংলাদেশের একাধিক সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশও এসব দেশ ও অঞ্চলের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। তাঁর এ কথা ভারতের পক্ষে গেলা কষ্টকর। আবার কিছু বলারও নেই। কারণ, ড. ইউনূস উভয়পক্ষের পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতার কথা বলেছেন। আবার এর মধ্যে ভূরাজনীতির বিষয়টিও লুকিয়ে আছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিপাকে পড়বে, অন্তর্বর্তী সরকারের পতন হয়ে যাবেÑএমন প্রচার, প্রচারণা হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও ভারতের মিডিয়া চালাতে থাকে। দেখা গেল, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তাদের সে আশায় গুড়ে বালি পড়েছে। ব্যর্থ মনোরথে গুটিয়ে যেতে হয়েছে। ট্রাম্প এসে বলেছেন, আমি ডিল করতে চাই। জবাবে ড. ইউনূসও বলেছেন, আমরাও ডিল করতে চাই। ডিল করব। কী অসাধারণ, ডিপ্লোমেসি! বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে এ ধরনের আধুনিক ও যুগোপযোগী পররাষ্ট্র নীতি খুব একটা দেখা যায়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা তো ষোল বছর দেশটাকে ভারতের কাছে বন্ধক রেখে দিয়েছিলেন। ভারতকে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করতে দিয়েছেন। দেশের মানুষ অপমানে, লজ্জায় মিইয়ে গেলেও হাসিনার ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বন্দুকের মুখে কিছু বলতে পারেনি। হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত পড়েছে বিপাকে। সে বাংলাদেশে আর সুবিধা করতে পারছে না। ড. ইউনূস সরকার তাকে পুছছে না। ফলে সে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে গোস্যা করে বলেছে, তার সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে না। রাজনৈতিক সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কেন রাজনৈতিক সরকারের সাথে সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহী? এর কারণ হচ্ছে, সে মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের পর নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে তাকে সহজে কূটনৈতিক মারপ্যাঁচে ফেলে স্বার্থ হাসিল করা যাবে। তাকে হাসিনার মতো চিরকাল ক্ষমতায় রাখার আশ্বাস দেয়া যাবে। বাংলাদেশকে পুনরায় করদরাজ্যে পরিণত করে ক্ষমতায় থাকা ও আসার নিয়ন্ত্রক হতে পারবে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর তার নিরঙ্কুশ প্রভাব রয়েছে এবং প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, এটা সে মনে করে। অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারে তার প্রভাব দূরে থাক, উল্টো ঝামটা খেতে হচ্ছে। ভারত একটা কথা বললে, সরকার সাথে সাথে দুইটা কথা বলে দেয়। ভারত কোনো সুবিধা করতে পারছে না। সে এখন দিশাহারা হয়ে রয়েছে। অপেক্ষায় আছে, কখন রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে।

চার.
সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে ধরে নেয়া যায়, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি তাই হয়, তাহলে ভারত লাফ দিয়ে বিএনপির ঘাড়ে ছওয়ার হতে চাইবে। সুন্দর সুন্দর কথা বলে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের মতো পোষ মানাতে চাইবে। নানামুখী তৎপরতা শুরু করতে পারবে, যা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় করতে পারছে না, সরকার সুযোগও দিচ্ছে না। বিএনপি যদি ভারতের কাক্সিক্ষত সেই রাজনৈতিক দল হয় যে ক্ষমতায় এলে সম্পর্ক গড়ে তুলবে, তাহলে বিএনপির জন্য একদিকে তা হুমকির, অন্যদিকে সচেতন হওয়ার। বিএনপিকে বুঝতে হবে, ভারত চরিত্রগতভাবেই মোনাফেক এবং বেইমান। সে শুধু নিতে জানে, দিতে জানে না। আওয়ামী লীগকে দিয়ে সে যা খুশি তা করিয়ে নিয়েছে এবং দেশকে করদরাজ্যে পরিণত করেছিল। তার পরিণতি কি হয়েছে, তা সকলের জানা। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার অস্তিত্ব বলতে এখন কিছু নেই। বিএনপি যদি আওয়ামী লীগের মতোই ভারত তোয়াজনীতি অবলম্বন করে, তাহলে তার পরিণতিও সুখকর হবে না। ভারত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় চাচ্ছে, কারণ সে জানে, ঐ দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো না কোনো নেতা থেকে শুরু করে মধ্যম ও নি¤œ সারির নেতাদের সে ছলেবলে তার এজেন্ট বানাতে পারবে। দলের শীর্ষ থেকে নি¤œ সারি পর্যন্ত ভারতের চেইন অফ কমান্ড তৈরি করতে পারবে। ফলে তার পক্ষে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ এবং তার স্বার্থ হাসিল করা সহজ হয়ে যাবে। যে কাজটি সে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে করতে পারছে না। কাজেই বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে এবং দেশের মানুষের সমর্থন ধরে রাখতে চায়, তাহলে তাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে অসাধারণ নীতি অবলম্বন করছেন, তা অটুট রাখা উচিৎ। অন্তত ভারতের সাথে তার ডিল হতে হবে স্ট্রেইট ফরোওয়ার্ড। স্বার্থ ও সমতাভিত্তিক। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

darpan.journalist@gmail.com


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মিয়ানমারে ভূমিকম্প এবং আমাদের ভয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিৎ কথা
আইএমএফ’র ঋণের প্রশ্নে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুদয়
শিক্ষাব্যবস্থার ব্ল্যাকবক্স খোলার এখনই সময়
আরও
X

আরও পড়ুন

সাবেক এমপি আফজাল ৭ দিনের রিমান্ডে

সাবেক এমপি আফজাল ৭ দিনের রিমান্ডে

ক্ষমা চাইলেন ড্যাফোডিলের সেই শিক্ষিকা

ক্ষমা চাইলেন ড্যাফোডিলের সেই শিক্ষিকা

সারাদেশে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি

সারাদেশে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় ২০ দিনে ৪৯০ শিশু নিহত

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় ২০ দিনে ৪৯০ শিশু নিহত

চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনে ৪০ দেশের প্রতিনিধি

চট্টগ্রামে কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনে ৪০ দেশের প্রতিনিধি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গেছে শত বাংলাদেশি

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

ইন্দুরকানীতে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ, অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা, কোচিং-ফটোকপি বন্ধসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

এশিয়ার শেয়ারবাজারে বড় ধস, তেলের দামেও পতন

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

গাজা ইস্যুতে সিসি ও ম্যাখোঁর সঙ্গে জর্দানের রাজার বৈঠক আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ ফের শুরু আজ

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

সকালে ব্রিদিং এক্সারসাইজের উপকারিতা

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

মতলব দক্ষিণ থানার এসআই জীবন চৌধুরীর বেতন বন্ধের নির্দেশ

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

সাবেক এমপি কেরামত আলী গ্রেফতার

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে মেশিন বিস্ফোরণে ২জন শ্রমিক দগ্ধ

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটলেন নেতানিয়াহু

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর, নেতার বাড়িতে আগুন দিলো জনতা

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ঢাকায় ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন আজ শুরু

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪

ইয়েমেনে সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ৪