নিরাপদ প্রসবের জন্য নগর মাতৃসদন
২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম

পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক কোন নারী সদস্য মা হতে চলেছেন। নিঃসন্দেহে এটি অত্যন্ত আনন্দের খবর। কিন্তু ঘটনাটি যদি শহরের কোন বস্তিতে অথবা শহরতলীর কোন পিছিয়ে পড়া পরিবারে ঘটে তবে তা একই সাথে উদ্বেগের বিষয়। অন্তত স্বল্প আয়ের পরিবারের অপুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত প্রসূতি মায়ের জন্য উদ্বেগটা আরো অধিক।
উদ্বেগের কারণগুলোর প্রথমটি হলো, সেই প্রসূতির পরিবারে অন্যান্য নারীরা, বিশেষ করে যারা বয়োজেষ্ঠ্য, তারা হয়তো তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ পন্থায় বা প্রথাগত পদ্ধতিতে তার গর্ভকালীন পরিচর্যা করতে চাইবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রসূতির শারীরিক অবস্থা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পরীক্ষা করা হয়না। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো, প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয় না। এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে থাকে, অন্তত পরিসংখ্যান-ভিত্তিক কিছু তথ্য তাই বলে। তবে আশার কথা হল, নানা ধরণের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ফলে নিরাপদ মাতৃত্ব এবং প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের সচেতনতা দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে দেশে ১ লাখ সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু হার ছিল প্রায় ৬০০, যা কমে বর্তমানে ১৬৫ তে নেমেছে। অর্থাৎ দেশে মাতৃমৃত্যু কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসজিডি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার ৭০-এ কমানোর জন্য সরকার নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারপরও বলতে হয়, বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে ক্রমশঃ উন্নতি করছে, তখন একজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যুকেও স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নেওয়া যায়না।
পরিসংখ্যান বলছে, মোট মাতৃমৃত্যুর ৩১ শতাংশ হয়ে থাকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে, ২৪ শতাংশ হয় খিঁচুনির কারণে এবং ৩ শতাংশ হয় বাধাগ্রস্থ বা বিলম্বিত প্রসবে। ৭৩ শতাংশ মাতৃমৃত্যু ঘটে প্রসব পরবর্তী সময়ে (সন্তান জন্মদানের ৪৫ দিনের মধ্যে)। আমরা জানি যে, অনেক প্রসূতি মা রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ, প্রসবকালীন জটিলতাসহ বেশকিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। এমন সমস্যার সমাধান প্রাথমিক পর্যায়ে করা সম্ভব যদি প্রসূতিকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে যথাযথ পরামর্শ ও সেবা দেওয়া যায়। কিন্তু বিলম্বে সেবা গ্রহণের সিদ্ধান্ত, হাসপাতালে পৌঁছানো ও সেবা প্রদানে বিলম্বসহ নানাবিধ কারণে গর্ভবতী মা ঝুঁকিতে পড়েন। বিশেষজ্ঞদের একটি কথা মানতেই হবে যে, গর্ভধারণের শুরু থেকে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হলে তার প্রসব অনেকাংশে নিরাপদ হয়ে যায়।
নিরাপদ মাতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগুলো হলো, স্থানীয় পর্যায়ে (পাড়ায় বা মহল্লায়) দক্ষ চিকিৎসক এবং মিডওয়াইফারির মাধ্যমে প্রসব-পূর্ব মাতৃসেবা, নিরাপদ প্রসবসেবা এবং প্রসব-পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত প্রতিরোধ সেবা এবং নবজাতকের সেবার ব্যবস্থা, বিশেষায়িত হাসপাতালে সুপারিশের বা রেফারেল সুবিধার বিস্তৃতি এবং যোগাযোগ বা রোগী পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতকরণ। উপরোক্ত চাহিদার প্রায় সবকিছুর ব্যবস্থাই আছে রংধনু-চিহ্নিত নগর মাতৃসদন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় আরবান প্রাইমারী হেল্থ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট (ইউপিএইচসিএসডিপি) এর ২য় পর্যায় চলমান আছে। প্রকল্পটির আওতায় ১১টি সিটি কর্রপোরেশন এবং ১৮টি পৌরসভা এলাকায় ৪৫টি নগর মাতৃসদন, ১৬৭টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩৩৪টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শহরবাসী, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, মা ও শিশুদের স্বল্পমূল্যে উন্নত প্রাথমিক চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধী সেবা দেওয়া হচ্ছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সুবিধা পাওয়া যাবে। অতি দরিদ্রদের জন্য আছে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা।
গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান প্রসবের পূর্বে একজন মাকে কমপক্ষে ৪ বার দক্ষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চেকআপ করানো উচিত। অথচ পরিসংখ্যান বলছে দেশে ৬৪ শতাংশ প্রসূতি মা সন্তান প্রসবের পূর্বে মাত্র একবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসায় বিলম্বের কারণে অনেকে অকাল গর্ভপাত, আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবে বাধ্য হন।
গর্ভকালীন মাতৃত্বকে নিরাপদ করার স্বার্থেই এ পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে। আর তাই, প্রকল্পভুক্ত এলাকায় বসবাসকারী সদ্য বা সম্ভাব্য প্রসূতি মায়েদের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা অন্ধ বিশ^াসে লোকায়ত পন্থা অবলম্বন না করে নিকটস্থ রংধনু-চিহ্নিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে জানুন এবং প্রাপ্য সেবা গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, গর্ভবতী মা জটিলতামুক্ত ও সুস্থ সবল থাকলেই সুন্দরভাবে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
লেখক: উপ প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

তালতলীতে ঈদের নামাজে ইমামকে হত্যা চেষ্টায় যুবক আটক

নাটোরে ঈদের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ঘিরে উত্তেজনা, গুলিবর্ষণ

আমরা মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি : মির্জা ফখরুল

ড. ইউনূসকে শেহবাজের ফোন, পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ

ফাঁস হয়ে গেছে সালমানের 'সিকান্দার', আর্থিক ঝুঁকির শঙ্কা

যমুনা সেতু দিয়ে এক সপ্তাহে ২ লাখ ৪৭ লাখ যানবাহন পারাপার, ১৭ কোটি টাকার টোল আদায়

দেশে দেশে ঈদ উদযাপিত

ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বাড়িতে আসতে পারেনি চৌদ্দগ্রামে স্বাচ্ছন্দে ঈদ উদযাপন সাবেক এমপি ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির

টেকেরহাট বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে

মিথ্যাচার করছেন নেহা কক্কর,দাবি আয়োজকদের

সম্প্রীতির নজির, ঈদের দিন নামাজিদের উপর পুষ্পবর্ষণ হিন্দুদের

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দেয়নি: এ্যানি

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বারুইপাড়া ঈদগাহ মাঠ বিভিন্ন স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত

চৌদ্দগ্রামে মদের কারখানা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, আটক ৪

ঈদের পরে কোন পথে রাজনীতি? কী পরিকল্পনা বিএনপি, জামায়াত আর এনসিপির?

তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ঈদের মাংশ নিয়ে বাড়ী ফেরা হলো না রুহুল আমিনের

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত

ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে যা বললেন সারজিস আলম