ভারত থেকে কয়লা আমদানিতে শুভঙ্করের ফাঁকি
২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম

মাতারবাড়ি আল্ট্রা ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুতকেন্দ্র একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র। এ ধরনের বিদ্যুতকেন্দ্রে পরিবেশগত ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে উন্নতমানের কয়লা ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিতে হয়। বিগত সরকারের সময় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে ভারত নির্ভরতার কারণে নানা ধরনের সংকটের পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে দেশ। তবে একটি ভারতীয় কোম্পানির মাধ্যমে মাতারবাড়ি বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য আমদারি করা কয়লায় বড় ধরনের ভেজাল ও দুর্নীতর ঘটনা ফাঁস হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতের পুতুল রিজিম শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ ভারতের চাপিয়ে দেয়া আধিপত্য ও লুটপাটের বন্দোবস্ত প্রত্যাখ্যান করছে। এ কারণেই দীর্ঘদিন ধরে চলা ভারতের ফাঁকিবাজির বাণিজ্যিক ব্যবস্থার ভেতরের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের জ্বালানি সেক্টরের উপর জেঁকে বসা ভারতীয় কোম্পানিগুলো কীভাবে জনগণের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স ও রাজস্বখাতের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তা আদানির সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তির অস্বাভাবিকতা, কয়লা সরবরাহের নামে ভারতীয় কোম্পানির মাটির চালান পাঠানোর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য ভারতীয় কোম্পানির মাধ্যমে আমদানিকৃত ৬৩ হাজার মেট্রিকটন কয়লার একটি চালান প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খালাসের পর দেখা গেছে, কথিত কয়লার নামে বিপুল পরিমাণ মাটি সরবরাহ করা হয়েছে। এসব মাটি মিশ্রিত কয়লা ব্যবহার করতে গিয়ে বিদ্যুতকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশগত ও বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশ। বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থা চললেও ভারতীয় বশংবদ সরকারের কোনো সংস্থা এ নিয়ে কোনো কথা বলেনি। তবে নতুন বাংলাদেশ এসব বিষয় আর বরদাশ্ত করছে না।
মাতারবাড়িতে ৬৩ হাজার টন কয়লা আনলোড করার সময় কয়লার বদলে মাটি সরবরাহের বিষয়টি ধরা পড়ার পর তাৎক্ষণিকভাবেই পুরো চালানটি ফেরত দেয়ার জন্য কার্গো জাহাজটিকে জেটি থেকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের ঘটনা অব্যাহতভাবে চললেও এবারই প্রথম ভেজাল মিশ্রিত কয়লার চালান ভারতে ফেরত দেয়া হলো। সেই সাথে কয়লার বদলে মাটি মিশ্রিত হাজার কোটি টাকার কয়লার চালান লেনদেনের আদ্যোপান্ত তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানা যায়। ভারতীয় কোম্পানির সাথে যোগসাজশে বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একটি চক্র এই দুর্নীতির সাথে জড়িত আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাতাবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক এবং কোলপাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। এ ধরনের দুর্নীতির সাথে যে বা যারাই জড়িত থাক, তদন্তসাপেক্ষে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কয়লার বদলে মাটি সরবরাহের দায়ে ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিগত রিজিমের ১৬ বছরে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলো বছরে অতিরিক্ত হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও ভেজাল ও সরবরাহে ফাঁকিবাজির কারণে প্রতিবছর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েও লোকসান কমানো যাচ্ছিল না। লুটেরা সরকারের পতনের পর নতুন বাস্তবতায় দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত সে ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা।
এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ময়মনসিংহের স্থল সীমান্ত দিয়ে আমদানি করা কয়লা ভারতীয় রফতানিকারকদের সরবরাহ করা পরিমাপ ও পরিমাণ কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই গ্রহণ করছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থল বন্দরে নিজস্ব ডিজিটাল স্কেল না থাকায় ভারতের দেয়া তথ্য মেনে নিয়ে তার মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগে সময় টিভির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রায় ২৫ বছর ধরে এমন একতরফা সীমান্ত বাণিজ্যের তথ্য বেরিয়ে আসলেও এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের যেন কোনো কিছুই করার ছিল না। জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ মাতারবাড়ি আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুতকেন্দ্রে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে সরবরাহের টেন্ডার পাওয়া ভারতীয় কোম্পানি যদি কয়লার বদলে মাটি সরবরাহ করে পুরো বিদ্যুৎ প্রকল্পটিকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারে, তাহলে ভারতের সাথে যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কী ঘটছে সেদিকে নজর দিতে হবে। মাতারবাড়ির ভেজাল কয়লা ফেরত দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশপ্রেম ও দায়িত্বশীলতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। একইভাবে দেশের প্রতিটি সেক্টরেই বিদ্যমান দুর্নীতির চক্র ভেঙ্গে জাতির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির পথকে অবারিত করা সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত না হলেও কিংবা বড় বড় বিনিয়োগের কাজ শুরু না হলেও এবার রমজান মাসে অনেকটাই লোডশেডিংমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং নিত্যপণ্যের মূল্যে স্থিতিশীলতার কারণে জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তির পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ মুক্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কার্যকর কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। জাপানি ঋণ ও কারিগরি সহায়তায় মাতারবাড়িতে নির্মিত বিদ্যুতকেন্দ্রে মাটি মিশ্রিত কয়লা সরবরাহের সাথে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির সব পথ বন্ধ করে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে বিদ্যুতখাতে জনদুর্ভোগ ও সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসান কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ড. ইউনূসকে শেহবাজের ফোন, পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ

ফাঁস হয়ে গেছে সালমানের 'সিকান্দার', আর্থিক ঝুঁকির শঙ্কা

যমুনা সেতু দিয়ে এক সপ্তাহে ২ লাখ ৪৭ লাখ যানবাহন পারাপার, ১৭ কোটি টাকার টোল আদায়

দেশে দেশে ঈদ উদযাপিত

ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বাড়িতে আসতে পারেনি চৌদ্দগ্রামে স্বাচ্ছন্দে ঈদ উদযাপন সাবেক এমপি ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির

টেকেরহাট বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে

মিথ্যাচার করছেন নেহা কক্কর,দাবি আয়োজকদের

সম্প্রীতির নজির, ঈদের দিন নামাজিদের উপর পুষ্পবর্ষণ হিন্দুদের

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দেয়নি: এ্যানি

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বারুইপাড়া ঈদগাহ মাঠ বিভিন্ন স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত

চৌদ্দগ্রামে মদের কারখানা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, আটক ৪

ঈদের পরে কোন পথে রাজনীতি? কী পরিকল্পনা বিএনপি, জামায়াত আর এনসিপির?

তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ঈদের মাংশ নিয়ে বাড়ী ফেরা হলো না রুহুল আমিনের

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত

ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে যা বললেন সারজিস আলম

কমলনগরে প্রশাসনের উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত ঈদগাহে প্রথম' আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের নামাজ আদায়

ঈদের দিনেও তাপপ্রবাহ অব্যাহত

আগামীতে আরও বড় পরিসরে ঈদ উৎসব হবে: আসিফ মাহমুদ