সেনাবাহিনী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক
১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

মার্চ-২০২৫ এর দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহজুড়ে টক অব দ্যা কান্ট্রি ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী যে কোনো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। পর্যবেক্ষণ বাস্তবতায় গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশের প্রায় সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো সেনাবাহিনীকেও নিজ দল আওয়ামী লীগের পক্ষে ভয়াবহরূপে ব্যবহার করেছেন। এক এগারোতেও মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং জনমানুষের নির্বাচনি মতামতকে উপেক্ষা করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। প্রণব মুখার্জি লিখিত ‘জোটের বছর : ১৯৯৬-২০১২’ (২০১৭) গ্রন্থে এ বিষয়টি স্পষ্ট। অর্থাৎ অবৈধভাবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২০০৮ সালে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪-এর নির্বাচনেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এমনকি ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রারম্ভিক পর্যায়ে সেনাবাহিনী পড়েছিল উভয়সংকটে। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে ফ্যাসিস্ট হাসিনাপন্থী ও ছাত্র জনতার পক্ষে বিরোধিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে ছাত্র-জনতার পক্ষের শক্তির। ৫ আগস্ট ২০২৪ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকায় পুরো জাতি ভয়ঙ্কর-ভয়াবহ সংকটময় মুহূর্ত থেকে মুক্তি পেল। আবার প্রমাণিত হলো সেনাবাহিনী বাংলাদেশের পট-প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ। সহজেই অনুমান করা যায়, সেদিন এই ভূমিকা না নিলে মারাত্মক রক্ত সংঘাতের প্রাণ বিধ্বংসি গৃহযুদ্ধে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকিতে নিক্ষিপ্ত হতো।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হতো না যদি সেনাবাহিনীর মেজর জিয়া ‘উই রিভোল্ড’ বলে অস্ত্র হাতে তুলে না নিতেন। এমনকি ৭ নভেম্বরে ১৯৭৫-এ সিপাই-জনতার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সেদিন যথার্থ না হলে আজকের বাংলাদেশ দেশবাসী দেখতে পেতো না। ১৯৯০ এ এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সেদিন যেদিন তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নূরউদ্দীন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের উপরে একটি গুলিও চালাবে না।’ শাসকের অন্যায় অবিচারে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সবসময়ই সাহসী ভূমিকায় আন্দোলন-সংগ্রাম করে বটে, জেল-জুলুম মিথ্যা মামলায় হয়রানি গুম-খুন-আয়নাঘরের ভয়ঙ্কর পরিণতি বরণ করে বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জুলুম-নির্যাতনকারী সরকারের পদত্যাগ পরিবর্তনে সেনাবাহিনীর ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। অর্থাৎ এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, জাতীয় জীবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবজনক ভূমিকা খুবই স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক ঘটনা ভিন্ন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দু’জন নেতার পরস্পর বিরোধী এবং একজনের সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য দেশ-বিদেশে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সে সঙ্গে ড. ইউনূস সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার গোপন সম্পৃক্ততা ঘটনাকে উস্কে দিয়েছে। উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ছাত্রদের সাহসী সারল্যকে পুঁজি করে নোংরা খেলা শুরু করেছেন। যে ছাত্ররা নির্ভীকতার পরিচয় দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে, যাদের কারণে নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি, তাদেরকে গৌরবের সেনাবাহিনী ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ অবস্থার মুখোমুখি করার কোনো অধিকার নেই উপদেষ্টাম-লীর। বরং সততার সঙ্গে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়ে জনগণের কল্যাণে ব্রতী হওয়া জরুরি। অন্যদিকে ছাত্রদের নেতৃত্বকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তও রুখে দেবার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও গণমানুষের।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর কথাগুলো যেভাবে ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসেছে, সেই প্রক্রিয়াটি সমীচীন মনে হয়নি বলে মনে করেন দলটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। (ইনকিলাব, ২৩/৩/২০২৫) তিনি লেখেন ‘হাসনাত না ওয়াকার’ এই ন্যারেটিভ এবং স্লোগানকে আমি প্রত্যাশা করি না। হাসনাতের জায়গা ভিন্ন এবং সেনাপ্রধান জনাব ওয়াকারুজ্জামানের জায়গাও ভিন্ন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি অন্যান্য রাজনৈতিক দল কিংবা জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোও কখনো প্রাসঙ্গিক নয়। পাশাপাশি সেনাপ্রধানের পদত্যাগ নিয়ে যে কথা দুয়েক জায়গায় আসছে সেটিও আমাদের বক্তব্য নয়।’ মূলত সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের ১০ দিন পর হাসনাত আব্দুল্লাহ গত ২১ মার্চ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন ও তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।’ ১১ মার্চ সেনানিবাসে হাসনাত আবদুল্লাহসহ দুজনের কাছে এমন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়, ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো।’ (যুগান্তর, ২২/৩/২০২৫)
সেনাবাহিনী সম্পর্কে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। একথা সত্য, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী প্রভাব বিস্তার করেছে। ক্ষেত্র বিশেষে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ভূমিকা জনগণ কর্তৃক প্রশংসিতও হয়েছে। দৃশ্যত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা উপেক্ষার নয়। পূর্বেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল সেনাবাহিনী।
বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের লুঠপাট, দুর্নীতি আর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জনগণ যখন নিষ্পেষিত ও প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতায় ভুগেছে তখনও ন্যক্কারজনকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সেই অন্যায়-অনিয়ম-অব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য পক্ষপাতমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমদ বলেছিলেন, ‘বিগত ৪৭ বছরে এ রকম শান্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমি দেখিনি।’ (ইত্তেফাক, ২৯/১২/২০১৮) অথচ অবিসংবাদিতভাবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী একটি গৌরবের সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান। যেখানে সর্বোচ্চ চেইন অব কমান্ড ফলো করা হয়। সংস্থার নীতিবাক্য হলোÑ‘সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের’। এছাড়া দেশের ও দেশের বাইরে সংকট মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনবদ্য।
জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাংলাদেশের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। দেশের ক্রান্তিলগ্নে জনগণের পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়ায় আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। এর উদাহরণ আমরা অনেক দেখেছিÑ প্রায় প্রতি বছর বন্যা দুর্গত এলাকায়, নিমতলীসহ বিভিন্ন ভয়াবহ অগ্নিকা-ে, অর্থাৎ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের ভূমিকা সমুজ্জ্বল। এর বাইরে স্বচ্ছতা যাচায়ে নানারকম উন্নয়ন কর্মকা-ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের মেধা ও মননের পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে দেশের অভ্যন্তরে জনমানুষের যা কল্যাণকর, মঙ্গলজনক সেখানে প্রয়োজনমতো পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনবাহিনীর সদস্যরা।
কিন্তু একটি চক্র এই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করায় চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ৫ আগস্টের(২০২৪) পর রাজনৈতিক কাজে সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করতে না পেরে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি করে ধূ¤্রজাল তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা ভেবে দেখছে না, এর পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস ২৬ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণের মর্ম কথায় একথা স্পষ্ট যে, একটা শক্তিশালী পক্ষ দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা চাচ্ছে বিভেদের রাজনীতি। কিন্তু বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জনপ্রিয় দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার ঐক্যের কথা বলছেন। তিনি বলেছেন, ‘কয়েক দিন আগেও আমরা দেখেছি, সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে, ঠিক একইভাবে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ তাঁর মতে, পলাতক স্বৈরাচারদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। বিভেদের রাজনীতির বাইরে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর যে ষড়যন্ত্র চলছে, যেকোনো মূল্যে তাকে প্রতিহত করতে হবে।
বিএনপি ও তার প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সবচেয়ে জনপ্রিয় কর্মকর্তা ছিলেন। তার শাসনামলে সেনাবাহিনী সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। জেনারেল জিয়া সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছিলেন। সেনাবাহিনী অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায় না বলে ইতোমধ্যে সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে প্রকাশ করেছেন। মনে রাখা দরকার, একটি অনির্বাচিত সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রপরিচালনার শক্তি হ্রাস পেতে থাকেÑ ‘সৃষ্টি হতে থাকে বিশৃঙ্খলা, চলতে থাকে নানা চক্রান্ত।’ এসবের সম্ভাব্যতা মনে রেখেও দেশের স্থিতিশীলতা ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অনিবার্যতায় রাজনৈতিক দলগুলোসহ জনগণ ড. ইউনূস সরকারের উপর আস্থা রাখতে বদ্ধপরিকর। মূলত যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ দরকার। বাহিনীগুলোর চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখার দায়িত্ব সরকারের।
প্রকৃতপক্ষে হাসনাত-সারজিসদের মন্তব্য বা স্ট্যাটাস পলিটিক্যাল ম্যাচুরিটি-ইমম্যাচুরিটির পরিচয় বহন করে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সেনাবাহিনী সম্পর্কে ভিডিও বক্তব্যও জনগণকে বিভ্রান্ত করে। কথা-বার্তায় মনে হচ্ছে তারা সেনাবাহিনীর উপর অতি নির্ভরশীল। জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়। বাসি খবর দেবার মতো হাসনাত আবদুল্লাহ দশদিন পরে বিষয়টি জনসম্মুখে এনেছেই বা কেন? তাহলে কি সেনাবাহিনীর সঙ্গে বনিবনার কোনো বিষয় ছিল? লেনদেন বা ‘ডিলে’ মেলে নি? তারা তাদের নিজেদের পার্টিকে কিংবা ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এমনকি সরকারকে না জানিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন কেন, সে প্রশ্ন সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক।
সেনাবাহিনীর সেনসেটিভ ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে ‘এনাফ ম্যাচুরিটির’ পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ ও আদালত সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে। আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সিদ্ধান্তও হবে আইন ইতিহাসের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণে। দেশের মানুষ ভাববে কৃতকর্মের অভিশাপে আওয়ামী লীগ প্রাসঙ্গিক নাকি অপ্রাসঙ্গিক।
৫ আগস্টের পর আট মাস অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা বারবার বলেছেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একটার পর একটা বিতর্কের জন্ম না দিয়ে নির্বাচনমুখী পরিবেশ সৃজন করতে হবে। ড. ইউনূস সরকারের ভাবমূর্তি ভালো থাকতে থাকতেই নির্বাচন দিয়ে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সেইফ এক্সিটের জন্য এটা খুবই জরুরি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকার এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রতি বিএনপির আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। ২৪ মার্চ (২০২৫) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘১৯৭১, ৯০’র আন্দোলনে এবং ২০২৪ সালের আন্দোলনে সেনাবাহিনী দেশের জনগণের পক্ষে থাকার কারণেই আমাদের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছে। তাই এই প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদা দিতে হবে আমাদেরকে সম্মান দেখাতে হবে।’
তবে মর্যাদা ও সম্মান দেখানো আমাদের দায়িত্ব হলেও সেনাপ্রধান তথা সেনাবাহিনীরও সতর্ক থাকা দরকার। রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো ধরনের বিতর্কের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া যাবে না পেশাদার এই বাহিনীকে। আর পেশাদারিত্ব বজায় রাখার জন্য কখন কাদের সঙ্গে বৈঠক করা যেতে পারে আর কার সঙ্গে বৈঠক অযৌক্তিক সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। গুজব-বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু সেনাবাহিনীকে তার নিজস্ব শৃঙ্খলা বজায় রেখে দেশের মানুষের প্রতি ন্যায্য কমিটমেন্ট অব্যাহত রাখতে হবে। এ দায়িত্ব সেনাবাহিনীর সকল সদস্যের। ইতোমধ্যে দেশের মানুষের মধ্যে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে প্রাণ বাঁচানোর লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ৬২৬ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কেন, কেন তাদের আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি? নিশ্চয় এসব তথ্যের যথার্থ ব্যাখ্যা সেনাবাহিনীর কাছে আছে এবং জাতির সম্মুখে তা প্রকাশ করা হবে। বিশ^ ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ধারবাহিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া সর্বজনবিদিত। পক্ষান্তরে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ, জরুরি অবস্থা বা মার্শাল’ল জারি বাংলাদেশের জন্য খুবই অপ্রাসঙ্গিক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যথাযথ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

শেরপুরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির বিক্ষোভ মিছিল

যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি! আতঙ্কে ট্রাম্প প্রশাসন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুরে পূর্ব শক্রতার জেরে বসতঘরে হামলা-ভাঙচুর, আহত ৪

হজযাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে থার্ড ক্যারিয়ার চালু করতে হবে হজ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নেতৃবৃন্দ

খেলোয়ার গন দেশ ও জাতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে -স্থানীয় সরকার সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী

মোদির 'ফলস ফ্লাগ নাটক' সুপার ফ্লপ: ব্যর্থ বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ে

চীনের সঙ্গে লড়বে ভারত! দাপুটে সেনার ভূমিকায় সালমান!

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী গণজাগরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে কাল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

বেনাপোল সীমান্তে পিস্তল-গুলি উদ্ধার

ভারতীয় মদসহ সিলেটে এক ব্যক্তিকে আটক করলো জৈন্তাপুর থানা পুলিশ

ছোট ভাইয়ের খুনি বড় ভাইকে ধরলো পুলিশ !

মতলবে দুটি পৃথক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী মৃত্যু

শেরপুরে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবীতে এনসিপির বিক্ষোভ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ডেভিল হান্ট অপারেশনে ইউপি সদস্যসহ ৭ জন গ্রেপ্তার

কাল বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর ১০ম শাহাদতবার্ষিকী

বীমা খাতে ব্যতিক্রম কাজিম উদ্দিন, ন্যাশনাল লাইফের নানা অর্জন

ফিলিস্তিন সহ মুসলিম বিশে^র শান্তি কামনায় আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ফাতেহা শরিফ সম্পন্ন

ইবিতে ইসরায়েলি বর্বরতার মর্মস্পর্শী চিত্র

দক্ষিণ সুদানে ত্রাণ সহায়তা দিল চীন