ঢাকা   শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | ৩০ কার্তিক ১৪৩২

ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বাপর

Daily Inqilab মুফতী পিয়ার মাহমুদ

১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮ এএম | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮ এএম

(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে গাজা উপত্যকায় প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (পিএলও) ফিলিস্তিনি জনগণের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আরব লীগ। ১৯৯৩ সালে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অসলো চুক্তি স্বাক্ষর ও প্যালেস্টাইন অথরিটি (পিএ) গঠনের মাধ্যমে শেষ হয় ইন্তিফাদা। এই চুক্তির জন্য পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং তৎকালীন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেও ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সশস্ত্র হামলা চলমান থাকে। এই চুক্তি অনুসারে ফিলিস্তিনিরা স্বশাসনের আংশিক অধিকার পাবে এবং ইসরাইল প্রথমে পশ্চিম তীরে, অতঃপর গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবে। এর বদলে ইসরাইলি রাষ্ট্রের বৈধতা স্বীকার করে নেবে পিএলও।

ফিলিস্তিনিদের শান্তির প্রতীক্ষা কবে শেষ হবে : ২০০২ সালের মার্চে বৈরুতে আরব লীগের ১৪তম শীর্ষ সম্মেলনে সৌদি আরব আরব পিস ইনিশিয়েটিভ (এপিআই) উত্থাপন করে। এতে পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, গোলান ভূমি, লেবাননের ভূমিসহ ইসরাইল কর্তৃক দখলকৃত স্থান পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং জাতিসংঘের ১৯৪তম ধারা মতে, ফিলিস্তিন শরণার্থী সমস্যার ন্যায্য নিষ্পত্তি ও পশ্চিম জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করার কথা বলা হয়। দাবিগুলো পূরণ হলে আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরিতে আর কোনো বাধা থাকবে না বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ইসরাইলকে ’৬৭-এর সীমানায় ফিরতে বলায় তৎকালীন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন উদ্যোগটিকে ‘নন স্টার্টার’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৫৭টি রাষ্ট্র এবং বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে আরব আমিরাতের স্বাভাবিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট আরব পিস ইনিশিয়েটিভের আলোকে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের ঘোষণা দেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান। এর পর থেকে আবারও তা মুসলিম বিশ্বের আলোচনায় আসে এবার কি ফিলিস্তিনিদের শান্তির প্রতীক্ষা শেষ হবে?

আশার কথা : আশার কথা হলো, খোদ ইসরাইলের ভেতর থেকেই এর প্রতিবাদ ও পাল্টা ভাষ্য উঠে আসছে। প্রকৃত ইতিহাস ও তার নির্মোহ বিশ্লেষণ করছেন ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ও গবেষকেরাই। এই দলে আছেন বেনি মরিস, শলমো স্যান্ড, ইলান পেপে, অভি শ্লিম, ইয়ায়েল লোটান, ইউরি আভনেরিসহ অনেকেই। জায়নবাদীদের তীব্র সমালোচনা ও অশালীন আক্রমণ তাদের নিবৃত্ত করতে পারেনি, ইসরাইল রাষ্ট্রের দমননীতি তাদের টলাতে পারেনি। বরং তাঁরা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন।

বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ও পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন নিয়ে বৈশ্বিক নিয়মনীতি অবজ্ঞা করে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে উদ্বাস্তু বানিয়ে এবং নিজ ভূমে তাদের অবরুদ্ধ করে ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা পূরণ না করেও (সুনির্দিষ্ট ভূ-সীমা) ইসরাইল প্রচ- প্রতাপের সঙ্গে টিকে আছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে চরম উৎকর্ষ ইসরাইলের বিকশিত হওয়ার প্রক্রিয়া জোরদার করেছে। সামরিক শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রসহ বিশাল অত্যাধুনিক অস্ত্রভান্ডার গড়ে তুলেছে। তবে এত কিছুর পরও জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল শান্তিতে নেই। নিঃশর্তে নিজ ভূমে ফিলিস্তিনিদের ফিরতে না দিলে, দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনিদের জমি-পানি-সম্পদ ফিরিয়ে না দিলে এবং জাতিগত নিশ্চি‎হ্নকরণের জন্য ক্ষমা না চাইলে আর যা-ই হোক, শান্তি আসবে না ইসরাইলে। অবসান হবে না ফিলিস্তিনি নাকবার। (সমাপ্ত)

লেখক: ইমাম ও খতীব, মসজিদুল আমান, গাঙ্গিনার পাড়, মোমেনশাহী।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ঢাকা কলেজের ফুটপাত
হিসাববিজ্ঞান দিবস : দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল
ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধ করতে হবে
খুনি-ফ্যাসিস্টের অগ্নিসন্ত্রাস রুখতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই
ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রয়োজন
আরও

আরও পড়ুন

দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন

দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন

দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা

দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা

ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস

ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস

চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার

চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার

পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি

পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি

কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী

কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী

রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা

রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা

বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু

বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু

ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি

ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক

মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি

মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি

দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার

দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার

দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ

দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ

জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান

জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান

চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু

চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু

তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে

তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা

মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা

মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা

গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল

গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল