হিব্রু বাইবেলের গণহত্যার নির্দেশ এবং জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন : পশ্চিমা প্রশাসনের সমর্থন কোন দিকে?
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম
গাজা যুদ্ধের সাড়ে ৪ মাসে তিরিশ হাজারের বেশি নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছে ইসরাইলী বাহিনী। একটি অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে গাজা যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহুর দম্ভোক্তি ছিল, তিনি বন্দি ইসরাইলীদের মুক্ত করবেন এবং হামাসের নেটওয়ার্কসহ হামাসকে নির্মূল করবেন। ইসরাইলের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা যুদ্ধের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই এর সম্ভাব্য পরিনতি এবং বিপর্যয় সম্পর্কে সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন। অস্বাভাবিক বেপরোয়া বিমান হামলায় নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত করার সাথো সাথে রিজার্ভ ফোর্স তলব করে লাখ লাখ সেনা সদস্যকে শত শত সর্বাধুনিক মারকাভা ট্যাঙ্ক, ড্রোন ও সাঁজোয়া ও স্নাইপার বহর নিয়ে গাজায় স্থল অভিযান চালিয়ে উত্তর গাজার পুরো এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার পরও হামাসের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে মার খেয়ে নাস্তানাবুঁদ হওয়ার পরও গাজা থেকে একজন ইসরাইলি বন্দীকেও উদ্ধার করতে পারেনি। ৭ অক্টোবরে হামাসের হাতে বন্দি হওয়া ইসরাইলি নাগরিকদের মধ্যে শতাধিক বন্দিকে মুক্ত করতে নেতানিয়াহুকে তাঁর গোফ নামিয়ে হামাসের প্রস্তাব মেনে নিতে হয়েছে। বিশ্ব জনমত উপেক্ষা করে ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার মাধ্যমে হামাস নির্মূল করে বন্দীদের ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার যে ইস্পাত কঠিন প্রত্যয় নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার ক্যাবিনেটের নেতারা ব্যক্ত করেছিলেন, হামাস যোদ্ধাদের শর্ত মেনে বন্দি বিনিময়ের চুক্তি ছিল হামাসের শক্তি সামর্থের কাছে বিশ্বের অন্যতম সামরিক পরাশক্তির দাবিদার আইডিএফ’র পরাজয় স্বীকার করে নেয়ার প্রথম স্বীকৃতি। এরপরও একদিনের জন্যও গাজায় গণহত্যা বন্ধ হয়নি। লোহিত সাগর, কৃষ্ণ সাগর দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। সমুদ্রে পশ্চিমা বাণিজ্য ও সামরিক আধিপত্য ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের হাতে নাস্তানাবুদ হচ্ছে। ইঙ্গ-মার্কিন বিমান হামলায় হুথির সামরিক স্থাপনাগুলোকে ধ্বংসের দাবি করা হলেও তাদের প্রত্যাঘাত ও প্রতিরোধ শক্তি কমেছে এমন কোনো নজির দেখা যাচ্ছে না। দুদিন আগেও মার্কিন ট্যাঙ্কার ও সামরিক সরঞ্জামবাহী জাহাজ হুথির মিসাইলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইসরাইলী গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই বিশ্বজনমত গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া ক্রমে আরো নিবিড় ও সংহত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মত একটি খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করে ইসরাইলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। গাজা যুদ্ধ মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও শান্তির পক্ষে-বিপক্ষে বিশ্বের দেশগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে। আইসিজে’র প্রসিকিউশন কিংবা জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবস্থানে কিছু ভিন্নতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বব্যবস্থা ও বিশ্বজনমতের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তারা সুক্ষèভাবে বিভক্ত হয়ে পড়লেও ইসরাইলকে রক্ষায় যতটুকু ঝুঁকি গ্রহণ করা প্রয়োজন তা করতে তারা কুণ্ঠিত হচ্ছে না। নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে স্থায়ী ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টি দেশ গাজায় যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে তা ঠেকিয়ে দিয়েছে। সেখানে যুক্তরাজ্য ভোটদান থেকে বিরত থাকার মধ্য দিয়ে এক ধরণের চাতুরতার আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানের অর্ধশতাধিক রাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও জ্বালানি স্বার্থের প্রশ্নের চেয়ে এক কোটির কম জায়নবাদী ইহুদির অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের তথাকথিত নিরাপত্তার স্বার্থ কেন মার্কিনীদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা তলিয়ে দেখা বাকি দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সম্ভবত মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের অন্তিম পরীক্ষা। অবরুদ্ধ গাজাবাসির উপর নির্বিচার বিমান হামলা করে শিশু ও নারীদের গণহত্যা বিশ্ববিবেকের উপর দংশন হয়ে দেখা গেলেও যুদ্ধে বেঁচে থাকা গাজার ২০ লক্ষাধিক বাস্তুহীন অধিবাসিকে চরম খাদ্যাভাবে দুর্ভীক্ষের মুখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার ইসরাইলি বর্বরতার প্রতি মার্কিনীদের সমর্থন আর লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সেই সাথে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানীর ভূমিকাও একই বৃত্তে ধরা পড়ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানীর নাৎসী নেতা হিটলারের হলোকস্টের শিকার ইহুদিদের জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে ফিলিস্তিনের আরবদের জমি দখল করেছিল ইঙ্গ-ইহুদি সা¤্রাজ্যবাদী চক্র। বাস্তুহীন ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে অগ্রাহ্য করে ৭৬ বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়নের স্টীমরোলার চালিয়েও যখন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিস্ক্রিয় করা যায়নি, তখন মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের নির্মূল বা এথনিক ক্লিনজিংয়ের নীলনকশায় হিটলারের হলোকস্টের অনুরূপ পন্থা গ্রহণ করেছে জায়নবাদীরা। ফিলিস্তিনী ও আরবদের মর্মন্তুদ আর্তনাদ ও বিশ্বের শত শত কোটি মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করে মিশরের রাফা ক্রসিংয় হামলা চালিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় ও প্রত্যাশার শেষ আলোটুকু নিভিয়ে দিতে উদ্ধ্যত ইসরাইলিদের হাতে নতুন নতুন মারনাস্ত্র পৌঁছে দিতে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, পশ্চিমা বিশ্বের জনমত এবং সম্ভাব্য পরিণতির আশঙ্কার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা ইসরাইলের প্রতি সমর্থনের প্রশ্নে তাদের অবস্থান নিয়ে কিছুটা বিভাজনের রেখা ফুটে উঠতে দেখা গেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরব-ইসরাইল বিরোধ প্রশ্নে মার্কিনীদের পুরনো অবস্থান তথা দ্বিরাষ্ট্র কেন্দ্রীক সমাধানের প্রকাশ্য ভন্ডামিপূর্ণ অবস্থান পাল্টে জেরুসালেমের মর্যাদার প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রæতিকে অগ্রাহ্য করে জায়নবাদের পক্ষ নিয়ে নিজেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। গাজা যুদ্ধে মার্কিনীদের ভূমিকার প্রশ্নে জো বাইডেন নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের সব মানদÐ প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইলের গণহত্যায় ইন্ধন যোগানোর পরও যখন শ্যাম ও কূল কোনোটিই রক্ষা করতে পারছে না, তখন উভয় পক্ষে ক্ষমতার রশি টানাটানিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে। গাজা যুদ্ধের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জনমতের চাপের মুখে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট নেতানিয়াহুর টালমাটাল রাজনৈতিক অবস্থানকে ইঙ্গিত করে তার ক্ষমতা হারানোর প্রতি একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিতে দেখা গিয়েছিল। তবে মার্কিন রাজনীতিতে জায়নবাদী লবি এবং মার্কিন জনগণের ক্ষমতার মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে এ পর্যন্ত জায়নবাদী চক্রের পাল্লাই যথেষ্ট ভারী বলে প্রতীয়মান হয়। মার্কিন কংগ্রেস ও সিনেটে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে ইসরাইলী প্রেসিডেন্টের প্রভাব কোনো অংশে কম নয়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় মার্কিন রাজনীতির অভ্যন্তরে প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়ে নেতানিয়াহুকে মার্কিন সিনেটে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
রণাঙ্গনে মার্কিন সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তির আধিপত্য এখন আর অপ্রতিদ্ব›দ্বী নয়। আফগানিস্তানের কথা বাদ দিলেও ইউক্রেন এবং গাজায় পশ্চিমা বশংবদ শক্তির পরাজয়ের ধারাবাহিক পরিণতি কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। গাজায় হামাসের কাছে পরাজয় এড়াতে গণহত্যার পথ বেছে নেয়া ইসরাইলকে বিশ্ব জনমত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সম্মুখীন করেছে। সেখানে ইসরাইলের বিরুদ্ধে রায় অনিবার্য হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক আদালতকে হুমকি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সব কনভেনশন, রীতি-রেওয়াজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিটমেন্ট এবং সব প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতার বিরুদ্ধে মার্কিনীদের যত বিরোধিতা, ভেটো প্রয়োগের যত ইতিহাস ও পরিসংখ্যান রয়েছে তার বেশিরভাগই ঘটেছে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে। এর নেপথ্য কারণ প্রায়শ থলের বিড়ালের মত বেরিয়ে যেতে চায়। অর্থাৎ মার্কিন মুল্লুকের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে জায়নবাদী ইহুদিদের প্রভাব কখনো কখনো তার খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চায়। গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে অদ্যাবধি ইসরাইলের গণহত্যায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন। এরপরও যখন যুদ্ধে সামরিক-রাজনৈতিক সাফল্যের দেখা মিলছে না, পক্ষান্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ জনমত ও আন্তর্জাতিক ভাবমর্যাদা হুমকির মুখে পড়েছে, তখন জো বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলের প্রতি শর্তহীন সমর্থনের নীতিতে কিছু পরিবর্তনের চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। এরই প্রেক্ষিতে, আগামী নির্বাচনে জো বাইডেনকে সরিয়ে দিতে নেতানিয়াহু নিজের প্রভাব কাজে লাগানোর প্রচ্ছন্ন হুমকি সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। একজন মার্কিন গবেষক, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির টেকসই উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ডক্টর জ্যাফরি ডি.স্যাকস-এর লেখা একটি নিবন্ধের শিরোনাম ‘উইল নেতানিয়াহু ব্রিং ডাউন বাইডেন?’ নেতানিয়াহু কি বাইডেনকে ক্ষমতাচ্যুত করবে? আইসিএইচ অনলাইনে প্রকাশিত এই নিবন্ধে প্রফেসর জ্যাফরি সেই প্রেক্ষাপটের বিশদ বিবরণ পেশ করেছেন। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলী বর্বরতা ও গণহত্যায় সর্বাত্মক সহযোগিতার ভাÐার নিয়ে পাশে থাকার পরও যখন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ইসরাইল বা মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে কোনো আশাপ্রদ প্রেক্ষাপট রচনা করতে পারছে না, তখন নিজেদের ভাব মর্যাদা বাঁচাতে বাইডেন প্রশাসন স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে নতুন ফর্মুলা হিসেবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব সামনে আনতে চাইছে। তারই প্রেক্ষিতে, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জোট যুদ্ধকালীন সরকার এবং ইসরাইলের বিরোধীদলগুলো সর্বসম্মতভাবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে যেকোনো আন্তর্জাতিক প্রস্তাবকে নাকচ করে তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওয়ার কেবিনেটের যুদ্ধমন্ত্রী বেনি গানজ বলেছেন, ‘এখন যুদ্ধ, শান্তি পরে হবে। আমরা হামাস নির্মূলে সম্ভাব্য সবকিছুই করেছি। টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদেরকে এক বছর, এক দশক কিংবা এক প্রজন্মের যুদ্ধ করতে হতে পারে।’ হামাস নির্মূলের নামে তারা মূলত ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করতে চায়।
গাজা যুদ্ধের সাড়ে ৪ মাস পেরিয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনের প্রশ্নে মার্কিনীরা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসায় ইসরাইলী নেতারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য প্রলাপ বকতে শুরু করেছে। এটা যদি সত্যিই মার্কিনীদের নীতিগত অবস্থান হয়, তাহলে তা অর্জন করা অসম্ভব নয়। মার্কিন ও পশ্চিমাদের শর্তহীন সর্বাত্মক সমর্থন-সহযোগিতা ভোগ করেও ইসরাইল হামাসকে পরাজিত করা দূরের কথা গাজায় টিকে থাকতে পারছে না, সেখানে মার্কিন সমর্থন বন্ধ হয়ে গেলে কি অবস্থা দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। এটা যদি কোনো প্রতারণাপূর্ণ নাটক না হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিন দিনের মধ্যে গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবে না, এটা কেউ বিশ্বাস করে না। কিন্তু মার্কিন মুল্লুকে জায়নবাদী প্রভাবের প্রশ্নে ‘কুকুর লেজ নাড়ে, নাকি লেজ কুকুরকে নাড়ায়’ এমন জিজ্ঞাসা বরাবরই অমিমাংসিত। ড. জ্যাফরি স্যাকস চরমপন্থী জায়নবাদী ইসরাইলিদের স্বরূপ তুলে ধরতে হিব্রæ বাইবেলে বর্ণিত প্রমিজড ল্যান্ডের ধারণাকে বাস্তবে পরিনত করতে প্রতিবেশী দেশ ও সম্প্রদায়ের ধ্বংস ও গণহত্যার ধর্মীয় নির্দেশনার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। খৃষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে রচিত বাইবেলের ধর্মীয় নির্দেশনা নেতানিয়াহু একবিংশ শতকে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। যেখানে প্রতিবেশিদের উপর গণহত্যা, দেশ ও জাতি ধংসকে কর্তব্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। তবে এ ধরণের চরমপন্থী ইহুদির সংখ্যা খুব বেশি নয়। অধিকৃত অঞ্চলে অবৈধ কয়েক লাখ ইহুদির বড় একটি অংশ এ ধারণায় বিশ্বাসী। হামাস-হেজবুল্লাহর আক্রমণে এরা এখন বসতি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বানোয়াট বুক অব জশুয়ার বর্বর নির্দেশনায় গঠিত কল্পরাজ্য বা প্রমিজড ল্যান্ড বাস্তবায়নে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের সমর্থন নিয়ে ৭৬ বছর ধরে আগ্রাসন, নিপীড়ন ও গণহত্যা চালাচ্ছে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম তিনটি আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরবদের পরাজয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে যে নতুন সমরকৌশল সাজিয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা তা ইতিমধ্যে অব্যর্থ বলে প্রমান করেছে। নির্বিচার গণহত্যা চালিয়েও পশ্চিমারা যখন হামাস-হিজবুল্লা-হুথি নির্মূল কিংবা ইসরাইলকে বিজয়ী করতে পারছে না, তখন বিশ্ব জনমতের সাথে তাল মিলিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগই হতে পারে পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র উপায়। হিব্রæ বাইবেলের গড যে প্রমিজড ল্যান্ডের জন্য গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছে। পক্ষান্তরে চলমান বিশ্বব্যবস্থা ও জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের উপর প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বকে প্রমান করতে হবে, তারা কোনটা বাস্তবায়ন করবে। তারা যাই করতে উদ্যোগী হোক, হামাস-হেজবুল্লাহ-হুথি যোদ্ধারা এবার বিশ্বকে নতুন পথ দেখাচ্ছে। ফিলিস্তিন এবং আল আকসার মুক্তি ছাড়া এ যুদ্ধ থামবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
সিরিজ নিশ্চিতের অভিযানে শান্ত-হৃদয়রা
খুলনায় কাটলো তাপদাহ, নামলো বৃষ্টি
কুষ্টিয়ায় বিয়ের গাড়ি আটকে ভাঙচুর , আটক ৪
কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড মীরসরাই
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
নিজ কক্ষে মিললো আওয়ামী লীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ
বজ্রপাতে তিন জেলায় ৪ জনের মৃত্যু
মধুখালি ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে দুই সহোদর হাফেজ খুন,স্বজনরা উল্টো আতঙ্কে কেটে গেল ১৮ প্রহর
প্রশ্ন : প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ঋণ নিয়ে হজ্জ করা প্রসঙ্গে।
আমেরিকা ও ইউরোপের বহিষ্কৃত ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে ইরান
একটানা ৩৭ দিন তাপপ্রবাহে অতিষ্ট চুয়াডাঙ্গাবাসীর ভাগ্যে অবশেষে মিললো স্বস্তির শিলা বৃষ্টি
বজ্রপাতে মাদারীপুরে পৃথক স্থানে দুই জন নিহত
শম্ভুগঞ্জ ইউসি উচ বিদ্যালয়র সভাপতি মোক্তার হোসেনর বিরুদ্ধ দূর্নীতির অভিযাগ: ছয় সদস্যের পদত্যাগ
সিলেটে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি : বাড়ছে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পরিমান
অপহরণের ১৩ ঘণ্টা পর চুয়েট স্কুলছাত্র উদ্ধার
বরগুনায় গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে কর্মশালা
গৌরনদীতে লোডশেডিং ও তীব্র গরমে কদর বেড়েছে হাতপাখার
নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিতরণ করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ইসরাইলের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় পদযাত্রা