যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বৈত নীতি পরিহার করতে হবে
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম
গাজা যুদ্ধে বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে এবং যুদ্ধে নিজের অংশগ্রহণের গøানি থেকে বাঁচতে অ্যারন বুশনেল নামের মার্কিন বিমান বাহিনীর এক সৈনিক ওয়াশিংটনের ইসরাইল দূতাবাসের সামনে ‘ফ্রি ফিলিস্তিন’ বা ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো ¯েøাগান দিয়ে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর বর্বরতা ও গণহত্যার যুদ্ধ পাঁচ মাস হতে চলেছে। ইতিমধ্যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। ইসরাইলী বাহিনীর নির্বিচার বেপারোয়া মিসাইল হামলায় গাজায় নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞে বিশ লক্ষাধিক মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিনত হয়েছে। এতকিছুর পরও গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাসের সামরিক সক্ষমতা খর্ব করতে পারেনি তারা। শত শত সেনা, ট্যাঙ্ক ও সামরিক যান হারিয়েও হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলীদের একজনকেও উদ্ধার করতে পারেনি আইডিএফ। শুধুমাত্র হামাসের সাথে স্বল্প মেয়াদী যুদ্ধ বিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমেই শতাধিক ইসরাইলী বন্দিকে ঘরে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরাইলসহ সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইচ চ্যানেলে অ্যারন বুশনেল আত্মহত্যার লাইভ প্রচারের শুরুতে বলেছেন, ‘আমি আর কোনো গণহত্যার অপরাধে অংশ নিতে চাইনা।’ গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মার্কিন বিমান বাহিনীর সদস্যর আত্মহত্যার ঘটনা যুদ্ধবিরোধী ক্যাম্পেইনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
দেশে দেশে যুদ্ধাপরাধের সাথে মার্কিন প্রশাসনের সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে যুগে যুগে শান্তিকামী, প্রগতিশীল মার্কিন নাগরিকদের সক্রিয় প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধের প্রতিবাদে ২২ বছর বয়েসী মার্কিন নাগরিক নরম্যান মরিসন আত্মহত্যা করেছিলেন। যুদ্ধের প্রতিবাদে মরিসনের আত্মহত্যা ভিয়েতনাম যুদ্ধে পশ্চিমা জনমতকে আরো বেশি যুদ্ধবিরোধী করে তুলতে ভূমিকা রেখেছিল। একইভাবে, একনায়কতান্ত্রিক দু:শাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে গত দশকের শুরুতে তিউনিসিয়ায় বাওজিজি নামক এক তরুণ নিজের গায়ে ক্যারোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেছিলেন। বাওজিজির আত্মহত্যা পুরো তিউনিসিয়ার প্রতিটি শহরের হাজার হাজার মানুষ স্বৈরশাসক বেনআলির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে তাঁর পতন নিশ্চিত করেছিল। এই প্রতিবাদের ঢেউ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্তের সূচনা করেছিল। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাসের আল কাসাম ব্রিগেডের অপারেশন আল আকসা ফ্লাড ছিল ৭৫ বছর ধরে ইসরাইলী আগ্রাসন ও দীর্ঘ মেয়াদী অবরোধের প্রতিক্রিয়া। গাজায় ইসরাইলী গণহত্যার বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম আফ্রিকা কিংবা পশ্চিমা শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষকে প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। খোদ হোয়াইট হাউসের সামনে হাজার হাজার মার্কিন ইহুদিকেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী প্রতিবাদে শামিল হতে দেখা গেছে। তেল আবিবের রাস্তায়ও হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ বিক্ষোভে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার শ্লোগান উচ্চারিত হতে শোনা গেছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধের প্রতিবাদে নরম্যান মরিসনের আত্মহত্যার ঘটনার সময় বর্তমান সময়ের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। তাতেই সেই ঘটনা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায্য আচরণের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ করেছে। গাজায় মুসলমানদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ইসরাইলি বাহিনী যে বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তা অ্যারন বুশনেল সহ্য করতে পারেনি। এটা যে যুক্তরাষ্ট্রের অমানবিক নীতির বিরুদ্ধে তার দেশেরই নাগরিকের সোচ্চার প্রতিবাদ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি তার সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। তার নাগরিকরাও তার বর্বরনীতির বিরোধিতা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত মধ্যপ্রাচ্য নীতি দীর্ঘদিন ধরে একটি আলোচিত-সমালোচিত ইস্যু। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার আলামত প্রথম থেকেই বিশ্বের সামনে স্পষ্টভাবে ধরা পড়লেও জো বাইডেনের প্রশাসন অর্থনৈতিক এবং ব্যাপক বিধ্বংসি মিসাইল, রণতরী, যুদ্ধ বিমান ও সেনাবাহিনী নিয়ে ইসরাইলের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছে। জাতিসংঘের ম্যান্ডেট, বিশ্বজনমত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই নেতানিয়াহু গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রেখেছেন। জো বাইডেনও প্রকাশ্য একই নীতি অনুসরণ করে চলেছেন। এরপরও যখন ইসরাইলী বাহিনী কোনো সামরিক-রাজনৈতিক ও কৌশলগত অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি লোহিত সাগরে ইসরাইল ও ইঙ্গ-মার্কিন নৌ বাণিজ্য চরম হুমকির মুখে পড়ায় বাইডেনের মুখে কিছুটা ভিন্ন বার্তা শোনা যাচ্ছে। তিনি ইসরাইলী চরমপন্থীদের হুমকি উপেক্ষা করে যুদ্ধ বিরতির নতুন প্রস্তাবে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার আভাস দিয়েছেন। সত্যিকার অর্থে এটিই হচ্ছে, বিশ্বের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা। বলা বাহুল্য, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই একটি ক্ষয়ীষ্ণু রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। তার নীতি অনেক দেশ উপেক্ষা করে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বে তার এই ক্ষয়ীষ্ণুতা উপলব্ধি করতে হবে। বিশ্বজনমত বিরোধী তার এই নীতি পরিবর্তন করা সময়ের দাবি। তাকে অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্য নীতির পরিবর্তন করতে হবে। আরব-ইসরাইল দ্বন্দ¦, জেরুসালেম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করার সাথে সাথে দ্বিরাষ্ট্র কেন্দ্রিক সমাধানের ক্ষেত্রে তার দ্বিচারিতা পরিহার করে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। গাজায় যুদ্ধ বিরতি ও ফিলিস্তিনের মুক্তির দাবিকে সামনে রেখে অ্যারন বুশনেলের আত্মহত্যার ঘটনা মার্কিন সামরিক বাহিনী ও জনগণের পক্ষ থেকে জোবাইডেনের প্রশাসনের কাছে যে বার্তা দেয়া হয়েছে, তা অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
সিরিজ নিশ্চিতের অভিযানে শান্ত-হৃদয়রা
খুলনায় কাটলো তাপদাহ, নামলো বৃষ্টি
কুষ্টিয়ায় বিয়ের গাড়ি আটকে ভাঙচুর , আটক ৪
কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড মীরসরাই
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
নিজ কক্ষে মিললো আওয়ামী লীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ
বজ্রপাতে তিন জেলায় ৪ জনের মৃত্যু
মধুখালি ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে দুই সহোদর হাফেজ খুন,স্বজনরা উল্টো আতঙ্কে কেটে গেল ১৮ প্রহর
প্রশ্ন : প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ঋণ নিয়ে হজ্জ করা প্রসঙ্গে।
আমেরিকা ও ইউরোপের বহিষ্কৃত ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে ইরান
একটানা ৩৭ দিন তাপপ্রবাহে অতিষ্ট চুয়াডাঙ্গাবাসীর ভাগ্যে অবশেষে মিললো স্বস্তির শিলা বৃষ্টি
বজ্রপাতে মাদারীপুরে পৃথক স্থানে দুই জন নিহত
শম্ভুগঞ্জ ইউসি উচ বিদ্যালয়র সভাপতি মোক্তার হোসেনর বিরুদ্ধ দূর্নীতির অভিযাগ: ছয় সদস্যের পদত্যাগ
সিলেটে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি : বাড়ছে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পরিমান
অপহরণের ১৩ ঘণ্টা পর চুয়েট স্কুলছাত্র উদ্ধার
বরগুনায় গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে কর্মশালা
গৌরনদীতে লোডশেডিং ও তীব্র গরমে কদর বেড়েছে হাতপাখার
নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিতরণ করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ইসরাইলের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় পদযাত্রা