মেঘনা আলমের হানি ট্র্যাপ আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের কৌশল! পেছনে কারা?

Daily Inqilab তরিকুল সরদার

১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম

বাংলাদেশ এবং সৌদির সম্পর্ক সুদৃঢ় বহু বছর ধরেই। বাংলাদেশের রেমিটেন্সের বিশাল একটি অংশ জুড়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে সৌদি প্রবাসীরা। বাংলাদেশের যেকোন প্রয়োজনে যে কয়েকটি দেশ সবার প্রথমে এগিয়ে আসে সেই তালিকার শুরুর দিকে রয়েছে সৌদি সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে সৌদির সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত এবং মেঘনা আলমের ঘটনা। দেশ থেকে প্রস্থানের আগে নানা সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন মেঘনা আলম এবং তার গ্যাং সম্পর্কে। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল।

 

 

অখ্যাত এই মডেলের কাজই ছিল বিভিন্ন কূটনীতিদের সাথে বিভিন্ন প্রোগ্রামে যোগদান করা এবং তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে তাকে নিয়োগকারী প্রভুদের কাছে সেই বার্তা পৌছে দেওয়া। মূলত দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হানি ট্রাপে ফেলে নানা রকম তথ্য হাতিয়ে নিতেই এই মেঘনা আলম চক্র। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তাকে ভারতের মদদপুষ্ট একাধিক স্থানীয় মিডিয়া এই সমস্ত ন্যাক্কারজনক কাজ করতে রীতিমতো ট্রেনই-আপ করতো এবং এভাবেই জিম্মি করে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাগিয়ে নিতো এই সকল মিডিয়া। বিনিময়ে তিনি পেতেন মোটা অঙ্কের টাকা এবং দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ।

 


এমনকি মেঘনা আলম আটক কান্ডে ভারত এবং হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী সংবাদমাধ্যমগুলোর ভিত নড়বড়ে হওয়ার আশঙ্কায় তার গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে এই সমস্ত হলুদ সাংবাদিক এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদতপুষ্ঠ মিডিয়া গুজব ছড়িয়েছে যে তাকে গুম করা হয়েছে বা অপহরণ করা হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে বিষয়টি খোলাসা হয়ে গেছে যে এটি নিছকই প্রোপাগাণ্ডার একটি অংশ এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও ভারতের মদদ পুষ্ট মিডিয়ার কালেক্টিভ কোলাবোরেটেড প্রোপাগান্ডা।

কেবল এতটুকুই নয় দেশের নাজেহাল অবস্থায় যে সমস্ত মানবাধিকারের বুলি আওরানো সংস্থাগুলো নিশ্চুপ ছিল তারাও সামিল হয়েছে মেঘনার ডুবন্ত নায়ে। দেশের হাজারও ছাত্র-জনতা যখন বুলেট বিদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর ক্ষণ গুনছিল অথচ একটি বিবৃতি আসেনি এসকল সংস্থা থেকে। এখন তাঁরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে মেঘনা আলমকে বাঁচাতে। তাই স্বভাবতই জনমনে প্রশ্ন জাগছে তারা কি কেবলই মেঘনাকে বাঁচাতে চাইছে নাকি নিজেদের অন্ধকার জগৎ প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে মরন কামড় দিতে চাইছে?


এদিকে হানি ট্রাপের এই ঘটনায় মেঘনা ছাড়াও দেওয়ান সামির নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা যায়, তিনি মেঘনা আলমের সহযোগী ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক।


ডিএমপির ভাষ্যে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের অবনতির অপচেষ্টা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মেঘনাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

 


সৌদি ও বাংলাদেশ সরকারের কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত ঈসা বাংলাদেশে তাঁর দায়িত্বের মেয়াদ প্রায় শেষ করে চলতি এপ্রিলে ঢাকা ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই একপর্যায়ে সম্প্রতি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান, একজন নারী ‘আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য’ তাঁর সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করছেন। তাঁকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছেন। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনা আলমের যোগাযোগ থাকার বিষয়টি জানতে পারে। পুলিশ মেঘনা আলমের পরিবারের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করে। তবে এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।


একপর্যায়ে মেঘনা এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, কয়েকজন লোককে রাষ্ট্রদূত ঈসা পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়েছেন। তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, সরকার রাষ্ট্রদূতের পক্ষে থাকবে। তিনি যেন রাষ্ট্রদূতকে জড়িয়ে ফেসবুকে কিছু পোস্ট না করেন।


এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বুধবার রাতেই রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে মেঘনা আলমকে আটক করা হয়। আটক হওয়ার আগে মেঘনা ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ তার বাসার দরজা ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। প্রায় ১২ মিনিট ধরে চলা সেই লাইভে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং একাধিকবার সৌদি রাষ্ট্রদূতের কথা উল্লেখ করেন। তবে তাঁকে আটকের পরপরই ফেসবুক লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। ভিডিওটি পরে তাঁর আইডিতে পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজন ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করেন।


ওই অভিযানে অংশ নেওয়া ভাটারা থানার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মেঘনা আলমকে আটকের জন্য বসুন্ধরা এলাকায় যাই। দরজা খুলতে তিনি অনীহা দেখান। পরে তাঁকে আটক করে মিন্টো রোডে নিয়ে যাওয়া হয়।’

 

এদিকে সরকারি কয়েকটি সূত্রের দাবি, পুলিশ ও সরকারের একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা দফায় দফায় মেঘনা আলমের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা বোঝার চেষ্টা করেন ঢাকায় বিদেশি কূটনৈতিক মহলে কার কার সঙ্গে তাঁর (মেঘনা) যোগাযোগ রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর কোনো ভিডিও রয়েছে কি না।


এর বাইরে সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিকের উপস্থিতি, বড় শ্রমবাজারসহ বিভিন্ন কারণে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গুরুত্বের দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রদূত ঈসার বিষয়টি থেকে তাঁকে (মেঘনা) সরে আসতে অনুরোধ করা হয়। তবে মেঘনা কোনো প্রকার সহযোগিতা করতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ তাঁকে আদালতে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নেয়।


পুলিশ বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মেঘনা আলমকে সোপর্দ করে। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।


বিভাগ : বিনোদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মঞ্চে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট
মুক্তির অপেক্ষায় মিজানুর রহমান লাবুর সিনেমা আতরবিবিলেন
সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা আমাকে শান্তি দিয়েছে :বাঁধন
সালমান খানকে হত্যার হুমকিদাতা গ্রেফতার
আয়েশা টাকিয়া কি মুসলমান?
আরও
X

আরও পড়ুন

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

সেই বার্নাব্যুতে রিয়ালকে হারিয়েই সেমিত আর্সেনাল

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী

স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সুপার ওভার রোমাঞ্চ জিতল দিল্লী

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

সড়ক বিহীন সেতু,কাজে আসছেনা এলাকাবাসীর

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

দুর্নীতির অভিযোগে নওগাঁ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

কলাপাড়ায় একটি ছাগলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘর্ষে, আহত-৪

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি  নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে  -মিজান চৌধুরী

ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে কিন্তু বিএনপি  নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে  -মিজান চৌধুরী

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

উইন্ডিজকে হারালেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

গাজায় মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ ঘোষণা ইসরায়েলের, সংকট তীব্র

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রজ্ঞাপন জারি

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

সুন্নত নামাজে ভুল করে নামাজ শেষ করে ফেলা প্রসঙ্গে?

কূট-কৌশলে ‌ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র

কূট-কৌশলে ‌ভিআইপিদের টার্গেট করতেন মেঘনা আলম চক্র

সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক

সুন্দরবন রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক

ইউনূস-মোদি বৈঠক : একটি পর্যালোচনা

ইউনূস-মোদি বৈঠক : একটি পর্যালোচনা

উইন্ডিজের বিপক্ষে সেরাটা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: নিগার

উইন্ডিজের বিপক্ষে সেরাটা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ: নিগার

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

জেনারেল এসির নামে প্রতারণা

জেনারেল এসির নামে প্রতারণা

ইমরান খান-বুশরা বিবির বিয়ের অজানা অধ্যায় প্রকাশ

ইমরান খান-বুশরা বিবির বিয়ের অজানা অধ্যায় প্রকাশ

নোয়াখালীতে ব্রা‌ন্ডের নকল বস্তায় চাউল প‌্যা‌কেট ক‌রে বি‌ক্রি ;ভোক্তা অ‌ধিকা‌রের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা

নোয়াখালীতে ব্রা‌ন্ডের নকল বস্তায় চাউল প‌্যা‌কেট ক‌রে বি‌ক্রি ;ভোক্তা অ‌ধিকা‌রের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা

মঞ্চে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট

মঞ্চে অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট