সারাক্ষণ ক্লান্তি অবহেলার নয়
২২ জুন ২০২৩, ০৯:০৯ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম
আমাদের অনেকেই সব সময় ক্লান্তি বোধ করেন। সর্বদা অবসাদ। কাজ করতে বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করে না। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, কেন এমন হচ্ছে? আসুন এ বিষয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র কী বলে দেখি। আপনি রাতে ঘুমান না- মানুষ বিশ্রাম ও ঘুম ছাড়া বাঁচতে পারে না। আর রাতে ভালো ঘুম না হলে সকালে ক্লান্তি বোধ হয়। ঘুম ঘুম ভাব হয়। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। রোগ ধীরে ধীরে জটিল হয়। হাই উঠতে থাকে। চোখ লাল হয়। দেহ শক্তিহীন হয়ে পড়ে। বিষণœতা জেঁকে বসে। দুপুরে ঘুমানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ক্লান্ত লোকেরা ভাবে- ঘুম হলো না, তাতে ক্ষতি কী? ভালোমতো খেয়ে দেয়ে দেহে শক্তি ফিরিয়ে আনবে। পান করে এবং ভিটামিন গ্রহণ করে সব শক্তি ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। তাদের প্রয়োজন ঘুম, ক্যালোরি নয়। একটা নিদ্রাহীন রাতের ক্ষতি পরের রাতে আগেভাগে বিছানায় গিয়ে পূরণ করবেন এমন মনে করাও বেঠিক। আপনার নিদ্রাহীনতা একটা রোগ। এটা দূর করতে বহু সময় প্রয়োজন হবে। আপনার ব্যক্তিগত ঘুম একান্ত আপনারই। আপনি ভাবুন আপনার কী কী প্রয়োজন। প্রতিদিন একই সময়ে শস্যায় যান। যথাসম্ভব ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শুয়ে পড়–ন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখুন। আপনার দেহের হরমোন এমনভাবে বসে আছে যে, সঠিক সময়ে ঘুম এনে সঠিক সময়ে বিছানা থেকে উঠাবে। সুনিদ্রার জন্য, ঘুমানোর আগে সামান্য গরম পানিতে গোসল করুন। বালিশে ও বিছানায় আপনার পছন্দের কোনো পারফিউম ছড়িয়ে দিন। আপনার সঙ্গিকে দাঁতব্রাশ করে দেহে পারফিউম ছড়িয়ে শুতে বলুন। ঘুম আসবে। অধিক ঘুম নিদ্রাহীনতার অন্যতম কারণ হতে পারে- রাতে আট থেকে দশ ঘণ্টা ঘুমানোর পরও যদি আপনি রাত পোহালে হাই তুলতে থাকেন, তাহলে ঘুমের সময় কমিয়ে সাত-আট ঘণ্টা করুন। সাত-আট ঘণ্টা পর ঘুম ভেঙে গেলে যদি আপনি ইচ্ছে করে আরেকটু বেশি ঘুমানোর চেষ্টা করেন, তাহলে অবসাদ বোধ করবেন। তা ছাড়া অনর্থক শয্যায় শুয়ে গড়াগড়ি করলে বা এপাশ-ওপাশ করলে আপনার রক্তের চাপ হ্রাস পাবে। আপনি অবসাদ ও দুর্বল বোধ করবেন। আপনার মাংসপেশি শিথিল হয়ে পড়বে। আপনি দেরিতে ঘুম থেকে উঠে এক গেলাস পানি পান করলে বুঝবেন এর সত্যতা। কাজেই ঘড়ির অ্যালার্ম বাজার সাথে সাথে উঠে পড়–ন, ঝিমাবেন না। উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে দাঁড়ান। ভোরের নির্মল বাতাস ঘরে আসতে দিন। দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ করুন। আপনার অবসাদ চলে যাবে। বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। ভালো লাগবে।
আপনার শয্যাসঙ্গিও কারণ হতে পারে- কোনো যৌনতার কথা বলা হচ্ছে না। ধরুন একজন গানের পাখি এবং অপরজন রাতের ভুতুম পেঁচা। আপনি ভোর হলে গান গেয়ে ওঠেন সারা রাত নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে। অপরপক্ষে অন্যজন ভূতুম পেঁচার মতো সারা রাত জেগে কাটায়। একজন কম্বলের জন্য ঝগড়া করছেন এবং অপরজনের নাক ডাকছে। নাক ডাকের জন্য অপরজনের সারা রাত ঘুম হয় না। সকালে ঘুম ঘুম ও অবসাদ বোধ হয়। যারা চিত হয়ে শোয় সাধারণত তাদের নাক ডাকে। আর নাক ডাকলে শয্যার পাশের লোকের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবেই। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে সকালে অবসাদ। মাথা ঝিম ঝিম। নাকডাকা লোকের পাশে ঘুমানো যাবে না।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে কোনো মাদকদ্রব্য গ্রহণ নিষিদ্ধ। এগুলো করার পরও যদি ঘুম না হয়, তাহলে কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। আপনি সত্যিই অসুস্থ- আপনার স্বাস্থ্য খারাপ। ঘুম হচ্ছে না। শরীর দুর্বল। মাথা হালকা বোধ। অথচ কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তখন বুঝবেন আপনি প্রকৃতই অসুস্থ। এ অবস্থায় কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চোখ পরীক্ষা করান, রক্ত স্বল্পতা আছে কি না পরীক্ষা করান, রক্তচাপ নি¤œ নাকি উচ্চ নিশ্চিত হোন। থাইরয়েড টেস্ট করান। কারণ ধরা পড়লে চিকিৎসাও হবে। আপনি যে ওষুধ খান সেটাও আপনার স্বাস্থ্য অবনতির কারণ হতে পারে- আপনি হয়তো জানেন, কোনো কোনো অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ঘুম ঘুম ভাব হওয়া। কিন্তু অন্যান্য ওষুধেরও এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। কোনো কোনো ব্যথানাশক ওষুধেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন চা-পানের অভ্যাস আছে যাদের তারা হঠাৎ চা-পান ত্যাগ করলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দেহে অলসতা আসে। কিছু কিছু উচ্চ রক্ত, ডায়াবেটিস এবং উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও হতাশাবিরোধী ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দেহে অবসাদ আসে। কোনো কোনো কফ সিরাপেও অবসাদ আসে। ঘুম ঘুম ভাব হয়। এ অবস্থায় আপনার চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করুন, আপনি যেসব ওষুধ খান সেগুলো বন্ধ করা যায় কি না বা ডোজ কমানো সম্ভব কি না কিংবা এসব ওষুধের বিকল্প কিছু আছে কি না।
আপনি আবছা আলোয় কাজ করেন- আপনি হয়তো এমন কোনো জায়গায় বসে কাজ করেন, যেখানে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। আবছা আলো সেখানে। এই সামান্য সূর্যালোকও চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে আসতে পারে। বিশেষ করে দুপুর ও বিকেলে যদি আপনার শরীর সূর্যালোক না পায়, তবে শরীরে অবসাদ আসতে পারে। এমন হলে আপনার কক্ষকে আলোকিত করুন। একটা উজ্জ্বল ডেস্ক ল্যাম্প কিনে নিন। টেবিলে আলো জ¦ালুন। টেবিলের এক কোণে একটা ছোট পট প্লান্ট রাখুন। দেয়ালে একটা সুন্দর ছবি ঝুলান। দেখবেন এগুলো আপনাকে শক্তি জোগাবে। কোনো পার্কের বেঞ্চে বসে দুপুরের খাওয়া সেরে নিন। তারপর ২০ মিনিট এদিক-সেদিক হাঁটাহাঁটি করুন দৈনিক। তিন বা চারটার দিকে শক্তিদায়ক কোনো হালকা নাশতা খান। একটা আপেল খান। আপনার শরীরে শক্তি পাবেন। শরীরকে উত্তপ্ত করুন- সুপারম্যান বা ওম্যানের মতো আচরণ করে শরীরে অবসাদ ডেকে আনবেন না। কোনো সময় তার দেহ তন্দ্রীয় এমন উদ্বেগাকুল থাকে যে, সে অবসাদের লক্ষণ দেখা যায় না। পূর্ণ যৌবনে সে দরজায় লাফঝাঁপ দেয় মাঝরাতে জেগে বসে থাকে; বন্ধুদের ঠিকানা ভুলে যায়। তাকে দেখে মনে হয় বয়সের তুলনায় বৃদ্ধ। এরা অবসাদগ্রস্ত। এর কারণ হরেক রকম। এরা ক্ষমাতারিক্ত কাজ করে, এরা উচ্চাভিলাষী ও উৎকণ্ঠাগ্রস্ত। এদের ওই আবেগ তাদের মধ্যে অবসাদ আনে। এরা দিনান্তে ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। এদের ভেতরকার হতাশা, উদ্বেগ, অসন্তোষ, প্রধান কারণ ওই অবসাদগ্রস্ত হওয়ার জন্য। এদের মনে রাখতে হবে, জীবন আমার। একে উপভোগ্য করার দায়িত্বও আমার। তাই এই লক্ষ্যে তাকে সক্ষম ও শক্তিধর হতে হবে। দুপুরে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন অথবা অফিস ছুটির পর অল্প সময় শুয়ে থাকুন। নফল নামাজ, ইয়োগা বা ধ্যান করার অভ্যাস করুন। দীর্ঘশ্বাস গ্রহণের ব্যায়াম করলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রশমিত হবে। স্ট্রেস হরমোন হ্রাস পাবে। আপনার অবসাদ দূর করতে বিভিন্ন কাজ করতে হবে। যেমন- সামাজিক কাজ, কারিগরি কাজ, যৌনক্রিয়া, মৌখিক কাজ বক্তৃতা, গান, আবৃত্তি ইত্যাদি। এগুলো আপনার বিভিন্ন মেজাজ পরিবর্তন করবে। দৈনিক খেলাধুলা করুন বা উল্লিখিত কাজের যেকোনো একটি কাজে অংশ নিন। আপনার হাতে যে সময় থাকবে তার সদ্ব্যবহার করবেন। বৃথা যেতে দেবেন না। এমন কোনো কাজ করবেন না যা আপনাকে স্ট্রেস, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ফেলে।
মস্তিষ্ক কাজ না করা- মস্তিষ্ক দুর্বল বা কাজ না করলে পেশাগত কাজ বিঘিœত হয়। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ হয় না। হয়তো কোনো চিঠি খামে পুরে মুখ বন্ধ করার পর মনে পড়ল চিঠিতে স্বাক্ষর করেননি। ব্যাংকে চেক দিয়ে মনে পড়ল চেকে সই করেননি। আপনি বেখেয়াল হয়ে পড়েছেন। যতই মানসিকভাবে বেখেয়াল হচ্ছেন, ততই সজাগ ও সচেতন হওয়ার জন্য সচেষ্ট আপনার কাজের মান নিকৃষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় আপনি শারীরিকভাবে কিছু কাজ করুন। আসন ছেড়ে পাঁচ মিনিট এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করুন। তাহলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল করবে। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ জগিং করুন। টেনিস খেলুন। ধুমপান বা অ্যালকোহলে অভ্যস্ত থাকলে তা পরিত্যাগ করুন।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে ভারত
নারীকে যৌন নিপীড়ন: খোদ মহারাষ্ট্রে ইসকন সন্ন্যাসী জুতাপেটা
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস
অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু
বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার
নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত
কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০
রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার
উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা
সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা
ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে
দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন
কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম
জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা
ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক
সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা
শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ