ভুলে যাওয়া
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
-‘এই চাবিটা কোথায় রেখেছি’
-‘আচ্ছা আমি এঘরে কেন যেন এসেছি?’
-‘যার বাড়ি যাচ্ছি তার নামটা কি যেন?’
-‘জান, আজকাল আমি উপন্যাস পড়াও ছেড়ে দিয়েছি। এ পাতায় এসে আগের পাতায় কি পড়লাম ভুলে যাই।’
উপরের উক্তিগুলো আমরা অনেক সময়ই শুনি।
আমরা ভুলে যাই। আমাদের স্মৃতির ক্ষমতা অনেক অত্যাধুনিক কম্পিউটারের চেয়েও বেশি তবু আমরা ভুলে যাই। যে সব জিনিস মনে রাখার আর দরকার নেই আমরা সে সব ভুলে যাই। আপনি কি বলতে পারবেন গত বছর বা গত মাসে ঠিক এ সময় আপনি কি করেছেন? অথবা গত সপ্তায়? যদি দিনটি বিশেষ কিছু না হয় তা হলে সম্ভবতঃ মনে করতে পারবেন না। আপনার ছেলেবেলার কথা যদি মনে করেন অনেক কিছুই মনে পড়বে। কিন্তু সব কিছু কি? আপনার স্কুলের প্রথম দিনটি বা ৭ম জন্ম বার্ষিকীটি হয়তো মনে আছে, স্কুলের প্রতিটি দিন? প্রতিটি জন্মবার্ষিকী? মনে নেই। আমরা কিন্তু এতে কিছু মনে করি না। সাধারণত আমাদের দৈনন্দিন কাজ করার মত বিষয়গুলো ঠিক-ঠাক মত মনে পড়লে আমরা ভুলে যাওয়ার জন্য কষ্ট পাই না। সব প্রয়োজনীয় জিনিসও কি আমরা মনে রাখি? আজকে কত তারিখ বা কি বার? জিজ্ঞেস করলে আমরা ঘড়ির দিকে তাকাই। যদিও এটা মনে রাখা আমাদের জন্য জরুরি। আমরা প্রত্যেকই প্রতিদিন চাবিটা ফাইলটা বা প্রয়োজনীয় একটা জিনিস খুঁজতে কিছু সময় অপচয় করি। এতে আমরা কিছু মনে করি না।
অধিকাংশ সময়ই আমরা আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতাসহই ভাল থাকছি, যেমন আমরা এক মাইল দূরের একটা জিনিস স্পষ্ট দেখতে পাই না, পতঙ্গের পাখার শব্দ শুনতে পাই না, একটা মটরগাড়ি তুলে ধরতে পারি না, অতীতের অনেক কিছুই ভুলে যাই। কিন্তু কিছু কিছু সময় আসে যখন আমরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভুলে যাই। এই বেশি বেশি ভুলে যাওয়া আমাদেরকে চিন্তিত বেশি করে। বিষণ্নতা করে। নাকি আমরা বেশি চিন্তিত বা বিষণ্নতা থাকলেই বেশি বেশি ভুলে যাই?
ভুলে যাওয়ার সাধারণ কারণগুলোর দিকে তাকানো যাক :
বিষণ্নতা :
আমরা যখন বিষণ্ন থাকি তখন আমরা সব কিছুরই মন্দ দিকটা দেখি, নিজের এবং পৃথিবীর সব কিছুর। তখন আমরা নিজেদের স্বাভাবিক তুচ্ছ মানসিক অক্ষমতার জন্য নিজেকে বড় বেশি দোষী মনে করি। বিষণ্নতা যখন গভীর হয় চিন্তার গতি খুব ধীর হয়ে যায়। আমরা নিজেদের মধ্যে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেই, তখন চারিদিকে কি হচ্ছে তা খেয়ালই করি না। আর সে জন্য আমরা তা ভুলে যাই, কারণ আমরা তো তা গুরুত্ব দিয়ে দেখিইনি।
যারা বিষণ্নতায় ভুগচ্ছেন তাদের মধ্যে অস্থিরতাও থাকে অনেক সময়, ফলে কোন কিছুতেই মনোসংযোগ করতে পারেন না। অস্থিরতা ও চিন্তার ধীর গতি উভয়ই বিষণ্ন ব্যক্তির মনে রাখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিষণ্নতা মাঝে মাঝে স্মৃতিশক্তিকে এতটাই কমিয়ে দেয় যে লোকে তাকে স্মৃতিভ্রংস বা ডিমেনসিয়া বলে ভুল করে। এজন্য বিষণ্নতায় এ ভুলে যাওয়াকে ছদ্মস্মৃতিভ্রংস ও বলে। মানসিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিষণ্নতার ভুলে যাওয়া ও স্মৃতিভ্রংসের ভুলে যাওয়ার মধ্যে তফাৎ নির্ণয় করা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে পৌঢ় ব্যক্তিদের ভুলে যাওয়ার কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষণ্নতা, স্মৃতিভ্রংস নয়।
দুশ্চিন্তা :
কোন বিষয়ে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে আমরা অন্য কিছুতে মন বসাতে পারি না। এরকমই দেখা যায় পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকার দিতে গেলে।
বয়স : বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীর ও মনের সব ধরনের দক্ষতাই কমতে থাকে। মনে রাখার দক্ষতাও কমে। সে কারণে বেশি বয়সে আমরা নতুন কিছু শিখতে পারি না, যদিও তা অসম্ভব নয়। একে বলে বয়সের সাথে ভুলে যাওয়া বা এজ এসোসিয়েটেড মেমোরি ইমপেয়ারমেন্ট (অঅগও)। বয়সের সাথে সাথে এ ধরনের স্মৃতি সমস্যা দেখা দেয়, কারণ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মগজে রাখা বেশি তথ্যের পরিমাণও বাড়তেই থাকে। দিনে দিনে সঞ্চিত এতসব তথ্য থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করতে বেশি সময় লাগবে বৈকি। যেমনটা লাগে অনেক বড় লাইব্রেরি থেকে একটা বই বের করতে।
অন্যান্য মানসিক বিষয় যা ভুলে যাওয়ার কারণ ঘটাতে পারে তার মধ্যে আছে একঘেয়েমি, ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব ইত্যাদি।
শারীরিক অসুস্থতা :
কানে কমশোনা, চোখে কম দেখতে পাওয়া, শরীরের যে কোন স্থানে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, মাথায় আঘাত পাওয়া, অ্যালকোহল ও ঘুমের ওষুধ সেবন মনে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া আরো কিছু শারীরিক অসুস্থতা আছে যা স্মরণশক্তি কমিয়ে দেয় :
থাইরয়েড গ্রন্থির কম কাজ করা : এতে পুরো শরীরের সব কাজই ধীর গতির হয়ে যায়। ব্রেনের কাজও।
হার্ট ও ফুসফুসের বড় ধরনের অসুস্থতা : কারণ এক্ষেত্রে মস্তিস্কে অক্সিজেন সঞ্চালন কমে যায়।
ডায়াবেটিস: এ রোগে রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ রোগের চিকিৎসার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। ইনজেকশনের ফলে অনেক সময় রক্তের গ্লুকোজ খুব কমে যায়। রক্তে অতি বেশি বা অতি কম উভয় মাত্রার গ্লুকোজই মস্তিষ্কে ক্ষতি করে, ফলে স্মৃতিজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
ইনফেকশন : শরীরের যে কোন স্থানের ইনফেকশন যেমন নিউমোনিয়া বা মস্তিস্কের ইনফেকশন স্মৃতিজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। গবাদি পশু থেকে সংক্রমণের ফলে সৃষ্টি কুজফেল্ট জেকব ডিজিজ ৬৫ বছর বয়সের পূর্বে মারাত্মক স্মৃতি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ রোগটির প্রকোপ খুব কম, কিন্তু হচ্ছে।
ডা. জিল্লুর কামাল
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
মোবাইল -০১৭১১৮১৯৫৩৭,
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুরিকাঘাতে এক যুবককে হত্যা
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ