শীতকালে মানসিক রোগ বাড়েশীতকালে মানসিক রোগ বাড়ে
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
শীতকাল অনেকের পছন্দের ঋতু। শীতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের মতো অণুজীবগুলি বৃদ্ধির ভালো সুযোগ পায়। ফলে এই সব জীবাণু মানুষের মধ্যে অনেক রোগের জন্ম দেয়। আবার এর পাশাপাশিই শীতের আগমনে শরীরেও অনেক পরিবর্তন ঘটে। শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলিকে উষ্ণ রাখতে বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হয়। এই বাড়তি ধকল সামলাতে না পেরে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। মানসিক রোগও এসময় বাড়তে দেখা যায়।
বাংলাদেশে প্রতি আটজনে একজন মানসিক রোগী। প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শিশুদের ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসাসেবায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় মানসিক সমস্যায় ভোগা ৯১ শতাংশই চিকিৎসা পায় না
দেশে নারীদের মধ্যে প্রতি ৫ জনে ১ জন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে মানসিক রোগ নিয়ে বেশি সংস্কার ও নেতিবাচক ধারণা দেখা যায়। এমনকি সমস্যাগ্রস্ত কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আসার হার ২ শতাংশেরও কম। এছাড়া প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রায় ৮০ লাখ মৃত্যু (১৪.৩ শতাংশ) মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্বজুড়ে ৯৭ কোটি মানুষ মানসিক অসুস্থতা বা মাদক ব্যবহারজনিত সমস্যায় ভুগছেন। আবার এ খাতে দক্ষ জনবলেরও স্বল্পতা আছে। আর বিষয়টিকে সঠিক গন্তব্যের দিকে নিতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
> কারণ সমূহ ১. জেনেটিক- পিতা-মাতা বা পূর্ব পূরুষদের মস্তিষ্ক বিকৃতি থাকলে অনেক সময় সন্তানদেরও মানসিক রোগ প্রকাশ পায় ২. শরীরে কোনো কঠিন ব্যাধি ৩. অতিরিক্ত নেশা ৪. মস্তিষ্কে আঘাত লাগালে ৫. হঠাৎ ভয় পেলে ৬. মানসিক উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অত্যধিক আনন্দ, দুঃখ, নিরাশ। ৭.পরিবেশগতভাবে ৮. নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি।
> লক্ষণ সমূহ
একজন লোক মানসিকভাবে সুস্থ কিংবা অসুস্থ খুব সহজে বুঝা যায় না। অনেক মৃদু রকমের মানসিক রোগ আছে, যেগুলো খুব সহজে ধরা পড়ে না, যেমন-অ্যাংজাইটি, হালকা বিষণ্ণতা। আমরা যদি লক্ষ করি যে, দৈনন্দিন জীবনের ক্রিয়াকলাপ, আচার-আচরণ এগুলো ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। এত সে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং অন্যের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এটি নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি দিন থাকছে। তখন মানিক রোগ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। যেমন-একটি লোক হয়তো বেশি কথা বলছে, রাগ বেশি করছে, বেশি টাকা খরচ করছে, অন্যের সঙ্গে বেশি খারাপ কাজ করছে। এটা দুই-তিনদিন হয়তো অন্যরা মেনে নিবে, কিন্তু এটি যদি ক্রমাগতভাবে দুই মাস ধরে অব্যাহত থাকে, তখন এটিকে আমরা মানসিক রোগ বলি।
মানসিক রোগীকে মোটাদাগে দুইভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- মৃদু ও মাঝারি বা তীব্র আকারের মানসিক রোগ। মৃদু রোগী হলো-অ্যাংজাইটি, মন খারাপ, নিদ্রার সমস্যা ও কিছুটা বিষণ্ণতা। এতে রোগীর খুব বেশি অসুবিধা হয় না। তীব্র আকার রোগী যারা, তাদের জ্ঞান লোপ পায়, আচরণ অত্যন্ত রুঢ় হয়ে যায়, অনেক সময় ভাঙচুর করে।
মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে:* হঠাৎ হঠাৎ করে বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠা* অনেকদিন ধরে নিজেকে সবার কাছ থেকে সরিয়ে গুটিয়ে রাখা* টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মন খারাপ থাকা* অন্যদের সঙ্গে একেবারে কথা বলতে না চাওয়া* সবার সাথে ঝগড়া করা* গায়েবি আওয়াজ বা কথা শুনতে পাওয়া* অন্যদের অকারণে সন্দেহ করতে শুরু করা* গোসল বা দাঁত মাজার মতো নিয়মিত প্রাত্যহিক কাজ করা বন্ধ করে নিজের প্রতি যতœ না নেয়া* যেসব কাজে আনন্দ পাওয়া সেসব কাজে নিরানন্দ ও আগ্রহ কমে যাওয়া* সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া* নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা বা নিজেকে সবকিছুতে দায়ী মনে হওয়া* সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া এবং খুব তীব্র হলে আত্মহত্যার চিন্তা পরিকল্পনা ও চেষ্টা করা* অতিরিক্ত শুচিবায়ু গ্রস্ত হয়ে ওঠা* ঘুম অস্বাভাবিক কম বা বাড়তে পারে* খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া বা রুচি বেড়ে যাওয়া
* বাসার, অফিসের বা পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া বা আগ্রহ হারিয়ে ফলা, এই সমস্যাগুলোর মানেই যে তার মানসিক রোগ হবে, তা নয়। তবে এসব উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা গেলে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তারা সেটা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারবেন যে, এখানে আসলে কোন ব্যবস্থা নেয়া উচিত কিনা।
> মানসিক রোগের প্রকারভেদ :-মানসিক রোগ কত প্রকার মোটা দাগে ভাগ করলে মানসিক রোগ দুই প্রকার: (১) নিউরোসিস (২) সাইকোসিস * নিউরোসিস এ রোগটি মৃদু ধরনের মানসিক রোগ, অনেক মানুষের মধ্যে বেশি মাত্রায় থাকতে পারে। রোগীর ব্যবহার ও আচরণ পরিবার বা সমাজের জন্য হুমকির কারণ হয় না। সামান্য ওষুধ চিকিসা ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে প্রতিকার করা যায়। তবে এ রোগ বারবার হওয়ার প্রবণতা বেশি। * সাইকোসিস এ রোগটি জটিল ধরনের মানসিক রোগ, কম সংখ্যক লোক এ রোগে ভুগে থাকেন। চিকিৎসা মোটামুটিভাবে ফলদায়ক। সাইকোসিস রোগটি বারবার ফিরে আসার প্রবণতা নিউরোসিস রোগের চেয়ে কম। দুশ্চিন্তা, টেনশন, ফোবিয়া, অবসেশন, হিস্টিরিয়া ইত্যাদি নিউরোসিস রোগের উদাহরণ, অপরদিকে বিষণ্নতা ও সিজোফ্রেনিয়া সাইকোসিস রোগের উদাহরণ।
> শীত ও মানসিক সমস্যা-শারীরিক অসুখ ছাড়াও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ মানসিক রোগেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। আর এই ঘটনা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। একে সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার বা সংক্ষেপে এসএডি বলা হয়। বাংলায় মৌসুমী বিষণ্ণতা বলতেই পারেন।
> এসএডি কী?সাধারণত শীতকালে এসএডি রোগ দেখা দেয়। এই রোগের কারণে মানুষ হতাশ বোধ করতে শুরু করে এবং স্বাভাবিক ভাবেই তার হাত ধরে আসতে থাকে বিষণ্ণতা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমেরিকায় ১ কোটির বেশি মানুষ মৌসুমী বিষণ্ণতায় অর্থাৎ এসএডি রোগে ভুগছেন। আবার ২.৫ কোটির বেশি মানুষের মধ্যে মৌসুমী বিষণ্ণতার হালকা লক্ষণগুলি দেখা যায়। তাই সেক্ষেত্রে তাকে এসএডি না বলে উইন্টার ব্লুজ বলা যেতে পারে।
> কী কী কারণে মৌসুমী অবসাদ হয়?ঋতুগত বিষন্নতার কারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকলেও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে কিছু হরমোনের তীব্র পরিবর্তন ঘটে যা মেজাজকে প্রভাবিত করে। ফলে সময় বিশেষে মানুষ না চাইলেও বিষন্ন বোধ করেন, হতাশায় ভোগেন। আবার কিছু কিছু জায়গায় এমনটাও মনে করা হয়, শীত কালে সূর্যের আলো না থাকায় মস্তিষ্কে সেরোটোনিন রাসায়নিক কম হয়ে যায়, যার কারণে মেজাজ ক্ষিপ্ত বা বিষন্ন হতে শুরু করে।> শীতকালে বিষন্নতার ফলে কী কী হতে পারে?১) মৌসুমী বিষন্নতার কারণে কোনও ব্যক্তি গভীর বিষন্নতায় ডুবে যেতে পারেন।২) কিছু ক্ষেত্রে মানুষের ওজনও বাড়তে থাকে।৩) মানুষের মনে দুঃখ, হতাশা এবং বিরক্তি বৃদ্ধি পায়।৪) মানুষ ক্লান্ত বেশি থাকে।৫) কিছু মানুষের খিদে বেশি পেতে পারে।৬) অনেক সময়ে দেখা যায় যে, মানুষ কোনও কিছুতেই মন বসাতে পারছে না।৭) বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মানুষ একা থাকতে পছন্দ করে।> ঋতুকালীন অবসাদ মোকাবিলা করা যায় কী ভাবে?১) ঋতুগত বিষন্নতার কারণ শরীরে আলোর অভাব বলে মনে করা হয়। এ জন্য চিকিৎসকরা হালকা থেরাপির পরামর্শ দেন।২) কুয়াশা কেটে রোদ বের হলে অবশ্যই হাঁটতে বের হবেন। আকাশ অংশত মেঘলা থাকলেও হাঁটতে বেরোনো উচিত।৩) অন্তত পক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রোদে বসুন রোজ। নিয়ম করে। এর পর ধীরে ধীরে সেই সময় বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট করার চেষ্টা করুন।৪) নিয়মিত অন্তত আধ ঘণ্টা করে যে কোনও রকম ব্যায়াম করুন। ৫) নিজেকে যতটা বেশি সম্ভব কাজে মগ্ন রাখুন।পরিশেষে বলতে চাই, যেকোনো অসু¯’তা থেকে মুক্তিলাভের জন্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকসহ সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আমাদের উচিত মানসিকভাবে অসু¯’ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সবধরনের সমর্থন দেওয়া। তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা না করে সহানুভূতিশীল আচরণ করা এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষকপ্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি অলংকার শপিং কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম,
মোবাইল :০১৮২২৮৬৯৩৮৯, [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু
আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ
আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা
শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ