সুন্দর দাঁত ও মাড়ি
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম

(ক) ডেন্টাল ভিজিট সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা দুর করতে হবেঃ অনেকেই দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে দুশ্চিন্তা করেন। ব্যথা, ইনজেকশন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে টেনশনে থাকেন। ডেন্টিষ্টের চেয়ারে যাওয়ার সময় আপনি যদি দুশ্চিন্তায় ভোগেন তাহলে একটি মিউজিক প্লেয়ার এবং হেডফোন পরবর্তী সাক্ষাতের সময় নিয়ে যাবেন। কারন কিছু মানুষ তাদের নিঃশ্বাস ধরে রাখেন যখন তারা নার্ভাস থাকেন। এতে করে দুশ্চিন্তার অনুভূতি আরো বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হবে। ডাক্তারের কাছে সব খুলে বলতে হবে। ডাক্তার আপনার ভীতি সম্পর্কে বুঝতে পারবেন এবং আপনাকে সাহায্য করবেন।
(খ) ফ্লস আগে না দাঁত ব্রাশ আগে? ঃ অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ফ্লস বা ব্রাশ আগে বা পরে কোন বিষয় নয়। কিন্তু অন্যরা বলেন প্রথমে ফ্লসিং করা ভালো। প্রথমে দাঁত ফ্লসিং করে নিলে কার্যকরভাবে দাঁত ব্রাশ করা যায় এবং দাঁতের ফাকে আটকে থাকা খাবার সহজেই অপসারন করা যায় । ফ্লস করার পর দাঁত ব্রাশ করার সময় টুথব্রাশের ব্রিসল গাম লাইনের সাথে ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে স্থাপন করে নিতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ব্রাশ করতে হবে। সব শেষে এন্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
(গ) টুথপিক ব্যবহারে যতœবান হতে হবেঃ যদি আপনার কাছে ডেন্টাল ফ্লস না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে একটি টুথপিক দাঁতের ফাকে জমে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কারে সাহায্য করবে। কিন্তু টুথপিক ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। টুথপিকে জোরে চাপ প্রয়োগ করার ফলে মাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এমনকি আরো খারাপ কিছু হতে পারে। গাম লাইনের নিচে টুথপিক ভেঙ্গে যেতে পারে যা আপনাকে বিভিন্ন ঝুঁকির মুখে ফেলবে। নিয়মিত নির্দিষ্ট একটি জায়গায় খাবার পরিষ্কার করার জন্য টুথপিক ব্যবহারের প্রয়োজন হলে বড় কোন সমস্যার নির্দেশনা দেয় যা আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন। নিয়মিত টুথপিক ব্যবহার করবেন না। শুধুমাত্র কোন কারনে যদি ডেন্টাল ফ্লস পাওয়া না যায় তবে অতি সাবধানতার সাথে টুথপিক ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন অন্যমনস্ক হয়ে টুথপিক দিয়ে দাঁতের ফাকে অযথা খোঁচাখুচি করবেন না। এতে মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে।
(ঘ) টুথব্রাশ পরিবর্তন করতে হবেঃ টুথব্রাশের ব্রিসলগুলো এক সময় ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে এবং কার্যকর থাকে না। আপনার ঝলমলে হাসি ঠিক রাখার জন্য প্রতি ৩ মাস পরপর টুথব্রাশ পরিবর্তন করে নিতে হবে। ইলেকট্রিক টুথব্রাশের ক্ষেত্রে টুথব্রাশের হেড পরিবর্তন করে নিতে হবে।
(ঙ) সাদা দাঁতের জন্য পনির খেতে পারেনঃ পনিরে বিদ্যমানন কেজিন (কেজিন বা ছানা জাতীয় প্রোটিন) এবং হুই প্রোটিন (ছানা অপসারনের পর অবশিষ্টাংশ ঘোল নামে পরিচিত যা হুই প্রোটিন নামে পরিচিত) দাঁতের এনামেল ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া পনিরে রয়েছে দাঁতের গঠনকারী উপাদান ক্যালসিয়াম। খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে যা আপনার শরীরকে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম শোষন করতে। কিছু ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার হলো - দুধ, ডিমের কুসুম এবং মাছ।
(চ) বেকিং সোডা দিয়ে দাগ পড়া বন্ধ করুনঃ যদি আপনি কফি, রেড ওয়াইন অথবা অন্যন্য দাঁতে দাগ সৃষ্টিকারী খাবার এবং পানীয় ভালোবাসেন তাহলে সেক্ষেত্রে বেকিং সোডা দিয়ে এক মাস দাঁত ব্রাশ করতে পারেন। তারপর ভালোভাবে কুলকুচি করতে হবে। যদি বেকিং সোডা সরাসরি ব্যবহার করলে আপনার মাড়িতে প্রদাহ বা জালাপোড়া সৃষ্টি হয় তাহলে বেকিং সোডা সমৃদ্ধ টুথপেস্ট ব্যবাহার করতে পারেন অথবা বেকিং সোডা পুরোপরি পরিহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
(ছ) খাবার দাঁতে দাগ সৃষ্টি বা দাঁত উজ্জ্বল করতে পারেঃ স্টবেরিতে প্রাকৃতিকভাবে দাঁত সাদা করার উপাদান আছে যদিও স্টবেরি লাল রংয়ের। আবার ব্লুবেরি, কফি, ব্ল্যাকবেরি জাতীয় খাবার বা পানীয় দাঁতে দাগ ফেলে। ধুমপান দাঁতে দাগ সৃষ্টি করে। দাঁতের দাগ দূর করার জন্য দাঁত সাদা করার টুথপেষ্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। আপেল, পিয়ার্স, গাজর খেতে হবে যা দাঁত ও মুখের জন্য উপকারী। এসব খাবার দাঁত উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
(জ) এসিড রিফ্লাক্স বা বুক জ্বালা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবেঃ আপনার যদি এসিড রিফ্লাক্স বা বুক জ্বালা থাকে তাহলে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে দাঁতের এনামেল ও মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য। যেসব খাবার এবং পানীয় এসিড রিফ্লাক্সকে বাড়িয়ে দিতে পারে সেগুলো হলো- চকলেট, অ্যালকোহল, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন-সোডা, কফি এবং চা। এছাড়া রসুন, পেয়াজ, দুগ্ধ জাতীয় খাবার, টমেটো, সাইট্রাস ফল, মিন্ট এবং স্পাইসি, ফ্যাটি অথবা ফ্রাইড খাবার আপনার এসিড রিফ্লাক্স সৃষ্টি করতে পারে অথবা বৃদ্ধি করে থাকে। তাই এসব বিষয়ে যতœবান হতে হবে।
(ঝ) আপনার জিহ্বার যতœ নিতে হবেঃ যখন আপনি ব্রাশ করবেন তখন অবশ্যই মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ব্রাশ করার সময় জিহ্বা স্ক্র্যাপ বা পরিষ্কার করুন। জিহ্বাতে অসংখ্য জীবানু থাকে যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই জিহ্বা পরিষ্কার করলে বা টাং স্ক্রাপার ব্যবহার করলে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবানু বা উপাদান কমে আসবে।
(ঞ) ঔষধ শুস্ক মুখ সৃষ্টি করতে পারেঃ মুখের অভ্যন্তরভাগ স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য আপনার মুখে লালার প্রয়োজন। কিন্তু কিছু ঔষধ যেমন- বিষন্নতানাশক ঔষধ, উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক ঔষধ এবং এন্টি হিস্টামিন লালা শুকিয়ে ফেলতে পারে। ঔষধ শুস্ক মুখের কমন কারন। মুখের অভ্যন্তরভাগ আদ্র রাখার জন্য প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে কৃত্রিম লালা ব্যবহার করতে হবে। মাঝে মাঝে খাবারের পর চিনিমুক্ত চুইংগাম চোষা যেতে পারে।
তাই দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে আপনাকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।
ডা. মো. ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার, বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৮১৭-৫২১৮৯৭,
ই-মেইলঃ dr.faruqu@gmail.com
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশে কমবে প্রবৃদ্ধি, বাড়বে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে শীর্ষে সউদী

দাঁত ভাঙ্গা জবাব চীনের

সেনাবাহিনীতে আরও রোবট নিয়োগ করছে রাশিয়া

ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে টেকসই অর্থনীতির ধারণা উপস্থাপন জামায়াতের

বাংলাদেশে সউদী আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সউদী রাষ্ট্রদূত

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির

তানজির ফাহিম জুম্মার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সিকিউরিটি গার্ড আহত

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দায় লেজিসলেটিভ অ্যাসোসিয়েশন

পহেলা বৈশাখে ব্যাপক নিরাপত্তার পরিকল্পনা ডিএমপি কমিশনার

ডাকাতির পর হত্যা : ১০ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড

আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার মানববন্ধন

সড়কের মৃত্যুদূত মোটরসাইকেল

দায়ের করলেন ‘গোপন অভিযোগ’ দুদকে হঠাৎ হাসনাত-সারজিস

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানি হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আহ্বান ইউজিসির