শীতে শাক খান
১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম
গাঁওগ্রামে এমনকি শহরেও মেহমানদের খাবার পরিবেশনায় শাক থাকে না। কারণ বিবিধ। তবে অন্যতম কারণ হলো শাক গরিবের খাদ্য। তাই মনে করা হয়। কিন্তু ধারণাটা যে ভুল তা অনেকে জানে না। অনেকে অস্বীকার করেন। শাক অতি সহজলভ্য। দামে সস্তা। আর আমাদের বিত্তবানদের কাছে সস্তা জিনিসের কদর নেই। অথচ শাক অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ ও উপকারী। আমরা এই পুষ্টিকর শাক ছেড়ে পোলাও, বিরিয়ানি ও তেহারি খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা ও পেটের পীড়ায় ভুগি। তারা যখন এসব রোগের শিকার হয়ে ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তার ওইসব খাবার বর্জন করে শাকসবজি খেতে বলেন। তত দিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। অথচ বিভিন্ন শাক মুখরোচক আবার উপকারী। লাউশাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করলে দারুণ মজা হয়। থানকুনি ভর্তা করলে ভাতের সাথে খুবই মুখরোচক হয়। বিভিন্ন প্রকার শাক শরীরের রক্ত, রস, মাংস মেদ মজ্জা, অস্থি ও বীর্য পোষক। আয়ুর্বেদ ও হেকিমদের মতে, এক এক শাকে এক একগুণ। এই গুণাগুণ জানা থাকলে আমরা শাক খেয়ে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। এসব শাক দামেও তুলনামূলক সস্তা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। শীতের মওসুমে আমরা হরেক রকম শাকের সমারোহ দেখি। আসুন এসব শাকের উপকারিতা জেনে নেই।
লালশাক- লালশাক অতি সহজলভ্য। প্র্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। নিজেরা ছাদে টবে বা সামান্য ৬ ইঞ্চি উঁচু মাটিতে লালশাকের বীজ ছাড়িয়ে পনের-বিশ দিনের মধ্যে লালশাক পেতে পারি। লালশাক আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে যারা এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে যারা তারা নিয়মিত লালশাক খেলে রক্তস্বল্পতা ও রক্তে হিমোগ্লোবিন পূরণ করে।
পালংশাক- পালংশাককে শাকের রাজা বলা হয়। এর পুষ্টিগুণের জন্যই রাজা বলা হয়। যাদের পিত্তথলি বা গল ব্লাডারের ও কিডনি সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত পালংশাক খাওয়া উচিত। এই শাকে জন্ডিস সারে। রক্ত পরিষ্কার করে। ডায়াবেটিস কমায়। পেটের অন্ত্র সচল রাখে। কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে। পালংশাকে ভিটামিন এ, বি, সি ও ই রয়েছে। আরো রয়েছে অ্যামাইনো এসিড। পালংশাক পুঁটি মাছ দিয়ে রান্না করলে মুখরোচক হয়।
মুলাশাক- অনেকে বলেন, মুলার চেয়ে মুলাশাক বেশি উপকারী। বাজারে মুলাশাক এসে গেছে। দাম একটু বেশি। যারা অশর্^রোগে ভুগছেন তারা দৈনিক একবার মুলাশাক খেলে উপকার পাবেন। যাদের হাত-পা জ্বালাপোড়া করে তারাও মুলাশাক খেলে উপকার পাবেন। মুলাশাক কফ ও বাত নাশক। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা মুলাশাক খাবেন। উপকার হবে।
লাউশাক- পুষ্টিবিদরা বলেন, লাউ অপেক্ষা লাউশাক বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। আসলে লাউপাতা, ডগা ও লাউ সবই উপকারী। লাউশাক মায়ের বুকের দুধ বাড়ায়। অপুষ্টি দূর করে। মায়ের শরীরে শক্তি জোগায়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। শরীরের ক্ষয় পূরণ করে।
কচুশাক- কচুশাককে সবাই হেলাফেলা করে। অথচ কচুশাক অত্যন্ত ভিটামিন যুক্ত। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা চোখের জন্য কচুশাক খেতে বলেন। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে, তাদের কচুশাক খাওয়া উচিত। শহর-নগরে, গাঁওগ্রামে সর্বত্র কচুশাক পাওয়া যায়। গ্রামগঞ্জে কচুশাক কিনতে হয় না। যাদের প্র¯্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা হয় তারা কচুশাক খেতে পারেন। উপকার হবে। কচুশাক মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে। এতে বেশি লৌহ আছে বিধায় মেয়েদের কচুশাক খাওয়া উচিত।
কলমি শাক- গাঁওগ্রামে খালবিলে পুকুরে সর্বত্র কলমি শাক হয়। কলমি শাকের ফুল মনোহরা। কলমি দুই প্রকার ডাঙা কলমি ও জলো কলমি। ডাঙা কলমিকে কোনো কোনো অঞ্চলে ঢোল কলমিও বলে। এই ডাঙা কলমি কেউ খায় না। জলো কলমি পুকুরে ও খালবিলে পানির ওপর লতিয়ে চলে। অনেকে স্বেচ্ছায় নিজ পুকুরে জলো কলমি লাগায়। এতে পুকুরের পানি নির্মল থাকে। মাছ এর শিকড় খায়। কলমি শাকের ক্রিয়া কিডনি ও মূত্র যন্ত্রের ওপর বেশি। যাদের ফোঁটায় ফোঁটায় সর্বক্ষণ প্র¯্রাব পড়ছে, তারা কলমি শাক ভাজা বা রান্না করে খেলে উপকার পাবেন। ডায়াবেটিস রোগেও কলমি শাক উপকারী। মেয়েদের হিস্টিরিয়া রোগেও কলমি শাক উপকারী। পেট ও পিত্ত ঠা-া রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মায়ের বুকে দুধ বাড়ায়।
পুইশাক- কথায় বলে, শাকের মধ্যে পুঁই, আর মাছের মধ্যে রুই। তবে পুঁইশাক সবাই হজম করতে পারে না, পেট গরম হয়। পুঁইশাকের পাতার চেয়ে ডগায় বেশি ভিটামিন। খেতেও ভালো। পুঁইশাক বল, বীর্যবর্ধক এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ। পিত্তনাশক। পুঁইশাক দৈনিক এক বেলার বেশি না খাওয়া ভালো।
হেলেঞ্চা শাক- হেলেঞ্চা শাক ও কলমি শাক একই জাতের তবে হেলেঞ্চা শাক কলমি শাকের চেয়ে বেশি ভালো। হেলেঞ্চা শাকও খালবিল ও পুকুরে হয়। হেলেঞ্চা শাকও পিত্তনাশক এবং পেট ঠা-া রাখে। হেলেঞ্চা রক্ত পরিষ্কার করে। হজমে সহায়ক। ডায়াবেটিস রোগেও উপকারী। কবিরাজ ও বৈদ্যরা হেলেঞ্চার রস খেতে বলেন, যারা প্রমেহ বা ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে ভুগছে।
গবেষক-কলামিস্ট, মোবাইল-০১৭১৬-২৭০১২০
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ
আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত
বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ
ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস
আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার
প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন
মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়
সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো