শীতকালে ঠান্ডা থেকে সর্দি-কাশি ও হাঁচির সঙ্গে অনেক সময় রোগী এসে বলেন কানে তালা লেগে গেছে। কানে তালা মানে কান বন্ধ হয়ে থাকা, কিছু না শোনা। যদিও বিষয়টি ঔষধের মাধ্যমে কমে যায়; তবে কানের এই সমস্যা একেবারে হালকা নয়। কানের পর্দা আমাদের কানকে বহি:কর্ণে ও মধ্যকর্ণে বিভক্ত করে। এই রোগে কানের পর্দার ভিতরের দিকে প্রদাহ হতে পারে, থাকে সংক্ষেপে বলে ও.এম.ই।

কেন কানে তালা লাগে/বন্ধ হয়ে যায়?
অডিটর টিউব যা নাকের সাথে গলা ও কানের সংযোগ স্থাপন করে। অডিটরি টিউব মধ্যকর্ণ ও আবহাওয়ার বায়ুচাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। কোন কারনে এই টিউব বন্ধ হয়ে গেলে/ঠিকমতো কাজ না করলে মধ্যকর্ণে পানি জমে প্রদাহ হতে পারে।
কাদের এ সমস্যা হতে পারে?
সাধারনত স্কুলগামী বাচ্চাদের এই সমস্যা বেশী দেখা গেলেও যেকোন বয়সের যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। যে সকল বাচ্চাদের নাক ডাকার অভ্যাস আছে তাদের মধ্যকর্ণে পানি জমতে পারে। এ রোগের উল্লেখযোগ্য কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে : ১) ঘন ঘন উবর্ধশ্বাসনালীর সংক্রমন ; যেমন: সর্দি-কাশি-নাক বন্ধ। ২) প্রায়ই এলার্জি জনিত নাকের প্রদাহ; ৩) ক্রনিক টনসিলের ইনফেকশন; ৪) শিশুদের ক্ষেত্রে নাকের পিছনে এডিনয়েড নামক লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া; ৫) নাকের হাড় বাকা/ক্রনিক সাইনোসাইটিস এর সমস্যা; ৬) ভাইরাল ইনফেকশন।

লক্ষণ/উপসর্গ কী?
মধ্যকর্ণে পানি জমা হয়ে প্রদাহ হলে সর্দি কাশির সঙ্গে হঠাৎ করে কান বন্ধ হয়ে যায় এবং বেশ ব্যথা মনে হয়। কানের মধ্যে ফড়ফড় করে এবং ভোঁ ভোঁ শব্দ হয়। কানে কম শোনা যায়। ইনফেকশন বেশি তীব্র হলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে কান বেয়ে রক্ত মিশ্রিত পানি বের হতে পারে।
এ রকম সমস্যা দেখা দিলে জটিলতার আগেই একজন নাক-কান-গলার চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। এ ধরণের রোগে চিকিৎসক কান পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত এন্টি-হিস্টামিন; বয়স উপযোগী নাকের ড্রপ; প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন। ঔষধের চিকিৎসার পরেও যদি ১২সাপ্তাহে সমস্যার সমাধান না হয় তবে নাক-কান-গলা সার্জনরা একটি ছোট অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ফুটো করে তরল পদার্থ বের করে থাকেন। যার নাম মাইরিংগোটমী। সুতরাং এই ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করবেন না। সুস্থ থাকুন জীবনকে উপভোগ করুন।

ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফি
নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ।