ঘরের ধূলো থেকে এলার্জি
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
পরিচ্ছন্ন বাড়িতেও ধুলো এলার্জি সাধারণ ঘটনা : বছরব্যাপী মানুষ ভোগে নাক থেকে পানি ঝড়া, চোখ চুলকানি, চোখ থেকে পানি ঝড়ার সমস্যায়। তার কারণ ঘরের ধুলোর এলার্জি ও জীবাণু। ধুলোর কারণে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কাশি হয়।
ঘরের ধুলো থেকে এলার্জি হয় কেন : ঘরের ধুলো প্রকৃতপক্ষে অনেকগুলো জিনিসের মিশ্রণ। এর উপাদানগুলো কম-বেশি হতে পারে এক ঘর থেকে আরেক ঘরের ফর্নিচারের প্রকারভেদে, ঘর তৈরির উপাদানের কারণে, পোষা প্রাণীর উপস্থিতির কারণে, আর্দ্রতার কারণে। ধুলোর মধ্যে থাকতে পারে সুতোর আঁশ, মানব দেহের ত্বকের মৃত কোষ, প্রাণীর লোম, আণুবীক্ষণিক জীবাণু, তেলাপোকার প্রতঙ্গ, ছত্রাকের জীবাণু, খাদ্যকণা এবং আরও অনেক পরিত্যক্ত ক্ষুদ্র জিনিস। এগুলোর মধ্যে প্রাণীর লোম, তেলাপোকা এবং ধুলোর জীবাণু হচ্ছে প্রধান তিন বিপজ্জনক বস্তু। কোন ব্যক্তি এগুলোর যে কোনটির কারণে ভুগতে পারেন এবং তিনি যখন ধুলোর সংস্পর্শে আসেন, তখন এলার্জিক প্রতিক্রিয়া ঘটে।
ধুলোর এলার্জি হলে কি বলা চলে যে এটি একটি নোংরা বাড়ি : না নোংরা বাড়ির কারণে এলার্জি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে যদিও। স্বাভাবিক ঘর পরিষ্কারের প্রক্রিয়া ধুলোর এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ ধুলোর সকল উপাদান এভাবে দূর করা সম্ভব নয়। যেমন আপনি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে যত চেষ্টাই করেন না কেন, কার্পেট, মাদুড় এবং বালিশ থেকে ধুলোর জীবাণু দূর করতে পারবেন না।
ধুলোর জীবাণুগুলো কী কী : অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক এই প্রাণীগুলো শক্ত দেহের অধিকারী। এরা ৭০ ফারেনহাইট বা তার উচ্চ তাপমাত্রায় ভালোভাবে বাঁচতে পারে। ৭৫-৮০ শতাংশ আর্দ্রতাই এদের পছন্দ। আর্দ্রতা ৪০-৫০ শতাংশের কম হলে এদের বংশ বৃদ্ধি হয় না। শুষ্ক আবহাওয়ায় এদের দেখা যায় না। দেখা গেছে শতকরা ১০ ভাগ মানুষ এদের কারণে আক্রান্ত হয়। অ্যাজমা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই এদের সংস্পর্শে এলে এলার্জি প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
এই জীবাণুদের দেহ মুখম-লের সংস্পর্শে এলে মানুষের এলার্জি হয়। এদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বালিশে, মাদুরে, কার্পেটের ভাজে এবং আসবাবপত্রের তলায়। ঝাড়– দিলে বা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রয়োগ করলে এরা বাতাসে ভাসতে থাকে অথবা হেঁটে হেঁটে অন্যপ্রান্তে সরে যায়। এলার্জি রোগীদের শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে এবং উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমান তার নাক জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বালিশে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুগুলোর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকে। এক প্রান্তের ধুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯০০০, পর্যন্ত জীবাণু থাকতে পারে। গড়ে এই সংখ্যা প্রতি গ্রামে ১০০০০। প্রত্যেক জীবাণু দিনে অন্তত ১০টি নতুন প্রতিলিপি সৃষ্টি করে। এদের বেঁচে থাকার মেয়াদ ৩০ দিন।
এদের খাদ্য মূলত পশুর লোম এবং ত্বকের মৃত কোষ। সুতরাং যেখানে মানুষের বাস, সেখানেই এদের বসবাস। এরা কামড়ায় না, অন্য কোন রোগ ছড়ায় না এবং মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে না। এরা শুধু সেই মানুষগুলোর প্রতি ক্ষতিকর যাদের এই জীবাণুদের প্রতি এলার্জি রয়েছে। সাধারণত বাড়িতে যেসব জীবাণুরোধক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো দিয়ে এদের অপসারণ করা যায় না। ফলে ঘরে ধুলোর জীবাণুর পরিমাণ কমানো সম্ভব হয় না।
ঘরে ধুলোতে ছত্রাক থাকে কেন : ছত্রাক থাকে সাধারণ বাইরের বাতাসে। তবে যে কোন বাড়িতেই ছত্রাক কলোনি তৈরি হওয়া সম্ভব। বাড়ির বাসিন্দারা হয়তো দেয়ালে ছত্রাকের কলোনি দেখতে পায় না কিন্তু সেটি ঠিকই তৈরি হতে থাকে। দুটি জিনিস ঘরের মধ্যে ছত্রাকের কলোনি গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখে। (১) বেশি আর্দ্রতা শতকরা ৫০-এর বেশি। পানির পাইপে ক্ষুদ্র ফুটা বা যে কোনো পানির প্রবাহ এতে ভূমিকা রাখে। (২) দেয়ালে কোন বোর্ড থাকলে বা স্যাঁতস্যাঁতে আসবাব থাকলে সেখানে ছত্রাক জন্মায়। ছত্রাকের স্পোর কাপড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই স্পোর থেকে সুনির্দিষ্ট জীবনচক্রের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ছত্রাক তৈরি হয় অনুকূল পরিবেশে। যেসব রোগীর ছত্রাক এলার্জি আছে, তারা ছত্রাক অধ্যুষিত বড়িতে থাকলে নিশ্চিতভাবে ছত্রাকজনিত এলার্জির শিকার হন। কারণ তারা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ছত্রাক গলাধকরণ করেন।
ঘরের ধুলোতে তেলাপোকা থাকে কি : তেলাপোকার বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ ঘরের ধুলোতে মিশে থাকে। বিশেষ করে পুরোনো বাড়ি ও ফ্লাটবাড়ি যেখানে বিভিন্ন ফ্লাটে বিভিন্ন পরিবার বাস করে, সেখানে তেলাপোকা নির্র্মূল করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। এলার্জি আক্রান্ত ব্যক্তি বিশেষ করে অ্যাজমা রোগী এই ধরনের বাড়িতে গেলে তার উপসর্গ বেড়ে যায়। বেঁচে থাকা ও বংশবিস্তার করার জন্য তেলাপোকার দরকার খাদ্য ও আর্দ্রতা। এগুলো থেকে বঞ্চিত করলে তেলাপোকার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।
ঘরের ধুলোর এলার্জি কি মৌসুমী : দেখা গেছে ধুলোর জীবাণুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয় জুলাই-আগস্ট মাসে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই উচ্চ সংখ্যা বজায় থাকে। বসন্তের শেষের দিকে ধুলোর জীবাণু ঘটিত এলার্জির সংখ্যা সবচেয়ে কম থাকে। কিছু রোগী জানিয়েছেন, তাদের উপসর্গ সবচেয়ে বেশি হয় এই শীতকালে। এর কারণ হচ্ছে মৃত জীবাণু এবং জীবিত জীবাণুদের বর্জ্য উভয়ই এলার্জি প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে ছত্রাকের পরিমাণেও কম-বেশি ঘটে। দেখা যায় গ্রীষ্মের সময় তেলাপোকার পরিমাণ বেশি হয়। বাতাসে ধুলোকণার পরিমাণ বেশি হয়। আর গ্রীষ্মকালে মানুষ বাড়িতে সচরাচর বেশি সময় কাটায় বলে এই সময়ে এলার্জির উপসর্গও বৃদ্ধি পায়।
কিভাবে বুঝবেন যে আপনার ধুলো জনিত এলার্জি রয়েছে : এক্ষেত্রে আপনাকে এলার্জি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। তিনি আপনার উপসর্গগুলো লক্ষ্য করবেন, আপনার গৃহ ও কর্মস্থলের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইবেন। প্রশ্ন করবেন আপনার অভ্যাস, পারিবারিক রোগের ইতিহাস, উপসর্গ কমা-বাড়ার প্রবণতা, পোষা প্রাণীর ধরন সম্পর্কে। তারপরে তিনি আপনার শরীরের একটি পরীক্ষা করবেন। যার নাম স্কিন-প্রিক টেস্ট। সেই সঙ্গে রক্ত পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।
এই ধরনের এলার্জির উপসর্গ কমাতে কী করবেন : তিনটি মৌলিক চিকিৎসার ধাপ রয়েছে-
ধুলোর জীবাণু থেকে দূরে থাকা
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ
ইমিউনোথেরাপি
কিভাবে ধুলোর জীবাণু থেকে দূরে থাকবেন : পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে ঠিক কোন ধরনের ধুলো উপাদান থেকে আপনি এলার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ধুলোর জীবাণু পরিপূর্ণভাবে অপসারণ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে আপনি কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন, যাতে পরিমাণটা অন্তত কম থাকে।
শোবার ঘরের দিকে বিশেষ নজর দিন : ধুলো-এলার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শোবার ঘরের দিকে বেশি মনযোগ দিতে হবে।
বেছে নিন এমন শোবার জিনিসপত্র যেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করা যায় এবং যাতে এলার্জির পরিমাণ কম থাকে। বালিশে ফোম বা তুলো ব্যবহার না করে সিনথেটিক জিনিস ব্যবহার করুণ। সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানাপত্র ধুয়ে রেখে শুকিয়ে নিন।
সম্ভব হলে বেডরুমে এয়ারকন্ডিশনার ও আর্দ্রতারোধক যন্ত্র ব্যবহার করুণ। আর্দ্রতা কম থাকলে জীবাণু ও তেলাপাকার বংশবিস্তার রোধ হবে।
জানালায় সূক্ষ্ম কাপড়ের ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ঘন ঘন বদলাতে হবে। কাপরচোপড় ক্লোজেটে রাখুন। ক্লোজেটের ঢাকনা বন্ধ রাখবেন।
ঘরে কোন মৃত প্রাণী বা প্রাণীর অংশ থাকলে অবিলম্বে বাইরে ফেলে দিন।
শোবার ঘরে কখনও পোষা প্রাণীকে ঢুকতে দেবেন না।
মেঝের ধুলো কমানো :
নিয়মিত বিরতিতে ঘর পরিষ্কার করুন। মেঝে মোছার সময় স্যাঁতস্যাঁতে ও তৈলাক্ত কাপড় ব্যবহার করবেন না। ঘর পরিষ্কারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
শোবার ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করাই উত্তম। ব্যবহার করলেও এমন ধরনের কার্পেট নেবেন যেগুলোর আঁশ সুবিন্যস্ত।
যেসব জিনিস ও আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব নয়, সেগুলো বেডরুমে না রেখে অন্যত্র সরিয়ে ফেলুন।
ঘরের বাতাসের ধুলো কমানো : এমন ধরনের এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন যার দ্বারা ঘরের আর্দ্রতা শতকরা ৫০ ভাগের নিচে রাখা সম্ভব।
এসি’র ফিল্টার নিয়মিত পরিষ্কার করুন প্রয়োজনে ঘনঘন ফিল্টার পরিবর্তন করতে হবে। তবে মনে রাখবেন যে, ধুলোর জীবাণু বেশিক্ষণ বাতাসে থাকতে পারে না। তাই মেঝে ও দেয়াল পরিষ্কারের দিকেই আপনাকে বেশি নজর দিতে হবে।
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস
দি এলার্জি এন্ড অ্যাজমা সেন্টার
মোবাইল : ০১৭২১৮৬৮৬০৬।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দোয়ারাবাজারে স্ত্রীর যৌতুক মামলায় যুবক গ্রেপ্তার
সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত: প্রকৌশলী ইকরামুল খান
সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে আটকা পড়েছেন ৭১ পর্যটক
জকিগঞ্জে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু
বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অগ্রগতির লক্ষে ইসিফোরজে’র প্রি-ওয়ার্কশপ
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুরিকাঘাতে এক যুবককে হত্যা
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন
হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট
শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩
বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী
সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি
পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়