মৃগী রোগে প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

মৃগী রোগ বা এপিলেপ্সি হলো একটি সাধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুবিক সমস্যা, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। প্রতি বছর ১০ ই ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মৃগী রোগ দিবস পালিত হয় এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। এ দিবসটি রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি এবং এই রোগের সঙ্গে জড়িত ভুল ধারণাগুলো দূর করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ মৃগীরোগে আক্রান্ত। সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মিত ওষুধ সেবন না করায় এ রোগে দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতার হার বাড়ছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃগীরোগে নিরাময় ও খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
> মৃগী রোগ- সংজ্ঞা ও কারণ :
মৃগী রোগ এমন একটি স্নায়ুবিক অবস্থার নাম, যেখানে মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক সঙ্কেত প্রবাহিত হয়, যা খিঁচুনি সৃষ্টি করে। এটি কোনো নির্দিষ্ট বয়স, লিঙ্গ বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং যেকোনো মানুষই মৃগী রোগে আক্রান্ত হতে পারে।> মৃগী রোগের কারণ:
মৃগী রোগের নির্দিষ্ট কারণ সবার ক্ষেত্রে এক নয়। তবে সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলোকে মৃগী রোগের জন্য দায়ী করা হয়:
* জন্মগত বা জেনেটিক কারণ: কিছু লোকের মৃগী রোগ পারিবারিকভাবে প্রবাহিত হয়। বংশানুক্রমিক জিনগত ত্রুটির ফলে মৃগী দেখা দিতে পারে।* মস্তিষ্কের আঘাত: মাথায় আঘাত লাগা, মস্তিষ্কে টিউমার বা স্নায়বিক ইনফেকশন মৃগী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। * নবজাতক ও শৈশবকালীন সমস্যা: নবজাতকদের অক্সিজেনের অভাব, মস্তিষ্কে ইনফেকশন বা প্রসবকালীন জটিলতা থেকে মৃগী রোগের সূত্রপাত হতে পারে।* স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণ: স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেলে মৃগী রোগ দেখা দিতে পারে।* অজানা কারণ: প্রায় ৫০% মৃগী রোগের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
> মৃগী রোগ দিবস: ইতিহাস ও উদ্দেশ্য -আন্তর্জাতিক মৃগী রোগ দিবস প্রথম পালিত হয় ২০১৫ সালে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক মৃগী ব্যুরো, এবং আন্তর্জাতিক মৃগী লীগ-এর উদ্যোগে এ দিবসটি উদযাপন শুরু হয়।
> এই দিবসটির মূল লক্ষ্য হলো:* সচেতনতা বৃদ্ধি: মৃগী রোগ নিয়ে সামাজিক কুসংস্কার দূর করা।* সমর্থন প্রদান: রোগীদের মানসিক ও শারীরিক সমর্থন দেওয়া।* গবেষণা উন্নয়ন: নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারে উৎসাহিত করা।> মৃগী রোগের লক্ষণ ও ধরন: মৃগী রোগের প্রধান লক্ষণ হলো খিঁচুনি। তবে খিঁচুনির ধরন ও তীব্রতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
লক্ষণ:* আকস্মিক অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।* মাংসপেশির অস্বাভাবিক সংকোচন।* আচরণগত পরিবর্তন।* অস্বাভাবিক দৃষ্টিভ্রম বা অডিটরি সঙ্কেত অনুভব করা।* শরীরের কোনো অংশ বা পুরো শরীর কাঁপা।
> মৃগীর ধরন:* ফোকাল সিজার: মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ থেকে খিঁচুনি শুরু হয়।* জেনারালাইজড সিজার: পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে খিঁচুনি হয়।* অ্যাবসেন্স সিজার: কয়েক সেকেন্ডের জন্য রোগী স্থবির হয়ে যায়।* টনিক-ক্লোনিক সিজার: পুরো শরীর কাঁপা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।> মৃগী রোগ নিয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সচেতনতা : মৃগী রোগ নিয়ে এখনো অনেক কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এখনও কেউ কেউ মনে করেন এটি কোনো অভিশাপ বা অলৌকিক ঘটনার ফল। এই ধরনের ধারণা রোগীদের মানসিক অবস্থা আরও জটিল করে তোলে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্কুল, কলেজ, এবং সামাজিক সংগঠনগুলোতে সেমিনার আয়োজন, তথ্যভিত্তিক পোস্টার ও ভিডিও প্রচার কার্যকর হতে পারে।
> নিয়ন্ত্রণের উপায় : ১) ঘুমের স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হলে এই ধরনের সমস্যা বাড়ত পারে। তাই রোজ নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোনোর অভ্যাস করা জরুরি। রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। কাজের মাঝে ‘পাওয়ার ন্যাপ’ নিতে পারলেও ভাল হয়।২) মৃগী রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক শর্ত হল নিয়ম করে ওষুধ খাওয়া। যাঁদের স্নায়ুর সমস্যার কারণে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাঁদেরও এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোনও ভাবেই ওষুধ খেতে ভুলে গেলে চলবে না।
৩) নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকলে শারীরবৃত্তীয় কাজগুলিও সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়। শরীরের পাশাপাশি মানসিক চাপও বশে থাকে।৪) মৃগী থাকলে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় খেতে বারণ করা হয়। কারণ, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় অ্যান্টি-এপিলেপ্টিক ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে।৫) মৃগী নিয়ে অনেকের মনেই নানা রকম কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস রয়েছে। প্রথমেই বলে রাখা ভাল, মৃগী জিনগত, ছোঁয়াচে নয়। তাই কারও যদি খিঁচুনি হয় বা হঠাৎ করে কেউ জ্ঞান হারান, তখন ঘরোয়া টোটকার উপর ভরসা না করে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।মৃগীরোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষ সঠিক চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিলে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পার। মৃগী রোগীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের পরিবারকে সাহস যোগানো এবং সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদচিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি। ইমেইল : drmazed96@gmail.com
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মার্কিন শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাব ভিয়েতনামের : ট্রাম্পের জন্য কি তা যথেষ্ট হবে?

প্রতারণার দায়ে ইভ্যালির রাসেল-শামীমার তিন বছরের কারাদণ্ড

‘শূন্য শুল্ক পরিস্থিতি’ ও যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের’ পক্ষে ইলন মাস্ক

মানবপাচার রোধে বাংলাদেশ নিজ প্রতিশ্রুতিতে অটল :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিপুল পরিমাণ গাঁজা পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ : বেশ ক’জন গ্রেফতার

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে মৃত বেড়ে ৩ হাজার ৪৫৫ ইউএসএআইডির তিন কর্মী বরখাস্ত

ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস নিয়ে আসিফ নজরুলের উদ্বেগ

নির্বাচনের সব কাজ ভালোভাবে এগোচ্ছে : সিইসি

আওয়ামী লীগপন্থী ৭২ আইনজীবী কারাগারে, ১১ জনের জামিন

বাঁশখালীতে বিষ দিয়ে বোনের ধান ক্ষেত জ্বালিয়ে দিলো ভাই

নতজানু ও দলকানা সাংবাদিকতা ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটায় -কাদের গণি

কুষ্টিয়ায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশুর ঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার দাবি -প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ

আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে জীবননগর থানা ঘেরাও

টাকার লোভে আ.লীগকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে কিছু রাজনৈতিক দল -নজরুল ইসলাম খান

গফরগাঁওয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চুয়েটে লেভেল-১ স্নাতক কোর্সে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু ৯ এপ্রিল

নাটোরে সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

সান্তাহারে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য

সান্তাহারে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য