কুষ্ঠরোগ অবহেলার নয়

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা,ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। লেপ্রোসি বা কুষ্ঠ একটি দীর্ঘমেয়াদি জীবাণুঘটিত গ্রানুলোমেটাস রোগ, যা মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি নামক জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয়। এটি কখনো কখনো সংক্রামকও হতে পারে। এ রোগ সাধারণত বাহ্যিক স্নায়ুতন্ত্র, চামড়া ও অন্যান্য কোষকলাকে আক্রান্ত করে। এ রোগের জীবাণু মানবদেহে প্রবেশের পর খুব ধীরে ধীরে বংশ বিস্তার করে এবং দীর্ঘ দিন পর আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এর লক্ষণ দেখা দেয়। কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ-

* শরীরে অনুভূতিহীন ফ্যাকাশে বা লালচে দাগ
* মুখম-লসহ শরীরে ব্যথাহীন দাগ বা গুটি।
* কানের লতি মোটা হওয়া
* চোখের ভ্রƒতে লোমের সংখ্যা আস্তে আস্তে কমে যাওয়া
* ব্যথাহীন ফোসকা পড়া বা ঘা হওয়া
* প্রান্তিক স্নায়ু মোটা হওয়া

* শরীরের চামড়ায় দাগবিহীন অবশ ভাব ইত্যাদি। বর্ণিত লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি লক্ষণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ তিনটি লক্ষণের এক বা একাধিক কারো শরীরে দেখা গেলে তাকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে নিশ্চিত হতে হবে সে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছে কি না এবং সত্যি সত্যিই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হলে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

কুষ্ঠ কিভাবে ছড়ায়- এ রোগে আক্রান্ত রোগীর নাকের শ্লেষ্মায় প্রচুর পরিমাণ রোগজীবাণু থাকে ফলে হাঁচির সময় রোগ জীবাণু বাতাসে আসে এবং এ রোগীর কাছে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানকারী ব্যক্তিবর্গের সহজেই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে না চামড়ার মাধ্যমে রোগীর দেহে রোগজীবাণু প্রবেশ করে। তবে রোগজীবাণু যেভাবেই দেহে প্রবেশ করুক না কেন কারো দেহে এর লক্ষণ দেখা দিতে দুই থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

কোন অঞ্চলে বেশি হয়- কুষ্ঠ রোগ সবচেয়ে বেশি হয় ট্রপিক্যাল এশিয়া, দূরপ্রাচ্য, ট্রপিক্যাল আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং কিছু কিছু প্রশান্ত মহাসাগরীয় দীপপুঞ্জে। স্বভাবতই দক্ষিণ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে এ রোগ এখনো অত্যন্ত কম।

প্রকারভেদ- কুষ্ঠ রোগকে মোট চার ভাগে ভাগ করা হয়। * ইনডিটার মিনেট * টিউবারকুলয়েড * বর্ডার লাইন * লেপ্রোমেটাস।
চিকিৎসা- কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হলেও যক্ষ¥ার মতো এ রোগের চিকিৎসাও বিনামূল্যে বাংলাদেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জেলা সদর হাসপাতাল ও টিবি হাসপাতালে পাওয়া যায়। আমরা আগেই কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ আলোচনা করেছি, তাই কোনো এলাকার যে কেউ তার শরীরে এ ধরনের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখে থাকলে সত্বর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে রোগ নির্ণয়পূর্বক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করবেন। এ রোগের চিকিৎসায় সাধারণত ড্যাপসোন, এসিড্যাপসন, রিফামপিসিন, ক্লোফাজিমিন, ইথিওনেমাইড ও থায়াসিটাজোন নামক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে সরকারিভাবে বেশির ভাগ রোগীকে ড্যাপসোন দৈনিক কমপক্ষে দুই বছর পর্যন্ত সেবন করানো হয়। কখনো কখনো রোগীর অবস্থা ভেদে ৫,৭ এমনকি ১০ বছর পর্যন্ত ওষুধ সেবন করতে হতে পারে।
প্রতিরোধ- কুষ্ঠ এমন একটি রোগ যার চিকিৎসা যথাযথ এবং যথাসময়ে করা না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মারাত্মকভাবে অক্ষম করে ফলে। সে নিজে যেমন পরিবারের জন্য অশান্তির কারণ হয় তেমনি সমাজেও তাকে এবং তার পরিবারকে সহজভাবে গ্রহণ করা হয় না। বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষে যুগেও শুধু কুসংস্কারের কারণে সমাজে কুষ্ঠ রোগীকে অচ্ছুৎ হিসেবে গণ্য করা হয়। আবার লোকলজ্জার ভয়ে অনেক আক্রান্ত ব্যক্তিও নিজের রোগকে প্রকাশ করেন না এবং চিকিৎসা গ্রহণ না করে ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকেন, যার কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং আমাদের লক্ষ্য হবে- কুষ্ঠমুক্ত একটি পৃথিবী। তাই যেসব এলাকায় কুষ্ঠের প্রাদুর্ভাব বেশি সে এলাকার প্রত্যেক নাগরিকের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি শিশু যাতে বিসিজি টিকা গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এ রোগের সুনির্দিষ্ট টিকা আবিষ্কৃত না হওয়ায় বিসিজি টিকা অনেকাংশেই এ রোগ প্রতিরোধ কার্যকরী। মাস প্রফাইলেক্সিস এ রোগের ক্ষেত্রে অসম্ভব হলেও নির্ণয়কৃত সব রোগীর চিকিৎসা গ্রহণ ও ফলো আপ নিশ্চিত করতে হবে। এতে অঙ্গহানি এড়ানো সম্ভব হবে এবং নতুন নতুন রোগাক্রান্তের হার কমে আসবে। সাথে সাথে সামাজিক সচেতনতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একই সাথে দরিদ্র জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে; কারণ আর্থ- সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এ রোগের হার অনেক কমিয়ে আনে।

তাই আসুন আমরা সবাই কুষ্ঠ সম্বন্ধে নতুনভাবে জানি এবং কুষ্ঠমুক্ত একটি পৃথিবী বিনির্মাণে মিলিতভাবে সর্বোচ্চ প্রয়াস অব্যাহত রাখি।

মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক ও কলামিস্ট,
মোবা- ০১৭১৬-২৭০১২০


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পারকিনসন ডিজিজ ও করণীয়
টেনিস এলবোর জন্য অকুপেশনাল থেরাপি
ভেজাল খাবার আর খাব না
সুস্থ থাকতে সকালে উঠুন
লিভারের ক্রিমি হাইডাটিড সিস্ট
আরও
X

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশে কমবে প্রবৃদ্ধি, বাড়বে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশে কমবে প্রবৃদ্ধি, বাড়বে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে শীর্ষে সউদী

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে শীর্ষে সউদী

দাঁত ভাঙ্গা জবাব চীনের

দাঁত ভাঙ্গা জবাব চীনের

সেনাবাহিনীতে আরও রোবট নিয়োগ করছে রাশিয়া

সেনাবাহিনীতে আরও রোবট নিয়োগ করছে রাশিয়া

ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে টেকসই অর্থনীতির ধারণা উপস্থাপন জামায়াতের

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে টেকসই অর্থনীতির ধারণা উপস্থাপন জামায়াতের

বাংলাদেশে সউদী আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সউদী রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে সউদী আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সউদী রাষ্ট্রদূত

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির

জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির

তানজির ফাহিম জুম্মার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

তানজির ফাহিম জুম্মার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সিকিউরিটি গার্ড আহত

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সিকিউরিটি গার্ড আহত

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দায় লেজিসলেটিভ অ্যাসোসিয়েশন

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দায় লেজিসলেটিভ অ্যাসোসিয়েশন

পহেলা বৈশাখে ব্যাপক নিরাপত্তার পরিকল্পনা ডিএমপি কমিশনার

পহেলা বৈশাখে ব্যাপক নিরাপত্তার পরিকল্পনা ডিএমপি কমিশনার

ডাকাতির পর হত্যা : ১০ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড

ডাকাতির পর হত্যা : ১০ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড

আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার মানববন্ধন

আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার মানববন্ধন

সড়কের মৃত্যুদূত মোটরসাইকেল

সড়কের মৃত্যুদূত মোটরসাইকেল

দায়ের করলেন ‘গোপন অভিযোগ’ দুদকে হঠাৎ হাসনাত-সারজিস

দায়ের করলেন ‘গোপন অভিযোগ’ দুদকে হঠাৎ হাসনাত-সারজিস

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানি হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানি হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আহ্বান ইউজিসির

গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আহ্বান ইউজিসির