শিশুরা রোজা রাখতে পারে
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

ইসলামে রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা শারীরিক ও মানসিক উন্নতির পাশাপাশি আত্মিক উন্নয়নেও সহায়ক। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রোজা ফরজ হলেও, শিশুদের জন্য তা ফরজ না। তাই শিশুদের একবারেই অনেকগুলি রোজা না রেখে ধীরে ধীরে রোজার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেক অভিভাবকই জানতে চান, আমার বাচ্চা রোজা রাখার বায়না ধরেছে তাকে কি রোজা রাখতে দিব? দিলে শিশুদের জন্য রোজার কী কী উপকার আছে? তাই আমরা আজ শিশুদের জন্য রোজার শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতা নিয়ে আলোকপাত করব।
রোজায় শিশুর শারীরিক উপকার ঃ
১. হজম শক্তি উন্নত করে Ñরোজা রাখার ফলে শিশুর হজমতন্ত্র কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম পায়, যা পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে। এটি শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং যাদের প্রায়ই পেটে নানান সমস্যা থাকে তা অনেকটা সমাধান করে।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- আজকাল অনেক শিশু ফাস্ট ফুড সহ নানান অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভোগে। রোজা রাখার ফলে তাদের খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং ওজন ঠিক রাখতে এটা সাহায্য করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- রোজা রাখার সময় শরীরের কোষগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়। শিশুরা কম অসুস্থ হয় এবং তাদের শরীর সহজেই জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।
৪. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে- রোজা রাখলে রক্তে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে যা শিশুদের বয়সকালে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং সুস্থ জীবনযাপনে সহায়তা করে।
রোজায় শিশুর মানসিক উপকার ঃ
১. ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায় Ñ রোজা রাখার মাধ্যমে শিশুরা ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করতে শেখে। খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার ফলে তারা নিজেদের ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
২. মনোযোগ বৃদ্ধি করে -খালি পেটে শরীর ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শিশুরা পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী হতে পারে এবং তাদের স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।
৩. ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে উঠেÑ রোজা রাখার সময় শিশুরা ধৈর্যশীল ও নম্র হতে শেখে। এটি তাদের মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. মানসিক চাপ কমায় - রোজা রাখার সমযয় শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের হয়ে যায়, যা মস্তিষ্ককে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখে। এটি শিশুদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
শিশুদের আধ্যাত্মিক উপকার ঃ
১. ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে - শিশুরা রোজা রাখার মাধ্যমে তাদের ঈমানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। তাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাকওয়া অর্জন করতে পারে।
২. ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তোলে -ছোটবেলা থেকেই রোজার অভ্যাস গড়ে তুললে শিশুদের মধ্যে নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
৩. আত্মশুদ্ধির সুযোগ দেয়- রোজা আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি শিশুদের চরিত্র গঠনে সহায়তা করে এবং তাদের মধ্যে নৈতিক গুণাবলি বৃদ্ধি করে।
৪. আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনুভূতি তৈরি করে -রোজার মাধ্যমে শিশুরা বুঝতে পারে যে তারা আল্লাহর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারে। এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
শিশুদের সামাজিক ও নৈতিক উপকার ঃ
১. সহানুভূতি ও মানবিকতা শেখায় - রোজা রাখার সময় শিশুরা ক্ষুধার্ত ও দুঃস্থ মানুষের কষ্ট অনুধাবন করতে পারে, যা তাদের মধ্যে সহানুভূতি ও মানবিকতা বৃদ্ধি করে।
২. দানশীলতার অভ্যাস গড়ে তোলে -রমজান মাসে দান-সদকা করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছ। শিশুরা রোজা রেখে দান করার আনন্দ অনুভব করে এবং এটি তাদের মধ্যে উদারতা সৃষ্টি করে।
৩. পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করে -সেহরি ও ইফতারের সময় পরিবারের সবাই একসাথে বসে খাওয়া উপভোগ করে। এটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা ও সংহতি বৃদ্ধি করে।
৪. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা শেখায়- রোজার সময় নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়, যা শিশুদের শৃঙ্খলাবোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের গুণাবলি শেখায়।
এবার বলি কীভাবে শিশুকে রোজার অভ্যাস করানো যায় ঃ-
শিশুদের রোজার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য ধাপে ধাপে অভ্যাস করানো উচিত।
১. ছোট রোজার অভ্যাস করানো- প্রথমে কয়েক ঘণ্টার জন্য রোজা রাখার অভ্যাস করানো যেতে পারে। ধীরে ধীরে পুরো দিন রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুললে শিশুরা সহজেই মানিয়ে নিতে পারবে।
২. উৎসাহ ও পুরস্কার প্রদান -রোজা রাখার জন্য শিশুকে উৎসাহিত করতে ছোটখাট উপহার বা প্রশংসা করা যেতে পারে। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
৩. স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা - সেহরি ও ইফতারের সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুর শক্তি বজায় রাখা যেতে পারে, যাতে তারা সহজেই রোজা পালন করতে পারে।
৪. ধৈর্য ও সহনশীলতা শেখানো -শিশুরা যদি রোজার সময় ক্লান্ত বা বিরক্ত বোধ করে, তবে তাদের ধৈর্য ধরতে শেখানো উচিত এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়তা করা উচিত।
শিশুদের জন্য রোজা শুধু ধর্মীয় দ¦ায়িত্ব নয়, এটি তাদের শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রোজার মাধ্যমে তারা ধৈর্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহানুভূতি ও শৃঙ্খলার মতো গুণাবলি অর্জন করতে পারে। তাই অভিভাবকদের উচিত শিশুদের ধাপে ধাপে রোজার প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং তাদের সঠিকভাবে প্রস্তুত করা, যাতে তারা রোজার প্রকৃত উপকারিতা অর্জন করতে পারে।
ডা. জহুরুল হক সাগর
নবজাতক-শিশু-কিশোর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
রূপসী বাংলা হাসপাতাল,
জিয়া সরনী, শনির আখরা, কদমতলি, ঢাকা।
ফোন: ০১৭৮৭ ৭৪০ ৭৪০: ০১৭২৮ ৫৫৮ ৯৯৯।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মার্কিন শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাব ভিয়েতনামের : ট্রাম্পের জন্য কি তা যথেষ্ট হবে?

প্রতারণার দায়ে ইভ্যালির রাসেল-শামীমার তিন বছরের কারাদণ্ড

‘শূন্য শুল্ক পরিস্থিতি’ ও যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের’ পক্ষে ইলন মাস্ক

মানবপাচার রোধে বাংলাদেশ নিজ প্রতিশ্রুতিতে অটল :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিপুল পরিমাণ গাঁজা পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ : বেশ ক’জন গ্রেফতার

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে মৃত বেড়ে ৩ হাজার ৪৫৫ ইউএসএআইডির তিন কর্মী বরখাস্ত

ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস নিয়ে আসিফ নজরুলের উদ্বেগ

নির্বাচনের সব কাজ ভালোভাবে এগোচ্ছে : সিইসি

আওয়ামী লীগপন্থী ৭২ আইনজীবী কারাগারে, ১১ জনের জামিন

বাঁশখালীতে বিষ দিয়ে বোনের ধান ক্ষেত জ্বালিয়ে দিলো ভাই

নতজানু ও দলকানা সাংবাদিকতা ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটায় -কাদের গণি

কুষ্টিয়ায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশুর ঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার দাবি -প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ

আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে জীবননগর থানা ঘেরাও

টাকার লোভে আ.লীগকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে কিছু রাজনৈতিক দল -নজরুল ইসলাম খান

গফরগাঁওয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চুয়েটে লেভেল-১ স্নাতক কোর্সে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু ৯ এপ্রিল

নাটোরে সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

সান্তাহারে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য

সান্তাহারে অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য