এই সময়ে বাচ্চাদের চিকেন পক্স
২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম

বসন্তের এই সময়টাতে বাচ্চাদের চিকেন পক্স অর্থাৎ জলবসন্ত বেড়েছে। চিকেন পক্স বা জলবসন্ত একটি সংক্রামক ভাইরাসজনতি রোগ, যা সাধারণত শিশুদেরই বেশী হয়। ভ্যারসিলো-জোস্টার ভাইরাস সংক্রমনে এটি হয়। এটি সাধারণত তীব্র জ্বর ও ফুসকুড়ির মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং সহজইে এক ব্যক্তি থেেক অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। যদওি এটি শিশুদের জন্য খুব গুরুতর নয়, তবে কিছু জটিলতা কারও কারও হতে পারে।
এটি হওয়ার কারণ: এই রোগের মূল কারণ হলো ভ্যারসিলো-জোস্টার ভাইরাস সংক্রমণ। এটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস যা শ্বাস-প্রশ্বাসরে মাধ্যমে বা আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষত র্স্পশ করার মাধ্যমে ছড়ায়।
কেন দ্রুত ছড়ায়: শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির মাধ্যমে ভাইরাস বাতাসে ছড়ায় এবং অন্যরা সহজইে সংক্রমতি হয়। ত্বকের সংস্পর্শে: আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসকুড়ি বা ক্ষতরে সংর্স্পশে এলে ভাইরাস অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দূষিত বস্তুর সংস্পর্শ: আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, তোয়ালে বা অন্যান্য বস্তু ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
লক্ষণ ও র্পযায়-
চিকেন পক্সের লক্ষণ সাধারণত সংক্রমণের ১০-২১ দির পর দেখা দেয়। এটি সাধারণত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত:
১. প্রাথমিক পর্যায় বা প্রড্রোমাল ফেজÑ এ সময় শরীরের মধ্যে ভাইরাস বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সাধারণ লক্ষণ দেখা দেয়:হালকা থেকে মাঝারি জ্বরমাথাব্যথাক্ষুধামন্দাক্লান্তি ও দূর্বলতাশরীরে ব্যথা
২. ফুসকুড়ি উদ্ভব পর্যায়-প্রথমে শরীরে লালচে ফুসকুড়ি ওঠে, যা পরে পানিপূর্ণ ফোস্কায় পরিণত হয়।প্রথমে মুখ, পিঠ ও বুকে ফুসকুড়ি দেখা যায়, পরে তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।ফুসকুড়ি চুলকায় এবং ধীরে ধীরে ভিতরের পানিটা ঘন হয়ে যায়।
৩. নিরাময় পর্যায়-কয়েকদিন পর ফোসকার পানি শুকিয়ে যায় এবং খোসা পড়ে যায়।সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি সেরে যায়।খোসা পড়ার পর ত্বকে দাগ থেকে যেতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। জটিলতা ও ঝুঁকি- যদিও এই পক্স বেশিরভাগ শিশুদের জন্য গুরুতর নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি কারা :
নবজাতক শিশুরাযাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা র্দুবল (যেমন, কেমো থেরাপীতে থাকা রুগী, ক্যান্সার বা এইচআইভি আক্রান্ত)যারা স্টেরয়েড বা ইমউিনোসাপ্রেসিভ ওষুধ সেবন করছে।গর্ভবতী নারীরা
সম্ভাব্য জটিলতা:ত্বকের ইনফেকশন: ফুসকুড়িতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে।নিউমোনিয়া: ফুসফুসে সংক্রমণ হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত বাচ্চাদের এটা হতে দেখা যায়।
মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস): খুব বেশী মানুষের না হলেও এটি মারাত্মক হতে পারে।পানি শূন্যতা: জ্বর ও ক্ষুধামন্দার কারণে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে।হেপাটাইটিস: যকৃতের প্রদাহ হতে পারে, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
চিকিৎসা ও করণীয়: - সাধারণ যতœ- চিকেন পক্স সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়, তবে কিছু সাবধানতা ও যতœ নিলে অস্বস্তি কমানো যায়:চুলকানি কমানোর জন্য:কোল্ড কমপ্রেস (ঠান্ডা পানির কাপড়) ব্যবহার করাওটমিল বা ক্যালামাইন লোশন লাগানো যায়নখ ছোট করে কেটে রাখা যেন চুলকানোর সময় ক্ষত সৃষ্টি না হয়জ্বর কমানোর জন্য:প্যারাসিটামল সেবন করা (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)আইবুপ্রেফেন না খাওয়াই ভালো, কারণ এটি কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়াতে পারেপানি ও পুষ্টি:প্রচুর পানি ও তরল খেতে হবেহালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত
ওষুধ ও চকিৎিসা:বিশেষ ক্ষেত্রে ডাক্তার কিছু ওষুধ দিতে পারেন:অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (এসাইক্লোভির): যদি রোগী ঝুঁকপূর্ণ হয় তবে ডাক্তার এটি দিতে পারেন।অ্যান্টিহিস্টামিন: চুলকানি কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
প্রতেিরাধ ব্যবস্থা ঃ টিকা দিয়ে প্রতিরোধ বা ভ্যাকসনিশেন: চিকেন পক্স প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ভ্যারিসেলা ভ্যাকসিন।প্রথম ডোজ: ১২-১৫ মাস বয়সেদ্বিতীয় ডোজ: ৪-৬ বছর বয়সেএই টিকা প্রায় ৯০-৯৫% কার্যকর এবং এটি গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। সংক্রমণ এড়ানোর উপায়: আক্রান্ত শিশুকে স্কুল বা ডেকেয়ার থেকে দূরে রাখাসংক্রমিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়ানোভালোভাবে হাত ধোয়াআক্রান্ত শিশুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখাগর্ভবতী নারী ও নবজাতকের ক্ষেত্রে সর্তকতা : গর্ভাবস্থায় যদি মা চিকেন পক্সে আক্রান্ত হন, তবে এটি শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এটি জন্মগত ত্রুটি, কম ওজনের শিশু জন্ম, অথবা নবজাতকরে গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে। তাই, গর্ভবতী নারীদের সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা উচিত। চিকেন পক্স হলে কী করবেন?শিশুকে বিশ্রামে রাখুন।চুলকানি কমানোর জন্য ঠান্ডা পানির গোসল দিন।ফুসকুড়ি ফাটতে দিবেন না, এতে সংক্রমণ হতে পারে।জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল দিন, তবে অ্যাসপিরিন দিবেন না।যদি শিশুর শ্বাসকষ্ট হয় বা ত্বকে সংক্রমণ দিখা দেয়, দ্রুত ডাক্তার দেখান।সবশেষে বলতে চাই, চিকেন পক্স শিশুদের জন্য সাধারণ রোগ হলেও এটি দেখা দিলে যথাযথ যতœ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। সময়মত টিকা নেয়া, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং চিকিৎসকের পরার্মশ অনুযায়ী যতœ নিলে এই রোগ সহজইে সামলানো সম্ভব। যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ডা. জহুরুল হক সাগরনবজাতক-শিশু-কিশোর মেডিসিন বিশেষজ্ঞরূপসী বাংলা হাসপাতাল,জিয়া সরনী, শনির আখরা, কদমতলি, ঢাকা।ফোন: ০১৭৮৭ ৭৪০ ৭৪০: ০১৭২৮ ৫৫৮ ৯৯৯।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মির্জা আজমের এপিএস, পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক- এবার পলায়নের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত

লালে লাল শাহজালাল স্লোগানে ঐতিহাসিক 'লাকড়ি তােলা' উৎসবে সিলেটে অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী

কান উৎসবের মূল পর্বে বাংলাদেশি স্বপ্নদৈর্ঘ্য সিনেমা

রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে ফ্যাসিবাদী ভূত রয়েছে তাঁদেরকে দূর করে নির্বাচন দিতে হবে --মানিকগঞ্জ দরবার শরীফের পীর

মাছের উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিপুল সম্ভাবনা : কর্মশালায় বক্তারা

আনোয়ারায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

রাজনৈতিক সেল্টারে বহাল তবিয়্যতে আ.লীগের দোসররা

যে কারণে বিএনপির কট্টর সমালোচক হয়ে উঠলেন গোলাম মাওলা রনি

জিম্মিদের বিষয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক মোসাদ প্রধানের

সবচেয়ে বেশি হিন্দুদের জমি দখল হয়েছে আ.লীগের সময়ে : দুলু

বিএনপি সব সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে ছিল এবং থাকবে-দুলু

আটক বিএসএফ সদস্যকে ফেরাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং ভারতের

ভবিষ্যৎ ও অদৃশ্যের নিয়ন্ত্রণ কেবল আল্লাহ তা’য়ালারই হাতে

আমরা সবাই মিলেমিশে ঠাকুরগাঁও জেলাকে রোল মডেল হিসাবে গড়ে তুলবো : ফারুক হাসান

ভারতকে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

কাশ্মীর হামলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন

বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে মসজিদ ,মাদরাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা করা হবে -প্রিন্স

পদ্মার চরে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়েছে সেনাবাহিনী

মার্কিন উচ্চশিক্ষার চরম পতন