অতি লোভে কিছু ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে
১১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, অতি মুনাফার লোভে কিছু ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে। মন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল এবং চিনির প্রায় চাহিদার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এসব ছাড়াও যে কোনো পণ্য আমদানি করা হলে ব্যবসায়ীদের মুনাফা রেখেই ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। তারপরও দেখা যায় অতি মুনাফার লোভে কিছু ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রয় করে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে অসৎ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে শুধু আইন প্রয়োগ করে দমন করা সম্ভব নয় বলেও স্বীকার করেন তিনি। এছাড়া বর্তমানে প্রচলিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনটি সংশোধন ও সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। টিপু মুনশি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানিকৃত পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মেনে চলেন না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রচলিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনটি সংশোধন ও সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করা গেলে ভালো হয়। সিন্ডিকেট, অবৈধ মজুদদার, কালোবাজারীদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদফতর তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক ছায়া সংসদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু আইন দিয়ে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ভোক্তাদের যেমন তার অধিকার সমন্ধে সচেতন হতে হবে তেমনি ব্যবসায়ীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দিতে হবে। মূল্যবোধের অবক্ষয় নয় বরং জাগরণ দরকার। দাম না কমালে আমদানি করা হবে এমন হুঁশিয়ারি দিলেই দাম কমে। রমজান মাস আসলেই পণ্যের দাম বাড়ে। এগুলো পরিহার করতে হবে। ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অনেকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
টিপু মুনশি বলেন, খাদ্য সংকট হবে এই চিন্তা করে অতিরিক্ত মজুত করা ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এইটা করেন থাকেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় দেশে সব পণ্য পর্যাপ্ত আছে। কৃষি বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশ অনেক পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কোনো পণ্যের সংকট পড়লে সরকার আমদানি করে থাকে। সরকার সবসময় চেষ্টা করে যাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আবার ভোক্তারাও যেন সহজে পণ্য ভোগ করতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে খাদ্য পণ্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এটা শুধু আমাদের দেশে নয় বিশ্বের সব দেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্টের কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রয় করছে। সারাদেশে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে তেল, ডাল এবং চালসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সরকার বিশাল অংকের ভর্তুকি দিয়ে গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডিম বা মুরগি অথবা পেঁয়াজ কিংবা কাঁচা মরিচের দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। এসব পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা অন্য দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকে। সরকার এসব পণ্যের যে দাম নির্ধারণ করে দেয় সেটি অনুযায়ী, বিক্রি হচ্ছে কি না তা ভোক্তা অধিকার তদারকি করে থাকেন। কিন্তু যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে অভিযান পরিচালনা করার জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন সে পরিমাণ জনবল তাদের নেই। আমরা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এই দপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকা দরকার। নিজস্ব কর্মকর্তাদের অথবা যারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন এ ধরনের কর্মকর্তাদের ভোক্তা অধিদফতরে পদায়ন করা যায় বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন।
মক পার্লামেন্টে স্পিকার ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এসএম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ বেশ কয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ৫-৬টি কর্পোরেট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে ক্রেতারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির সাথে যে সকল বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কপোর্রেট কোম্পানি জড়িত সেগুলিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রথমদিনে ‘শুধু আইন দিয়ে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়’ শীর্ষক প্রস্তাবের পক্ষে ইডেন মহিলা কলেজ এবং বিপক্ষে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন। ইডেন মহিলা কলেজ বিজয় লাভ করে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে