শতশত পরিবারের নেই বাড়িভিটা : মাটির অভাবে করতে পারছে না বাড়ি

নিকলীতে গ্রামরক্ষায় ৫২ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্প চলমান

Daily Inqilab নিকলী (কিশোরগঞ্জ) থেকে মো. হেলাল উদ্দিন :

০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৫ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৫ এএম

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চল গোরাউত্তরার শাখা নদী গুরুই জলমহাল নামের নদীর তীরে প্রায় ২শ’ বছর ধরে ছাতিরচর গ্রামের মানুষ বসতি স্থাপন করে বসবাস করে আসছে। গ্রামটি একসময় ছিল প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ। বর্ষা মৌসুমে গ্রামের চারপাশে পানিতে থৈ, থৈ করে, নদীর প্রবল স্রোত আর পানির ঢেউয়ের মুখে গ্রামটি ৮০ বছর ধরে নদীভাঙনের শিকার হয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার অংশ অবশিষ্ট আছে। একসময় এ গ্রামে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসতি ছিল। এক জরিপে উঠে এসেছে প্রায় ২ হাজার ৬শ’ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। গ্রাম ছেড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে ছাতিরচরের মানুষ। গ্রামে এসে বোরো আবাদ মৌসুমে অনেকেই হাওরে ঘর করে জমিতে ধান আবাদ করে।

এ বিষয়ে ছাতিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান চৌধুরী, বিএনপি নেতা মুক্তার হোসেন ও জাহিদ হাসান জাকিরের সাথে কথা হলে তারা জানান, নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে ছাতিরচরের প্রায় ২ হাজার মানুষ ঢাকা কামরাঙ্গীরচর এবং চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এবং ৬শ’ মানুষ নিকলী উপজেলার পাড়াবাজিতপুর, গুরুই, পাঁচরুখিসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। গ্রামটি দেখতে দ্বীপের মতো। গাছের দৃশ্য মানুষের হৃদয় মন কেড়ে নেয়। বর্ষার মৌসুমে ছাতিরচর গ্রামে পর্যটকদের ভিড় করতে দেখা যায়।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায় গ্রামের ছোট ছোট ঘরে কয়েকটি রুম করে দুই থেকে তিনটি পরিবাব এক সাথে বসবাস করে। বেড়িবাঁধ নির্মাণ দেখে, গ্রামছাড়া মানুষেরা আবার গ্রামে রেখে যাওয়া জমিতে বাড়ি করে গ্রামে ফিরে আসতে চায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিশোরগঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ঐতিহাসিক ছাতিরচর গ্রামটিকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৪শ’ মিটার গ্রাম রক্ষাবাঁধ নির্মাণের জন্য ৫২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। এ বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হবে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯ শ’টি ৩ প্রকারের ব্লক এবং ১ লাখ ১১ হাজার ২শ’ ৬৮টি বস্তা ও ৬২ হাজার ৭শ’ ৪৭টি জিও ব্যাগ। এ কাজের জন্য ৫টি (ঠিকাদার) নির্মাণ কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়।

বাঁধ নির্মাণ কাজের ওপর স্থানীয়দের রয়েছে অভিযোগ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো নদীর পাড় ছেড়ে দিয়ে অনেক স্থানে মানুষের বাড়ির ওপর দিয়ে বাঁধ করে যাচ্ছে। বাড়ির মালিককে দেয়া হচ্ছে না ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো টাকা পয়সা। স্থানীয়রা জানায়, বর্ষার পানি আসার পূর্বেই কাজ করার কথা থাকলেও এখনো এম, রহমান ঠকাদার প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ করেনি, এতে অন্য ঠিকাদারদের কাজ শেষ হয়ে যাবে কিন্ত এম, রহমান এখনো কাজ শুরুই করে নাই এতে বর্ষার পানির স্রোত এবং ঢেউয়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এম, রহমান ঠিকাদারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি ৬০ ভাগ কাজ করেছি, যারা বলেছে আমি কাজ শুরুই করিনি তারা ভুল বলেছেন। নদীর গর্ভে যাদের বাড়ি চলে গেছে তাদের মধ্যে মুরাদ (রিকশাচালক) পিতা মৃত সিরাজ, শাহ আলম (ভ্যানচালক) পিতা মৃত সিরাজ, বিপ্লব (রিকশাচালক) পিতা মৃত নুনু ব্যাপারী, শফি (শ্রমিক) পিতা মৃত আমির হোসেন, আবুল কালাম (চা-বিক্রেতা) পিতা মৃত জনাব আলী, যুবদল নেতা মুসা হায়দার এ প্রতিনিধিকে জানান, বাঁধের ভেতরে আমাদের জমি আছে, সেখানে নতুন করে আমরা বাড়ি নির্মাণ করতে চাই, কিন্তু মাটির অভাবে বাড়ি করতে পারছি না। যদি সরকার আমাদেরকে নদী থেকে বালি তোলার অনুমোদন দেয় তবে অল্প খরচে আমারা বাড়ি করতে পারবো। তাই প্রশাসনের নিকট আমাদের আবেদন যাতে নদী থেকে বালি উত্তোলনের জন্য আমাদেরকে অনুমতি প্রদান করেন। আমরা যারা গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করি আমাদের স্বজন মারা গেলে অনেক কষ্ট করে লাশ ছাতিরচর কবরস্থানে এনে দাফন করতে হয়। যদি আমরা গ্রামে থাকতে পারতাম তাহলে এমনটি হতো না। কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক্সএন মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ঝুঁকিযুক্ত অংশের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে, আর বাঁধের যে অংশে ঝুঁকি নেই সেই জাগায়গায় ডাম্পিংয়ের কাজ শেষ। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের অর্থবছরের মধ্যে ছাতিরচরের বেড়িবাঁধের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হত্যাকান্ডের রায়ে একজনের ফাঁসি
কিশোরগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বাড়ি-দোকান ভাংচুর, লুটপাট অর্ধশত আহত
মহেশপুর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত আহত ৪
লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
আরও
X

আরও পড়ুন

নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হত্যাকান্ডের রায়ে একজনের ফাঁসি

নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হত্যাকান্ডের রায়ে একজনের ফাঁসি

ড. ইউনূসের সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ

ড. ইউনূসের সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ

কিশোরগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বাড়ি-দোকান ভাংচুর, লুটপাট অর্ধশত আহত

কিশোরগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বাড়ি-দোকান ভাংচুর, লুটপাট অর্ধশত আহত

জিম্বাবয়ের বিপক্ষে যে কারণে শক্তিশালী দল দিল বিসিবি

জিম্বাবয়ের বিপক্ষে যে কারণে শক্তিশালী দল দিল বিসিবি

দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও মেয়েদের বড় জয়

দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও মেয়েদের বড় জয়

মহেশপুর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত আহত ৪

মহেশপুর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত আহত ৪

লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

দেশে বিনিয়োগের এত অনুকূল পরিবেশ আগে ছিল না: ড. ইউনূস

দেশে বিনিয়োগের এত অনুকূল পরিবেশ আগে ছিল না: ড. ইউনূস

বিশ্বের শক্তিশালী ৫০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

বিশ্বের শক্তিশালী ৫০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

বর্ণিল আয়োজনে হাবিপ্রবিতে ২৪ তম বিশ্ববিদ্যালয়  দিবস উদযাপন

বর্ণিল আয়োজনে হাবিপ্রবিতে ২৪ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

এনডিবি আরও ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে

এনডিবি আরও ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে

ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করলো শিবির

ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করলো শিবির

সৈয়দপুরে গাজায়  মুসলিম জনতাকে গনহত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

সৈয়দপুরে গাজায়  মুসলিম জনতাকে গনহত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

মির্জাগঞ্জে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০ বস্তা চাল জব্দ

মির্জাগঞ্জে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০ বস্তা চাল জব্দ

২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর মনি হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেফতার

২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর মনি হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেফতার

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ওসমানীনগরে  তালামীযে ইসলামিয়ার বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ওসমানীনগরে  তালামীযে ইসলামিয়ার বিক্ষোভ মিছিল

ব্রাহ্মণপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

ব্রাহ্মণপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

স্পিড ব্রেকারের দাবিতে ঘন্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ

স্পিড ব্রেকারের দাবিতে ঘন্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ

ব্রাহ্মণপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

ব্রাহ্মণপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি