নোয়াখালীতে একটি চাঞ্চল্যকর পর্নোগ্রাফি ও ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলার আসামিদের রাজনৈতিক হয়রানি মামলা দেখিয়ে ৬ লাখ টাকার চুক্তিতে খালাসের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এঅভিযোগ করেছেন,মামলার বাদি জেলার হাতিয়া উপজেলার ম্যাকপার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মামুন অর রশিদ।চুক্তিকৃত ৬ লাখ টাকার মধ্যে ইতোমধ্যেই ৩ লাখ টাকা লেনদেনের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ইনকিলাবের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
মামলার বাদী মামুন গত ১৪ অক্টোবর লিখিতভাবে জিআর-২১০/২০২৪ মামলাটির বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে প্রতিকারও চেয়েছেন বলে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর ব্যাক্তিগত গোপনীয় ছবি মোবাইল ফোন হ্যাক করে পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করার হুমকি দিয়ে ভিকটিমের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে নারী-পুরুষসহ ৬ জন।অনোন্যপায় হয়ে স্কুল শিক্ষিকা ভিকটিমের স্বামী হাতিয়া উপজেলার ম্যাকপার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুন অর রশিদ ২০২৩ সালের ৫ মে পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজি আইনে সুধারাম থানায় মামলা নম্বর-১৭দায়ের করেন।ওই মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন,মাইজদী কোর্ট এলাকার মৃত আবদুল মোতালেবের ছেলে আমজাদ হোসেন,হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন( ৫২),মধ্য রেহানিয়া আবদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর উদ্দিন তানভির(৩৫),ম্যাক পার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিন্নাত আরা বেগম(৩৫) ও হাসান উদ্দিন বিপ্লব(সাময়িক বরখাস্ত) এবং হাতিয়া উপজেলা এলজিইডি'র সহকারী প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম।
মামলার মূলহোতা শিক্ষিকা জিন্নাত আরা বেগম ও প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম স্বামী-স্ত্রী।
আসামিরা গ্রেফতার হয়ে দু'মাসাধিক সময় কারাগারে থাকার পর সকলে উচ্চ আদালতের জামিনে রয়েছেন।জামিনে এসে মামলার বাদি ও ভিকটিম শিক্ষক দম্পতিকে আসামিরা মামলা তুলে নেয়ার চাপ সৃষ্টি ,হত্যা ও লাশ গুম করার হুমকি দেয়ায় মামলার বাদি স্কুল শিক্ষক ও ভিকটিম স্কুল শিক্ষিকার স্বামী মামুন গত ১৩অক্টোবর সুধারাম মডেল থানায় এ বিষয়ে জিডি নম্বর ৮১৭ দায়ের করেন। প্রতিকার না পেয়ে এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা(আইও) মুকিব হাসানের বিরুদ্ধে সুনির্দিস্ট একাধিক অভিযোগ এনে পরিবর্তন চেয়ে নোয়াখালী পুলিশ সুপারের কাছে গত ১৪ অক্টোবর আবেদন করেন।আবেদনের প্রেক্ষিতে চাঞ্চল্যকর এ পর্নোগ্রাফি আইনের মামলার আইও পরিবর্তন করে দুমাস পূর্বে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান , সুধারাম মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর(এস আই) মিঠুন চন্দ্র শীল।
কিন্তু মামলা দায়েরের পর প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও এ মামলার চার্জশিট না দেয়া, এ মামলার মূল হোতা দুনম্বর আসামি জিন্নাত আরা বেগম এবং ছয়নম্বর আসামি শরীফুল ইসলামের মোবাইল ফোন জব্দ না করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।রহস্যের দানা বেধেছে,এঘটনার মাষ্টার মাইন্ড আসামি জিন্নাত আরার ব্যাবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ না করে তার অপ্রাপ্ত বয়সের ছেলের মোবাইল ফোন জব্দ করায়।মামলার বাদির অভিযোগে আরও জানা গেছে,চাঞ্চল্যকর মামলাটির আসামিরা আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থক এবং হাতিয়ার আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্বেও বিএনপি দলীয় সমর্থক দাবিতে রাজনৈতিক হয়রানি মামলা গণ্য করে মামলা থেকে খালাস পাওয়ার জন্য বিএনপি নেতাদের দিয়ে জোর তদবির করার।
এসংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ ইনকিলাবের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। যাতে পর্নোগ্রাফি মামলাকে রাজনৈতিক মামলা বলে আসামিদের খালাস করার নিমিত্তে ৬ লাখ টাকার চুক্তি এবং ইতোমধ্যেই ৩ লাখ টাকা লেনদেনের কথোপকথন রয়েছে। হেলাল নামের ব্যাবসায়ি নোয়াখালীর পিপিকে(পাবলিক প্রসিকিউটর) ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে,চুক্তিকৃত অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করে মামলার সকল আসামি খালাস পাবে বলে ওই অডিও ক্লিপ'এ কথোপকথন রয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও)মিঠুন চন্দ্র শীল ইনকিলাবকে থানায় গিয়ে তথ্য নিতে বলেন।পরবর্তীতে তাকে বার বার ফোন দেয়ার পরও রিসিভ করেননি। সুধারাম মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন,স্পর্শকাতর মামলা হওয়ায় সংগৃহীত আলামত ফরেনসিক টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলেই পরবর্তী ব্যাবস্হা নেয়া হবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর পিপি
(পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট শাহদৎ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন,রাজনৈতিক হয়রানি বিবেচনায় এধরণের মামলা থেকে আসামি খালাসের সুযোগ নেই।অনৈতিক লেনদেনের প্রশ্নই আসে না।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন,পর্নোগ্রাফি মামলা বা যেমামলাই হোক,তা প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করা আমার এখতিয়ারে নেই। এগুলো শুধুমাত্র আদালত বা কোর্টের বিষয়। প্রসঙ্গত,গত ১৬ জুন 'নোয়াখালীতে পর্নোগ্রাফি মামলার আসামিরা জামিনে এসে হত্যার হুমকি দিল বাদিকে' এবং গত ১০ জুলাই 'নোয়াখালীতে প্রকৌশলীসহ ৪ শিক্ষক কারাগারে' শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে অনলাইন ও প্রিন্টে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।